শিরোনামঃ ১৮৬। চাপিয়ে দেয়া হলে আক্রমণকারী ভূখন্ডেই যুদ্ধ হবে’ নিয়াজী
সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
.
প্রদেশের উত্তর- পশ্চিমাঞ্চলে জেঃ নিয়াজী
চাপিয়ে দেয়া হলে আক্রমণকারীর ভূখণ্ডেই যুদ্ধ হবে
.
এপিপির এক খবরে প্রকাশ, ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার ও ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক লেঃ জেনারেল এ, এ, কে নিয়াজী গতকাল বুধবার প্রদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে সফরকালে জনগনের প্রতি এই মর্মে আশ্বাস দেন যে, আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হলে আক্রমণকারীর ভূখণ্ডে যুদ্ধ করার মত যথেষ্ট শক্তি পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থিত সমগ্র বাহিনীর রয়েছে।
তিনি জনগনের প্রতি প্রদেশ থেকে ভারতীয় চর ও রাষ্ট্রবিরোধী ব্যক্তিদের উৎখাতে দেশপ্রেমিক হিসেবে তাদের ভুমিকা অব্যাহত রাখার উপদেশ দেন। জেনারেল নিয়াজী একদিনের জন্য পাবনা, রাজশাহী ও বগুরা সফর করেন। সফরকালে জিওসি তার সঙ্গে ছিলেন।
জেনারেল নিয়াজী সেনাবাহিনীর একখানি হেলিকপ্টার সফর করেন। প্রথমে তিনি নাটোরে অবতরন করেন। স্থানীয় কমান্ডার তাকে জানান যে, সদা জাগ্রত সৈন্যরা আক্রমনের সম্ভাবনার অকল পথ বন্ধ করে দিয়েছে এবং এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
স্থানীয় কমান্ডার জানান যে,কিছু ভারতীয় চর মাঝে মাঝে পাট চলাচল ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু রাজাকার ও স্থানীয় জনসাধারন তাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। স্থানীয় কমান্ডার আরো জানান যে, ভারতীয় চরেরা, কয়েকবার পাটের চোরাচালান করে ভারতে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। কিন্তু তা ব্যর্থ করে দেয়া হয়। মহাদেবপুরে (রাজশাহী) জেঃ নিয়াজী শিক্ষারত রাজাকারদের দেখেন।
তিনি তাদের গুলি চালনা প্রশিক্ষণও পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি কয়েকটি স্থানে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করার নির্দেশ দেন, যাতে দুশমনেরা কোন রকম সুযোগ নিতে না পারে।
সীমান্ত এলাকায় একটি জীপে সফর করার সময় তিনি জনসাধারনকে স্বেচ্ছায় সাম্প্রতিক বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও বাধ মেরামত করতে দেখেন। তিনি তাদের আস্থা ও মনোবল দেখে মুগ্ধ হন। জেনারেলের যাবার পথে জনগনে হর্ষধ্বনি করে তাকে স্বাগত জানায়। ও বিভিন্ন দেশাত্মবোধক শ্লোগান তুলে। তিনি প্রতিটি স্থানে গাড়ি থামিয়ে জনগনের সাথে করমরদন করেন এবং তাদের খোজ খবর নেন।
তাদের সবাইকে সুখি ও প্রফুল্ল দেখা যায়। এর পরে জেনারেল নিয়াজী বন্যা উপদ্রুত পাবনা জেলায় সফরে যান। পাবনা শহরে তিনি স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে রিলিফের ব্যবস্থা নিয়ে আলচনা করেন। বন্যা পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে এবং রিলিফের কাজ সন্তোষজনকভাবে চলছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা তাকে জানান যে, প্রথম দিকে কিছু কিছু লোক কলেরায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও সময়োচিত ব্যবস্থা নিবার দরুন কলেরা আর মহামারি আকারে দেখা দিতে পারেনি।
জেনারেল নিয়াজী পাবনা বাজারের মধ্যে দিয়ে মোটরগাড়ি চালিয়ে যান। তিনি বাজারে সম্পূর্ণ স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম চলতে দেখেন। সফরকালে বিভিন্ন স্থানে জেনারেল নিয়াজী সৈন্যদের সাথে ঘরোয়াভাবে আলোচনা করে এবং তাদের উচ্চ মনোবল দেখতে পান। তিনি মহাদেবপুর ও পাবনায় শান্তি কমিটির সদস্যদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।
সশস্ত্র বাহিনী আক্রমণকারীদের হটিয়ে দেয়ার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত বলে তিনি তাদের আশ্বাস দেন। কিন্তু আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী অনিচ্ছাসত্ত্বেও দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হচ্ছে। কারন তাদের মৃত্যুর অর্থ হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানে বিধবা ও এতিমের সংখ্যা বৃদ্ধি।
সেতু উড়িয়ে দেয়, পাইলনে বিস্ফোরণ কিংবা রেললাইন তুলে ফেলা নিজের ঘর ধ্বংস করারই সামিল এবং এইগুলি বিপথগামী লোকদের বলার জন্যই তিনি শান্তিকমিটির সদস্যদের উপদেশ দেন। তিনি বলেন যে, এই বিপথগামী লোকেরা বাস্তবিক পক্ষে এই দেশেরই সন্তান এবং এই দেশটিও তাদের। তাই যদি খাদ্য সরবরাহ চোরাচালান কড়া হয় বা প্রদেশের মধ্যে তা চলাচলে বাধা দেয়া হয় তাহলে এর জন্য সাধারন মানুষ দুর্ভোগ পোহাবে।
জেনারেল পরাধিন জাতির দুর্দশার বর্ণনা দিয়ে আজাদী পূর্বকালে মুসলমানগন যে দুঃখ-দুর্দশায় দিন যাপন করেন, তা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন যে, আমাদের সন্তানদের হিন্দুদের অধীনে যেতে দিব না। জেনারেল নিয়াজী ইসলাম ও পাকিস্তানের দুশমনদের মোকাব্লার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার উপদেশ দেন।
তিনি মুসলমানদের ইতিহাসের উধ্বৃতি দিয়ে বলেন যে, আমাদের প্রতিপক্ষ শ্রেষ্ঠ হয়েও আমাদের কখনো পরাজিত করতে পারেনি। তিনি বলেন যে, শুধু দেশদ্রোহীরা আমাদের ঐক্যকে ফাটল ধরানোর জন্য কয়েকটি যুদ্ধে আমাদের পরাজয় বরন করতে হয়।
তিনি এসব দেশদ্রোহী সম্পর্কে সজাগ থাকার জন্যে ও তাদের নির্মূল করার কাজে কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করার জন্য জনসাধারনের প্রতি উপদেশ দেন।