আইউবের পতন : বিচলিত আমেরিকা | মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের গোপন দলিল – জগলুল আলম
ঊনসত্তরে বাংলাদেশে মহাগণঅভ্যুত্থান পুরােপুরিভাবে শুরু হবার আগে থেকেই আমেরিকার দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল পাক-ভারত সম্পর্কের ওপর। বিশেষ করে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে একসঙ্গে স্বায়ত্তশাসনের দাবি জোরদার হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকা বুঝতে পারে যে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ এই গণআন্দোলন একদিন গােটা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ওপর মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করবে। ফলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির আলােকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার পরবর্তী দক্ষিণ এশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির কাঠামাে নিরূপণে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
১৯৪৭ সালে সৃষ্টিলগ্নে পাকিস্তান জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতিতে শামিল হলেও ১৯৫৩ সালের পর থেকে দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক মােড় পরিবর্তনের সূচনা দেখা যায়। সমাজতন্ত্র প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে জেনারেল আইসেনহাওয়ার এ সময় পাকিস্তান, ইরান এবং তুরস্কের পাশাপাশি গােটা পূর্ব এশিয়ায় বেশ কয়েকটি জোট গঠন করলে পাকিস্তান প্রায় তার সবগুলাের সদস্যপদ গ্রহণের আবেদন জানায়।১ ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি পারস্পরিক সমঝােতাভিত্তিক সামরিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তি সম্পাদন করে এবং সিয়াটো বা সাউথ ইস্ট এশিয়া ট্রিটি অর্গানাইজেশনের সদস্যপদ গ্রহণ করে।
পরের বছর পাকিস্তান বাগদাদ চুক্তির আকারে ইরান, ইরাক ও তুরস্কের সঙ্গে জোটে শামিল হয়। ১৯৫৯ সালে ইরাক সিয়াটো থেকে সরে গেলে এই জোটটি সেন্টো বা সেন্ট্রাল ট্রিটি অর্গানাইজেশন হিসেবে তার কাজ অব্যাহত রাখে ও পাকিস্তান সেন্টোর সদস্যপদে থেকে যায়। এ ছাড়া পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গােয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য নিজস্ব সামরিক ঘাঁটি ও অন্যান্য সুবিধা ব্যবহারের সুযােগ করে দেয়। বাস্তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের এই ঘনিষ্ঠতা যতটা
পৃষ্ঠা: ১৫
ছিল সােভিয়েত বা চীন বিরােধিতা, তার চেয়ে বেশি ছিল ভারতের সামরিক শক্তির সঙ্গে পাল্লা দেয়ার জন্য নিজের সামর্থ সঞ্চয় করা।
যাই হােক, ১৯৬৯ সালের পর থেকে মার্কিন দৃষ্টি ছিল পাকিস্তানের গােটা ঘটনাপ্রবাহের ওপর গভীরভাবে নিবদ্ধ। একই বছর ২৭ জানুয়ারি তদানীন্তন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান হেনরি কিসিঞ্জার পাকিস্তানের ওপর একটি রাজনৈতিক সমীক্ষা প্রণয়ন করে তা প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠান। সমীক্ষাটি ছিল মােটামুটিভাবে আইউব খান ও সে সময়কার পাকিস্তান পরিস্থিতির ওপর একটি বিস্তারিত আলােচনা।২
দলিলে বলা হয়,
আপাততভাবে আইউব খান সামরিক বাহিনীর সহযােগিতায় শান্তি স্থাপনে সক্ষম হলেও চারিদিকে যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে তাতে শেষ পর্যন্ত তার সরকারের পতন ঘটতে পারে। গােয়েন্দা সূত্রগুলাে জানাচ্ছে যে, আইউব শেষ পর্যন্ত টিকে যাবেন এবং সামনের নির্বাচনে জয়ী হয়েও আসবেন। কিন্তু এজন্য তাকে অত্যন্ত বুঝেশুনে পা ফেলতে হবে।
দলিলে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি এখন উত্তপ্ত। বেশিরভাগ লােকের ধারণা পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষপাতিত্ব করে পূর্ব পাকিস্তানকে শােষণ করা হচ্ছে। পশ্চিম পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও পাঠান নিয়ে একই মনােভাব থাকলেও পরিস্থিতি সেখানে ততটা মারাত্মক নয়।
আইউব সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির স্পষ্ট অভিযােগ রয়েছে। আসলে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে দুর্নীতিমুক্ত লােক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরকে নিয়েও বিরূপ সমালােচনা রয়েছে। এতে বলা হয়, সেনাবাহিনীর মধ্যম স্তরে কিছুটা অসন্তোষ থাকলেও গােটা বাহিনী এখনাে আইউবের অনুগত। বিরােধী রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি নিয়ে বড় বড় কথা বললেও তারাও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত। সাবেক বামপন্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভুট্টো একজন মাতাল। আজগর খান নিষ্কলুষ হলেও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাবর্জিত।
আইউব খানের স্বাস্থ্যগত সমস্যাও রয়েছে। কিছুদিন আগে তার লাংস বা ফুসফুসের জটিল রােগ ধরা পড়ে। বর্তমানে শঙ্কামুক্ত হলেও কতদিন কাজ করতে পারবেন তা বলা মুশকিল।
