You dont have javascript enabled! Please enable it!

শিরোনামঃ মুক্তিসংগ্রামে প্রবাসী বাঙালী
সংবাদপত্রঃ জনমত ৩য় বর্ষঃ ৪০ তম সংখ্যা
তারিখঃ ২১ নভেম্বর, ১৯৭১

মুক্তিসংগ্রামে প্রবাসী বাঙালী

মিডল্যান্ডের বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভানেত্রী মিসেস বদরুন পাশা বলেন, “আমি গত ১৯৭০-এর জানুয়ারী মাসে বার্মিংহাম আসি । এর আগে লেষ্টারে ছিলাম এবং সেখানে আমি পূর্ব পাকিস্তান মহিলা সমিতির আহবায়ক ছিলাম । বার্মিংহামে এসেও পাকিস্তান মহিলা সমিতির সংগে জড়িত ছিলাম । কিন্তু গত মার্চ মাসে ইয়াহিয়া খাঁ-র বর্বর সেনারা বাংলাদেশে আক্রমণ পরিচালনার পরে আমরা বুঝতে পারলাম যে, পশ্চিমাদের সংগে আমাদের আর চলা সম্ভব নয়” ।
মিসেস বদরুন পাশা বলেন, “এর পরই আমরা মিডল্যান্ডে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি গঠন করি এবং ২৮শে মার্চ মিডল্যান্ড প্রবাসী বাঙালীদের স্মলহিথ পার্কের জনসভায় মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে বক্তৃতা করি । তখন থেকেই মিডল্যান্ডের বাঙালীরা একত্রে কাজ করতে শুরু করলেন ।”
মিডল্যান্ডের বাংলাদেশ মহিলা সমিতির কার্যবিবরণী দিতে গিয়ে মিসেস পাশা বলেন, “সমিতির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের স্বীকৃতির দাবীতে ২৬শে এপ্রিল ছ’জন সদস্য বৃটিশ পার্লামেন্টের লবি করেন এবং প্রধানমন্ত্রী মিঃ হীথের কাছে এক আবেদন পাঠানো হয় । ২০শে জুন বলসল হীথ মাউন্ট প্লেজেন্ট স্কুলে এক মিলাদ মাহফিলেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল । ২৭শে জুন আমরা বিংলী হলের সভায় একটা মীনাবাজার করেছি । ৪ঠা জুলাই স্থানীয় কার্লটন সিনেমা হলে মণিহার নামের একটা চ্যারিটি সিনেমা করেছি । ১৭ ও ১৮ই জুলাই বার্মিংহামের সিটি সেন্টারে একটা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছিল । ২রা অক্টোবর বলসল হীথ মাউন্ট প্লেজেন্ট স্কুলে আমাদের সমিতির উদ্যোগে একটা বিরাট প্রদর্শনী হয় । এ ছাড়া বিলাতের প্রত্যেক স্থানে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সফরের বিরুদ্ধে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলগুলোতে আমরা যোগ দিয়েছি ।”
মিসেস পাশা আরও বলেন যে, বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর ব্যবহারের জন্য তাঁদের সমিতির কাছে বিলাতের বিভিন্ন স্থান থেকে কাপড়-চোপড় আসছে । এইগুলি এবার ইন্ডিয়ার বিমানে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল কিন্তু এবার ইন্ডিয়া প্রথমে সম্মতি জানিয়ে এখন আবার পিছিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় একটু অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে । তিনি আরও বলেন যে, বর্তমানে এই সব কাপড়-চোপড় কেন্দ্রীয় ষ্টিয়ারিং কমিটির মাধ্যমে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে ।
মিসেস পাশা প্রবাসী সকল ভাইবোনদের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন যে, ইয়াহিয়া খাঁ-র বর্বর সেনাবাহিনী আমাদের মা-ভাই-বোনদের উপর যে অত্যাচার করেছে তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সকলকে তৈরী থাকতে হবে । তিনি বলেন, রক্তের বদলে রক্ত নেওয়াই হচ্ছে ইয়াহিয়া বাহিনীর অত্যাচারের উপযুক্ত জবাব ।
মিসেস পাশা জানান যে, এদেশের এবং দুনিয়ার অন্যান্য সব বাংলাদেশ সংগ্রাম পরিষদগুলোর সংগে মিডল্যান্ডের বাংলাদেশ মহিলা সমিতির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে । তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই যোগাযোগ বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন না করা পর্যন্ত চলবে । মিসেস পাশা বলেন, স্বাধীন বাংলার মানুষের পূর্ণ মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত বাঙালীদের এই সংগ্রাম দেশ-বিদেশে চলতে থাকবে, এতে কোন বিরতি হবে না ।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!