You dont have javascript enabled! Please enable it!

শিরোনামঃ প্রথম বাংলাদেশ মিশন
সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ ভলিউম ১ নম্বর ৪
তারিখঃ ২১শে জুলাই, ১৯৭১

বিশ্বের প্রথম বাংলাদেশী দূতাবাস

এ বছরের ১৮ই এপ্রিল কলকাতায় পাকিস্তানী দূতাবাসের সহকারী রাষ্ট্রদূত, দূতাবাসের কার্যালয় থেকে পাকিস্তানী পতাকা নামিয়ে সবুজ, সোনালী ও রক্তিম লাল বর্ণের বাংলাদেশী পতাকা উত্তোলন করেন। জনাব হুসেইন আলী এবং দূতাবাসের ৬৪ জন বাঙালী সদস্য মিলে মাতৃভূমির প্রতি আনুগত্যের ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর তাণ্ডব থেকে মুক্ত করার শপথ নেন।
পাকিস্তানী বর্বরতার প্রতিবাদে দূতাবাসের সামনে আগে থেকে জড় হওয়া জনতা এই ঘটনায় উল্লাস, আনন্দের কান্না ও “জয় বাংলা” স্লোগানে চারপাশ মুখরিত করে তোলে।
জনাবা আলী বলেন, ” শহীদের রক্ত কখনোই বৃথা যেতে পারে না, বাংলাদেশী জনগণের বিজয় অবশ্যই হবে “।
তাঁর স্বামী, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রীয় কাজে ২২ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন জনাব আলী তাঁর এক বক্তব্যে জানান, পাকিস্তানীরা বাংলাদেশে গণহত্যা চালাচ্ছে, যেই বাংলাদেশের জনগণ এত বছর ধরে তাদের ভাতৃসম ছিল। ১৯৪৭ থেকে পাকিস্তানীরা প্রচার করে আসছে ভারত আমাদের ১ নম্বর শত্রু, কিন্তু এখন ভারতই আমাদের লক্ষাধিক শরণার্থীদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে।
মানুষের বিবেক বোধের যতটুকুই বেঁচে আছে তা জাগিয়ে তুলে সমগ্র বিশ্বকে সম্ভবপর সকল উপায়ে বাংলাদেশকে সাহায্যের জন্য তিনি আবেদন করেন।
পাকিস্তানী সরকার কলকাতায় ঘটে যাওয়া নাটকীয় ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দাবী জানায়, জনাব হুসেইন আলী এবং অন্যান্য বাঙালী কূটনীতিকরা ভারতীয় চাপ প্রয়োগে তাদের আনুগত্য পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে।
এখন সুইস প্রতিনিধি ডক্টর বন্নারড সকলের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন এবং প্রমিত হয় যে, তাদের কেউই পাকিস্তান ফেরত যেতে আগ্রহী নন। তারা সকলেই দেশপ্রেমী এবং পাকিস্তানের সহযোগিতা করে নিজেদের জ্ঞাতিগোষ্ঠীর ধ্বংস করার কোন ইচ্ছা তাদের নেই।

