You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.08 | বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতি দান | বাংলাদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

শিরোনামঃ ভারত বাংলাদেশের স্বীকৃতি দিয়েছে
সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ ভলিউম ১ নং ২৪
তারিখঃ ৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১

বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতি দান

সত্যের জয় হয়েছে, ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
সোমবার , ডিসেম্বর ৬, ১৯৭১, নয়াদিল্লীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দ্বারা ভারত মানব সভ্যতার বৃদ্ধি, শান্তি ও উন্নতির প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনরুদ্ধার করেছে। আশা করা যায়, যেসব রাষ্ট্র গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী তারা বাংলাদেশকে স্বীকৃত করতে এগিয়ে আসবে এবং মানবাধিকার ও মর্যাদার যে উদ্দেশ্য সেটি তুলে ধরবে।

স্বীকৃতিপ্রাপ্তির এই খবরে বাংলাদেশের মানুষ আনন্দে ভাসছে এবং এক অভূতপূর্ব আনন্দধ্বনির সমারোহ হয়েছে। আকাশে-বাতাসে শুধু “জয় বাংলা” ও “শেখ মুজিব জিন্দাবাদ” স্লোগান। সবুজ-লাল-হলুদে রাঙ্গা বাংলাদেশের পতাকা গর্বের সাথে বাড়িতে বাড়িতে পতপত করে উড়ছে।

বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা এক বিশ্লেষন সভায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ কে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ভারতীয় সরকারকে অভিনিন্দন জানান।
খন্দকার মোস্তাক আহমেদ , গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সোমবার এক বক্তব্যে বলেনঃ

“অভিভুত হৃদয়ে, কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ণ হৃদয়ে, আমরা বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষ, আবারো ভারতীয় সরকার ও জনগণকে ইতিহাসের এই যুগান্তকারী মূহুর্তে আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ভারত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়ে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে মানব সভ্যতা, শান্তি, অগ্রগতি বৃদ্ধির প্রতি তাদের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির আদর্শ পুনরোদ্ধার করেছেন।

এই ঐতিহাসিক দিনে , আসুন আমরা সবাই অনুগতভাবে নতুন অর্থনৈতিক ও সামাজিক শৃঙ্খলা আনতে অঙ্গীকার করি যেমনটি আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবাসীদের অঙ্গীকার করেছেন। আমরা আশা করি যে বাংলাদেশ-ভারতের এই মিত্রতার বন্ধন আরো বৃহত্তরভাবে পারস্পরিক বোঝাপড়ার অনন্ত ও শ্বাশত মহিমা লাভ করবে। এই মহান ভারতীয় জাতি এবং উদীয়মান বাঙালি জাতি তাদের সমর্থ অনুযায়ী পঞ্চশীলের নীতি অনুসারে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পরস্পরের পূরক কিংবা সম্পূরক হতে পারবে।

মুক্তিবাহিনীর বীরযোদ্ধারা ও কর্মকর্তারা, এবং ভারতীয় বাহিনী যারা সোনালী হরফে না বরং রক্তঝরা শব্দে ইতিহাসের নতুন পাতা লিখেছে, তারা আমাদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন পাওনা। সকল গৌরব তাদেরই প্রাপ্য।

আমাদের মহান নেতা, বাংলাদেশের স্বপ্নদর্শী , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ইসলামাবাদের বর্বর জনতা থেকে মুক্ত করতে হবে । যদি রক্তই স্বাধীনতা আনতে পারে, তাহলে রক্ত তাকে তার স্বপ্নের বাংলাদেশেও ফিরিয়ে আনতে পারবে।
বিশ্বের সকল স্বাধীনতা-প্রেমী, শান্তিপ্রিয় সরকারদের আমরা আকুল আবেদন জানাই যেন তারা অনতিবিলম্বে গণপ্রিজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয় এবং গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সামাজিকতার নিশানা সুউচ্চে তুলতে সাহায্য করবে। — জয় বাংলা।