You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.09 |বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধঃ প্রতিক্রিয়া | বাংলার বাণী - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধঃ প্রতিক্রিয়া বাংলার বাণী মুজিবনগরঃ ১১শ সংখ্যা ৯ নভেম্বর, ১৯৭১

 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধঃ প্রতিক্রিয়া

যতই দিন যাইতেছে ইসলামাবাদের জঙ্গীশাহীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিবেক ক্রমে ততই সোচ্চার হইয়া উঠিয়াছে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে ইয়াহিয়ার লেলাইয়া দেওয়া পশুদের দিশাহারা হইয়া পড়ার খবর আর গোপন নাই। অর্থনৈতিক অবস্থা অচল হইয়া পড়িয়াছে। বাংলাদেশের সকল বন্দর অকেজো। পশ্চিম পাকিস্তানের চরম বেকার সমস্যা, ছাঁটাই বরখাস্ত ও দেদার লক আউটের খবর শুধু পশ্চিম পাকিস্তানের লৌহ যবনিকার অন্তরালেই আবদ্ধ নাই। বিভিন্ন দেশের দায়িত্বশীল পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হইতেছে মানব সভ্যতার ঘৃণ্যতম শত্রু খুনী ইয়াহিয়ার সকল চক্রান্তের খবর। আমরা এমনি কিছু পত্রপত্রিকার উদ্ধৃতি এখানে বাংলার বাণীর পাঠক পাঠিকাদের সামনে তুলিয়া ধরিতেছি।

ডেইলী টেলিগ্রাফ
বৃটিশ জাহাজ কোম্পানীর জনৈক মুখপাত্র বলিয়াছেন প্রায় তিন মাস যাবত আমরা বাংলাদেশের কোন নৌবন্দরে জাহাজ পাঠাই নাই। গত অক্টোবরে প্রথম সপ্তাহে ডেইলী টেলিগ্রাফের সংবাদদাতার নিকট উক্ত মুখপাত্র এই তথ্য প্রকাশ করেন।
এই জাহাজ কোম্পানী পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে মালপত্র পরিবহন করে। বাংলাদেশ হইতে অধিকাংশ পাট এবং পাটজাত দ্রব্য এই জাহাজ কোম্পানীর মারফতই রপ্তানী করা হইত।
মুখপাত্রটি বলেন, আমাদের এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের অধিকৃত অঞ্চল তথা ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকারের অর্থনীতির উপর ভীষণ চাপ পড়িবে।
আশাহি সিম্বুন
জাপান হইতে প্রকাশিত “আশাহি সিম্বুন” পত্রিকা এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলিয়াছে ভারত উপমহাদেশে উত্তেজনা হ্রাসের প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই অনতিবিলম্বে পাকিস্তানকে সকল সামরিক সাহায্যদান বন্ধ করিতে হইবে।
ইহার কারণ ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উক্ত পত্রিকা বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সামরিক সাহায্য পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক জান্তাদেরই শক্তিশালী করিয়া তুলিতেছে এবং তাহা বাংলাদেশে তাহাদের বর্বর কার্যক্রম চালাইয়া যাওয়ার সহায়তা করিতেছে। ইহার ফলে প্রতিদিন চল্লিশ হাজার শরণার্থী বাংলাদেশ হইতে পালাইয়া ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করিতে বাধ্য হইতেছে।

সম্পাদকীয় প্রবন্ধে এই অভিমত ব্যক্ত করা হয় যে বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানী জঙ্গীচক্রের সামরিক কার্যক্রম সমর্থনে যে সকল সামরিক সাহায্য বিদেশে হইতে প্রদান করা হইতেছে অনতিবিলম্বে তাহা বন্ধ করা উচিত।

ইয়োমিউরি
জাপানের আর একটি পত্রিকা “ইয়োমিউরি” তাহার ২৪ শে অক্টোবরের সম্পাদকীয় নিবন্ধে এই বলিয়া অভিযোগ করিয়াছে যে তিনটি বৃহৎ শক্তি বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধ করিতে ব্যর্থ হওয়ায় আজ ভারত উপমহাদেশে বিপজ্জনক পরিস্থিতির উদ্ভব হইয়াছে।
পত্রিকাটি বলে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক অধিনায়কের অনুধাবন করা উচিৎ ছিল যে শক্তির জোরে বাঙ্গালীদের দমন করিবার চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইয়াছে। কিন্তু তাহা না করিয়া তাহারা “ভারতের সহযোগিতায় বিদ্রোহীরা তৎপরতা চালাইতেছে”- এই অজুহাতে সীমান্ত বরাবর সৈন্য সমাবেশ করিয়াছেন।

গার্ডিয়ান
গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন ইউনিটসমূহ গত অক্টোবর মাসে ঢাকা বিমান বন্দরে আক্রমণ পরিচালনা করিবার প্রচেষ্টা চালায়। ঢাকার শহরতলীতে অবস্থিত বন্দরে তাহারা বহু গ্যাস পাইপ উড়াইয়া দেন এবং রপ্তানীর জন্য প্রস্তুত বহু পরিমাণ পাট জ্বালাইয়া দেন।
মুক্তিযোদ্ধা কর্তৃক বিমান বন্দর আক্রমণের প্রচেষ্টা সামরিক বাহিনীর লোকদের উদ্বিগ্ন করিয়া তুলিয়াছে। বস্তুতঃ গেরিলাদের ছুড়িয়া দেওয়া তিন ইঞ্চি বোমা কলেরা ল্যাবরেটরীতে পড়ে। বিমান বন্দরের সঙ্গে ল্যাবরেটরীর সরাসরি যোগাযোগ রহিয়াছে এবং উক্ত বোমাটি বিমানবন্দর হইতে ছয়শত ফুট দূরে নিক্ষিপ্ত হয়।
লন্ডন হইতে প্রকাশিত গার্ডিয়ান পত্রিকায় উপরোক্ত রিপোর্ট ছাপা হইয়াছে। রিপোর্টে আরো বলা হয় পশ্চিম পাকিস্তানে বেকার সমস্যা প্রকট হইয়া উঠিয়াছে। ট্রেড ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায় পশ্চিম পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ শিল্প এলাকা করাচীতে যেখানে চারি লক্ষ শ্রমিক কাজ রিত বর্তমানে শতকরা পয়ত্রিশ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হইয়াছে।
শ্রমিক নেতৃবৃন্দের মতে করাচী এবং হায়দ্রাবাদে পঁচাত্তরটি সরকারী ও বেসরকারী শিল্প সংস্থা প্রায় দশ হাজার শ্রমিককে চাকুরী হইতে বরখাস্ত করিয়াছে।