একই দিনে রাওয়ালপিণ্ডিস্থ মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্টে একটি টেলিগ্রাম পাঠানাে হয়।৩ টেলিগ্রামে বলা হয়,
আংশিকভাবে পারিবারিক চাপে আইউব খান বিরােধী দলের সঙ্গে একটা সমঝােতায় আসার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জোর গুজব রয়েছে।
তিনি আশ্বাস দিতে চাচ্ছেন যে পুনর্নির্বাচনের পর তিনি অবসর নেবেন এবং বিনিময়ে নিজ ও পরিবারবর্গের জানমালের নিশ্চয়তা দাবি করছেন। তবে
পৃষ্ঠা: ১৬
বেশিরভাগ লােক মনে করছেন যে, তার স্বাস্থ্যগত সমস্যা আবার দেখা না দিলে তার আবার নির্বাচনে দাঁড়াবার ইচ্ছা আছে যদি না সামরিক বাহিনী তাকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য করে।
পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অবস্থা এ সময় ছিল একেবারেই তুঙ্গে। ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি নবগঠিত সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।৪ পরিষদের পক্ষ থেকে ঘােষণা করা হয় ১১ দফা কর্মসূচি। পূর্ব পাকিস্তানের আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে জাগাে জাগাে বাঙালি জাগাে; বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর, তােমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ স্লোগানে। ছাত্রসমাজ এই আন্দোলনে মুখ্য নেতৃত্ব দেয়।
পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ এ সময় মােটামুটি চারটি স্তরে বিভক্ত হলেও ঊনসত্তরের আন্দোলনে সবাই ছিল একই দাবিতে মুখর। আওয়ামী লীগের ছাত্র। সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, কমিউনিস্ট পার্টির মেনন ও মতিয়া গ্রুপের পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ এই তিনটি সংগঠন ছিল আন্দোলনের মূল পুরােধা।
জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন আন্দোলনে যােগ দিলেও পাকিস্তান মুসলিম লীগের ছাত্র সংগঠন ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ফেডারেশন ছিল এই আন্দোলনের বাইরে।
মার্কিন সরকার বিশেষ করে রাওয়ালপিণ্ডিতে অবস্থিত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কার্যালয় এ সময় দেশের সার্বিক অবস্থা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল। ১৯৬৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাওয়ালপিণ্ডির মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনের স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে একটি টেলিগ্রাম পাঠানাে হয়। আইউব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন: প্রসপেক্ট অব সারভাইভাল শীর্ষক এই টেলিগ্রামে বলা হয় যে,
আইউব সরকার গত তিন মাসে দেশের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ গ্রহণে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।৫ আইউবের অবস্থা সঙ্গিন এবং তার পুরােপুরি অব্যাহতিই এখন। সবচাইতে বিবেচনার বিষয়।
এতে বলা হয়,
ক্ষমতা থেকে আগাম অব্যাহতি কিংবা সামরিক শাসন কোনােটাই অসম্ভব নয়। তবে দুটোতেই আইউব দুর্যোগের মুখে পড়বেন। কাজেই তিনি অন্য বিকল্পের সন্ধানে রয়েছেন। আইউব খানের রাজনৈতিক অনুসারী ও সমর্থকরা নিদারুণ হতাশার মধ্যে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধবাদীরা ইতােমধ্যেই তার জানমালের নিরাপত্তার ওপর হুমকি দিয়েছেন।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে বাইরের সব খবর আইউবের কাছে যথারীতি পেশ করা হচ্ছে না, যে কারণে তিনি অনেকটা অন্ধকারেই আছেন। ইতােমধ্যে আইউব। বিরােধী দলগুলাের সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনার কথা বললেও সংলাপে কোনাে কাজ হবে বলে মনে হয় না। পাকিস্তান টাইমসের সম্পাদক সুলেরি তার লেখা এক
পৃষ্ঠা: ১৭
কলামে মুজিব, ভুট্টো এবং আজগর খানসহ সকলের সঙ্গে সরাসরি আলাপ করে নির্বাচনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টারি পদ্ধতি প্রবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে গত সপ্তাহে প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে সামরিক সচিবের একটি গােপন বৈঠক এবং এয়ার মার্শাল নূর খানের চাকরির দুই বছরের মেয়াদ ১৯৬৯ সালের জুলাই থেকে সম্প্রসারণ প্রমাণ করে যে আইউব খান সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে সমর্থন আদায়ে পুরােপুরিভাবে সক্রিয় রয়েছেন।
সে বছর ফেব্রুয়ারিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত আইউব খান রাজনৈতিক দলগুলাের সঙ্গে সংলাপের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ইঙ্গিত দেন যে দেশের সঙ্গিন অবস্থা দূর করার লক্ষ্যে তিনি রাজনৈতিক দলগুলাের সঙ্গে একটি গােলটেবিল বৈঠকে আলােচনা করতে চান এবং আলােচনার মুখ্য বিষয় হবে তথাকথিত রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থা বিলুপ্ত করে মন্ত্রিপরিষদশাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের পদক্ষেপ।৬
