You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ
সম্পাদকীয়

রাজাকার দর্পণ

জাগ্রত বাংলা

১ম বর্ষঃ ৫ম সংখ্যা

৩০ অক্টোবর, ১৯৭১

[ জাগ্রত বাংলাঃ মুক্তিফৌজের সাপ্তাহিক মুখপত্র। ময়মনসিংহ জেলা ও উত্তর ঢাকার বেসামরিক দপ্তর আসাদ নগর (ডাকাতিয়া) থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত। প্রত্রিকাটি শত্রু সেনা পরিবেষ্টিত বাংলাদেশ হতে সাইক্লোস্টাইলে প্রকাশিত। সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি হাফিজউদ্দিন আহমেদ।]

সম্পাদকীয়
রাজাকার দর্পণ

হানাদার জঙ্গীশাহী বাংলাদেশে পঁচিশে মার্চে অতর্কিত বর্বর হামলায় লক্ষ লক্ষ নিরীহ বাঙ্গালী হত্যা করিয়াও যখন কোন প্রকার কুলকিনারা করিতে পারিল না তখন জোর জবরদস্তি করিয়া বেয়নেটের আগায় ভয় দেখাইয়া দালালদের সহায়তায় হাজার হাজার বাঙ্গালী যুবকদের রাজাকার বাহিনীতে ভর্তি করিতে থাকে। বাঙ্গালী দিয়া বাঙ্গালী হত্যা, বাঙ্গালী দিয়া বাঙ্গালীদের সহায় সম্পদ লুট ও ঘরবাড়ী জ্বালান এবং বাংলার মা-বোনদের বেইজ্জত করিবার মৌল উদেশ্যে বহুসংখ্যক রাজাকারকে তাহাদের মা-বোন স্ত্রীদিগণকে পশ্চিমা নরপশুরা ভোগের জন্য সরবরাহ করিতে বাধ্য করিয়া আসিতেছে। অনেক যুবকের সম্মুখেই মা বোন স্ত্রীকে পাশবিক অত্যাচার চালাইয়াছে এবং যুবকদের ধরিয়া লইয়া বলপূর্বক রাজাকারে ভর্তি করিয়াছে। চোখের জল ফেলিয়া এমন আক্ষেপ উক্তি করিয়াছেন বহুসংখ্যক পলাতক রাজাকার।
প্রাণের ভয়ে অবস্থার বেগতিক পরিবেশে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও বহুলোক রাজাকার হইয়াছে। কিন্তু অত্যাচারের ভয়ে ও রাজাকার হইয়াও যখন অত্যাচার হইতে রক্ষা পাওয়া যায় না লাঞ্জনা-গঞ্জনা বা নির্যাতন চালাইতেছে সমান হারে তখন কি করার থাকে? তাই মরিয়া হইয়া প্রতিদিন বহু রাজকার বিভিন্ন এলাকা হইতে পালাইতেছ। তাহারা অন্তত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়া মরিতে চায়। দেশমাতৃকার নামে প্রাণ বলি দিত সুযোগ বুঝিয়া অস্ত্রসহ অনেকেই মুক্তিবাহিনীতে যোগদানও করিতেছে।
অত্যাচারীর একই মাত্র পরিচয় সে নির্মম নির্যাতনকারী। মানুষের আকার হইলেও আসলে পশুত্বপূর্ণ তাহার আচরণ। তাই রাজাকাররাও রেহাই পাইতেছেনা জল্লাদদের নির্যাতন হইতে। পলাতক রাজাকারদের বাড়ীঘর পুড়াইয়া নিশ্চিহ্ন করিতছে বাড়ীতে ছেলে বুড়ো মা বোন-স্ত্রী, যাহাকে পাইতছে ধরিয়া নিয়া চালাইতেছে অমানুষিক নির্যাতন ও পাশবিক অত্যাচার। এমনকি বহু রাজাকারের বাড়ীতে কোন লোকজন গ্রেফতার করিতে সক্ষম না হইয়া তাহাদের প্রতিবেশী যাহাকে পাইতেছে তাহাকেই ধরিয়া নিয়া যাইতেছে। ভাইকে দিয়া ভাইয়ের বুকে গুলী চালাইবার জন্যই বাঙ্গালীদিগকে রাজাকারে ভর্তি করা হইতেছে। অন্য কথায় বলা যাইতে পারে শাক দিয়া শাক নিপাত করা। তাতে রাজাকারদের যদি বিবেক জাগ্রত হয়-আর কথায় আত্মা, বলিয়া ওঠে না, আর নয়, ভাই হইয়া ভাইকে আর হত্যা করিব না। মা বোনের ইজ্জত বিদেশী পশুদের এমনি করিয়া আর নষ্ট করিতে সাহায্য করিব না।
পশু শক্তির নির্মম আঘাতে একটি জাতির জাগ্রত বিবেককে ধ্বংস করা যায় না। যে রাজাকারকে স্বাধীনতা রক্ষাকারী বাঙ্গালী হত্যা করিবার হাতিয়ার করিয়াছে, তাহারাই অবশেষে নরপশু পশ্চিম কসাইদিগকে হত্যা করিয়া বাংলার মা বোনের ইজ্জত ধন মান সহায় রক্ষা করিতে অগ্রসর হইবে এটা তাহাদের ন্যায়ের পথে সুষ্ঠু মানবিকতারই বিকাশ ও অন্ধকার হইতে আলোর পথে পদক্ষেপ। যাহার কান্ডারী তাহাদের ধৈর্য্যশীল হইতে হইবে। আর ভুল পথের যাত্রীরা চাহিয়া দেখ, এই শ্যামল বাংলা-এদেশ আমার এদেশ তোমার। দেশের শ্যামল প্রান্তরে জল্লাদের হিংস্র আক্রমণে রক্তের উত্তাল তরঙ্গ বহিতেছে। পশু শক্তির লেলিহান শিখা দাউ দাউ করিয়া জ্বালাইয়া পুড়াইয়া শেষ করিতে চাহিয়াছে একটা জাতিকে। দেখ, তোমার আমার রক্তে একই ধারা বহিতেছে। বিবকের আগুনে দগ্ধ কর তোমার আত্মাকে। বিদ্রোহ কর। হানাদারদিগকে রুখ। হত্যা কর। বাংলা মায়ের কলিজা ঠান্ডা কর নরপশুদের তাজা রক্তে। দেখিবে তাহাতে মরণেও সুখ; মরিয়াও আবার জন্ম নিবে বাঙ্গালীর ঘরে। মুক্তি বাংলার সূর্যালোক উদ্ভাসিত হইয়া উঠিবে হাসি ভরা মুখ; জয়টীকা আঁকা থাকিবে তোমার ললাটে।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!