You dont have javascript enabled! Please enable it!
        শিরোনাম          সংবাদপত্র          তারিখ
  মুজিবের বিচার চলছে      বাংলাদেশ টুডে

সংস্করণ ১ : নং ২

   ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

 

মুজিবের বিচার চলছে

প্রায় পাঁচ মাস পীড়াদায়ক নিস্তব্ধতার পর পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান “পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অপরাধে” শেখ মুজিবের বিচার করার জন্য একটি আদালতের সৃষ্টি করেছেন।
যদি ইয়াহিয়া অকপট হয়ে থাকেন,তাহলে শেখ মুজিবকে কেন তিনি তার পছন্দ অনুসারে আইনের সাহায্য নিতে দিচ্ছেন না? পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে কেন তার আইনজীবী পাঠানো যাচ্ছে না? এটি কী ন্যায়বিচারের উপর একধরনের শোষণ নয়? এমনকি একজন অপরাধীর ও আদালতে নিজেকে রক্ষা করার সাধারণ অধিকার থাকে।তাহলে শেখ মুজিব কেন এই মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন? এটি কী ন্যায়বিচারের নামে একটি কলংক নয়?
মূল প্রশ্ন হলো,কখন তিনি যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন? পুরো পৃথিবী সঠিকভাবেই জানে যে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর এর নির্বাচনে তিনি সাধারণ পরিষদে তার ছয় দফা দাবীর ভিত্তিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা (৩০৩ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসন) অর্জন করেন।সামরিক জান্তা কি এই দাবী নির্বাচনের পূর্বে এমনকি পরে অন্যায় বলে ঘোষণা করেছিল?অপরদিকে জেনারেল ইয়াহিয়া মন্তব্য করেছিলেন যে তিনি ভবিষ্যৎ সংবিধানে ছয় দফা থাকার কোন কারণ তিনি দেখেন নি। যেটি এখনো বেশী গুরুত্বপূর্ণ সেটি হল, তিনি ১৯৭১ সালের ১৪ই জানুয়ারী বলেছিলেন “শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী”। সেই দিনের পর কী এমন হলো যে শেখ মুজিব রাতারাতি “রাষ্ট্রের শ্ত্রু” হয়ে গেলেন?দু মুখো সাপ কে ছিলেন?ইয়াহিয়া হুট করে ন্যাশনাল এসেম্বলির যে মিটিং ১৯৭১ সালের মার্চের তিন তারিখ হওয়ার কথা ছিল,তা পিছিয়ে দেন।তাকে এসেম্বলি পেছানোর অধিকার কে দিয়েছিল? বিচারালয় কী তাকে এতই ক্ষমতা দিয়েছে যে তিনি এরকম একটি তারিখ পেছাতে পারবেন?যে রায় এতটা এতটা জনপ্রিয়?
যাইহোক, ১৯৭১ সালের ১লা মার্চের যে অধিবেশন ইয়াহিয়া পিছিয়ে দিয়েছিলেন তার জন্য দুশ্চিন্তাটা রীতিমত সংকটে পরিণত হয়েছে।পরিস্থিতি আরো নোংরা করার জন্য তিনি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর সহ-নৌ সেনাধ্যক্ষ এস এম আহসানকে বরখাস্ত করেন এবং তার স্থলে পাঞ্জাবের কসাই এবং বালুচিস্তানের জল্লাদ খ্যাত জেনারেল টিক্কা খানকে নিযুক্ত করেন।পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য স্থানান্তর অধিক হারে বেড়ে যেতে লাগল।৩০,০০০ সৈন্যের পরিবর্তে সৈন্য সংখ্যা হয়ে যায় ৮০,০০০।অত্যন্ত ভালো প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এই সেনাবাহিনীর অবসথানের ভয়াবহতা চারদিকে ছড়িয়ে গিয়েছিল।সেনাবাহিনীর চূড়ান্ত পরিকল্পনা বিষয়ক গুজবে ভারী হয়ে উঠেছিল বাংলার বাতাস।সবদিক থেকেই বুঝা যাচ্ছিল যে একটি নিষ্ঠুর মিলিটারী হামলা এগিয়ে আসছে। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর পরিকল্পনা নিয়ে মানুষের অবিশ্বাসের বিস্ফোরণ ঘটল ২রা মার্চ।ইয়াহিয়ার সৈন্যদলের নিষ্ঠুর হামলার কারণে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মৃতের সংখ্যা কয়েক শ বৃদ্ধি পেল।সেনাবাহিনীর গোলাগুলির মধ্যে শেখ মুজিবকে