১১ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ডাইরেক্টর অব দি ব্যুরাে অব ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিসার্চ থেকে ওয়াশিংটনে সেক্রেটারি অব স্টেট রজার্সের কাছে একটি নােট (নােট নং ৮২) পাঠানাে হয়। ইন্টেলিজেন্স রিসার্চের থমাস হল হিউজের পাঠানাে সেই নােটে বলা হয় যে,
তিন মাস মারদাঙ্গা পরিস্থিতি শেষে আইউব খান রাজনৈতিক দলগুলাের সঙ্গে একটি সংলাপে বসে বেসামরিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। আলােচনার জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে ১৭ ফেব্রুয়ারি।৭ আলােচনার মূল বিষয় হবে রাজনৈতিক সঙ্কট ও সম্ভাব্য সাংবিধানিক সংস্কার।
নােটে বলা হয়,
বিরােধী দলগুলাে সরাসরি আইউবের এ প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজন নেতা আলােচনার জন্য কতগুলাে শর্তের কথা উল্লেখ করেছেন। বােঝা যাচ্ছে যে নিজেদের মধ্যে অন্তর্দলীয় এবং আন্তঃদলীয় বিভে। থাকার কারণেই সবগুলাে বিরােধী দল মিলে একটি ঐক্যজোট গঠন করতে পারছে না। অন্যদিকে বিরােধী দলগুলাে ১৪ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে আইউববিরােধী একটি হরতাল আহ্বান করেছে।
এদিকে বিরােধী দলগুলাের সম্মিলিত সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান বৈঠকের জন্য পাঁচটি শর্ত দিয়েছেন। সেগুলাে হলাে: শহরাঞ্চল থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার, কারফিউ উঠিয়ে নেয়া, জরুরি অবস্থা ও সরকারের অসাধারণ ক্ষমতা প্রয়ােগের বিধান বিলুপ্তি, ছাত্র ও রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি এবং বেসামরিক অধিকার পুনঃপ্রবর্তন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে আইউব এর বেশিরভাগই মেনে নিয়েছেন যাতে বােঝা যায় যে আলােচনার মাধ্যমে সমঝােতায় পৌঁছাতে তিনি বেপরােয়া হয়ে উঠেছেন।
পৃষ্ঠা: ১৮
আরাে কয়েক মাস আগে আইউব খান এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে হয়তাে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত। কারণ ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই সামরিক বাহিনীর একটি অংশ গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের লক্ষ্যে গােলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠানের বিরােধিতা করে আসছিল। বিরােধী দলগুলাের একটি অংশও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল। তাদের। উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক সমঝােতা হােক আর না হােক আগামী নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে যতটা সম্ভব বেশি সংখ্যক আসন দখল করা।
মমতাজ দৌলতানা এমতাবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানের শেখ মুজিবের পক্ষাবলম্বন করেন। মুজিবের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চালু থাকায় তিনি তখনাে ছিলেন। অবরুদ্ধ অবস্থায়। ইতােমধ্যে গােলটেবিল বৈঠকের দিনক্ষণ ধার্য হয়ে গেলেও দৌলতানা বৈঠকের আগে শেখ মুজিবের মুক্তি দাবি করলেন। আওয়ামী লীগেরই কয়েকজন নেতা প্রস্তাব দিলেন যে শেখ মুজিবের মুক্তি না হলেও গােলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়া প্রয়ােজন। কিন্তু দৌলতানা তার দাবিতে অটল থাকলেন।৮ এভাবে গােলটেবিল বৈঠকের ভবিষ্যৎ এক রকম অনিশ্চিত হয়ে পড়লাে।
শেষ পর্যন্ত আইউব খান আরেক দফা পরাজয় মেনে নিয়ে গােলটেবিল বৈঠকে যােগদানের জন্য শেখ মুজিবকে প্যারােলে মুক্তি দিতে রাজি হলেন।
একই দিনে ১ ফেব্রুয়ারি রাওয়ালপিণ্ডির মার্কিন দূতাবাস থেকে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে দক্ষিণ এশিয়ার মার্কিন সামরিক সরবরাহ নমনীয় ও দ্রুততর করার প্রস্তাব দিয়ে একটি টেলিগ্রাম পাঠানাে হয়।৯ রাষ্ট্রদূতের পক্ষ থেকে পাঠানাে সেই টেলিগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার মার্কিন সামরিক স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য অনতিবিলম্বে এই নমনীয়তা কার্যকর করার প্রস্তাব দেয়া হয়। এতে বলা হয় যে
মার্কিন সরকার দুবছর যাবৎ অবিরাম প্রচেষ্টার পরও এ এলাকার জন্য একটি ট্যাংকও নির্মাণ করা হয়নি। অথচ আমরা অর্জন করেছি ভারতের বিরক্তি এবং জার্মানি, ইটালি, বেলজিয়াম এবং শেষ পর্যন্ত তুরস্কের অস্বস্তি। অন্যদিকে বিরাগভাজন হয়েছি ইরান এবং পাকিস্তানের।
এতে বলা হয় যে
তৃতীয় শক্তি হিসেবে তুরস্কের মাধ্যমে পাকিস্তানে প্রথম এম-৪৭ ট্যাংক পাঠানাের চুক্তি ১৫ মাস আগে স্বাক্ষরিত হলেও পরিস্থিতি এখন পর্বতের মূষিক প্রসবের মতাে দাঁড়িয়েছে। তুরস্কের মাধ্যমে আরাে ১২০টি পুরনাে ট্যাংক পাঠানাের কথা। তবে যে সময় লাগছে তাতে তার আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০০টি নতুন ট্যাংক বানিয়ে আনা সম্ভব ছিল। এমনকি প্রয়ােজনবােধে দুটি পৃথক চালানে ৬০টি করে ট্যাংক পাঠানাের জন্যও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরাে বলা হয় যে,
