You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.07 | আরব লেখক 'জিন্নাহ’র স্বর্গ উন্মোচন করল | বাংলাদেশ নিউজ লেটার - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম                 সংবাদপত্র               তারিখ
আরব সাংবাদিকের চোখে ‘জিন্নাহর স্বর্গ’ বাংলাদেশ নিউজ লেটার

লন্ডনঃ নং-৮

৭ই জুলাই, ১৯৭১

 

‘আরব লেখক জিন্নাহ’র স্বর্গ উন্মোচন করল’

আরবের বৈরুতের প্রসিদ্ধ সংবাদপত্র ‘আল শাব’(৯ই জুন) এ আরবের অন্যতম সম্মানিত লেখক মুহাম্মদ নাকশ নিম্নলিখিত কলামটি প্রকাশ করেছিলেন।
‘যদি মৃত মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ আজ ফিরে আসতো আর দেখত পাকিস্তানে এখন কি হচ্ছে এবং কি উপায়ে; তার অসমান্য স্বপ্নটি পূরণ হচ্ছে, তবে কি তিনি গর্বিত নাকি খুশি হতেন অথবা অনুতাপ করতেন?
জিন্নাহর স্বর্গকে নরকে পরিণত হতে দেখে পূর্ব বাংলার ৫০ লক্ষ মানুষ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারতে চলে আসে। তারা শত্রু দেশ কে নিজেদের হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল এমনকি নিজেদের ঘরে থাকার থেকে অভিবাসন , তাঁবুতে কিংবা খোলা আকাশের নিচে থাকাটা বেশি সমর্থন করেছিল। তারা তাদের সহ-নাগরিকের মাধ্যমে কলেরা রোগে মৃত্যু কিংবা দূর্ভিক্ষ্যকেও গ্রহন করেছিল আর সেই তথাকথিত শত্রুরাই তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল।
এটাই প্রমান করে যে, ধর্ম কোনো রাস্ট্র গঠনের ভিত্তি হতে পারে না। ভূমি,জনগন , সরকার এবং সার্বভৌমত্ব এগুলোই রাস্ট্র গঠনের সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত । যেখানে পাকিস্তানি বাঙালিরা ভারতীয় বাঙালি থেকে আশ্রয় আর সাহায্য পেয়েছিল , সেখানে তাদের সহঅধিবাসী পশ্চিম পাকিস্তানিদের থেকে তারা আগুন আর কামানের গোলা ছাড়া আর কিছুই পায়নি।
পূর্ব পাকিস্তানিদের দোষ কি ছিল? পাকিস্তানের রাস্ট্রপতি তাদের নির্বাচনে যাওয়ার জন্য বলেছিল এবং তারা নির্বাচনেও গিয়েছিল। রাস্ট্রপতির নিজস্ব তত্ত্বায়বধানে সৎ এবং গণতান্ত্রিক এই নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের দল জয় লাভ করেছিল। সেখানে দুটো গণতান্ত্রিক বিকল্প ছিলঃ যেখানে পাকিস্তানকে যুক্ত রাষ্ট্রে পরিণত করা হবে যার পূর্বের অংশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবকে করা হবে এবং পশ্চিমের দায়িত্ব সে অংশে জয়ী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে দেওয়া হবে; অথবা পার্লামেন্টে অধিক ভোটে বিজয়ী শেখ মুজিব কে সরকার গঠন করে পাকিস্তানকে আগের নিয়মেই রাখা হবে।
দুটো বিকল্পর একটাও অনুসরন করা হয়নি। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানে যাদের হাতের মুঠোয় ক্ষমতা ছিল তারা জোরপূর্বক সামরিক শক্তি অবলম্বন করে যার ফলে সেখানে বিপর্যয় নেমে আসে। তাদের অজুহাত এই ছিল যে সামরিক বাহিনী বিচ্ছিন্নবাদীদের দমন করবে। পূর্ব পাকিস্তানিরা এ দমনেও মাথা নত করেনি যখনও তাদের কাছে প্রমানিত হয়েছিল যে, দেশের সরকার তার জনগনের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল না বরং সরকার নির্ভর করে হাজার মাইল দূরে বাস করা দাম্ভিক অংশের ইচ্ছার উপর। এমন একটি দেশের নাগরিকত্ব কে চাইবে?
কারন যাই হোক না কেন,এটা প্রমানিত ছিল যে, প্রতিষ্ঠাতারা এবং সমর্থনকারীরা পাকিস্তানকে যে তত্ত্বে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল তা আর উপযোগী ছিল না। এটি একটি কৃত্রিম নির্মান ছিল এবং সকল কৃত্রিমতার নিয়তি বিনাশই হয়।