জীবনচিত্র নামঃ ডা. মেজর মুজিবউদ্দিন আহমেদ
Dr. Major Mujibuddin Ahmed
ডাকনামঃ মুজিব
পিতার নামঃ আজিমউদ্দিন সরদার
মাতার নামঃ বালেকা বানু
ভাইবোনের সংখ্যাঃ তিনজন
ধর্মঃ ইসলাম
স্থায়ী ঠিকানাঃ বাড়ি-৯৮, সড়ক নবাবগঞ্জ রোড,
ওয়ার্ড-৫৯, ডাকঘর-পোস্তা, থানা-লালবাগ,
জেলা-ঢাকা-১২১১
শহীদ ডা. মুজিবউদ্দিন আহমেদ
নিহত হওয়ার সময় ঠিকানাঃ বাড়ি-ই-৯৬৮, সড়ক-গ্রেটার রোড, কাদিরগঞ্জ, থানা-রাজশাহী সদর, জেলা-রাজশাহী
জন্মঃ ১ জুলাই, ১৯১৬
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
ম্যাট্রিকঃ পোসম সেন্ট্রাল স্কুল ঢাকা, ১৯৩৪
এলএমএফ, এমবিবিএসঃ Bengal Medical Service, Calcutta, India, ১৯৪০
AMTC: Ponna, India, ১৯৪৪। Army School of Hyegine, Lucknow, ১৯৪৫
হত্যাকারীর পরিচয়ঃ পাকিস্তান সেনাবাহিনী (সম্মুখযুদ্ধে নিহত)
নিহত হওয়ার তারিখঃ ২৬ এপ্রিল, ১৯৭১
মরদেহঃ পাওয়া যায়নি
স্মৃতিফলক/স্মৃতিসৌধঃ আলাদাভাবে নেই। বিএমএ কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভবন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্মৃতিফলকে নামাঙ্কিত আছে।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হিসেবে সাহায্য/দান/পুরস্কারঃ পাননি।
স্ত্রীর নামঃ সামসুন নাহার
বিয়েঃ ১৬ এপ্রিল ১৯৪২
সন্তান-সন্ততিঃ ছয় পুত্র, দুই কন্যা
ইঞ্জিনিয়ার শারফুদ্দিন আহমেদ, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ
হাজী ফখরুদ্দিন আহমেদ, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার, আমেরিকা
হাজী রুকুনউদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিকতায় এমএসসি, ঢাকা
হাজী কামালউদ্দিন আহমেদ, বিএসসি, ব্যবসায়ী, ঢাকা
হাজী সদরউদ্দিন আহমেদ, বিএসসি, ব্যবসায়ী, ঢাকা
হাজী নাসিরউদ্দিন আহমেদ, বিএসসি, অনার্স, ব্যবসায়ী, ঢাকা
লায়লুন নাহার, এসএসসি, গৃহিণী, ঢাকা
সাবেকুন নাহার, গৃহিণী, ঢাকা
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ নিকটাত্মীয়ঃ
ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন আহমেদ (শহীদ ডা. মেজর মুজিবুদ্দিন আহমেদের জ্যেষ্ঠপুত্র)
তথ্য প্রদানকারী
শামসুন নাহার
শহীদ চিকিৎসকের স্ত্রী
বাড়ি-৯৮, সড়কঃ নবাবগঞ্জ রোড, ওয়ার্ড-
৫৯, ডাকঘরঃ পোস্তা, থানাঃ লালবাগ,
জেলাঃ ঢাকা-১২১১
২৯৬ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ
আমার বাবা
শহীদ ডা. মেজর মুজিবউদ্দিন আহমেদ
আলহাজ সদরউদ্দিন আহমেদ
একজন খাঁটি মুসলমান। একজন দেশপ্রেমিক সেনানায়ক। একজন সেবাপরায়ণ চিকিৎসক। একজন বন্ধুবৎসল প্রতিবেশী। একজন দায়িত্ববান স্বামী। একজন প্রকৃত মানুষ। একজন আদর্শ বাবা।
তিনি আমার বাবা শহীদ ডা. মেজর মুজিবউদ্দিন আহমেদ। কঠোর নিয়মের মধ্যে, মিতব্যয়িতার মধ্যে যিনি নিজের সারাটা জীবন অতিবাহিত করেছেন, সন্তানদেরও সেই শিক্ষা দিয়েছেন সেভাবেই মানুষ করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তাঁর ছিল অবিচল আস্থা এবং তাঁর নির্দেশিত প্রতিটি কর্তব্য পালনে তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর।
জাতীয় ও বিজাতীয় শত্রুদের হাত থেকে মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য তিনি ছিলেন একজন অকুতোভয়, সম্পূর্ণ সজাগ, কৰ্তব্যনিষ্ঠ প্রহরী। এসবই ছিল পাকিস্তানদের কাছে অসহনীয়। যারই ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে হানাদার পাকিস্তানি ও তাদের এদেশীয় কুলাঙ্গার-রাজাকার বাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে তাঁর ছেলের সাথে তিনিও শহীদ হন।
