শিরোনাম | সংবাদপত্র | তারিখ |
বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন | বাংলাদেশ সংবাদ পরিক্রমা
১২শ (?) সংখ্যা |
৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
বাংলাদেশের প্রতি বৃটিশ শ্রমিক দলের পূর্ণ সমর্থন
ব্রাইটনে বার্ষিক সভায় এহিয়া সরকারের তীব্র নিন্দা
বর্তমানে ব্রাইটেনে অনুষ্ঠান্রত বৃটিশ শ্রমিকদলের বার্ষিক সভায় উপস্থিত প্রায় তিন হাযার ডেলিগেট গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত বাংলাদেশের প্রতিনিধি ও জনগণের উপর বর্বরোচিত সামরিক অত্যাচার ও বেপরোয়া গণহত্যার জন্য পাকিস্থানী সামরিক জান্তার তীব্র নিন্দা করে পাকিস্তান সরকারকে এই মর্মান্তিক নির্যাতনের জন্য সম্পূর্ণরুপে দায়ী করেন।
প্রায় এক ঘন্টা আলোচনা ও বক্তৃতার পর উক্ত সভা সর্বসম্মতিক্রমে অবিলম্বে শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তি, সকল প্রকার সামরিক নির্যাতনের অবসান, জনগনের কাছে গ্রহনযোগ্য শর্তাবলী নিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদলের সংগে আলাপ-আলোচনা চালাবার জন্য এহিয়া সরকারের নিকট দাবী জানিয়ে প্রস্তাব গ্রহন করা হয়।
উক্ত সভা বর্তমান পরিস্থিতির অবসান না হওয়া পর্যন্ত ‘ঘৃণিত সামরিক জান্তাকে কোন প্রকার সাহায্য না দেওয়ার জন্য বিশ্বের সকল বিশেষ করে “পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সাহায্য তহবিলের” সদস্য দেশসমূহের কাছে আবেদন জানান।
বাংলাদেশের বর্তমান দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাবলী যে কোন সময় বিশ্ব শান্তি ব্যহত করতে পারে মনে করে শ্রমিক দলীয় সভা জাতিসংঘকে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানান যাতে জাতিসংঘ এমন কোন পন্থা অবলম্বন করেন যা বাংলাদেশের মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য হয়। জাতিসংঘের বর্তমান অধিবেশন বৃটিশ সরকারকে সক্রিয় হওয়ার জন্য জোর দাবী জানানো হয়।
দারুন দুর্ভিক্ষের আশংকা প্রকাশ করে উক্ত সভা অনতিবিলম্বে ভারতে শরণার্থীদের মধ্যে ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধারে সরাসরি সাহায্য কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন জানান।
প্রসংগত উল্লেখযোগ্য যে বৃটিশ শ্রমিক দলীয় সভায় বাংলাদেশের পক্ষে প্রচারকার্য জোরদার করা ও ডেলিগেটদের পূর্ণ সমর্থন আদায়ের জন্য বাংলাদেশ ষ্টিয়ারিং কমিটি ১৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল ব্রাইটনে প্রেরণ করেন। বার্মিংহাম এ্যাকশন কমিটি এবং বাংলাদেশ মহিলা সমিতি থেকেও কয়েকজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন এবং সম্মিলিত এই গুরুদায়িত্ব পালন করেন। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব করেন ষ্টিয়ারিং কমিটির আহবায়ক জনাব আজিজুল হক ভূঞা। তাঁদের কয়েক দিনব্যাপী অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সম্মিলিত ডেলিগেটগণ বাংলাদেশ এহিয়ার নির্যাতনে অত্যন্ত বিমোহিত হন এবং সর্বসম্মতিক্রমে উক্ত প্রস্তাবসমূহ পাশ করেন।
ইতিপূর্বে শ্রমিকদলের একটি বিশেষ শাখা প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রনক্রমে বাংলাদেশের বিশেষ প্রতিনিধি জনাব বিচারপতি চৌধুরী ব্রাইটনে লেবার ক্লাবে সম্মিলিত ডেলিগেটদের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে এহিয়ার বর্বরতার উপর ভাষন দেন। তিনি বিশ্বের সকল শান্তিকামী দেশসমূহকে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি এবং শেখ মুজিবর রহমানের আশু মুক্তির জন্য পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক জান্তার উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য আবেদন জানান।
বাংলাদেশের পক্ষে জোর দাবী জানিয়ে যাঁরা বক্তৃতা করেন তাঁদের মধ্যে মিঃ পিটার, রাইট অনারেবল জন স্টোন হাউস, মিঃ ব্রুস ডগঅলাস ম্যান, মিঃ ফ্রেড ইভান্স, লর্ড ব্রকওয়ে, অক্সফামের মিঃ বার্নাড হাম্ফরী, মিঃ পিটার কে, এইচ এবং মিঃ জাকারিয়া চৌধুরীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশের প্রতি রাশেদ সোহরাওয়ার্দীর পূর্ণ সমর্থন
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা বাংলার জনপ্রিয় নেতা ও পাকিস্তানের এককালীন প্রধানমন্ত্রী শহীদ সোহরাওয়ার্দীর একমাত্র পুত্র জনাব রাশেদ সোহরাওয়ার্দী গতকাল এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষনা করেন যে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের পূর্ণ সফলতা কামনা করেন।
বাংলাদেশে গণহত্যার কথা শুনে তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছেন। যেহেতু রাজনীতির সংগে জড়িত ছিলেন না সেজন্য এ পর্যন্ত কোন বিবৃতি দেননি। সম্প্রতি তাঁর ভগ্নি বেগম আখতার সোলায়মানের দেওয়া কয়েকটি বিবৃতিতে তাঁর শ্রদ্ধেয় পিতার রাজনৈতিক বলিষ্ঠ ভূমিকা ও মর্যাদা ক্ষুন্ন হতে পারে মনে করে তিনি বলেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানীরা গত ২৪ বছর ধরে বাংলাদেশের জনসাধারণকে শোষন করে আসছে এবং বর্তমানে বেপরোয়া গণহত্যা ও নির্যাতন চালাচ্ছে। এই শোষনের বিরুদ্ধে তাঁর পিতা আমরণ সংগ্রাম করেছেন।
তিনি বিশ্বাস করেন যে, মুক্তিবাহিনী শিঘ্রই হানাদার শত্রুসৈন্যকে বাংলাদেশের পবিত্র মাটি থেকে বিতারিত করে বাংলাদেশে পূর্ণ স্বাধীনতা কায়েম করবে।
জনাব সোহরাওয়ার্দী সকল বাঙালীকে দলমত ও রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে গিয়ে একতার সংগে স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করার জন্য আবেদন জানান।
জনাব সোহরাওয়ার্দী বাংলাদেশ সরকারকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলে যে তাঁরা সকলেই তাঁর পিতার সহকর্মী ও স্নেহভাজন ছিলেন।
জনাব সোহরাওয়ার্দী গতকাল বাংলাদেশ ষ্টিয়ারিং কমিটির অফিস পরিদর্শন করেন এবং বাংলাদেশের বিশেষ প্রতিনিধি বিচারপতি চৌধুরী, ষ্টিয়ারিং কমিটির আহবায়ক আজিজুল হক ভূঞা, সদস্য জনাব শেখ আবদুল মান্নান ও অন্যান্য কর্মীবৃন্দের সংগে প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করেন।