পাকিস্তান কিংবা দক্ষিণ এশিয়ার স্বার্থেই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক স্বার্থেই দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক সরঞ্জাম পাঠানাের মার্কিন নীতি অনতিবিলম্বে নমনীয় করার প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে।
পৃষ্ঠা: ১৯
এদিকে তুরস্কের মাধ্যমে পাকিস্তানে অস্ত্র পাঠানাের নীতি নমনীয়তা প্রস্তাব আসার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের মার্কিন দূতাবাস এর প্রবল প্রতিবাদ জানায়। ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ দিল্লিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বােয়েল ওয়াশিংটনে ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটে পাঠানাে এক টেলিগ্রামে অনতিবিলম্বে পাকিস্তানে যে কোনাে রকম অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করার দাবি জানান।১০ টেলিগ্রামে বলা হয় যে,
ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে অস্ত্রসজ্জিত করার যে কোনাে সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কেননা তা শুধু ভারতকে অস্ত্র নির্মাণ বাড়ানাের ব্যাপারেই উদ্বুদ্ধ করবে। তাছাড়া পাকিস্তান সরকারই যেখানে পতনােন্মুখ সেখানে নতুন করে সামরিক সাহায্য পাঠানাের কোনাে মানেই হয় না।
টেলিগ্রামে বলা হয়,
বিশ্বশান্তি সংরক্ষণ এবং অর্থনৈতিক উন্নতির স্বার্থে অস্ত্র সরবরাহের যে দাবি আমরা করছি সারা বিশ্বে তা অসাড় বলে স্বীকৃত হয়েছে। ১৯৫০ সালে এশিয়ায় অস্ত্র পাঠানাের উদ্দেশ্য ছিল চীন ও রাশিয়ার মধ্যে কমিউনিজম রােধ করা এবং এর ফলাফলও ছিল আমাদের অনুকূলে। কিন্তু পরবর্তীকালে আমাদের অস্ত্র। সরবরাহে শুধু রাজনৈতিক দোহাই দিতে হয়েছে এবং তার ফলে আমাদের সামরিক সাহায্য এলাকায় বাড়িয়েছে শুধু সামরিক উত্তেজনা। উন্নয়নশীল দেশগুলােতে সামরিক ব্যয় বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জনপ্রিয়তাবিহীন স্বৈরাচারের সহযােগী হিসেবে চিহ্নিত করা সহজ হয়েছে এবং জনগণকে বােঝানাে সম্ভব হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে বিশ্বশান্তির ধুয়া তুলে নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থে অস্ত্র বিক্রির চূড়ান্ত মহড়া প্রদর্শন করছে।
টেলিগ্রামে বলা হয়,
১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে অস্ত্রচুক্তি সম্পাদনের পর থেকেই ভারতের সঙ্গে আমাদের আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৬৭ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের সঙ্গে অস্ত্রচুক্তি জোরদার করার পর সেই আস্থাহীনতা আরেক দফা বেড়েছে। অন্যদিকে জার্মানি, ইটালি, বেলজিয়াম ও তুরস্ক থেকে পাকিস্তানে পুরনাে অস্ত্র পাঠিয়ে সেসব দেশে নতুন অস্ত্র পাঠানাের ফলে সে দেশগুলােও ভারতের বিরাগভাজন হয়েছে।
ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত টেলিগ্রামে বলেন,
যেসব দেশ নন-কম্যুনিস্ট প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহার করবে সেসব দেশে আমাদের অস্ত্র সরবরাহ পুরােপুরিভাবে বন্ধ করে দেয়া উচিত এবং তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া কিংবা দক্ষিণ ভিয়েতনামের মতাে যেখানে কমিউনিস্ট হুমকি প্রবল কেবলমাত্র সেসব দেশেই আমাদের অস্ত্র সরবরাহ করা উচিত।
পৃষ্ঠা: ২০
২০ ফেব্রুয়ারি নাগাদ আইউব খানের সমঝােতার সব রকম প্রচেষ্টা নস্যাৎ হয়ে যায়। সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের ডাইরেক্টর ব্যুরাে অব ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিসার্চের কার্যালয় থেকে সেক্রেটারি অব স্টেট রজার্সের কাছে একটি নােট পাঠানাে হয়।১১ এতে বলা হয় যে,
পাকিস্তানে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় জনতার গােলযােগ। ফেব্রুয়ারি ১৯-এর গােলটেবিল বৈঠক ভেস্তে গেছে, যে কারণে রাজনৈতিকভাবে আর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব নয়।
এতে বলা হয়,
গ্রামাঞ্চলে আইউব খানের প্রতি সমর্থন থাকলেও আন্দোলন প্রধানত শহরমুখী। পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থিতি ক্রমশ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের দিকে মােড় নিচ্ছে। এটা এখন স্পষ্ট যে আইউব ভুলবশত ভেবেছিলেন তার প্রধান বিরুদ্ধবাদীরা হবে চিরায়ত বিরােধী দলগুলাে। কারণ তারা রক্ষণশীল এবং আইউব খান তাদের সামলে রাখতে পেরেছিলেন। এদের অধিকাংশ ছিলেন গণতান্ত্রিক মাের্চাভুক্ত। অথচ এর বাইরে নব্য রাজনীতিকদের নেতৃত্বাধীনে। বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানে বিদ্রোহের দাবানল জ্বলে উঠবে তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি।
