শিরোনামঃ ভারতীয় দৃষ্টিতে
সংবাদপত্রঃ দি নেশন ভলিউম ১ নং ২
তারিখঃ ৮ অক্টোবর, ১৯৭১
ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গী
একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ দ্বারা
পূর্ববঙ্গ স্বাধীন সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র হিসেবে বাংলাদেশের নতুন নাম নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের জন্য যুদ্ধরত সর্বগ্রাসীর বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ এবং সাহসী যুদ্ধের জন্য শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের মানুষকে আমরা ভ্রাতৃপ্রতিম শুভেচ্ছা জানাই। নিরস্র বাংলাদেশের মানুষের উপর সংঘটিত অমানবিক নৃশংসতার নিন্দা জানানোর জন্য কোন ভাষাই যথেষ্ট নয়, যারা দুই দশক ধরে গণতান্ত্রিক অধিকার, আইনের শাসন ও আত্মনিয়ন্ত্রন প্রতিষ্টার জন্য সংগ্রাম করছে। মৌলিক মানবাধিকারের উপর পৈশাচিক হামলা সভ্য জগতের ইতিহাসে অজানা। পশ্চিম পাকিস্তানের ছদ্ম-সাম্রাজ্যবাদীদের নিপীড়ন ও শোষণ থেকে মুক্তির জন্য নির্ভীক সংগ্রামে শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাস তৈরি করেছে।
পাকিস্তানে সাম্প্রতিক সাধারণ নির্বাচনের পর, আশা করা হয়েছিল যে সামরিক শাসন গণতান্ত্রিক সরকার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে।কিন্তু একদিকে স্ব-আরোপিত সামরিক স্বৈরশাসকরা ও কায়েমী স্বার্থ এবং অন্যান্য মানুষের স্বীকৃত প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা ব্যর্থ ত্বরান্বিত হয়েছে কায়েমী স্বার্থ দ্বারা সমর্থিত সামরিক নেতাদের ক্ষমতার লোভ এর দ্বারা। ২৬শে মার্চ এ আধুনিক যুগের শ্রেষ্ট দেশপ্রেমিক শেখ মুজিবুর রহমান দ্বারা চালিত অহিংস, অসহযোগ আন্দোলনে সামরিক স্বৈরশাসকদের গৃহীত চরম কঠোর দমনমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে শুনে আমরা মর্মাহত হই।
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শোষণ হতে মুক্তি প্রত্যেক মানুষ ও জাতির জন্মগত অধিকার।অসভ্য উপায়ে মৌলিক অধিকারের অস্বীকৃতি একুশ শতকে এসে সহ্য করা যায় না।সমতা, বিচার এবং সর্বোপরি মানবতার জন্য, এখনই সময় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এবং জাতিসংঘের অনুষ্টানে আওয়াজ তোলার এবং দৃঢ়ভাবে এক স্বরে পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসকদের অবিলম্বে গনহত্যা বন্ধ করতে বলার।যদি বিশ্বের চাপের মধ্যে সামরিক স্বৈরশাসকদের জ্ঞান না আসে এবং গৃহ যুদ্ধ চলার একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ করা উচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার সাথে, ফ্যাসিবাদিত্ব উজ্জ্বলতর হওয়া ও পুনরুজ্জীবন লাভ বিশ্বের শান্তি, উন্নতি ও প্রশান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ।
আমরা ভারতে বিশেষ করে সরকারী প্রশাসনের জন্য দায়ী, আমি সম্পূর্ণরূপে একমত যে আমাদের পূর্বদিকের সীমান্তের ঘটনার জন্য অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।বেশী নির্ভর করবে না, যা শুধু আমরা করব , বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ব্যবহারের উপর ও নির্ভর করে। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রীয় একতার হিতের কথা এবং আমাদের সীমান্তবর্তী রাজ্য যেমন পশ্চিম বাংলা, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও আসামের নিরাপত্তার কথাও আমাদের মনে রাখতে হবে। যা ঘটছে তা নিয়ে আমরা উদাসীন থাকতে পারি না। তাছাড়া, এসব রাজ্যের মানুষের রয়েছে বাংলাদেশের সাথে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক যোগাযোগের দীর্ঘ ইতিহাস। এইসব সীমান্তবর্তী রাজ্যের মানুষের স্বাভাবিক আবেগ আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা পূর্ণ গুরুত্বের সাথে নেওয়া হবে।
আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করেছি (১) একটি স্বাধীন সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র হিসেবে বাংলাদেশকে অবিলম্বে কূটনৈতিক স্বীকার প্রদান করা; (২) নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি উত্থাপন করা এবং বাংলাদেশে গণহত্যা প্রতিরোধে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করা; (৩) কূটনৈতিকভাবে সব দেশ বিশেষ করে আফ্রো-এশিয়ান জাতি একই সাথে জাতিসংঘ সংগঠন এবং পরাশক্তির সাথে বিশ্ব বিবেককে গনহত্যার বিরুদ্ধে জাগিয়ে দিতে হবে; (৪) খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ সাহায্য সংগঠিত করা এবং এ উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলা; (৫) সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষমতার মাধ্যমে রপ্তানির উপর এবং পাকিস্তানে বিমানপথে অস্র বহন একই সাথে সশস্র ব্যাক্তিদের ট্রানজিট সুবিধার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা; (৬) যারা বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন তাদের ধর্ম উল্লেখ না করে আশ্রয়স্থান দেওয়া; (৭) সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে যথাযথ কার্যসম্পাদন করার জন্য বাংলাদেশকে সক্ষম করতে যথা সম্ভব সব রকমের সাহায্য করা।