You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.15 | বাংলাদেশ এখন আর অভ্যান্তরীণ ব্যাপার নয় | বাংলাদেশ টুডে - সংগ্রামের নোটবুক

শিরোনামঃ বাংলাদেশ এখন আর অভ্যান্তরীণ ব্যাপার নয়
সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ টুডে ভলিউম ১ নং ২
তারিখঃ ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

“বাংলাদেশ এখন আর অভ্যন্তরীণ ব্যাপার নয়”
জন স্টোনহাউজ, এমপি

“গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ই হবে বাংলাদেশের সকল আইনী কার্যক্রম পরিচালনার বৈধ কর্তৃপক্ষ”, তিনশ জনেরও বেশি কমন হাউসের সদস্যবৃন্দ মহামান্য রানীর সরকারের কাছে এই আহবান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পেশ ও স্বাক্ষর করেন।এর আগেও সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর আস্থাভাজন নেতা শেখ মুজিবর রহমান এর মুক্তির দাবিতে এমন একটি প্রস্তাবে দুইশত পঞ্চাশজন এর মত এমপি সাক্ষর করেন।১৯৭১ এর ৫ই আগস্ট পূর্ববর্তী বিষয়টি নিয়ে হাউজ অফ কমন এ বিতর্ক হয়। এই প্রসঙ্গে মাননীয় জন স্টোরহাউজ এমপি এর বক্তব্যের প্রাসঙ্গিক সারমর্ম নিচে দেওয়া হল-
এই সময়ে যা কিছু বাংলাদেশ ঘটছে তা এখন পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। এটি বিশ্ব-সমাজ স্বীকৃত। হিটলার কর্তৃক ইহুদিদের বিনাশের মত বাংলাদেশের এই গণহত্যাও অভ্যন্তরীণ ব্যাপার নয়। এটি একটি বৈশ্বিক উদ্বেগ। উদ্বাস্তুদের বৃহৎ সংখ্যায় ঘর পালিয়ে ভারতে যেতে হচ্ছে এমন ভাবে যে, পাকিস্তান ভারতেই আক্রমন করবে। ইয়াহিয়া খানের সরকারের নীতি উদ্বাস্তুদের ঘর ছাড়তে বাধ্য করেছিলো। আমরা সবাই জানি বাংলাদেশে এই শরতে এক গণদুর্ভিক্ষ হতে চলছে। ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধ বিশ্বশান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ। এসবকে অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হিসাবে যারা মনে করছে, তারা আসলে পরিস্থিতিকে ছোট করে দেখছে। উল্লেখ্য ঘটনার কারণ গত ডিসেম্বরের নির্বাচনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মতামত প্রকাশের ফলে পাকিস্তানের সামরিক নিপীড়ন।
ঘটনা হলো, ২৫ মার্চের পূর্বে সংখ্যালঘুদের উপর নৃশংসতার নজির পাওয়া গিয়েছে যা সৈন্যদের আক্রমণের কারণ ছিলো।এরূপ অস্থিতিশীলতার অনেক উদাহরণ পাওয়া যায় যদিও এরূপ দাঙ্গা হামলায় রাজনৈতিক নেতাদের নিশ্চল দেখা যায়।আওয়ামী লীগ এবং শেখ মুজিবর রহমান এই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাকে শান্ত করার প্রয়াস করেছিলেন।
বিশ্বের ইতিহাসে পাকিস্তানের এই পাশবিক নিপীড়ণ বিরল। সর্বদিক হতেই এটি অনুমোদিত। এই গণহত্যাগুলোতে যে কি কি হচ্ছে তা “দি সান দে টাইমস” এর ব্যাপক তদন্তের মাধ্যমে প্রকাশ হয়। “নিউজ উইক” এর ১লা আগস্টের সংখ্যায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ভয়ানক নৃশংসতার বর্ণনা পাওয়া যায়। যখন সরকারই সেনাবাহিনী দ্বারা এহেন বর্বর কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, তখন হস্তক্ষেপ করাটা এবং এর ইতি টানাটা বিশ্ব সমাজের দায়িত্ব হয়ে পড়ে, যেমনটি দরকার ছিল ১৯৩০ সালে হিটলারের ইহুদিদের উপর অত্যাচারের সময়।
জাতিসংঘের গণহত্যার ব্যাপারে সম্মেলন চালু করা প্রয়োজন, এবং দরকার হলে এরূপ দুর্যোগ প্রতিরোধে বড় বড় শক্তির সম্মতিতে জাতিসংঘের বাহিনী ব্যবহার করতে হবে।
শেখ মুজিবুর রহমানের অবস্থা সম্পর্কে একটি প্রস্তাব আড়াইশোর বেশি এমপি দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই মানুষটির অঙ্গীকার নিয়ে আমরা এত আগ্রহী কেন? কারন আমরা বুঝতে পেরেছি, যদি কোন রাজনৈতিক সমঝোতা করতেই হয়, তা শুধুমাত্র গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সাথেই হওয়া সম্ভব। তিনি এই পরস্থিতির চাবিকাঠি। ইয়াহিয়া খানকে এই সত্য অনুধাবন করতেই হবে। তখনি কেবল কোন ধরনের চুক্তিতে পৌছানো যাবে, এবং আমার কোন সন্দেহ নাই যে কি চুক্তি হতে পারে, এটি হবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের উত্থান।
যদি এই বৈশ্বিক সমস্যার ইতি টানতে হয় এবং বাংলাদেশের ও শরণার্থী শিবিরে প্রাণগুলো বাঁচাতে হয়, শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি আবশ্যক। ইয়াহিয়া খান যে বিকট পরিস্থিতিতে নিজেকে নিয়ে গেছে, এর থেকে বের হওয়ার উপায় বের করতে এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি দিতে ও এই দুর্যোগ বন্ধ করতে মধ্যস্থতা করতে ইয়াহিয়া খানের উপর চাপ সৃষ্টি করা বিশ্বসমাজের জন্য জরূরী, বিশেষত যে কোন সরকারের জন্যই তা প্রয়োজন।