জুলফিকার আলী ভুট্টো, মওলানা ভাসানী এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ছাত্র এবং শহুরে যুবকরা যেভাবে একত্রিত হয়েছে তা সামাল দেয়া। আইউবের পক্ষে কঠিন। এ অবস্থায় আইউব সামরিক শাসন জারি করলেও এটা স্পষ্ট যে তিনি সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে থাকবেন না। এ অবস্থায় গােলযােগ থামানাের জন্য সেনাবাহিনীও রাস্তায় নামবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। অন্যদিকে জাতীয় পর্যায়ের দলগুলাে নিয়ে কেয়ারটেকার টাইপের একটা সরকার গঠনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। যে আকারেই হােক, তাতে আইউব খানের মুখ্য ভূমিকায় থাকার সম্ভাবনা নিতান্তই কম।
বিরােধী দলের উজ্জীবিত অংশটিকে সামাল দেয়া হবে কঠিন। পূর্ব পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া কোনাে পথ নেই এবং এর একমাত্র উপায় হলাে শেখ মুজিবের সঙ্গে কোনাে না কোনােভাবে সমঝােতায় আসা।
সবচাইতে বড় সমস্যা হবে ভুট্টোকে নিয়ে। বেশিরভাগ বিরােধী দল তাকে অপছন্দ করে। সম্ভবত সেনাবাহিনীও তাকে সহ্য করবে না। কাজেই বিদ্রোহীরা কোনাে কারণে ক্ষমতা নিলেও ভুট্টোর আচরণের কারণে সে ক্ষমতা তারা প্রয়ােগ করতে পারবে বলে মনে হয় না। আইউব আসলে দেশে শক্তিশালী। একটা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমতাবস্থায় দেশটি একটি স্বাভাবিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়াতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
পৃষ্ঠা: ২১
পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা তখন উত্তাল। ছাত্রদের ১১ দফা দাবি উত্থাপনের সঙ্গে সঙ্গেই কাউন্সিল মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ন্যাশনাল ডেমােক্রেটিক ফ্রন্ট, আওয়ামী লীগ ও ন্যাপের সমবায়ে গঠন করা হয়েছিল গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ। এর মূল দাবি ছিল কেন্দ্রীয় প্রশাসন ব্যবস্থা, সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভােটাধিকারের ভিত্তিতে সাধারণ নির্বাচন, জরুরি আইন তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার এবং সকল রাজবন্দির মুক্তি। রাজনৈতিক বন্দিদের মধ্যে এসময় প্রধানত অন্তরীণ ছিলেন শেখ মুজিব, ওয়ালী খান এবং ভুট্টো। এমনকি কট্টর সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন এনএসএফ-এর একটি অংশও এসে এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে।১২
সরকারবিরােধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে সৃষ্ট গণঅভ্যুত্থানে ১৯৬৮ সালে ১১ জনের মৃত্যু ও ১৫৩০ জন আটক, জানুয়ারি ১৯৬৯-এ ৫৭ জনের মৃত্যু, ১৪২৪ জন আহত ও ৪৭১০ জন আটক, ফেব্রুয়ারিতে ৫৭ জনের মৃত্যু, ১০০ জন আটক ও ৪১২ জন আহত হয়।১৩
১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারাধীন আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হক বুলেটবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এর ফলে পরিস্থিতি এক মারাত্মক আকার ধারণ করে। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে পরদিন জহুরুল হকের শবমিছিল থেকে এক জঙ্গি হামলা পরিচালনা করে দুজন মন্ত্রী ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারপতির বাসভবন, মুসলিম লীগের অফিস ভাঙচুর করা হয়। বেগতিক দেখে সরকার শহরে সান্ধ্য আইন জারি করেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মােহাম্মদ শামসুজ্জোহা উত্তেজিত ছাত্রদের সামাল দেয়ার সময় সৈনিকের বেয়নেটবিদ্ধ হয়ে নিহত হলে বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।১৪
পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্স হেনরি কিসিঞ্জার হুকুম দেন যে অনতিবিলম্বে দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ নীতির ওপর একটা সমীক্ষা চালাতে হবে।১৫ সেক্রেটারি অব স্টেট, সেক্রেটারি অব ডিফেন্স, এআইডির অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এবং সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালকের কাছে পাঠানাে সেই নির্দেশে বলা হয় যে,
প্রেসিডেন্টের নির্দেশে (১) দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক সরবরাহের ওপর একটি সুসংহত নীতি প্রণয়নের সমস্যাবলি চিহ্নিত করে, (২) দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন। স্বার্থের বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি কী হতে পারে তা নিরূপণ করে এবং (৩) সেসব স্বার্থ আদায়ের জন্য বিকল্প কৌশল স্থির করে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে আলােচনার জন্য একটি সমীক্ষা প্রণয়ন করতে হবে। এ সমীক্ষা চালাতে হবে নিকট প্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার আন্তঃবিভাগীয় গ্রুপগুলাের সমন্বয়ে।
পৃষ্ঠা: ২২
১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন। ভাের থেকে ভাষা দিবস পালনের জন্য হাজার হাজার লােক রাস্তায় নেমে আসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসি অডিটোরিয়ামে আয়ােজন করা হয় এক আলােচনা সভার। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর আবদুল হাই। সেমিনারে ভাষা আন্দোলন অব্যাহত রাখার প্রস্তাব গৃহীত হয়।
