৮ আশ্বিন ১৩৭৮ শনিবার ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
-অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম জাতির উদ্দেশ্যে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এক ভাষণে বলেনঃ পদাতিক বাহিনী ছাড়াও আমাদের নৌ ও বিমান বাহিনীর বীর সৈনিকরা শত্রুর উপর আঘাত হানবার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
-মুক্তি বাহিনী যশোর, রংপুর সেক্টরে মাইন পেতে তিনটি ট্রেনের লাইনচ্যুতি ঘটায়।
-প্রধান সেনাপতি কর্নেল (পরে জেনারেল) এম এ জি ওসমানী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এক বেতার ভাষণে বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায়ের জন্য যুদ্ধ করছে। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং আমাদের জাতীয় পতাকা সমুন্নত রাখার জন্যই এই যুদ্ধ করছি।
বাংলাদেশের পবিত্র ভূমি থেকে শেষ হানাদার সৈন্যটিকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত আমাদের এই যুদ্ধ ক্ষান্ত হবে না। বাংলার বীর সন্তানেরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ও যূগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। উন্নত মানের অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এবং সংখ্যায় বহু গুণে বেশী শত্রুর বিরুদ্ধে তাঁরা নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ, কঠোর সংকল্প ও আত্ম প্রত্যয়ের সাথে লড়ে চলেছেন। এ পর্যন্ত তাঁরা কম করে ২৫ হাজার শত্রু সেনাকে খতম ক্রেছে বা নিরস্ত্র করেছে। সযোগ্য বাঙালী সামরিক অফিসারগণ মুক্তিবাহিনীকে দ্রুত সুসংগঠিত করে নিয়মিত সৈনিক, নাবিক ও বৈমানিকদের সমন্বয়ে একটি সুসংগঠিত বাহিনীতে পরিণত করেছেন। এই জন্যই বাংলাদেশ বাহিনীকে মুক্তিফৌজের বদলে মুক্তিবাহিনী বলা হয়ে থাকে।” মুক্তি বাহিনীর সেনাপতি আরো বলেন যে, “শত্রুর ওপর মুক্তিবাহিনীর আঘাত তীব্রতর হচ্ছে। অন্যদিকে দিশাহারা শত্রুবাহিনী নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে বীরত্ব দেখাচ্ছে।” তিনি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন যে, “কোন বিশ্বাস ঘাতকে স্বল্পতম মধ্যে চরম শাস্তি দেয়া হবে। রাজাকারদের মুক্তবাহিনী কাছে আত্মসমর্পণের নির্দ্দেশ দেয়া হচ্ছে। যারা আত্মসমর্পণ করবে তাদের প্রতি ভাল ব্যবহার করা হবে। জণগনের অবধারিত। জয় বাংলা।”
-প্রধান সামরিক শাসনকর্তা পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসের ৮ জন অফিসারকে বরখাস্ত করেছে। বরখাস্তকৃত অফিসারগন হলেনঃ সর্বজনাব এ এফ এম আবুল ফতেহ, হোসেন আলী, এস এ করিম, এনায়েত করিম, এস এ এম এস কিবরিয়া, এস মোয়াজ্জেম আলী, মহিউদ্দিন আহম্মদ এবং আনোয়ারুল করিম চৌধুরী। (দৈঃপাঃ) উল্লেখ্য, এই ৮জন বাঙালী কূটনীতিক বাংলাদেশ সরকারের অনুগত্য প্রকাশ করেছেন।
-ঢাকা মেডিকেল কলেজ চৌরাস্তায় ট্রাফিক ষ্টপে মুক্তিবাহিনী অকুতভয় গেরিলারা এক অপারেশনে দালাল মন্ত্রী মওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের গাড়ীতে গ্রেনেড ছুঁড়ে মারলে মন্ত্রী ও ড্রাইভার গুরুতর ভাবে আহত হয়।
-করাচীতে একজন সরকারী মুখপাত্র ঘোষণা করে, পূর্ব –পাকিস্তানের অবস্থা সম্পর্কে ভারতীয় অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীর সামনে প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরার জন্য পাকিস্তানের যে সব প্রতিনিধি বিদেশ সফর করছেন তাদের মধ্যে দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক খন্দকার আব্দুল হামিদ রয়েছেন।
-ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের সামনে গেরিলাদের বোম বিস্ফোরণে প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রী ও নেজামে ইসলাম নেতা মওলানা ইসহাক গুরুতর আহত হন।
-প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানীর বেতার ভাষণঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ১৮০ দিন পূর্তি উপলক্ষে স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে মুক্তিবাহিনী প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানী দ্ব্যার্থহীন কন্ঠে ঘোষণা করেন যে, “বাংলাদেশের জনগণ অন্যায় ও অবিচারে বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায়ের জন্য যুদ্ধ করছে। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং আমাদের জাতীয় পতাকা সমুন্নত রাখার জন্য যুদ্ধ করেছে। বাংলাদেশের পবিত্র ভূমি থেকে শেষ হানাদার সৈন্যটিকে চিশ্চিহ্ন করা পর্যন্ত আমাদের এ যুদ্ধ ক্ষান্ত হবে না। বাংলার বীর সন্তানেরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অন্যন্য অবদান রেখেছে।”
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী