শিরোনামঃ মুক্তিবাহিনীর সমস্যা ও অভাব অভিযোগ
সংবাদপত্রঃ দাবানল ১ম বর্ষঃ ২য় সংখ্যা
তারিখঃ ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
মুক্তিবাহিনীর সমস্যা ও অভাব অভিযোগ
||নিজস্ব সংবাদদাতা||
দাবানলের আত্মপ্রকাশের প্রথম সংখ্যা থেকেই আমরা বাংলাদেশের মুক্তি সেনাদের সমস্যা ও অভাব অভিযোগের চিত্র তুলে ধরছি। এটা সরকারী প্রচেষ্টাকে সমালোচনা কিম্বা নিন্দা করার জন্য নয়, বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করার জন্যও নয় কেননা আমরা জানি বাংলাদেশ সরকার সব সময়ই আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি নজর ও সশ্রদ্ধ দৃষ্টি রাখছেন। তবুও দেশের মুক্তির বৃহত্তর স্বার্থে আমরা স্থির করেছি এই কলমে মুক্তিসেনাদের অভাব অভিযোগের চিত্র তুলে ধরব। আমাদের মুক্তিসেনাদের অভাব অভিযোগ ও আত্মত্যাগের প্রতি দেশ বিদেশে মানুষ সহানুভূতিশীল হবেন- বাংলাদেশ সরকারের সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসবেন এই আশায়।
খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর অনেক সৈনিক যাঁরা জীবনের বিনিময় শত্রু হননে অপারেশনে গিয়ে বুলেট বিদ্ধ হয়েছে তারা ভাল চিকিৎসা দূরে থাক ন্যূনতম আধুনিক ঔষধপত্রও পাচ্ছেন না। আহত সৈনিকরা হাসপাতালে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অভাবে ভুগছেন। বাংলাদেশে মুক্ত এলাকায় এই হাসপাতালের আহত সৈনিকদের কেউ কেউ অভিযোগ করে বলেছেন যে তারা পকেট খরচের মতো সামান্য অর্থও পাচ্ছেন না। সৈনিকদের জন্য বরাদ্দ মাসিক ভাতা অপর্যাপ্তই শুধু নয় অনেক সময় বিলম্বিত হচ্ছে।
শোনা যাচ্ছে, প্রাক্তন সৈনিক যারা যুদ্ধে আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন তারা তাদের জরুরী ভাতা পাচ্ছেন না। অনেক ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাও একই অভিযোগ করেছেন।
আমাদের বক্তব্য যাঁরা বাংলাদেশকে শত্রু কবল থেকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করছেন মনে রাখতে হবে তাঁরাই আমাদের ভরসার স্থল। এদের সুখ সুবিধার জন্য প্রয়োজনবোধে আমাদের সুখ বিসর্জন দিতেই হবে। অনতিবিলম্বে এই অর্থনৈতিক সমস্যার মোকাবিলা করতে বাংলাদেশ সরকার এগিয়ে আসবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা জানি আমাদের অর্থের অভাব সবচেয়ে প্রকট কিন্তু এই প্রয়োজনীয় অর্থ দাবী করছেন না। তাই অর্থাভাব মোচনের জন্য প্রয়োজন হলে অন্য কোন অপ্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে পরিষদ সদস্য ও সরকারী কর্মচারীদের ভাতা ও বেতন কমিয়ে হলেও আমাদের প্রিয় মুক্তিসেনাদের আর্থিক সেবায় এই অর্থ বিনিয়োগ করতেই হবে। এই সমস্যা সমাধানে সরকার যত দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন ততই মঙ্গল। মুক্ত এলাকায় বিভিন্ন শিবিরে এখন শীত নেমে এসেছে। এখন থেকেই শীত উপযোগী পোশাক-পরিচ্ছদের বন্দোবস্ত না করলে পরে অসুবিধা দেখা দিতে পারে।
মুক্তিসেনাদের এই সব অভাব অভিযোগ ও অসুবিধার প্রতি সামরিক কর্তৃপক্ষ ও সরকার সময়োচিত দৃষ্টি দিয়ে আমাদের মুক্তিবাহিনীর মনোবল অটুট রাখতে অবিলম্বে এগিয়ে আসবেন- এটাই আমাদের কাম্য।