জনগণের দাবির মুখে সেদিন আইউব খান ঘােষণা দেন যে তিনি আর পরবর্তী প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না। পরদিন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হিসেবে আটককৃত শেখ মুজিবুর রহমানসহ রাজবন্দি হিসেবে আটক মনি সিং, নগেন সরকার, রবি নিয়ােগী এবং আরাে ৩১ জনকে মুক্তি দেয়া হয়।১৬
রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীলকরণের সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে আইউব খান ১৯৬৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাওয়ালপিণ্ডিতে এক সর্বদলীয় গােলটেবিল বৈঠকের আয়ােজন করেন। দেশের সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সেখানে আমন্ত্রণ জানানাে হয়। শেখ মুজিবুর রহমান প্যারােলে গােলটেবিল বৈঠকে যেতে অস্বীকার করেন। আওয়ামী লীগ থেকে জানানাে হয় যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জড়িত সকল অভিযুক্তের মামলা প্রত্যাহার করা না হলে আওয়ামী লীগ বৈঠকে যােগ দেবে। পরদিন শেখ মুজিবসহ ৩৪ জনকে মুক্তি দিয়ে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
গােলটেবিল বৈঠকে যােগ দেন শেখ মুজিবুর রহমান, বিচারপতি মাের্শেদ ও কৃষক শ্রমিক পার্টির হামিদুল হক চৌধুরী। ভাসানী এবং ভূট্টো এই অধিবেশনে যােগ দেননি। ১০ মার্চ অধিবেশনে শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবিনামা উত্থাপন করে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আঞ্চলিক প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন দাবি করেন। তার অন্যান্য দাবির মধ্যে ছিল ফেডারেল রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা।
জামায়াতে ইসলামীর নেতা মাওলানা মওদুদী শেখ মুজিবের দাবির তীব্র বিরােধিতা করেন। এক পর্যায়ে আইউব খান যখন তার বিবৃতিতে পূর্ব পাকিস্তানে প্রচুর পরিমাণে অবৈধ অস্ত্রের চালান আসছে বলে অভিযােগ করেন শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রতিবাদ জানান। এয়ার মার্শাল আজগর খান অভিযােগ করেন যে, স্বার্থবাদী একটি মহল গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে নস্যাৎ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পরবর্তীকালে ভুট্টো এক বিবৃতিতে বলেন যে, এই অধিবেশন আসলে পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র এবং আইউব খান পার্লামেন্টারি সিস্টেমে না গিয়ে আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকার পাঁয়তারা করছেন।
২৬ ফেব্রুয়ারি গােলটেবিল বৈঠকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী ভাষণে আইউব খান বলেন, আমার নিজস্ব চিন্তাপ্রসূত সংবিধান শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। এখন জাতির ভাগ্য নির্ধারণ করার দায়িত্ব আপনাদের। মনে রাখবেন আমরা কেউই চিরদিন বেঁচে থাকব না, কিন্তু নয়া সংবিধান যেন জাতিকে টিকিয়ে
পৃষ্ঠা: ২৩
রাখতে পারে। এরপর ঈদের ছুটির জন্য অধিবেশন স্থগিত রেখে ১০ মার্চ পুনরায় অধিবেশন আহ্বান করা হয়।১৭
আইউব খান তার সহযােগীদের সঙ্গে আলােচনার জন্য কিছুটা সময় চেয়ে নেন এবং শেষ পর্যন্ত মার্চের ১৩ তারিখে প্রাপ্তবয়স্কদের ভােটাধিকার এবং মন্ত্রিপরিষদ পরিচালিত সরকার ব্যবস্থার দাবি মেনে নেন। কিন্তু এক ইউনিট প্রথা বাতিল করতে এবং প্রাদেশিক পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দেয়ার দাবি মেনে না নেয়ার সিদ্ধান্তে তিনি অটল থাকেন।
গােলটেবিল বৈঠকের পর শেখ মুজিবুর রহমান বিরােধীদলীয় জোট গণতান্ত্রিক সংগ্রাম কমিটি থেকে বের হয়ে আসেন। আজগর খান তার নিজস্ব জাস্টিজ পার্টি গঠন করেন এবং নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান তার পাকিস্তান ডেমােক্রেটিক পার্টি গুটিয়ে নেন। আইউব খান ইউসুফ হারুনকে পশ্চিম পাকিস্তানের এবং ড. এন এম হুদাকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিয়ােগ করেন। এদের দুজনই ছিলেন মুজিবের কাছের লােক হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এর পরেও বিদ্রোহের দাবাগ্নি বিন্দুমাত্র প্রশমিত হলাে না।
১৭ মার্চ আইউব খান তৎকালীন সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে নিভৃতে ডেকে পাঠান ও প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থাদি নিতে বলেন। ইয়াহিয়া খান জানান যে তিনি যদি কেবলমাত্র সরে যেতে চান তা হলে তা হবে ভয়াবহ। মার্শাল ল’ ছাড়া সরে গেলে স্পিকার আব্দুল জব্বার খান হবেন রাষ্ট্রপতি এবং তিনি একজন বাঙালি। ২৪ মার্চ আইউব ইয়াহিয়ার হাতে একটি চিঠি দিয়ে জানান যে, আমার এখন সরে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই এবং এরপর সেনাবাহিনীকেই দেশের পুরাে নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে হবে।
এর পরদিন আইউব খান জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে পদত্যাগ করেন এবং ইয়াহিয়া খান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালের শাসনতন্ত্র রহিত করা হয়।১৮