গ্রেফতার করা এবং এর কারণে মানুষের ক্ষোভই এখন মূল আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। বাঙ্গালীরা সংবিধানিক এসেম্বলি বসার দাবীতে একটি সংঘর্ষবিহীন এবং অসহযোগ আন্দোলন করে।সম্পূর্ণ সরকার,শিক্ষা ব্যবস্থা এবং পূর্ব বাংলার ব্যবসায়িক ব্যবস্থা তার নির্দেশে চলতো।১৯৭১ সালের মার্চের ৭ তারিখ তিনি জনগণের প্রতি কিছু দিকনির্দেশনা দেন।এটি ইয়াহিয়াকে তার সাথে কথা বলতে আসতে বাধ্য করে।যা মনে রাখা সবচেয়ে জরুরী তা হলো ইয়াহিয়া একবার ও এই সংঘর্ষ বিহীন আন্দোলনকে অপরাধ বলে ঘোষণা দেন নি।
বিশ্ব জানে কীভাবে শেখ মুজিবুর ২৫ তারিখ পর্যন্ত জনগণের সহায়তায় পূর্ব বাংলায় একটি সরকার গঠন করেন।বিশাল হামলার প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি ১২ই মার্চ ইয়াহিয়া শেখ মুজিবের সাথে সাংবিধানিক আলাপ শুরু করেন।যখন শেখ মুজিব আলাপচারিতা এবং সবকিছু চূড়ান্ত করতে ব্যস্ত ছিলেন,তখন টিক্কা খানকে ঢাকার পূর্ণ কর্তৃত্ব দিয়ে এবং ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বাঙ্গালীদেরকে ঠান্ডা করার দায়িত্ব দিয়ে আলাপ শেষ না করে হুট করে ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করেন।একটি সম্পূর্ণ মিলিটারী হামলা সংঘটিত হলো।যদি ও সকল বিদেশী সাংবাদিকদেরকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া এবং এবং সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তবু ও পৃথিবী আস্তে আস্তে পাকিস্তানী সৈন্যদের নৃশংসতার কথা জানতে পারল।প্রায় দশ লক্ষা মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল এবং প্রায় সত্তুর লক্ষা মানুষকে প্রতিবেশী দেশ ভারতে শরণার্থী বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
শেখ মুজিবের “পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা” কোথায় ছিল?যুদ্ধটা আসলে কে ঘোষণা করেছিল? যদি কেউ তা করে থাকে তাহলে তারা হল ইয়াহিয়ার সেনাবাহিনী যারা অসহায় এবং নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের হত্যার মাধ্যমে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল।সেই বাঙ্গালীদের একমাত্র দোষ ছিল তারা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সঠিক জিনিসটাকে ভোট দিয়েছিল।ইয়াহিয়া এবং তার সেনাবাহিনীকেই কাঠগড়ায় দাড় করানো উচিত।
শেখ মুজিবের বিচার যদি ও এখন গোপনে করা হচ্ছে,সভ্য সমাজ কর্তৃক ইয়াহিয়া খান এবং তার জান্তার বিচার শীঘ্রই করা হবে।সভ্য সমাজ কখনোই মানবতা বিরোধী অপ্রাধের জন্য এই জান্তাকে ক্ষমা করবে নাহ।
যদি শেখ মুজিবকে শারীরিক বা যেকোন ভাবে অত্যাচার করা হয় তবে এটির প্রতিশোধ অবশ্যই নেওয়া হবে।বাঙ্গালী এর প্রতিশোধ ইয়াহিয়ার পরবর্তী প্রজন্মের কাছ থেকে নেবে।ইয়াহিয়ার জান্তা একে ঠিকভাবে নিক।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!