You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ
সম্পাদকীয়

পাকিস্তানের কবর খোঁড়া শুরু হয়েছে

অভিযান

১ম বর্ষঃ ৩য় সংখ্যা

১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১

 

সম্পাদকীয়

পাকিস্তানের কবর খোঁড়া শুরু হয়েছে

দশ দিনের ভিতর যুদ্ধে যাবার ওয়াদা অনুযায়ী পাকিস্তানের জঙ্গীলাট ইয়াহিয়া খাঁন তার সেনাবাহিনী নিয়ে ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় ঝাপিয়ে পড়েছে। গত সপ্তাহে আমরা বলেছিলাম পাকিস্তান জঙ্গীচক্র ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধই লাগিয়ে দিতে পারে। বাংলাদেশ হাতছাড়া হলেও পশ্চিম পাকিস্তানে শাসন ক্ষমতা সুরক্ষিত রাখার জন্য এবং সেনাবাহিনীর কাছে মুখ রক্ষার জন্যে তারা এটাই করতে পারে বলে অনুমান করা যাচ্ছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীরা পাকিস্তানী জঙ্গীচক্রকে কতখানী উৎসাহিত করেছে সেটাই আগামী কয়েক দিনের ভিতরই বুঝা যাবে। এ প্রসঙ্গে আমেরিকা ও চীনের ভূমিকার যেকোন জটিলতা নেই গত দশ দিনের ঘটনাই তা প্রমাণ করেছে। এই সময়ের ভেতরে উভয় বৃহৎ রাষ্ট্রই পাকিস্তানকে দ্রুত অস্ত্র সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। পক্ষান্তরে আমেরিকা ভারতকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।

এই অবস্থা ভারতীয় রাষ্ট্রনীতিকদের মনে, বিশেষ করে বাংলাদেশ সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে, কিছুমাত্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে যে পারেনি সে কথা সেদিন শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর ভাষাতেই প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বাংলাদেশ প্রশ্নে নিক্সন সরকারের অভিসন্ধিমূলক মনোভাবের কঠোর সমালোচনা করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে এটাও বলেছেন যে ভারতকে ভ্রুকুটি দেখিয়ে কারও মতলব হাসিল করার দিন শেষ হয়েছে। ভারত তার নিজের অনুসৃত মানবিক এবং গণতান্ত্রিক নীতির পথে অটল থাকবার জন্যে কারও সহায়তার মুখাপেক্ষী নয়। সুতরাং বাংলাদেশের এক কোটি শরণার্থীকে নির্বিঘ্নে পুনর্বাসনের যে নীতি ভারত প্রথম ঘোষণা করেছে, শেষ পর্যন্ত সেই নীতিই সেই অনুসরণ করবে। এর বিরুদ্ধে যে কোন আঘাতকে সে নিজের ওপর আঘাত বলে গন্য করবে এবং সেই বিচারেই তার জবাব দেবে। বলা বাহুল্য, পাকিস্তানী হামলার জবাব ভারতীয় সেনাবাহিনীকে পাকিস্তানী ভূখন্ডে ঢুকেই প্রতিঘাতের আদেশ দেওয়া হয়েছে এবং সেনাবাহিনী তৎপরতার সঙ্গে সে আদেশ প্রতিপালনের জন্যে অগ্রসর হয়েছে। ফলে পাকিস্তান এতদিন ধরে যে উসকানি দিয়ে চলছিল সেই ভারত পাকিস্তান সংঘ্ররষই দানা বেঁধে উঠেছে।

কিন্তু সংঘর্ষ যেভাবেই জটিল হয়ে উঠুক, তার ফলে বাংলাদেশ প্রশ্ন যে চাপা পড়ে যাবে না-যেতে পারে না, শ্রীমতি গান্ধী সে কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছেন। এদিকে বাংলাদেশের স্থির প্রতিজ্ঞ মুক্তি সংগ্রামীরা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী প্রত্যেকটি রণক্ষেত্রে দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বড় বড় কয়েকটি শহরকেন্দ্রীক সেনানিবাসে একরকম অবরুদ্ধভাবে গোলাবাজী করা ছাড়া তাদের ব্যাপক গতিবিধির ব্যবস্থা নাই বললেই চলে। অবরুদ্ধ সৈন্যদের জন্য নতুন সাহায্য আমদানী সম্ভাবনাও তাদের বন্ধ। এ অবস্থায় বাংলাদেশ দখলদার পাকিস্তানী দস্যুদের সমূলে ধ্বংস হবার বিলম্ব নেই।

অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তান সীমান্ত বরাবর ভারতীয় এলাকায় বিমান হামলা চালাবার ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের জমিতে ঢুকেই পাকিস্তানী সামরিক যন্ত্র ধ্বংস হুকুম পেয়েছে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে, কিছুদিন আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, এবার যুদ্ধ বাঁধলে পাকিস্তানের যে অংশ

ভারতের দখলে আসবে ভারত তা ছেড়ে দেবে না। আর কোন ‘তাসখন্দ’ চুক্তি করা হবে না। এ থেকে অনুমান করা চলে দু’দিকে কঠোর বিপর্যয়ের মুখে পাকিস্তানের অস্তিত্বি ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েছে।

এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারী পাকিস্তানের বন্ধুরা তাকে কি সাহায্য দিতে পারবেন? ভারতকে ধমক দিয়ে যে নীতিবিচ্যুত করা চলবে না সেকথা প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি গান্ধী বলে দিয়েছেন। তা হলে পাকিস্তানের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আপাততঃ যে ব্যবস্থা করার পথ এখনও একেবারে রুদ্ধ হয়নি বলে আমাদের বিশ্বাস, তাহলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া এবং বাংলাদেশ থেকে মানে মানে পাততাড়ি গুটাবার জন্য স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা ভিক্ষা করা। আমাদের মনে হয় পাকিস্তানী জঙ্গীচক্রের সুহৃদ্ররা সেই ব্যবস্থাই করছেন। অন্ততঃ সেটা করলে তাঁরা বিবেচকের কাজই করবেন।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!