You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ
মুক্তিযোদ্ধার জবানবন্দী জাগ্রত বাংলা

১ম বর্ষঃ ৫ম সংখ্যা

৩০ অক্টোবর, ১৯৭১

 

জবানবন্দী
শফিকুল ইসলাম

সংগ্রাম আমাকে ডাক দিয়েছে। তার ডাকে সাড়া না দিয়ে আমি থাকতে পারি না। মুক্তির গান গাওয়ার আমার খুব ইচ্ছা। আমি বাংলাকে ভালবেসেছি, বাংলা প্রত্যেকটি তৃণলতার সাথে আমার আজন্ম পরিচয়; কিন্তু বাংলা আজ পরাধীনতার নাগপাশে আবদ্ধ। তাই বাংলার দুর্যোগের দিনে আমি আপন স্বার্থে লিপ্ত থাকতে পারি না। বাংলার শ্যামলিমা আমাকে ডাক দিয়েছে। পদ্মা, মেঘ্না, যমুনার উচ্ছল তরংগমালা আমাকে উৎসাহিত করেছে, কালবৈশাখীর উদ্দামতা আমাকে সমর্থন দিয়েছে। তাদের এ সম্মিলিত আহবাঙ্কে আমি অগ্রায্য করতে পারি না।
আমি একুশে ফেব্রুয়ারীতে শহীদ মিনারে সত্য সুন্দরের নামে শপথ করেছিলাম এদেশের মানুষকে মুক্ত করে শোষণ্মুক্ত সমাজব্যবস্থা কায়েম করার। আজ সেদিন এসেছে কিন্তু বন্দুক কামানের শব্দ শুনে ভীত হয়ে পিছিয়ে পড়লে শহীদরা আমাকে পরিহাস করবেন, ধীক্কার দিবেন আমার মানুষ্যত্বকে।
আমি বাংলার একজন জাতীয়তাবাদী ছাত্র। কিন্তু আজ বাংলার মাটিতে জঙ্গীচক্র যে হত্যাযজ্ঞ ও অত্যাচার চালিয়েছে তা বায়াফ্রা মাইলাই এর হত্যাযজ্ঞ ও অত্যাচার থেকে ভয়াবহ, হিটলারের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প হতেও পাশবিকতায় বীভৎস। এরা বাংলার মানুষকে পথে নামিয়েছে, বাংলার মানুষকে রিক্ত করেছে, মাকে সন্তানহারা করেছে, বোনকে স্বামীহারা করেছে, বোনের সতীত্বকে নষ্ট করেছে; এরা বাংলার মাটির পবিত্রতা নষ্ট করেছে, বাংলার সবুজ শ্যামল প্রান্তর রক্তে রঞ্জিত করেছে, সোনার বাংলাকে শ্মশান করেছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্র হিসাবে কি করে আমি জঙ্গীচক্রের এ হেন হীন কার্য্যকে সমর্থন করব? আজ যদি সংগ্রাম মুখর দিনে আমি অংশগ্রহন না করি তবে কোথায় থাকবে আমার জাতীয়তাবোধ? বাংলার শ্যামলিমা আমাকে অভিশাপ দিবে, বোনের আর্তক্রন্দন আমার ভবিষ্যত জীবনকে দুর্বিসহ করবে, বাংলার মানুষের শহীদী আত্মা আমাকে উপহাস করবে।
মরতে একদিন হবেই। তবে মৃত্যুকে কেন এত সংশয়? আমি সে মৃত্যুর পক্ষপাতী যে মৃত্যু গৌরব ডেকে আনবে। পরপারের ডাক যার আসবে সেদিন তার চলে যেতেই হবে; কিন্তু যখন শহীদী মৃত্যু লাভ করা যায় তখনই মরাটা ভাল। কেননা, যে মৃত্যু ফুল হয়ে দীপ্তিতে ভাস্কর হয়ে থাকবে। পঁচিশের রাতে (মার্চ) ভয়াবহতায় অনেকেই মৃত্যুকে আকড়িয়ে ধরেছিলেন। তারা জানতেন আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে যারা আদর্শভ্রষ্ট হয় তাদেরকে ইতিহাস ক্ষমা করে না। তাই মহান ব্রতকে সামনে রেখে কালরাত্রিতেই তারা পৃথিবী হতে বিদায় নিয়েছেন। আমি আদর্শবাদী মুক্তিকামী শহীদদের রক্ত স্পর্শ করে শপথ নিয়েছিলাম, আজ কেমন করে আমি বিস্মৃত হই?

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!