শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৯৯। ডোমারে জেনারেল নিয়াজী | দৈনিক পাকিস্তান | ৪ নভেম্বর, ১৯৭১ |
ডোমারে জেনারেল নিয়াজী
ভারত প্রদেশবাসীর শুভাকাঙ্ক্ষীর
হতে পারে না
পূর্বাঞ্চলের কমান্ডারের কমান্ডার ও ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসন লাফটেন্যান্ট জেনারেল এ, কে, নিয়াজী বলেছেন, যে ভারত প্রতিদিন আমাদের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর উপর গোলাবর্ষণ করে বহু নিরাপরাধ নারী- পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করেছে সে পূর্ব পাকিস্তানের শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না। এপিপি পরিবেশিত খবরে বলা হয়, জেনারেল নিয়াজী গতকাল রংপুর জেলার নীলফামারীর উত্তরে ডোমারে শান্তি কমিটির সদস্যদের এক সমাবেশে বক্তৃতা করছিলেন।
তিনি ঐ এলাকায় এক দিনের সফর করেন। জেনারেল নিয়াজী রংপুর এবং লালমনিরহাটও সফর করেন। উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসারগণও তাঁর সাথে ছিলেন। জেনারেল নিয়াজী স্বাধীনতা পূর্বকালে হিন্দু শাসনাধীনে উপমহাদেশের মুসলমানদের দুর্দিনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, ভারত আবারও এই প্রদেশকে তাঁর পদানত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি ভারতের দুরভিসন্ধি সতর্ক থাকার জন্য জনগণকে হুঁশিয়ার করে দেন এবং মুসলিম জাতি হিসাবে স্বাধীনতার মূল্য উপলব্ধি করার আহ্বান জানান। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, দাসত্বের জীবনযাপনের চেয়ে মাতৃভূমির জন্য মৃত্যুবরণ অনেক সম্মানজনক। ভারতের কথা ও কাজের মধ্যে অসঙ্গতির উল্লেখ করে জেনারেল নিয়াজী বলেন, একদিকে ভারত পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের জন্য দরদ দেখিয়ে গর্ববোধ করছে, অপরদিকে আমাদের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর উপর অবিরত গোলাবর্ষণ করে বহু নিরাপরাধ নারী- পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করছে। তিনি আরও বলেন যে, ভারত অন্তর্ঘাতীদের ট্রেনিংদান ও অস্ত্রসজ্জিত করে পূর্ব পাকিস্তানে পাঠিয়ে জনগণের দুর্দশা বৃদ্ধি ছাড়া আর কিছুই লাভ করছে না।
তিনি জিজ্ঞাসা করেন, আই অংশের জনগণের জন্য ভারতের সমবেদনা দেখানোর কি এইটাই পন্থা? জেনারেল নিয়াজী পাকিস্তানের শত্রুদের বিতারনে রংপুর জেলার জনগণের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। এ ব্যাপারে রাজাকারদের কথা বিশেষ করে উল্লেখ করে বলেন যে, রাজাকাররা পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও সংহতি রক্ষার জন্য মূল্যবান প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন প্রত্যেক মুসলমান ইসলাম ও তাঁর মাতৃভূমির জন্য একজন নিবেদিত মুজাহিদ।
এর আগে সেখানকার স্থানীয় কমান্ডার রাজাকার আল- বদর ও আল- শামস বাহিনীর তৎপরতার কথা জেনারেল নিয়াজীকে জানান। এরাও স্বতন্ত্রভাবে ও নিয়মিত সৈন্যদের সাথে একযোগে বিভিন্ন দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে পালন করে যাচ্ছে। স্থানীয় কমান্ডার নিয়াজীকে জানান যে, প্রধানত রাজাকদের সদা জাগ্রত থাকার দরুনই আই এলাকার ভারতীয় চরেরা একটিও সেতু অথবা কালভার্ট ধ্বংস করতে পারে নি। সম্প্রতি ভারতীয় চরদের সঙ্গে সৈন্য ও রাজাকারদের বিভিন্ন সংঘর্ষে যেসব অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরকদ্রব্য আটক করা হয় জেনারেল নিয়াজী তাও দেখেন। জেনারেল মোটরযোগে ডোমার ও লালমনির হাটের যান। সেখানে রাস্তার দু’পাশের সারিবদ্ধ জনতা জেনারেলকে দেশাত্মবোধক ধ্বনি দিয়ে অভিনন্দন জানায়।