২৫ মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্স হেনরি কিসিঞ্জার প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন।১৯ এতে বলা হয় যে,
আজ আইউব খান পদত্যাগ করে মার্শাল ল’ জারি করেছেন এবং সেনাবাহিনী প্রধান ইয়াহিয়া খানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত করেছেন। আইউব বলেছেন, দেশকে ধ্বংসােনুখ রেখে আমি আর ক্ষমতায় থাকতে চাই না।
স্মারকলিপিতে বলা হয়,
এখন প্রশ্ন হলাে তার পদত্যাগ এবং মার্শাল ল’ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ মানবেন কি না। যদি মেনে নেন তা হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক
পৃষ্ঠা: ২৪
হয়ে আসবে। খুব সম্ভবত নয়া সামরিক সরকার আইউব খানের রেখে যাওয়া অবস্থান থেকে দেশে একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামাে গড়ে তােলার জন্য বিরােধী দলগুলাের নেতাদের সঙ্গে সমঝােতা ও দেনদরবার অব্যাহত রাখবেন। তবে পূর্ব পাকিস্তান যদি মনে করে নেয় যে এটা পশ্চিম পাকিস্তানি জান্তার এক ধরনের সামরিক অভ্যুত্থান তা হলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। এতে অভ্যন্তরীণ গােলযােগ অনেক বেড়ে যাবে এবং বহিঃশক্তি বিশেষ করে চীনের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠবে। পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে তা এ মুহূর্তে বলা মুশকিল। তবে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে মিলিটারি পাঠানাের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
আইউব এবং সেনাবাহিনী হয়তাে মনে করছেন যে সামরিক বাহিনী দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। সেনাবাহিনী নিজে নিজেই অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে এবং আইউবকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে এমন সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে পরস্পরের মতৈক্যের ভিত্তিতেই সবকিছু ঘটেছে। অ্যাম্বেসেডর ওয়েলহার্ট পূর্ব পাকিস্তানের ১৫০০ ও পশ্চিম পাকিস্তানের ৩০০০ আমেরিকানকে প্রয়ােজনবােধে দেশে স্থানান্তরের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।
পাকিস্তানে এত তাড়াতাড়ি সেনাশাসন চলে আসতে পারে তা বােধ হয়। পশ্চিমা শক্তি বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিন্তা করেনি। পূর্ব পাকিস্তানে সঙ্গিন অবস্থার প্রেক্ষাপটে এটা মনে করা স্বাভাবিক ছিল যে আইউব খান নিশ্চয়ই বিকল্প কোনাে ব্যবস্থা হাতে রেখেছিলেন এবং দেশের অভ্যন্তরীণ গােলযােগের প্রেক্ষাপটে প্রয়ােজনবােধে সেনাবাহিনী তলব করে হলেও পরিস্থিতি দমন করতে পারবেন।
আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচলিত হওয়ার কারণ ছিল অন্যত্র। ১৯৫০ সালের অক্টোবরে আইউব খান ক্ষমতারােহণ করার পর ১৯৫৯ সালের ৫ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সামরিক ও সহযােগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। যুক্তরাষ্ট্র এ সময় পাকিস্তানে নিরাপত্তা হুমকির বিরুদ্ধে, সবরকম সহযােগিতার আশ্বাস দেয়।২০ দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি সংস্থাপন এবং পাকিস্তানের স্বাধীনতা ও সংহতি বজায়ে সাহায্য করাও ছিল এই চুক্তির উদ্দেশ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বলে নিশ্চয়তা দিয়েছিল যে পাকিস্তানের ওপর কোনাে আঘাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপরই আঘাত বলে বিবেচনা করা হবে।২১ এভাবে আমেরিকার দুটি উদ্দেশ্যই সাধিত হয়। প্রথমটি হলাে দক্ষিণ এশিয়ার কমিউনিস্ট আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে। ভিত্তি করে শক্তিশালী একটি বলয় গড়ে তােলা এবং অপরটি ছিল পার্শ্ববর্তী সােভিয়েত অনুপ্রাণিত ভারতের সম্ভাব্য হামলা থেকে পাকিস্তানকে রক্ষা করা।
এর আগে ১৯৫৪ সালের মে মাসে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক ও সহযােগিতা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল যা পরবর্তীকালে সিয়াটোতে রূপ নেয়। এ
পৃষ্ঠা: ২৫
সময় যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ব্রিটেন, ফ্রান্স, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এই বলয়ে শামিল হয়। এর এক বছর পর পাকিস্তান যােগ দেয় বাগদাদ চুক্তিতে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র শামিল হলেও ব্রিটেন, তুরস্ক, ইরান ও ইরাক স্বাক্ষর করে। ১৯৫৮ সালে ইরাক বাগদাদ চুক্তি থেকে সরে গেলে এর নয়া নামকরণ করা হয় সেন্টো বা সেন্ট্রাল ট্রিটি অর্গানাইজেশন এবং তুরস্ক, ইরান ও পাকিস্তান এই জোটে থেকে যায়। আমেরিকার আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করা যাতে করে রাশিয়ার মিলিটারি রিসার্চ সেন্টারগুলাে ভালােভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের এসব তৎপরতায় চীন খানিকটা অস্বস্তি অনুভব করছিল কারণ এসমস্ত জোটভিত্তিক চুক্তি ছিল চীন, রাশিয়া ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে।২২