আমার বাবা পুরান ঢাকার হাজারীবাগ এলাকার ছেলে। ডাক্তার হওয়ার পরে মিটফোর্ড হাসপাতালে চাকরি করতেন। এলাকার লোকদের কাছে তিনি খুবই নম্ৰ স্বভাবের, মিশুক-সর্বোপরি একজন খাঁটি মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অনেক সময় লোকদের ফ্রি চিকিৎসা দিতেন, ওষুধপত্র দিয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। ঢাকার বিডিআর (১নং গেটের) হাসপাতাল উনারই তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত হয়। মিতব্যয়ী ও খুবই সাধারণ জীবনযাপন পদ্ধতি ছিল তাঁর। নিয়মিত তাহাজ্জুতের নামাজ পড়তেন।
একটা কথা উনি প্রায়ই বলতেন, আমাদের বড় অপরাধ যে আমরা বাঙালি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে উনার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সত্তরের নির্বাচনের সময় বঙ্গবন্ধু আমাদের রাজশাহীর বাসায় এসে বাবার সাথে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করতেন। দুপুরে আমাদের বাসায় লাঞ্চও করেন। উনার সাথে ছিলেন কামরুজ্জামান, তোফায়েল আহমেদ, শাজাহান সিরাজ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিত্সক জীবনকোষ ২৯৭
শহীদ ডা. মুজিবউদ্দিন আহমেদ
তারও আগে পাকিস্তানি সরকার তাকে আগরতলা মামলায় ফাসিয়ে দিয়েছিল। পদমর্যাদায় তিনি ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল। কিন্তু আগরতলা মামলার পরে তার রাঙ্কিং কমিয়ে মেজর করা হয় এবং তাকে দেড় বছর সাসপেন্ড করে রাখে পাকিস্তান সরকার। পাকিস্তানি আর্মিদের কেউ কেউ তাকে পছন্দ করতেন তার সত্যবাদিতার জন্য। ভালো লোক হিসেবে তার একটা পরিচিতি ছিল। কিন্তু বেশিরভাগ পাকিস্তানি সামরিক। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তাকে অপছন্দ করতেন তার বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার জন্য, বাঙালিদের অকৃত্রিম ভালোবাসার জন্য, বঙ্গবন্ধুর সাথে তার সুসম্পর্কের জন্য। তাই আমার বাবাকে এক বছর পরপর বিভিন্ন স্থানে ট্রান্সফার (বদলি) করে দিত। নানাভাবে হেনস্তা করত, কিন্তু বিভিন্ন উপায়ে অন্যায়ভাবে শাস্তি দিয়েও তারা তাকে একবিন্দুও বিচলিত করতে পারেনি। বরং তাঁর দেশপ্রেম, মাতৃভূমি ও বাঙালির প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছিল।
২৩ মার্চ ১৯৭১। বাবার পোস্টিং রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টে। ঢাকা থেকে কামরুজ্জামান সাহেবের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুর একটা মেসেজ আমার বাবার হাতে পৌঁছে। রাজশাহীর সব বাঙালিকে সংগঠিত হওয়ার এবং সাবধানে থাকার কথা মেসেজে উল্লেখ ছিল। রাজশাহী ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা প্রায়ই বাবার কাছে আসতেন, বিভিন্ন নির্দেশ চাইতেন। ২৩ মার্চ ‘৭১-এ আমার বড় ভাই ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন আহমেদ (পরবর্তীকালে বাবার সাথে শহীদ হন) একটা বাংলাদেশের পতাকা বানান। আমি পতাকাটা রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় আমাদের বাসায় উড়িয়ে দিই। এমনিতেই আমরা পাকিস্তানিদের কাছে নিতান্তই অপছন্দনীয় ছিলাম। এ ঘটনার পরে ওদের একেবারে চক্ষুশূল হয়ে গেলাম।
