You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.28 | জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের দ্বৈত আচরণ | বাংলাদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

শিরোনামঃ জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের দ্বৈত আচরণ
সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ, ভলিউম ১ নং ৫
তারিখঃ ২৮ জুলাই, ১৯৭১

জাতিসংঘ সচিবালয় বাংলাদেশের অভ্যান্তরে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক পাঠানোর প্রস্তাবকে সক্রিয়ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। তাদের এ প্রস্তাবের উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশের ৭ মিলিয়ন উদবাস্তু যারা এখন ভারতে অবস্থানরত তাদেরকে অঙ্গীকার দেওয়া যে তাদের মাতৃভূমি এখন তাদের জন্য নিরাপদ।
পাকিস্তানী মিলিটারি কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নিচ্ছে যেন রেফিউজিরা তাদের দেশে ফিরতে না পারে এবং পাকিস্তানী আর্মি বাংলাদেশের জনগণের উপর এমন বর্বরতা এখনও চালাচ্ছে যে ৫০,০০০ রেফিউজি গতসপ্তাহে বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে যেতে বাধ্য হয়েছে। এটি মনে হচ্ছে যে, জাতিসংঘের সুযোগ্য ভদ্র মহাদয়গণ বাংলাদেশের লাখ লাখ গৃহহীন মানুষেরই শুধু নয় ; নিজেদেরকেও প্রতারিত করার জন্য বদ্ধপরিকর। যেহেতু বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং কৃপাহীন তাই জাতিসংঘের নিযুক্ত পর্যবেক্ষকদের পাকিস্তানী আর্মির আশেপাশে থাকা অনিরাপদ।
আমাদের মনে আছে, মার্চ মাসে যখন পাকিস্তান আর্মি বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, জাতিসংঘ তখন বাংলাদেশ থেকে সকল কর্মীকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল যাতে পাকিস্তানী আর্মি জাতিসংঘের তথাকথিত পর্যবেক্ষকদের অনুপস্থিতিতে হত্যাযজ্ঞ চালাতে পারে।
জাতিসংঘের যদি সত্যিই গৃহহীন মানুষের জন্য উদ্দেগ থাকে তবে তারা কেন এই গৃহহীন মানুষদেরকে আরও বড় বিপদের দিকে ঠেলে দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে? এটি কখনওই তারা অস্বীকার করতে পারবে না যে তথাকথিত নিরপেক্ষ জাতিসংঘের কর্তাব্যাক্তিরা পাকিস্তানী আর্মির বাঁশির সুরে নাচছে।
তাছাড়াও ইউ এন হাই কমিশনারের বিচার ব্যাবস্থায় শুধুমাত্র ফুটে উঠেছে রেফিউজিদের মানবিক ত্রাণ পাঠাবার কথা। এটি অদ্ভুত যে এই প্রতিষ্ঠানটি রেফিউজিদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো-তেই বদ্ধ পরিকর। এটি পরিষ্কার যে রেফিউজিদের বাংলাদেশে নিরাপদে ফেরত পাঠনোতে রাজনৈতিক প্রশ্ন জড়িত। আমরা বুঝতে পারছিনা কিভাবে জাতিসংঘের শরনার্থিদের এই কমিশনার একক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যেখানে এখনও জাতিসংঘের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ‘দি “সিকিউরিটি কাউন্সিল” (নিরাপত্তা পরিষদ) বাংলাদেশের অবস্থার জন্য কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে নি।
পাকিস্তান আর্মির প্রকাশ্যে গনহত্যায় নীরব ভূমিকা প্রদর্শনের মাধ্যমে জাতিসংঘ ইতিমধ্যে মর্যাদাহানিকর বদনাম কুড়িয়েছে যেটি জাতিসংঘ সনদের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আমরা আশাকরি, ইউ এন তার উত্তরাধিকে অনুসরণ করবেন না যিনি নিজের কারিয়ারের শেষ দিনটিকে স্মরণীয় করার জন্য কঙ্গোতে হস্তক্ষেপের একটি ভুল ও অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বর্তমানে সেক্রেটারি জেনারেল ও যদি বাংলাদেশে সেই নোংরা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটান তাহলে এটি খুব মর্মান্তিক হবে।