১৯৫৯ সালের ৩০ এপ্রিল আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল তৎকালীন সেক্রেটারি অব স্টেট ডগলাস ডিলনের নেতৃত্বে এক বৈঠকে বসে ও সিন্ধু নদের পানি বণ্টন প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানকে সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরের মাসে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে অস্ত্রের একটি নতুন চালান প্রেরণ করে ও পাকিস্তানকে এফ১০৪ জঙ্গি বিমান দেয়া প্রতিশ্রুতি দেয়। এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনাে অবকাশ নেই যে ১৯৫০-৬০ সালে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি ছিল সম্পূর্ণভাবে মার্কিনপন্থী।
অবশ্য কেনেডি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর এ সম্পর্কে কিছুটা ফাটল ধরে। ১৯৬০ সালে কেনেডি ভারতের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অর্থ সাহায্য দিলে আইউব খান খানিকটা ঘাবড়ে যান। এ সময় তিনি দাবি করেন যে পাকিস্তান হলাে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র বন্ধু এবং একই সঙ্গে সিয়াটো ও সেন্টোর সদস্যভুক্ত একমাত্র দেশ। ১৯৬১ সালের মে মাসে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট লিণ্ডন বি জনসন পাকিস্তান সফরে এলে আইউব খান তাকে বােঝাতে সক্ষম হন যে পাকিস্তানকে সামরিকভাবে আরাে শক্তিশালী করা দরকার এবং ভারত হলাে পাকিস্তানের জন্য সরাসরি একটি হুমকি।
যাই হােক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে আইউব খানের অভাবিত ও আকস্মিক পতনের ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন নীতিমালা ঢেলে সাজানাের প্রয়ােজনীয়তা দেখা দিতে পারে। প্রায় ১৫ বছরের একের পর এক প্রচেষ্টায় ক্যুনিস্টবিরােধী ব্লকের সহযােগী শক্তি হিসেবে আইউব খানকে সঙ্গে পাবার পর সেই আইউবের পতন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অবশ্যই ছিল এক মহা দুশ্চিন্তার কারণ ও উপলক্ষ।
তথ্য নির্দেশিকা
১ পিটার ব্লাড, (সম্পাদিত), পাকিস্তান : এ কান্ট্রি স্টাডি; ওয়াশিংটন, লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের বিশেষ দলিল।
২ ন্যাশনাল আর্কাইভস, নিক্সন প্রেসিডেন্সিয়াল মেটারিয়ালস, বক্স-১ প্রেসিডেন্টের ডেইলি ব্রিফিং, একান্ত গােপনীয়। ভলিউম ই-৭, ডকুমেন্টস অন সাউথ এশিয়া ১৯৬৯-১৯৭২।
৩ ন্যাশনাল আর্কাইভস, আর জি ৫৯, সেন্ট্রাল ফাইলস ১৯৬৭-১৯৬৯, পিওএল (রাজ) ১৫-১, পাক সিক্রেট, প্রায়ােরিটি।
৪ বেঙ্গলি ন্যাশনালিজম অ্যান্ড এন্টি আইউব মুভমেন্ট : এ স্টাডি অব দি রােল অব স্টুডেন্টস, মাহবুব হােসেন।
৫ ন্যাশনাল আর্কাইভ, আর জি ৫৯, সেন্ট্রাল ফাইলস, ১৯৬৭-৬৯ পিওএল ২৩-৮ পাক, গােপনীয় অগ্রাধিকারমূলক একইসঙ্গে আঙ্কারা, জেদ্দা, কাবুল, করাচি, লন্ডন, মস্কো, নয়াদিল্লি, তেহরান, ঢাকা, লাহাের, পেশােয়ারের প্রেরিত।
৬ মাহমুদ আলী, কনসেপ্টস পাবলিকেশন ট্রাস্ট, ইসলামাবাদ।
৭ ন্যাশনাল আর্কাইভ, আর জি ৫৯, সেন্ট্রাল ফাইলস, ১৯৬৭-৬৯, পিওএল ২৩-৮ পাক, গােপনীয় ইন্টেলিজেন্স। নােট নং ৮২।
৮ মাহমুদ আলী, প্রাগুক্ত।
৯ টেলিগ্রাম ১৪৩৯, ন্যাশনাল আর্কাইভ, আর জি ৫৯, সেন্ট্রাল ফাইলস ১৯৬৭-৬৯, ডিইএফ ১২-৫ ভারত, গােপনীয়।
১০ ন্যাশনাল আর্কাইভ, আর জি ৫৯, সেন্ট্রাল ফাইলস ১৯৬৭-৬৯, ডিইএফ ১২-৫, গােপনীয়, অগ্রাধিকারমূলক, টেলিগ্রাম নং-২৩০৮।
১১ ন্যাশনাল আর্কাইভ, আর জি ৫৯, সেন্ট্রাল ফাইলস ১৯৬৭-৬৯, পিওএল ২৩-৮, পাক, গােপনীয়, নােট নং-১৭, ২০ ফেব্রুয়ারি’ ৬৯।
১২ www.banglapediasearch.com.bd
১৩ তারিক আলী, ক্যান পাকিস্তান সারভাইভঃ লন্ডন, পেঙ্গুইন বুকস ১৯৮৩ পৃ. ৮১। আরাে দেখুন : পাকিস্তান : মিলিটারি রুল অব পিপলস পাওয়ার, নিউইয়র্ক, মরাে অ্যান্ড কোম্পানি, ১৯৭০, পৃ. ২০৬।
১৪ প্রাগুক্ত
১৫ ন্যাশনাল আর্কাইভস, নিক্সন প্রেসিডেন্সিয়াল মেটারিয়ালস, এনএসসি ফাইলস, বক্স ৩৬৫, সাবজেক্ট ফাইলস, ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডি মেটারিয়ালস নং ১-৪২।
পৃষ্ঠা: ২৭
১৬ আলতাফ গওহর, আইউব খান, পাকিস্তানস ফার্স্ট মিলিটারি রুলার, লাহাের, সাং এ মিলস পাবলিশার্স, ১৯৯৩, পৃ. ৪৩৫
১৭ ডন ডট কম। ফাইনাল ডেইজ, আইউব গােজ আউট, শেখ আজিজ, ২০১১-১২
১৮ প্রাগুক্ত
১৯ ন্যাশনাল আর্কাইভস, নিক্সন প্রেসিডেন্সিয়াল মেটারিয়ালস, এনএসসি ফাইলস, বক্স ৬২৩, কান্ট্রি ফাইলস, মিডল ইস্ট, পাকিস্তান, ১ম খণ্ড, ১ জানুয়ারি-৩০ নভেম্বর’৬৯। গােপনীয়।
২০ মােহাম্মদ ইকবাল ও সামিয়া খালিদ, পাকিস্তানিয়াত, জার্নাল অব পাকিস্তান স্টাডিজ, ৩য় খণ্ ১ম সংখ্যা, ২০১১। পাকিস্তানস রিলেশনস উইথ ইউনাইটেড স্টেটস ভিউয়িং আইউব খানস পিরিয়ড।
২১ ডন, করাচি, ৭ মার্চ, ১৯৫৯।
২২ ডেনিস কক্স, দি ইউনাইটেড স্টেটস অ্যান্ড পাকিস্তান, করাচি, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০০১, পৃ. ১০৪।
পৃষ্ঠা: ২৮
Reference: মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেনেটর গোপন দলিল – জগলুল আলম