কেন তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের জন্য মিনতি জানান

কলকাতায় রবিবার দুপুরে পাকিস্তানের সহকারী রাষ্ট্রদূতের কার্যালয়ে বাংলাদেশী পতাকা উত্তলনের পর সহকারী রাষ্ট্রদূতের পত্নী জনাবা আলী সাংবাদিকদের এক বিবৃতিতে জানান, পাকিস্তান সেনারা যখন প্রথম নিরস্ত্র বাঙালী জনগণের উপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করে তখন তিনি ঢাকায় ছিলেন। তাঁর ঢাকাস্থ বাসস্থানের সামনে ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পাকিস্তান বাহিনী ২২ জন ছাত্রকে হত্যা করে। তিনি জানান, এই দৃশ্য এতটাই ভয়াবহ ছিল যে এই ঘটনার পর তাঁর কন্যা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
ঢাকায় পাকিস্তান বাহিনীর নির্বিচারে অধ্যাপক, শিক্ষক ও ছাত্র হত্যার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জনাবা আলী কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, অবস্থা এতটাই অসহনীয় হয়ে গিয়েছিল যে, তিনি তাঁর স্বামীকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে মিনতি করেন।
জনাবা আলী গত কয়েক বছরের পূর্ব বঙ্গের করুণ দুর্দশার বর্ণনা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। পূর্ব বঙ্গের জনগণের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণের বর্ণনা দিতে গিয়ে জনাবা আলী বলেন; ভাত – যা কিনা বাংলাদেশীদের প্রধান খাদ্য তা ইসলামাবাদের তুলনায় অধিক দামে এখানের জনগণের কাছে বিক্রয় করা হত। বিশেষ করে, বৃদ্ধ ও শিশুরা ঔষধ, কাপড় ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন ব্যবহারযোগ্য দ্রব্যাদির স্বল্পতায় ভুগেছে।
জনাবা আলী তাঁর স্বামীর কর্মকাণ্ডের সমর্থন করে বলেন, ইয়াহিয়া খান ভেবেছিল যে সেনাবাহিনীর সহায়তায় স্বাধীনতা সংগ্রামকে গুড়িয়ে দিতে পারবে কিন্তু এটা সম্ভব না কারণ সমগ্র বাংলাদেশের জনগণ তার বিরুদ্ধে ছিল।

কূটনৈতিক কর্মকর্তাবৃন্দ

জনাব রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ( প্রথম সচিব )
জনাব আনোয়ারুল করিম চৌধুরী ( দ্বিতীয় সচিব )
জনাব কাজী নজরুল ইসলাম (তৃতীয় সচিব )
জনাব এম মাকসুদ আলী ( সহকারী গণ সংযোগ দূত )

কার্যনির্বাহী কর্মচারীবৃন্দ


জনাব সাইদুর রহমান
জনাব এম এ হাকিম জনাব আমির আলী চৌধুরী
জনাব আনোয়ার হুসেইন চৌধুরী
জনাব মোহাম্মদ সায়েদুজ্জামান মিয়া
জনাব জয়নাল আবেদিন চৌধুরী
জনাব মুস্তাফিজুর রহমান
জনাব আলিমুজ্জামান
জনাব এ জেড এম এ কাদির
জনাব মতিউর রহমান
জনাব কাজী সেকান্দার আলী
জনাব মোহাম্মদ গোলামুর রহমান
জনাব শামসুল আলম
জনাব মোহাম্মদ সিদ্দিকুল্লাহ
জনাব এ কে এম আবু সুফিয়ান
জনাব আব্দুর রব
জনাব মোহাম্মদ ফকরুল ইসলাম
জনাব মোহাম্মদ আমিনুল্লাহ
জনাব মোহাম্মদ আব্দুল বাশার
জনাব এ বিএম খুরশিদ আলম
জনাব আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া
জনাব আব্দুর রহমান ভুঁইয়া
জনাব মোহাম্মদ আব্দুর রহিম
জনাব মোহাম্মদ নুরুল আমিন
জনাব নূর আহমেদ
জনাব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন
জনাব সমিরুদ্দিন
জনাব এম সোলায়মান
জনাব এস শামসুদ্দিন হুসেইন
জনাব জহুর হুসেইন
জনাব মীর মোজাম্মেল হক
জনাব মোহাম্মদ জাকারিয়া
জনাব মোহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান
জনাব আব্দুর নূর
জনাব এ কে এম আব্দুর রব
জনাব এ এন এম কামরুর রশিদ
জনাব আনোয়ারউজ্জামান
জনাব আব্বাস উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী
জনাব ওয়াহিদুর রহমান
জনাব মোহাম্মদ শহিদুর রহমান
জনাব শরিফুল আলম
জনাব আব্দুল কাদের
জনাব আব্দুল মতিন প্রধানিয়া
জনাব আব্দুল আমিন
জনাব মোহাম্মদ হুসেইন
জনাব মতিউর রহমান
জনাব আব্দুল গফুর মৃধা
জনাব আমান হুসেইন
জনাব হাতেম আলী
জনাব বযলুর রহমান
জনাব মোহাম্মদ হেদায়েতুল্লাহ
জনাব নুরুল হক
জনাব শামসুল আনোয়ার
জনাব মমতাজ মিয়া
জনাব শামসু মিয়া
জনাব মোহাম্মদ ইলিয়াস
জনাব আব্দুল হাশেম

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!