You dont have javascript enabled! Please enable it!

শিরোনামঃ (মার্কিন সপ্তম নৌবহর) ভয় পাইয়ে দেবার কারসাজী মাত্র
সংবাদপত্রঃ অভিযান ১ম বর্ষঃ ৪র্থ সংখ্যা
তারিখঃ ১৭ ডিসেম্বর,১৯৭১

ভয় পাইয়ে দেবার কারসাজী মাত্র

বঙ্গোপসাগরে মার্কিন সপ্তম নৌবহর এগিয়ে আসছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের ভারতবিরোধী বক্তব্য, অন্যদিকে ভারত সীমান্তে চীনা সৈন্যর তৎপরতা প্রভৃতি পাকিস্তানে দুই প্রভু, গণচীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারতবিরোধী যৌথ উদ্যোগ বলে মনে হয়।

খবরে প্রকাশ, সপ্তম নৌবহরের আণবিক শক্তিসম্পন্ন বিমানবাহী জাহাত ‘এন্টারপ্রাইজ’ হংকং-এর কাছে অবস্থান করছে। নির্দেশ পেলে সেটি ঢাকাস্থিত গুটিকয়েক আমেরিকানকে উদ্ধার করার জন্য বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসর হবে।

কিন্তু ঢাকা, করাচী ও রাওয়ালপিন্ডি থেকে বৃটিশ ও অন্যান্য দেশের নাগরিক ও রাষ্ট্রসংঘের সদস্যদের বেসামরিক বিমানে করে তাঁদের স্বদেশে নিয়ে আসবার ব্যবস্থা হয়েছে। অথচ গুটি কয়েক নাগরিকের জন্য সপ্তম নৌবহরের প্রেরণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূরভিসন্ধিমূলক আচরণ বলে মনে হয়।

নিক্সনের পাকিস্তানের প্রতি অন্ধ পক্ষপাতিত্ব থাকা সত্ত্বেও মার্কিন জনমত ও বিশ্ব জনমত বিরুদ্ধাচরণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ যুদ্ধে সামিল হবার ঝুঁকি নেবার সম্ভাবনা এখনও অবধারিত হয়ে ওঠেনি।

কিন্তু প্রশ্ন হল জনগণকে উদ্ধারের জন্যে পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী নৌবহরের প্রয়োজন কি?

অনেকে মনে করছেন যে সপ্তম নৌবহরের এই অগ্রাভিযানের প্রসঙ্গটি ১৯৫৪ সনের পারস্পরিক পাক মার্কিন সামরিক চুক্তির সাথে সংগতিপূর্ণ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীও এ ব্যাপারে একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রেখেছেন গত ১২ই ডিসেম্বর। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি শুনতে পাচ্ছি কিছু দেশ আমাদের হুমকি দিচ্ছে এবং বলছে, তাদের সাথে পাকিস্তানেরও কিছু চুক্তি রয়েছে। এ ইঙ্গিতে তিনি নাম না করলেও মার্কিন দেশকেই উদ্দেশ্য করে বলেছেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ বক্তব্য প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন যে, এ যুক্তি ছিল, যতদূর তিনি জানেন, কম্যুনিজম রোধ করবার জন্য, গণতন্ত্র ও ন্যায়বোধের বিরুদ্ধে নয়।

আর যদি এর জন্যই হয়ে থাকে তাহলে এ দেশটি এতদিন ধরে বড় বড় মিথ্যা কথাই বলে আসছে।

পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাক-ভারত সমস্যায় নিজেকে জড়িত করে বিশ্বযুদ্ধকে ডেকে আনবার চেষ্টা করবে না। করলে সোভিয়েত রাশিয়াসহ মার্কিনবিরোধী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চুপ করে থাকবে না, তারা সবাই মার্কিনবিরোধী যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে। শক্তির ভারসাম্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয়ের সম্ভাবনাই বেশী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীন পক্ষ নিয়ে এতদূর এগিয়ে এলে আদর্শবাদের দিকে থেকে সে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। বিশ্বজনমত তার বিরুদ্ধেও অস্ত্র ধরতে কুন্ঠা করবে না। কারণ বিশ্বযুদ্ধে বিশ্বের মুক্তিকামী ও গণতান্ত্রিক দেশের বাঁচার প্রশ্নটাই প্রধান হয়ে ঊঠবে। চীনও আত্মঘাতী যুদ্ধে এগোবে না বলেই আমাদের ধারণা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা চীন কেউই বিশ্বযুদ্ধের ঝুকি নিতে অগ্রণী হবে না। কেননা এতে তাদের অস্তিত্বও বিপন্ন হতে বাধ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ও চীনের আসল উদ্দেশ্য পাকিস্তানকে অখন্ড রাখা ও রক্ষা করা পূর্ণ ধ্বংসের হাত থেকে। ভারতকে মানসিকভাবে ভীতসন্ত্রস্ত ও কাবু করবার জন্যই চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই রণ পায়তারা।

বাংলাদেশ সংগ্রামের প্রতি ও ভারতের দৃঢ় ন্যায়বোধের প্রতি সহানুভূতিশীল বৃহৎশক্তি সোভিয়েত রাশিয়া এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অবগত। মার্কিন চীনের রাষ্ট্রসংঘে যৌথ চক্রান্তমূলক তৎপরতাকে স্তব্ধ করে দিয়েছেন। এর জন্যে বাংলাদেশ তথা বিশ্বের মুক্তিকামী জনগণ কর্তৃক সোভিয়েত রাশিয়া অভিনন্দিত। এ মার্কিন চীনের এই রণপায়তারা সম্বন্ধে সোভিয়েত রাশিয়া পূর্বেই মন্তব্য করেছিল যে তারা ভারতের বিরুদ্ধে কোন হঠকারী পদক্ষেপ নিলে রাশিয়া চুপ করে বসে থাকবে না। তাস সোভিয়েত মহলের উদ্ধৃতি দিয়ে ৭ম নৌবহরের খবরটিকে ভুয়া ভয় প্রদর্শন জনিত ঘটনা বলে আখ্যায়িত করেছেন। সোভিয়েত রাশিয়া মনে করে এই হুমকি ভারতকে ব্লাকমেল করারই এক অপচেষ্টা মাত্র।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!