শিরোনাম | সংবাদপত্র | তারিখ |
মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা | বাংলাদেশ
ভলিউম: ১ নং ৮ |
২১ অক্টোবর, ১৯৭১ |
মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা
বাংলাদেশ মুক্তিবাহীনির সামরিক ক্যাম্পগুলোর নিকটে বেশ কিছু সংখ্যক বেজ হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। “বাংলাদেশ” নামক এমন একটি ফিল্ড হাসপাতাল কুমিল্লা সেক্টরে পুর্ণাঙ্গমাত্রায় সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এতে কর্মরত সকলেই বাংলাদেশী যাদের ৬ জন চিকিৎসক, ৪ জন মেডিক্যাল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র ও ১৮ জন স্বেচ্ছাসেবী সেবীকা এবং এটির পৃষ্ঠপোশকতা করছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন, যুক্তরাজ্য।
ডাঃ আব্দুল মতিন চৌধুরী একজন তরুণ চিকিৎসক যিনি ইংল্যান্ডে রোগী দেখা বাদ দিয়ে এখন এই হাসপাতাল চালু রাখার জন্য সাহায্য করতে সার্বক্ষনিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
বেজ হাসপাতালটি রণাঙ্গনের ১২টি সাব সেক্টর চিকিৎসাকেন্দ্রের সাথে যুক্ত যেগুলো মুক্তিবাহীনির বিভিন্ন অগ্রগামী অবস্থানের কাছাকাছি; প্রতিটি অগ্রগামী অবস্থানে প্রাথমিক চিকিৎসায় প্রশিক্ষত ২জন স্ট্রেচার বাহক রয়েছেন যাদের কাজ আহত ব্যক্তিদের দ্রুততার সাথে সাব-সেক্টর সদর দপ্তরে সরিয়ে ফেলা। এক্ষেত্রে যাদের আঘাত ছোটখাট যেমন অসংবেদনশীল স্থানে স্প্লীন্টারের আঘাত, বুলেটে চিড়ে যাওয়া ক্ষত, তাদেরকে চিকিৎসক বা চিকিৎসা-সহকারী কর্তৃক চিকিৎসা প্রদানের জন্য তাবুতে তৈরী চিকিৎসাকেন্দ্রে রেখে দেয়া হয়। যাদের আরও গুরুতর আঘাত রয়েছে তাঁদের বেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
শন ও বাঁশের কাঠামোয় তৈরী বেজ হাসপাতাল ‘বাংলাদেশ’ এর অভ্যন্তরে ১০০ জন রোগীকে চিকিৎসা দেবার মত ধারণক্ষমতা রয়েছে। এর ৮০% ভাগ যুদ্ধাহতদের জন্য ও বাকিটুকু সাধারণ জনগণের জন্য যারা মারাত্মক রোগে আক্রান্ত। বাস্তবতা হচ্ছে ১০,০০০ যোদ্ধাকে চিকিৎসা প্রদানকারী বেজ হাসপাতাল ‘বাংলাদেশ’ এটাই নির্দেশ করছে যে প্রকৃতভাবে মুক্তিবাহীনির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত স্বল্প।
হাসপাতালের বেশীরভাগ যন্ত্রপাতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে শত্রুপক্ষ নিয়ন্ত্রিত চিকিৎসাকেন্দ্র হতে দখল করা হয়েছে। এভাবে হাসপাতাল বিপূল পরিমাণ সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ও একটি বৈদ্যুতিক জেনারেটর পেয়েছে। তবে হাসপাতালটিকে ঔষধ ও অন্যান্য জরুরী সরবরাহের জন্য সর্বক্ষনিক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে চিকিৎসকরা উপস্থিত বুদ্ধির প্রয়োগ করছেন। আর এভাবেই পুরোনো মশারী কেটে গজ হিসেবে ও বিছানার চাদর ব্যান্ডেজ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বেজ হাসপাতাল ‘বাংলাদেশ’ ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রপতি, প্রথানমন্ত্রী ও সর্বাধিনায়ক কর্তৃক পরিদর্শিত হয়েছে যাঁদের সকলেই উষ্ণভাবে হাসপাতালের সংগঠকদের প্রশংসা করেছেন ও বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রয়োজনীয় সবধরণের সহযোগীতার প্রতিশ্রুতী প্রদান করেছেন। বাংলাদেশ সরকার চিকিৎসাজনিত সরঞ্জামাদীর অবিরত সরবরাহ চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করছে এবং আশা করা যাচ্ছে যে বিদেশের বিভিন্ন সংগঠন চিকিৎসা যন্ত্রপাতি দানে এগিয়ে আসবে।
৪টি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনসমূহ হচ্ছেঃ এক্স-রে সুবিধাদি, একটি ভালো বৈদ্যুদিক জেনারেটর, এম্ব্যুলেন্স হিসেবে ব্যবহারযোগ্য মোটরযান, নিরবিচ্ছিন্ন ঔষধ সরবরাহ এবং ঔষধপত্র মজুদের ব্যাবস্থা করা।
একই রকমের যে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল যুদ্ধক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থান ও স্ট্রীমলাইন বজায় রাখার জন্য অসামান্য অবদান রেখে চলছে তাদের মধ্যে বেজ হাসপাতাল “বাংলাদেশ” একটি। সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবলও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে কেননা তাঁরা জানেন আহত হলে তাঁদের চিকিৎসার ত্রুটি হবে না।