আমার বাবা গোপনে কর্নেল হায়দার, মেজর গিয়াসুদ্দিন প্রমুখের সাথে একটা ফ্রন্ট গঠন করেছিলেন এবং দেশের অবস্থা যা হচ্ছিল তাতে প্রতিকূল পরিবেশে কীভাবে দেশকে রক্ষা করা যায়, বাঙালিদের কীভাবে রক্ষা করা যায় সেসব ঠিক করতেন। ২৫ মার্চের কালরাত্রে গণহত্যার পরে তারা রাজশাহীতে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেন এবং সফলতার সঙ্গে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত রাজশাহীকে পাকসেনাদের হাত থেকে মুক্ত রেখেছিলেন। আমরা ছয় ভাইও মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ি। রাজশাহী যখন কিছুতেই দখলে রাখা যাচ্ছিল না তখন আমাদের চেষ্টা ছিল এলাকার বাঙালিদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে দেয়া। রাজশাহীর বিপুলসংখ্যক বাঙালি ভারতে শরণার্থী হয়ে চলেও গেল।
২৬ এপ্রিল ‘৭১ শেষ গাড়িতে আমার বাবা ও বড় ভাই ইঞ্জিনিয়ার শারফুদ্দিন আহমেদসহ মোট ২১ জন ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু পথিমধ্যে রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের মিলিত বাহিনীর সাথে তাদের একটা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়। ঐ যুদ্ধে আমার বাবা, বড় ভাইসহ ২০ জন মারা যান। তখন বৃষ্টি হচ্ছিল, বৃষ্টির মধ্যে হাবিলদার মোহসিন মৃতের ভান করে মাটিতে শুয়ে ছিলেন বলে ২১ জনের মধ্যে তিনিই একমাত্র বেঁচে যান। তাঁর কাছ থেকেই আমরা ঘটনার বিবরণ জানতে পারি।
পরে আমরা লােকমুখে শুনেছি, বাবাকে রাজশাহী সার্কিট হাউসের মাটিতে ওখানকার এক বাবুর্চি এনে কবর দেন। কিন্তু আমরা পরে সে কবর শনাক্ত করতে পারিনি। আমাদের রাজশাহীর বাড়িটাও পাকিস্তানিরা জ্বালিয়ে দিয়েছিল। আমার বাবার মৃত্যুর পরে জেনারেল ওসমানীর নির্দেশে কর্নেল হায়দার রাজশাহী এলাকার মুক্তিযুদ্ধের কমান্ড গ্রহণ করেন।
অনুলিখন ও ডা. গোলাম রহমান মল্লিক, ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।
২৯৮ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ
শহীদ স্মৃতি স্মরণে
শহীদ ডা. লে. কর্নেল মুজিবউদ্দিন আহমেদ এবং
তদীয় পুত্র ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন আহমেদ
(বাংলাদেশ মুক্তিযাোদ্ধা সংসদ কর্তৃক এপ্রিল ১৯৮০ প্ৰকাশিত লিফলেট)
যাদের রক্তে রাত হয়ে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য আজ সমুজ্জ্বল, যারা যুগ-যুগান্তরের দাসত্ব শৃঙ্খল ছিড়ে স্বাধীনতার রক্তলাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছিল, তাঁদের বাঙালি জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। ২৫ মার্চ ১৯৭১-এ রাতের অন্ধকারে হায়েনার দল দাবানল ছড়িয়ে দিল। হায়েনার দলকে পর্যুদস্ত করার শপথে উজ্জীবিত হয়ে উঠলো লে. কর্নেল মুজিবউদ্দিন আহমেদ ও তাঁর পুত্র ইঞ্জিনিয়ার শারফুদ্দিন আহমেদ।
উল্লেখ থাকে যে, তৎকালীন সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের অফিসার লে. কর্নেল মুজিবউদ্দিন আহমেদ এবং তাঁর পুত্র তকালীন কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনে পূর্ব বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী শারফুদ্দিন আহমেদ রাজশাহী শহরে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে ইপিআর ও পুলিশ বাহিনীর বাঙালি সৈন্যদের সমন্বয়ে। একটি বাহিনী গঠন করেন। উক্ত বাহিনী ৩০ মার্চের পর রাজশাহী পুলিশ লাইনে খানসেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। উক্ত সম্মুখ সমরে ১১ জন বাঙালি পুলিশ ও ইপিআর সদস্য শাহাদাত বরণ করেন। অপরপক্ষে ব্যানসেনা মারা যায় ২৫ জনের উর্ধ্বে। ডা. লে কর্নেল মুজিবউদ্দিন আহমেদ প্রথমে