জনসভা
২রা অক্টোবর। রােজ শনিবার ময়মনসিংহ সেক্টরের মুক্তাঞ্চলে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথীর আসন গ্রহণ করেন ময়মনসিংহ ঢাকা ও টাঙ্গাইল সেক্টরের মুক্তি বাহিনীর প্রধান মৌঃ আফসার উদ্দিন আহমেদ। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এস, এম, হলের সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট সংগ্রামী ছাত্রনেতা জনাব আনােয়ার উল আলম (শহীদভাই), টাঙ্গাইল জেলার মুক্তিবাহিনীর কমাণ্ডার আঃ হামিদ, মােঃ আজিজুর রহমান তরফদার, ডাঃ ওয়াজ উদ্দিন ও আরও বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি। শহীদ ভাই তার ভাষণে বলেন পশ্চিমা পশুরা আমাদের কয়েকশত মা-বােনের ইজ্জত মেরেছে, কয়েক হাজার নিরস্ত্র জনসাধারণকে হত্যা করেছে কিন্তু আমরা চল্লিশ হাজারা পাঞ্জাবী দস্যুকে খতম করে তাদের স্ত্রীকে বিধবা, মাকে সন্তানহারা, বােনকে ভাই হারা করেছি। প্রধান অতিথী তার ভাষণে বলেন, আমি মুক্তাঞ্চলে বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টার ঘুরে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তাতে মনে হয় বাংলাদেশকে শত্রু মুক্ত করতে দুমাসের বেশী লাগতে পারে না আর মুক্তি যােদ্ধাদের যে সাহস ও মনােবল তাতে আরও কম সময় লাগতে পারে। বিগত ছ’মাসে ট্রেনিং ছাড়া সামান্য হাতিয়ার কেড়ে নিয়ে বাংলার মুক্তিযােদ্ধাগণ যে অভূতপূর্ব সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এখন আমাদের অস্ত্র এসেছে, প্রায় পঞ্চাশ লাখ মুক্তি যােদ্ধা ট্রেনিং সমাপ্ত করে বাংলাদেশের সর্বত্র হড়য়ে পড়ছে। তারা শুধু বর্বর হানাদার পশুদের সাথেই যুদ্ধ করার জন্যই ট্রেনিং নেয়নি। বিশ্বের যেকোন শক্তির মােকাবেলা করার চ্যালেঞ্জ রাখে। এ বাংলার শ্যামল প্রান্তরে জন্ম নিয়েছে সুভাষ বসু শরিয়াতুল্লা… বক্তৃতাশেষে মুক্তি যুদ্ধে ট্রেনিংএর জন্য আবেদন জানালেন জনতার মধ্যে এক বিরাট চাঞ্চল্যের দেখা যায় এবং প্রত্যেকের মুক্তিযুদ্ধে ট্রেনিংএর জন্য বদ্ধপরিকর হয়। সেখান থেকে প্রায় শত শত যুবককে বেছে নিয়ে ট্রেনিং সেন্টারে পাঠানাে হয়। পরিশেষ সংগ্রামী অভিনন্দন জানায় ভাষণ শেষ করেন।
জাত বাংলা ॥ : ৪
১৪ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