You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.14 | জননী বাংলার পূর্ণ স্বাধীনতার প্রশ্নে কোন আপোষ নাইঃ কনসাল্ভেটিভ কমিটির অভিমত | বাংলার বাণী - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ
জননী বাংলার পূর্ণ স্বাধীনতার প্রশ্নে কোন আপোষ নাইঃ কনসাল্ভেটিভ কমিটির অভিমত বাংলার বাণী

মুজিবনগরঃ ১১শ সংখ্যা

১৪ নভেম্বর, ১৯৭১

 

অবিলম্বে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই
জননী বাংলার পূর্ব স্বাধীনতার প্রশ্নে কোন আপোষ নাই
বাংলাদেশ কনসালটেটিভ কমিটির সুস্পষ্ট অভিমত

রাজনৈতিক সংবাদদাতা
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে সময়ে সময়ে আলোচনা করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের লইয়া গঠিত কনসালটেটিভ কমিটির দ্বিতীয় সভায় ন্যায়নীতির প্রতি নতি স্বীকার করিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দানের জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রতি পুনরায় আহবান জানান হয়। সভায় ইসলামাবাদের জঙ্গীশাহী কর্তিক সভ্যতার মাথায় পদাঘাত তথা সকল ন্যায়নীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করিয়া এখনও বঙ্গবন্ধুকে আটক রাখার তীব্র নিন্দা করা হয়।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে গত শনিবার মুজিবনগরে অনুষ্ঠিত কনসালটেটিভ কমিটির এই সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক আহমদ, অর্থমন্ত্রী জনাব মনসুর আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব এ, এইচ, এম কামরুজ্জামান, আওয়ামী লীগের শ্রী ফণিভূষণ মজুমদার ও জনাব আবদুস সামাদ, ন্যাপের অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির শ্রী মনোরঞ্জন ধর এবং বাংলাদেশ কম্যুনিষ্ট পার্টির শ্রী মণি সিংহ উপস্থিত ছিলেন । ন্যাপের মওলানা ভাসানী অসুস্থতার দরুণ সভায় উপস্থিত থাকিতে পারেন নাই।
সভায় দ্যার্থহীন ভাষায় পূর্ণ স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনের ব্যাপারে বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষের অটুত সংকল্পের কথা পুনরায় ঘোষণা করা হয় এবং স্বাধীনতাবিহীন অন্য যে কোন প্রকার আপোষ ফর্মুলার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়।
সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে ইসলামাবাদের জঙ্গীশাহীর সমর প্রস্তুতি এবং ভারতের উপর নগ্ন হামলা চালাইবার সংকল্পের নিন্দা করিয়া বলা হয় যে বাংলাদেশ সমস্যা হইতে বিশ্বের দৃষ্টি অন্যদিক ফিরাইয়া নেওয়ার জন্যই জঙ্গীশাহী পাক ভারত বিরোধের ধুম্রজাল সৃষ্টির চেষ্টা করিতেছে। প্রস্তাবে আরো বলা হয় যে, বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণ এবং সাফল্যের বিশেষ করিয়া সকল স্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি জঙ্গীশাহীর এই দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করিয়া এবং ঐক্যবদ্ধভাবে হানাদারদের উপরে চূড়ান্ত আঘাত হানিয়া এই জঘন্য চক্রান্ত প্রতিহত করার আহবান জানান হয়। সভায় গৃহীত অপর এক প্রস্তাবে বলা হয়, ইয়াহিয়া খান তথাকথিত বেসামরিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের নামে অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে প্রতারিত করার প্রয়াস পাইতেছে। অবিলম্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দানের জন্য বিশ্বের সরকারের প্রতি আহবান জানাইয়া সভাইয় আরো একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। একটি প্রস্তাবে বাংলাদেশের ব্যাপারে সর্বপ্রকার সাহায্যে সহযোগিতা করার জন্য ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।

বিশ্বের যে সকল রাষ্ট্র বাংলাদেশে গণহত্যার ব্যাপারে ইয়াহিয়া খানকে অস্ত্রশস্ত্র দিয়া সাহায্য করিতেছে, সেইসব দেশের জনগণকে তাহাদের সরকারকে বাংলাদেশের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা হইতে নিবৃত্ত করার ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানান হয়।
স্বাধীনতার সংগ্রামে যাহারা জীবন উৎসর্গ করিয়া চলিয়াছেন তাহাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করিয়া গৃহীত এক প্রস্তাবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এই চরম আত্মোৎসর্গের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করার দৃঢ়সংকল্প প্রকাশ করা হয়।
আলোচন কমিটির সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে দিল্লীর পাকিস্তান হাইকমিশন অফিসে জনাব হোসেন আলী তাহাঁর স্ত্রী ও দুই কন্যাকে বলপূর্বক আটক করিয়া রাখাকে জঙ্গীশাহীর বর্বরতার আরও একটি নিদর্শন বলিয়া অভিহিত করিয়া অবিলম্বে তাহাঁদিগকে মুক্তিদানের দাবী জানানো হয়।