You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ
দখলীকৃত বাংলাদেশে মৃত্যু ও সন্ত্রাসের তান্ডব বাংলাদেশ নিউজ লেটার

শিকাগো: নং ১০

১০ অক্টোবর, ১৯৭১

 

 

মৃত্যু এবং সন্ত্রাসের রাজত্বে ছেয়ে গেছে বাংলাদেশ

সেপ্টেম্বর ২৫, শিকাগোতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা লীগের বৈঠকটিতে বাংলাদেশের একজন উচ্চপদস্থ নাগরিক অংশগ্রহন করেন যিনি মাত্র দেশ থেকে পালিয়ে এসেছেন। তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতির উপর একটি রিপোর্ট দাখিল করেন। এবং রিপোর্টে সেনাবাহিনী কর্তৃক তার পরিবারের প্রতি প্রতিহিংসামূলক যে কোন হামলার আশংকায় তার নাম উহ্য রাখেন।
তিনি তার রিপোর্টে বলেন ঢাকা হল মৃত্যু এবং সন্ত্রাসের শহর এবং বাংলাদেশের বাকি অঞ্চলগুলোতেও ঠিক ঢাকার মতই পরিস্থিতি। সূর্যাস্তের পর ঘর থেকে বের হওয়া যে কোন ব্যাক্তির জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এমনকি সেটি খুব জরুরী প্রয়োজনেও। কেউ যদি ঘর থেকে বের হয়, তবে সে যে আর ঘরে কোনোদিন ফিরবে না এরকম একটি অনিশ্চয়তা রয়েছে। এমনকি এই ঝুঁকি তাদের জন্যও এই যুদ্ধে যাদের কোন প্রত্যক্ষ ইন্ধন নেই। তাদের জীবনটিও এখন ঠিক নিশ্চিত বলা যায় না। এদের অনেকেই কোন কারণ ছাড়াই নিরুদ্দেশ হয়েছে এবং তাদেরকে কেউ কোনোদিন আর খুঁজেই পায়নি।

অফিস এবং ঢাকার বিদ্যালয়গুলো খোলা থাকলেও সেখানে কোন কাজকর্ম চলছে এটি বলা ভুল হবে। উচ্চ নিম্ন কোন বাঙালী অফিসারকেই আর বিশ্বাস করা হচ্ছে না। তাদেরকে নামিয়ে ক্লার্কের মত নিচু পদে অধিষ্ঠিত করা হচ্ছে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী পদগুলো আর্মিরা দখল করে নিচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের উপস্থিতি ৫ শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে। যখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম খুলেছে, ছয় হাজার ছাত্রের মধ্যে মাত্র ৩২ জন ছাত্র উপস্থিত ছিল। উপস্থিতি এখন কিছুটা বেড়ে বর্তমান স্তরে পৌঁছেছে তবে সেটা সম্ভব হয়েছে অভিভাবকদের লাগাতার প্রতিবাদ এবং প্রচারণার পর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপস্থিতি শতকরা ৩ এর নিচে এবং এদের অধিকাংশই অবাঙালি। ৯৪,০০০ ছাত্র যাদের মাধ্যমিক পরিক্ষায় বসবার কথা ছিল, তাদের মধ্যে মাত্র ৩৫০০ জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে এবং এদেরও একটা বড় অংশ ছিল অবাঙালি।
বাঙালী যুবকদেরকে প্রধান সন্দেহভাজন ধরা হচ্ছে এবং যুবকদের হয়রানি ও শারীরিক নির্যাতন যেন খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর শহরগুলো যেন দিনে দিনে এক একটা মধ্য যুগের কারাগার হয়ে উঠছে।
হত্যা নৃশংসতার গল্পগুলো যেন সংখ্যা বিবেচনায় দিনে দিনে হয়ে উঠছে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা অনুযায়ী পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন বাঙালি উইং-কমান্ডার অফিসারকে ডিটেনশন সেলে ছাদের সাথে পা ঝুলিয়ে বেঁধে রাখা হয় এবং ৬৬ দিনের বিরামহীন অসহনীয় অত্যাচারের পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
৩০০ মহিলা কয়েদি যাদেরকে ঢাকা মিলিটারি ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল, তাদেরকে কোন কাপড় পরতে দেওয়া হয়নি কারন তারা তাদের পরনের শাড়িগুলোতেত ঝুলে আত্মহত্যা করছিল।
মুসলিম লীগ ও জামাত-ই-ইসলামীর মতো দক্ষিণপন্থী সংগঠনগুলো এ সময় রাজাকার নিয়োগে ভীষণ সক্রিয় ছিল। রাজাকাররা ছিল পাকিস্তান বাহিনীর নজরদার কমিটির সদস্য গ্রুপ। রাতের বেলা এই রাজাকারদেরকে নিয়মিত পাঠানো হত গ্রামগুলো লুট এবং পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য। পরবর্তীতে তদানীন্তন সরকার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই লুটতরাজের বিরুদ্ধে নিন্দা জানায় এবং এর দায় মুক্তিবাহিনীর ঘাড়ে চাপায়।
শহরগুলোতে গরীব রিক্সাআলাদের রাজাকারে যোগদানের জন্য জোর জবরদস্তি করা হতো এবং ভয় দেখানো হতো যে তারা রাজাকার বাহিনীতে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যোগদান না করলে তাদের রিক্সা চালানোর অনুমতিপত্র বাতিল করা হবে।
সেসময় প্রতিহিংসাস্বরূপ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মীয়দের কাউকে কাউকে নিয়মিতভাবে তুলে আনা হতো। গেরিলা বন্দীদেরকে মাঝে মাঝে খবর সংগ্রহের জন্য ছেড়ে দেওয়া হতো, আবার ক্যাম্পে পাঠানো হতো এবং তাদের পরিবারকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী জিম্মি হিসেবে ব্যাবহার করত।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!