You dont have javascript enabled! Please enable it!

শিরনামঃ স্বাধীনতার জন্য নারীরা
সংবাদপত্রঃ দা ন্যাশন ভলিউম ১ নং ১
তারিখঃ ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

নারীরা পর্দা ছেড়ে বন্দুক তুলে নিয়েছে
মিনা রহমান

বাংলাদেশের লাজুক এবং মৃদুভাষী নারীরাও তাদের মাতৃভূমির ডাকে প্রখরভাবে সাড়া দিয়েছে। জাতির এই সংকটময় অবস্থায় তারা হাল ধরেছেন তারা।অনাদিকাল থেকেই, পুরুষদের সাহায্য করার জন্য নারীরা এগিয়ে এসেছেন এবং এই বর্তমান সময়ে মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য নারীরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন।
বাঙালি নারীদের যারাই জানতে এসেছেন তারাই চমকে উঠেছেন তাদের এই আকস্মিক পরিবর্তন ও জাগরণ দেখে। তারা তাদের পর্দা আর ঘরের কাজকর্মকে পাশে রেখে হাতে বন্দুক তুলে নিয়েছে। নারীরা তাদের ছেলে, ভাই, স্বামীদের খুশি মনে দেশের স্বার্থের জন্য উৎসর্গ করেছে এবং তারা সেটা গর্বের সহিত করেছে।
ক্র্যাকডাউনের পরে, তাদের স্বপ্নগুলো চুরমার হয়ে গিয়েছিল তবুও তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় তাদের দায়িত্ব পালন করছে। যুবকদের সাথে বৃহৎ সংখ্যায় অল্পবয়সী মেয়েরাও নাম লিখেছিল এবং এখনও প্রতিদিন তারা গেরিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগ দিচ্ছিল। এমনকি মেয়েরা সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছে। তাদের জন্য আর কোন কিছুই কঠিন আর অসম্ভব ছিল না।
আজ বাংলাদেশের সাহসী মা জাতি পাকিস্তান আর্মির উপর প্রতিশোধ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তারা তাদের ছেলের-ভাইয়ের নির্মম মৃত্যুর এবং তাদের মেয়ে ও কন্যাদের উপর নৃশংসতার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। তাদের মাতৃভূমির প্রতি ইঞ্চি মুক্ত হওয়ায় আগ পর্যন্ত তারা যুদ্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
বাংলাদেশের নারীরা, বৃদ্ধ কিংবা যুবতী, কেউই শুধু মাত্র শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল না, বরং তারা যুদ্ধ করছিল রোগ ও জরা , ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের মতো আরও বিভিন্ন অভাবের সাথে। যারা বাংলাদেশের দখল সীমানায় ছিলেন তারাও তাদের শ্রেষ্ঠত দিয়ে যুদ্ধ করেছেন। দিনের প্রতি মিনিট তারা মৃত্যু আর অপহরণের ভয় নিয়ে বেঁচে ছিল। এই ধরনের পরিস্থিতি প্রধানত ঢাকা চট্টগ্রাম শহরে বিদ্যমান ছিল।

লক্ষ লক্ষ মহিলা ইন্ডিয়ায় পালিয়ে গিয়েছিল, কেউ তার পরিবাবের সাথে যেতে পেরেছে আর কেউ কেউ ভয়ে একাই চলে গেছে। একবার তারা সকলে হতবাক অসাড় অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসছিল, পরক্ষনেই তারা নিজেরাই তাদের প্রতিরূপের মত বিভিন্ন কাজের মধ্যে নিমজ্জিত করছিল। নারীদের মেডিকেল কোর , নার্সিং ও ফার্স্ট এইড ট্রেনিং সেন্টার যুব শিবিররা বিনামূল্যে সর্বত্র ব্যবস্থা করেছিল। বিশেষজ্ঞ নির্দেশিকা অনুযায়ী , অনুগত মেয়ে ও নারীরা চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করছিল।

নার্সিং ও ফার্স্ট এইড ট্রেনিং শেষ করার পর, তারা যুদ্ধের ময়দানে ছুটে গেছে অসুস্থ আর আহতদের সাহায্য করার জন্য। স্বীকার করতেই হবে, সবচাইতে কঠিন কাজ মহিলা ডাক্তার আর নার্সদের করতে হয়েছে। শরণার্থীদের অধিকাংশই যখন ভারতের মাটিতে পৌছায়, তারা এতটাই ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল যে চিকিৎসার জন্য সাড়া দেয়ার অবস্থাও তাদের ছিল না। ক্ষুধা আর অসুস্থতা তাদের দুর্বল করে ফেলেছিল, সবথেকে দুর্ভাগ্যের ব্যপার ছিল কখনো কখনো চিকিৎসা ত্রাণ তাদের নিকট পৌঁছানোর আগেই তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেছিল। আর বেঁচে যাওয়া অনেকেই বেঁচে থাকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিল। ডাক্তার এবং নার্সদের অসুস্থ আর মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া মানুষদের বাঁচিয়ে তোলার কঠিন কাজটি করতে হচ্ছিল।

বাংলাদেশ তাদের নারীদের এবং তাদের কাজের জন্য গর্বিত বোধ করবে। তারা পুরুষদের মতোই সাহসী এবং বদ্ধপরিকর এবং তারা বদ্ধপরিকর ছিল দখলদার সৈনিকদের পতন করবেই আর স্বাধিনতা ছিনিয়ে আনবে। রওশন আরা এবং বাংলাদেশের আর অনেক রওশন আরাদের নাম জোয়ান অব আর্ক, চাঁদ সুলতানা এবং অনেকের পাশে ইতিহাসে লেখা থাকবে।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!