সম্পাদকীয়
দৈনিক পাকিস্তান
২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
শান্তি ও শৃঙ্খলার প্রশ্নে
কয়েক মাস ব্যাপী অশান্তির পর দেশে মোটামুটিভাবে একটা সহজ পরিবেশ গড়িয়া ওঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে। এই সম্ভাবনা যাহাতে পরিপূর্ণরূপে সত্য হইয়া উঠে সেদিকে সকলেরই লক্ষ্য রাখা কর্তব্য বলিয়া আমরা মনে করি। বিগত দুই তিন মাসের বিক্ষোভ-ধর্মঘটের মধ্য দিয়া দেশের মানুষ পরিবর্তনের সপক্ষে তাহাদের অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন। সরকার জনগণের সেই ইচ্ছার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করিয়া একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করিয়াছেন এবং ছাত্র সমাজ ও জনগণের বহুবিধ দাবীও পূরণ করিয়াছেন। অন্যান্য বিষয় সর্বদলীয় বৈঠকে আলোচিত হইবে বলিয়া সরকার আশ্বাস দিয়াছেন। এই অবস্থায় আলাপ-আলোচনার অনুকূল পরিবেশ গড়িয়া তোলার জন্য সকল পক্ষ হইতেই উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত
দেশবাসীর অভাব-অভিযোগ এবং দাবীদাওয়া সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণরূপে সচেতন। নিজেদের ইচ্ছাকে অভিব্যক্তি দেওয়ার জন্য দেশের মানুষ ইতিমধ্যে বহু প্রাণ বিসর্জন দিয়াছেন, স্বীকার করিয়া লইয়াছেন বহু ত্যাগ। তাহাদের এই দৃঢ় সংকল্পের জন্যই রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমান রূপ পরিগ্রহ করিতে পারিয়াছে। জনগণ বিজয়ী হইয়াছেন। ইতিপূর্বে আমরা একাধিকবার বলিয়াছি যে, জনগণের অসন্তোষ দূর না করিলে বিক্ষোভের অবসান ঘটিবে না। বর্তমান সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সকল প্রশ্ন ও সকল দাবী ভালভাবে বিশ্লেষণ করিয়া দেখা দরকার। কিন্তু একই সঙ্গে আলাচনা ও বিচার বিশ্লেষণের জন্য দেশে শান্ত ও স্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তাও স্বীকার করিয়া লইতে হইবে। সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত নেতা শেখ মুজিবর রহমান গতকাল প্রদত্ত এক বিবৃতিতে জনসাধারণের প্রতি আইন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আহ্বান জানাইয়াছেন। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই আহ্বানের গুরুত্ব সকলকেই উপলব্ধি করিতে হইবে।
নেতৃবৃন্দের প্রতি আমাদের আবেদন, আপনারা সম্মিলিতভাবে দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট মোচনের উপায় উদ্ভাবন করুন। শাসনতান্ত্রিক সমস্যা জনগণের মৌলিক অধিকারগত প্রশ্ন অবশ্যই আলোচ্য কিন্তু আমরা মনে করি, অর্থনৈতিক সমস্যাবলীও বিবেচিত হওয়া উচিত। কারণ সাধারণ মানুষের জীবনে অন্নবস্ত্রের সমস্যাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়া প্রতিফলিত সমস্যাবলী পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা প্রয়োজন—এই নীতি যখন সর্বমহলে স্বীকৃতি লাভ করিয়াছে তখন স্থায়ী মীমাংসার জন্যই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