শিরোনামঃ – আপাতঃ দৃষ্টিতে
সংবাদপত্রঃ – দি নেশন ভলিউম ১ নং ১
তারিখঃ ২৪শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
সূচনা লগ্ন
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এখন বিশ্ব প্রতিক্রিয়া যতটাই জোরালো হয়ে উঠছে, বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোও ততটাই কার্যকর ও মর্মস্পর্শী হয়ে উঠছে। এতদিন ধরে যেসব জাতি বাংলাদেশ বিষয়ে নিশ্চুপ কিংবা গোপনে সমর্থন দিয়েছে তারাও বাস্তবতাকে গ্রহণযোগ্য করার সংগঠিত পদক্ষেপ নিয়েছে।
দিল্লীতে সম্প্রতি বাংলাদেশ বিষয়ক বিশ্ব সম্মেলনে, বিশ্বের সচেতন জাতি সমূহ বাংলাদেশের প্রতি দৃঢ় সমর্থন ও সহানুভূতি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে। ২৫ টি দেশের প্রতিনিধিরা সমান আবেগ ও উদ্দীপনায় এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। এই সম্মেলনে তারা বাংলাদেশের মাটিতে ঘটা গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নিন্দা জানিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেন।
কাবুল থেকে পিন্ডি পর্যন্ত শান্তি শোভাযাত্রায় মানবতা ও আন্তরিকতার ইঙ্গিত প্রকাশ পায়। এই ঘটনা একটি ইতিহাস সৃষ্টি করে যা অনুকরণ যোগ্য। ভবিষ্যতে মানব সভ্যতা বজায় রাখতে এই সরব অনুভুতির প্রকাশ অবশ্যই সাহায্য করবে। শুধুমাত্র মানবিক মূল্যবোধের উপর দৃঢ় বিশ্বাস থাকলেই এমন অসাধারণ উদ্যোগ নেয়া সম্ভব। এর মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়েছে মানবতার করুন অবস্থায় সচেতন বিশ্ব বিবেক কখনই নিশ্চুপ থাকতে পারে না।
প্রস্তাবিত শান্তি শোভাযাত্রার কারণে, ইয়াহিয়ার অকার্যকর দাম্ভিকতা ও নির্বোধ আচরণ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছে। বিশ্ব রাজনীতিতে ক্ষমতার হস্তক্ষেপ জনগণের রায়কে কখনই মুছে ফেলতে পারে না। যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ব জনগণের পক্ষে আছে, সব শক্তি ও চাতুর্যপূর্ণ কৌশল তাসের ঘরের মতই ধ্বসে পরবে।
ইতিমধ্যে ইয়াহিয়াকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে, সমগ্র বাঙালী জাতীর বিরুদ্ধে করা এই জঘন্য অপরাধের পর আপোষের কোন সুযোগ নাই। পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতাই একমাত্র গ্রহণযোগ্য সমাধান।
একতা বজায় রাখার জন্য গণহত্যা প্রকৃত হাতিয়ার হতে পারে না, যদি না তা সর্বসম্মতভাবে আসে। গণহত্যা অবলম্বন কোন সহনীয় উপায় নয়। প্রস্তাবিত শান্তি শোভাযাত্রা অবশ্যই তাকে এই শিক্ষা দিবে। তার কাছে যাই থেকে থাকুক না কেন, শান্তি অভিযানের বিরুদ্ধে সেই একই পন্থা অবলম্বন তার সাহসে কুলাবে না। আর এর মর্মার্থই তার হার নিশ্চিত করছে, অথবা বলা যায়, বাংলাদেশের বিজয়ের সংকেত বহন করছে।