শিরোনাম | সংবাদপত্র | তারিখ |
সম্পাদকীয়
এবারের ঈদ সংগ্রামের নব চেতনা |
সংগ্রামী বাংলা*
ঈদের বিশেষ সংখ্যা |
নভেম্বর,১৯৭১ |
[ *সংগ্রামী বাংলাঃ সাপ্তাহিক। সম্পাদকঃ মোঃ এমদাদুল হক। সংগ্রামী বাংলা প্রেস, তেতুলিয়া হতে এমদাদুল হক কর্তৃক প্রকাশিত ও প্রচারিত। প্রধান উপদেষ্টা ও পৃষ্ঠপোষক সিরজুল ইসলাম এম, পি, এ।]
সম্পাদকীয়
এবারের ঈদ
সংগ্রামের নব চেতনা
প্রতি বছরের মত এবারেও বাংলার বুকে ঈদোৎসব নেমে এসেছে কিন্তু অন্য বছরের চেয়ে এবারের উৎসব সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র। এবারের ঈদের চাঁদ বাঙালীর রক্তে রঞ্জিত। এবারের চাঁদ সন্তানহারা মায়ের, ভাই হারা বোনের, স্বামীহারা বিধবা নারীর আর পৈশাচিক বর্বর হামলার সাক্ষ্য বহন করে উদয় হয়েছে। এই চাঁদ প্রতিজ্ঞা করার আর একতাবদ্ধ হয়ে হানাদার শত্রুনিধনের মন্ত্র বয়ে এনেছে।
এবারের ঈদকে আমরা বরণ করেছি ‘ঈদ মোবারক’ হিসেবে নয় বরং ‘সংগ্রামী ঈদ’ হিসেবে। কারণ দেশের ভেতর আজ মা বোনদের ইজ্জত নিয়ে চলছে ছিনিমিনি খেলা, জীবনে নাই নিরাপত্তা। এক কোটির মত বাঙালী জনতা দেশ ছাড়া।
বাংলার বুকে ঈদগাহে আজ মানুষ নাই কারণ পশুর সাথে মানুষের একত্রে নামাজ হতে পারে না। গত বছর এই ঈদ উৎসবে জনগণ তাঁদের নেতা শেখ মুজিবকে পেয়েছিল কিন্তু এবার তিনি পশুদের কারাগারে। তাঁর আশু মুক্তির জন্য তাঁর দেয়া স্বাধীনতার মন্ত্রকে বাস্তবে রূপদানের জন্য দৃঢ় সংকল্প নিয়েছে। সাত কোটি বাঙালী তাঁদের নেতার মুক্তি আর বাংলার স্বাধীনতার জন্য বিশেষ মোনাজাত করেছে।
দেশ মাতার বুক থেকে জল্লাদ খানসেনাদের তাড়ানোর জন্য প্রতিটি মুক্তিবাহিনী এবারের ঈদোৎসবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং ৪জন ছাত্রনেতা এজন্য পৃথক পৃথক বাণীতে বলেছেন যে, যেদিন বর্বর খানসেনাদের এদেশ হতে তাড়াতে পারব আর সমস্ত দেশকে মুক্ত করতে পারব সেই দিনই আমাদের নতুন ঈদ নেমে আসবে। আজ এদিন সবার কাছে সংগ্রামের বীজ বপনের দিন হিসাবে দেখা দিয়েছে অন্য কোন আনন্দ উৎসব হিসেবে নয়।