You dont have javascript enabled! Please enable it!

শিরোনামঃ ব্যাপক হারে মৃত্যু
সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ টুডে ভলিউম ১: নং ৪
তারিখঃ ১৫ অক্টোবর, ১৯৭১

ব্যাপক হারে মৃত্যু

মিসেস জুরিথ হার্ট,গত লেবার সরকারের শাসনামলে বৈদেশিক সাহায্য খাতের সাংসদ এবং প্রাক্তন মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ৭ই অক্টোবর ব্রাইটনে অনুষ্ঠিত বার্ষিক লেবার সম্মেলনে একটি মত বিনিময় সভায়, ব্রিটিশ সরকারকে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্যক্ত করেন এবং বাংলাদেশের পরিপেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহবান জানান যেন পাকিস্তানের উপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। সরকার যে ইতিমধ্যেই চাপ প্রয়োগ করছে তাতে তার কোন সন্দেহ নেই, তবে তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি বিশ্ববাসির সরাসরি মতামত দেয়ার উপযুক্ত সময় চলে এসেছে। আর এটা অবশ্যই এখন জরুরি”।
জাতীয় নির্বাহী কমিটির পক্ষে মিসেস হার্ট বলেন যে, তাঁদের কিছুই করার ছিল না কারণ এতো দুর্ভোগের বিশালত্ব ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। “মৃত্যু হচ্ছে, মেগাটন স্কেলে হচ্ছে, যেমনটা পরমাণু যুদ্ধের বেলায় আমরা আলোচনা করতাম, সেরকম”। তাদের এটা বুঝতে হবে, এটি একটি মনুষ্যসৃষ্ট সমস্যা আর তাই মনুষ্যসৃষ্ট সমাধানও তৈরি করা সম্ভব। এই ট্রাজেডির সমস্ত দায়িত্ব সরাসরি পাকিস্তান সরকারের উপর ন্যস্ত। তিনি পূর্ববাংলার আসন্ন দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে সতর্ক করেন যেহেতু ফসল রোপণ করা হয়নি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ও গ্রামীন অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে পড়েছে। সেখানে আশু সাহায্যের প্রয়োজন এবং এজন্য ব্রিটিশ সরকারের উদ্যোগ নেয়া উচিৎ।
“মন্দের বিজয়ের জন্য সৎ লোকের কিছু না করলেই হয়” – ব্রুকের এ কথা উদ্ধৃত করে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, সেখানে এখনই কিছু করা উচিত যেহেতু এখনও হয়ত সময় রয়েছে।
মিস্টার ব্রুস ডগলাস ম্যান,উত্তর কেনসিংটন এর সাংসদ, তিনি বলেন এ দুর্যোগ থেকে তৈরি হতে পারে এক অভূতপূর্ব ট্র্যাজেডির। “পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষকে” তিনি “সর্বকালের সবচেয়ে নির্মম হত্যাকাণ্ডের” দায়ে অভিযুক্ত করে। তিনি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সম্মেলনে সবাইকে আহবান জানান। এটা মানতেই হবে পাকিস্তান নামক দেশটি ধীরে ধীরে মৃত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছিল। এবং লক্ষ লক্ষ জীবন বাঁচানোর জন্যই বাঙালি গেরিলাবাহিনীকে এই যুদ্ধ জয় করতেই হবে।
আরটিহন জন স্টোরহাউজ, ওয়েডনেসবিউরি এর সাংসদ বলেন, আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে ১কোটির বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষের কারণে মারা যেতে পারে। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও কর্তৃপক্ষের আচরণকে বর্ণনা করতে গিয়ে “মারকুইস ডি সেইডের লেখনীর বৃহৎ মঞ্চায়নের” সাথে তুলনা করেন। প্রায় ২০০ দিন পার হবার পরেও এই ভয়াবহতা চলছে। এটি একটি বিশাল হতাশাজনক ব্যপার যে, জাতিসংঘ ও বিশ্ব সম্প্রদায় এইসব দেখেও চুপ রয়েছে এবং এই অসভ্যতার কঠোর নিন্দাজ্ঞাপন করছে না।
জনাব টম টর্নি, ব্র্যাডফোর্ড দক্ষিণের সাংসদ , তাঁর শহরে পাকিস্তান সম্প্রদায়ের সদস্যদের সাথে কথা বলেন। তিনি বলেন, তাদের প্রথমেই বঙ্গপ্রদেশের গণহত্যা বন্ধ করতে হবে এবং তারপর তাদের সাথে গোলটেবিল বৈঠকে বসে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার গঠন হওয়া উচিত কি না তা নির্ধারণ করতে হবে। কিন্তু প্রথম কাজ হচ্ছে গণহত্যা বন্ধ করা।
ইতিপূর্বে লেবার পার্টির ব্রিটিশ ওভারসিজ সোশ্যালিস্ট ফেলোশিপের আমন্ত্রণে ব্রাইটন লেবার ক্লাবে অনুষ্ঠিত সভায়, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের বিশেষ প্রতিনিধি বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী লেবার কনফারেন্সের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।
জনাকীর্ণ সভায় বিচারপতি চৌধুরী বিশ্বের সকল স্বাধীনতা প্রিয় মানুষের কাছে আবেদন জানান, যেন তারা প্রত্যেকে বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়, যারা তাদের দেশের জন্য ভয়ংকর এক লড়াই লড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য, শেখ মুজিবুর রহমানের নিরাপদ মুক্তির এবং বাংলাদেশের মাটি থেকে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে ইয়াহিয়া খানের ওপর চাপ দেয়ার জন্য ঐকান্তিক আবেদন জানান।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!