অ্যাডজুটেন্ট (ইপিআর) অফিস আক্রমণ করেন। তারপর তৎকালীন ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিনকে ইপিআর ও পুলিশের জওয়ানদের সমন্বয়ে রাজশাহী বেতার ভবন ও নগরবাড়িঘাট, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্থল ও জলপথগুলো অবরোধ করে রাখতে বলেন। নিজের বাসভবনকে গড়ে তোলেন একটি মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প হিসেবে। পরে ঐ ক্যাম্পগুলোকে রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রিন্সিপালের অফিসে স্থানান্তর করা হয়। তাই পরে পাকিস্তান বিমানবাহিনী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ওপর শেল ও রকেট বর্ষণ করেছিল। বাঙালি ইপিআর ও পুলিশের জওয়ানরা তেজদীপ্ত বিপুল উৎসাহ নিয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ ২৯৯
শহীদ ডা. মুজিবউদ্দিন আহমেদ
পাকিস্তান বাহিনী সংঘর্ষের প্রথম দিকে বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। ফলে স্পেশাল ফোর্স, পদাতিক বাহিনীর সহায়তায় কামান ও ট্যাঙ্ক বাহিনী নিয়োগ করা হয়। এমন সময় যুদ্ধরত বাঙালি ইপিআর আর পুলিশ জওয়ানদের গুলি ফুরিয়ে যায় এবং চারদিক থেকে তাঁদের ঘিরে ফেলা হয়। তারপরই রাজশাহীতে শুরু হয়ে যায় অগ্নিসংযোগ, নির্বিচারে হত্যা, লুটতরাজ ও গণহত্যা।
তার স্বাক্ষর রয়ে যায় রাজশাহী শহরের বিভিন্ন জায়গায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্নিকটে ধরা পড়ে গেলেন লে. কর্নেল মুজিবউদ্দিন আহমেদ ও তার বড় ছেলে শারফুদ্দিন আহমেদ। সেখানে দস্যু খান সেনারা গুলি করে হত্যা করে তাঁদের। তারপর রাজশাহী শহরে নেমে আসে দুর্যোগের ঘনঘটা, এই দুর্যোগের শিকার হয় রাজশাহী শহরের আপামর জনগণ।
ট্যাঙ্কের গোলা, কামানের গোলা, মর্টার শেল, ভারি মেশিনগান ইত্যাদির বিরুদ্ধে যে শৌর্যবীর্যের সঙ্গে পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে তারা লড়াই করেছিল তা বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ সেই বীর যোদ্ধাদের জন্য গৌরব অনুভব করবে। যারা শহীদ হয়েছিলেন, এ জাতির কর্তব্য চিরদিন সশ্রদ্ধচিত্তে তাঁদের স্মরণ করা। ঐ শহীদানের বীরত্বের, আত্মত্যাগের কোনো তুলনা নেই।
প্রাসঙ্গিক উল্লেখযোগ্য তথ্যসূত্র:
ক. মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক তালিকা বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যালয় বিএমএ ভবনে (তোপখানা রোড, ঢাকা) শোভিত স্মৃতিফলকে উৎকীর্ণ। (পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য)
খ. প্ৰথম পুনর্মিলনী স্মরণিকা, আর্মি মেডিকেল কোর; প্রকাশনা : আর্মি মেডিকেল কোর, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী; প্রকাশকালঃ ১৩৯৫ বাংলা, ১৯৮৯
৩০০ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ
শহীদ ডা. মোজাম্মেল হক
১৯৭১ সালের ২৭ মে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের (অস্থায়ী) শ্ৰম অধিদপ্তরে কর্মরত বগুড়া জেলার বিশিষ্ট চিকিৎসক, বুদ্ধিজীবী ও সমাজসেবী ডা. মোজাম্মেল হককে ঘাতক দালাল রাজাকার চক্রের সহায়তায় পাক হানাদার বাহিনী তার চেম্বার থেকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।
দৈনিক ইত্তেফাক
২৭ মে ২০০৭, রোববার, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৪
Reference: মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ – বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