রণাঙ্গন থেকে
(নিজস্ব প্রতিনিধি) গত ২০শে সেপ্টেম্বর রংপুর জেলার ডিমলা থানার অন্তর্গত সুটিবাড়ী হাটের পশ্চিমে জোড়াজিগা গ্রামে মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে ৯ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং কয়েকজন উক্ত অঞ্চল হইতে অস্ত্রশস্ত্র রাখিয়া কোন রকমে পলায়ন করে। উক্ত থানার বালাপাড়া গ্রামে মুক্তিবাহিনী কর্তৃক রক্ষিত মাইন বিস্ফোরণে ৬ জন পাকফৌজ নিহত হইয়াছে। প্রকাশ, মুক্তিবাহিনী রাস্তায় মাইন পুঁতিয়া রাখিয়াছিল এবং সকালে মহিষের গাড়িতে চড়িয়া ৬ জন পাকফৌজ যাওয়ার সময় মাইন বিস্ফোরিত হয় এবং গাড়ােয়ান সমেত ৭ জন নিহত হয়। পরবর্তীকালে বর্বর পাক বাহিনী বালাপাড়া গ্রামকে সম্পূর্ণ ভাবে জ্বালাইয়া দেয়। গত ২১শে সেপ্টেম্বর বর্বর পাকফৌজ ডিমলা থানার অন্তর্গত খড়িবাড়ি গ্রামের টুনিরহাট জ্বালাইয়া দেয়। ফলে স্থানীয় অনেক ব্যবসায়ীর বহু সম্পত্তি বিনষ্ট হয়। উক্ত এলাকায় মুক্তি বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পাইয়াছে।
গত ২৮শে তারিখ রাত্রে ছাতানাই গ্রামে ৭০ বৎসরের এক বৃদ্ধাকে হানাদার পিশাচরা নির্মমভাবে হত্যা করিয়াছে। জানা গিয়াছে যে, উক্ত বৃদ্ধার পুত্র মকবুল হােসেন মুক্তিবাহিনীর সাহায্যকারী হিসাবে কাজ করিতেছিল। পাকফৌজ তাহাদের চরদের মারফত মকবুল হােসেনকে মারার জন্য সে দিন রাত্রে জানালা দিয়া মকবুল হােসেনকে গুলি করে কিন্তু মকবুল হােসেন সেই ঘরে না থাকায় তাহার বৃদ্ধা মাতা গুলিবিদ্ধ হইয়া মৃত্যুবরণ করেন। দিনাজপুর গত ২৬শে সেপ্টেম্বর রবিবার দিনাজপুরের বােদা থানার অন্তর্গত মাড়েরা গ্রামে একদল পাকফেীজ ও রাজাকার বাহিনী স্থানীয় ন্যাপ ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের একটি পাড়া পোড়াইয়া দেয়। সেই সময় মুক্তিবাহিনীর জওয়ানরা তাহাদের কমাণ্ডার মাহবুবের নেতৃত্বে উক্ত পাক বাহিনীকে পাল্টা আক্রমণ করে এবং একজন রাজাকারকে জীবিত অবস্থায় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করিতে সক্ষম হয়। আরাে প্রকাশ যে, উক্ত গ্রামে ঠাকুরগাঁ মহকুম ন্যাপের যুগ্ম সম্পাদক সফিকুল আলম চৌধুরী ও বােদা থানা ন্যাপের সম্পাদক আবদুর রউফ আত্মগােপন করিয়াছিলেন এবং তাঁহারা দুই জনে পাকফৌজ কর্তৃক গ্রেপ্তার হন। মুক্তিবাহিনী আবদুর রউফকে জীবিত অবস্থায় তাহাদের হাত হইতে উদ্ধার করে।
১ লা অক্টোবর বােদা থানার অন্তর্গত পাকফৌজ অধিকৃত নয়াদিঘিতে অতর্কিত আক্রমণ চালাইয়া পাকফৌজের ঘাটি ও ইউনিয়ন কাউন্সিল অফিস সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করিয়া দেয়। নয়াদিঘি ও বােদার মধ্যে সংযােগকারী ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য একটি পুল মুক্তিবাহিনী সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করিয়া ফেলে। ফলে ভীত সন্ত্রস্ত পাক হানাদারেররা উক্ত এলাকা হইতে পশ্চাদপসরণ করিতে বাধ্য হয়। নয়াদিঘি বর্তমানে মুক্তিবাহিনীর পূর্ণদখলে। বিলম্বে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, গত মাসের প্রথম দিকে মুক্তি বাহিনীর বীর গেরিলারা ঢাকা জেলার রায়পুরা থানার কয়েকটি অভিযানে শতাধিক শত্রুসেনা খতম করিয়াছে। | গত ৩রা সেপ্টেম্বর রাফুরা থানার টি, ডি, সেক্টরে অবস্থিত শত্রুঘাটিটি গেরিলারা গভীর রাতে চতুর্দিক হইতে ঘিরিয়া ফেলে উভয়পক্ষে ছয় ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধ চলে। সংঘর্ষে ৫০ জন পাকিস্তানী সৈন্য ও ৬০/৭০ জন রাজাকার নিহত হয়। প্রায় ৩৪ জন দালাল অবাঙ্গালী ইপিআর রাজাকার আত্মসমর্পণ করে এই সংঘর্ষে ৭ জন তরুণ মুক্তিকে শহীদ হইয়াছেন। গত ২৪ শে সেপ্টেম্বর রায়পুরা আমিরগঞ্জে রেলস্টেশনের দিকে মাইনের সাহায্যে মুক্তিবাহিনী দুইটি রেলসেতু উড়াইয়া দিয়াছে। চট্টগ্রাম গত মাসে চট্টগ্রামের তিন কুখ্যাত দালাল খতম হইয়াছে। ইহাদের মধ্যে ফ, কা, চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহচর তাজুল ইসলাম প্রকাশ্য দিবালােক আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসিলে জনৈক গেরিলার বােমার আঘাতে নিহত হয়। অপর দুই জন হইতে পটিয়া থানার কুসুমপুরের শান্তি কমিটির হােত মুসলিম লীগ দালাল আব্দুল হাফিজ ও নূর হক।
মুক্তিযুদ্ধ। ১: ১৫।
১৭ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