You dont have javascript enabled! Please enable it!

শিরোনামঃ সম্পাদকিয়ঃ বাংলাদেশকে সাহায্য করুণ।
সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ নিউজ লেটার শিকাগো নং ৪
তারিখঃ ১ জুলাই, ১৯৭১

বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানের তিন মাস পেরিয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে হাজার হাজার নিরস্ত্র বাঙ্গালী কে স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচারের জন্য জীবন দিতে হয়েছে। একটি পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে প্রায় অর্ধ মিলিয়ন মানুষ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে খুন হয়েছে। ৬ মিলিয়ন লোক নিরাপত্তা এবং আশ্রয়ের জন্য তাদের বাড়ি ঘর ছেড়ে সীমান্তের অন্য পাশে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। হানাদার বাহিনীর পাশবিকতা,ধর্ষণ,অত্যাচার,অগ্নিসংযোগ এবং হত্যার অভিজ্ঞতার বর্ণনা সাথে নিয়ে লাখ লাখ মানুষ প্রতিনিয়ত ইন্ডিয়ার পথে যাচ্ছে। রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ ক্লান্তি এবং অবসাদের কারণে মারা যাচ্ছে। কলেরা ও অন্যান্য রোগ এবং ভারতীয় শরণার্থী শিবিরে অতিরিক্ত ভীড়ের কারণেও প্রতিনিয়ত অনেক লোক মারা যাচ্ছে। মানব ইতিহাসে এত বেশি লোকের এক সাথে দেশ ত্যাগের ঘটনা সম্ভবত নজিরবিহীন। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ভারতীয় সরকার এবং মানুষেরা এই অসহায় শরণার্থীদের সাহায্য ও যত্ন করছেন। চরম বিপদের সময় আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্যে আমরা তাদের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।

আমরা যেন সবসময় স্বাধীনভাবে এবং গর্বের সাথে বাঁচতে পারি সেই জন্য বাংলাদেশের বাঙালিরা তাদের জীবন বিসর্জন দিচ্ছেন। তাদের সাহস এবং দৃঢ়তার কাহিনী প্রতিদিন সংবাদপত্রে ছাপা হচ্ছে।

কিন্তু মাতৃভূমির চরম প্রয়োজনের মুহূর্তে আমরা তার জন্যে কি করছি? আমরা যারা মৃত্যু দৃশ্য, রোগ এবং ধ্বংস থেকে অনেক দূরে আধুনিক জীবনের আরাম এবং বিলাসিতার মধ্যে বাস করছি তাদের নিজেদেরকে এই প্রশ্নটি করা উচিৎ। আমরা কি দেশের জন্যে আমাদের সর্বোচ্চটা দিতে পেরেছি? আমাদেরকে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত ভাবে আমাদের সর্বচ্চ চেষ্টা করতে হবে এদেশ অফিশিয়াল ভাবে পাকিস্তানকে যেন কোন সাহায্য করতে না পারে এবং এদেশে পাকিস্তানকে সাহায্যের বিরুদ্ধে শক্তিশালী জনমত তৈরী করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার খুবই প্রয়োজন। একটি ডলার আমাদেরকে অনেক সাহায্য করতে পারে। প্রত্যেকবার বেতন থেকে নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য কিছু অংশ রেখে বাকি অংশ বাংলাদেশের সাহায্যে ব্যয় করার জন্য আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া উচিৎ। আমরা কি তা করতে পারিনা?

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!