শিরোনাম | সংবাদপত্র | তারিখ |
সম্পাদকীয়ঃ নিক্সনের হুমকি ও সপ্তম নৌবহর |
নতুন বাংলা ১ম বর্ষঃ ১৮শ সংখ্যা |
১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
সম্পাদকীয়
নিক্সনের হুমকি ও সপ্তম নৌবহর
বাংলাদেশ মুক্তির দ্বারপ্রান্তে। ঢাকা শহরকে শত্রুকবলমুক্ত করার জন্য তুমুল যুদ্ধ চলিতেছে। বাংলাদেশের মাটি হইতে হানাদারী শত্রুকে নিশ্চিহ্ন করার এই চূড়ান্ত সংগ্রামের মূহূর্তে নিক্সন হুমকি দিয়াছে। আক্রমণকারী ইসলামাবাদের জঙ্গীচক্রকে যুদ্ধ বন্ধ করিতেবলার পরিবর্তে ভারতের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিতেছে। জঙ্গী ইয়াহিয়ার বুট চুম্বনকারী মাও সেতুঙ-এর চীন তার দোসর।
বাংলাদেশে সরাসরি হস্তক্ষেপের জন্য নিক্সন সরকার বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠাইয়া দিয়াছে। এইভাবে ঊনবিংশ শতাব্দীর গানবোট পলিসি আজ নিক্সন সরকার গ্রহন করিয়াছে। ভারতকে ভয় দেখাইয়া ও হুমকি দিয়া বাংলাদেশে শত্রুর বিরুদ্ধে মিত্রশক্তির অভিযানকে বানচাল করাই ইহার লক্ষ্য। ইহা নিক্সন সাহেবদের পুরান খেলা। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে ইতালীর সাধারণ নির্বাচনের সময় আতলান্তিক সাগরে ও ভূমধ্যসাগরে আমেরিকা নৌবহর পাঠাইয়াছিল। লেবানন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ১৯৫৩ সালে ৬ষ্ঠ নৌবহর হইতে বৈরুতে সৈন্য নামাইয়াছিল। দক্ষিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটানোর জন্য সেখানকার সমুদ্রে বার বার নৌবহর পাঠাইয়াছে আজ স্বাধীন বাংলাদেশকে আঁতুরঘরে গলাটিপিয়া মারার জন্য সপ্তম নৌবহর পাঠাইয়াছে। বাংলাদেশের দরিয়া বঙ্গোপসাগরে। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশকে গলা টিপিয়া মারা তাহার অসাধ্য। তবুও সপ্তম নৌবহর পাঠাইবার পিছনে তাহার আরও একটি উদ্দেশ্য রহিয়াছে তাহা হইল স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারকে ভয় দেখানো। এজন্যই বাংলাদেশের মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান ও উদ্ধারের জন্য নৌবহর পাঠান হইয়াছে বলিয়া সাফাই গাহিতেছে। যেখানে পাকিস্তানের করাচী প্রভৃতি শহরের মার্কিন নাগরিকদের বিমান অপসারন করা হইয়াছে সেখানে বাংলাদেশে নৌবহর পাঠানো কেন? বাংলাদেশের ঢাকা শহর হইতে অন্যান্য বিদেশী যাত্রীদের যেভাবে বিমানে অপসারন করা হইয়াছে তাহারা সে পথে কেন গেল না? তাহাদের উদ্দেশ্য দ্বিবিধ, আত্মসমর্পণে ইয়াহিয়া প্রথমে অনুমতি দিয়াছিল কিন্তু পরে মত পাল্টাইয়াছে। সপ্তম নৌবহরের গতিবিধি পাকিস্তান সরকার উল্লাসের সহিত বারবার ঘোষনায় উল্লেখ করিতেছে।
প্রথম উদ্দেশ্যের কথা আগেই বলিয়াছি। অপরদিকে ‘কাগজের বাঘে’র নয়া দোস্ত চীন ইয়াহিয়ার পক্ষ লইয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আর পিকিং-এর বেতারে ভারতবিরোধী কুৎসা চালাইতেছে। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের পদে পদে বিরুদ্ধচারণ করিতেছে।
কোথায় গেল তাহার বড় বড় সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বুলি। সপ্তম নৌবহরের এই গতিবিধিতে চীন নীরব কেন? আমরা চীনকে তার নিজের চরকায় তেল দিতে বলি। দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ তাইওয়ানে মার্কিন ঘঁটি তাহার চোখে পড়ে না, চোখে পড়ে বাংলাদেশে ভারতীয় সৈন্যের অভিযান। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তাইওয়ান দখন করিয়া রাখিয়াছে। তাই নিয়া জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদে তাহার গলাবাজী শুনি না। শুনি ভারত নাকি পাকিস্তানের একটা অংশ দখল করিয়া নিতেছে। মহান চীনকে তাহার বর্তমান নেতারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের গাটাবোধে পরিনত করিয়াছে।
তাই মার্কিন সপ্তম নৌবহরের গতিবিধির সহিত তাল মিলিইয়া চীন ভারতের উত্তর সীমান্তে তিব্বতে সৈন্য মোতায়েন করার উদ্যোগ নিয়াছে। তিব্বতে চীনা সৈন্য চালাচলের পিছনে ভারতকে ব্লাকমেইল করার দুরভিসন্ধি রহিয়াছে।