You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
১৭০। রংপুরে শান্তি কমিটির সদস্যদের সমাবেশে সমরিক গভর্নর দৈনিক পাকিস্তান ১২ আগস্ট ১৯৭১

বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ বিনষ্টকারীরা জনগণের শুভাকাঙ্খী নয়-গভর্নর
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও “খ” অঞ্চলের সামরিক শাসনকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান গতকাল বুধবার বলেন যে, যারা যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন ও কলকারখানার ক্ষতিসাধন করে তারা জনগণের শুভাকাঙ্খী হতে পারে না।
জেনারেল টিক্কা খান রংপুরে শান্তি কমিটির সদস্যদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। গভর্নরের সাতে ছিলেন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ডাঃ এ. এম মালিক ও জাতিসংঘের উদ্বাস্তু হাইকমিশনারের প্রতিনিধি মিঃ জন আর কেলি।
গভর্নর তার বক্তব্য বিশেষ করে বলেন যে, যোগাযোগ ব্যবস্থা না হলে জনগণের কাছে খাদ্যশস্য পৌছাতে অসুবিধা হবে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটালে শিল্পোৎপাদন স্বল্প হবে এবং পরিণামে বেকার হতে হবে কলকারখানার শ্রমিকরা।
গভর্নর এসব গণবিরোধী লোকদের আলাদা করার এবং তাদের উপস্থিতির কথা কর্তৃপক্ষকে জানাবার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গোলযোগ সৃষ্টিকারীদের নির্মূল এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার কালে সহায়তা করার জন্য শান্তি কমিটি যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি তার প্রশংসা করেন। গভর্নর বলেন যে শান্তি কমিটিগুলো হলো অরাজনৈতিক সংস্থা। এগুলো প্রদেশে সর্বত্র শান্তি বজায় রাখার এবং জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজে সহায়তা করার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি আরো বলেন যে রাজাকারেরাও দুষ্কৃতিকারীদের হামলার মুখে নিজ নিজ এলাকা রক্ষা এবং সেতু এবং কালভার্ট পাহারা দিয়ে বিশেষ দরকারী দায়িত্ব পালন করছে।
ফিরে আসা উদ্বাস্তুদের প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন যে প্রেসিডেন্ট বারংবার বলেছেন যে যোগাযোগকালে যেসব প্রকৃত পাকিস্তানি সীমান্ত অতিক্রম করে গিয়েছিল তারা দেশে ফিরে আসলে তাদের স্বাগত জানানো হবে। তাদের জন্য অভ্যর্থনা শিবির খোলা হয়েছে এবং তাদের পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। গভর্নর বলেন কিন্তু ভারত তাদের ফিরে আসতে দিচ্ছে না।
এই বিষয়টি খোলাসা করে বলতে গিয়ে গভর্নর বলেন আমাদের লোকদের গ্রহণ করার জন্য আমরা অভ্যর্থনা শিবির স্থাপন করেছি। আর তাদের দেশে ফেরা বন্ধ করার জন্য ভারত বসিয়েছে চেকপোস্ট। শুধু তাই নয়, ভারত নিজ এলাকায় জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক মোতায়েনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ পর্যবেক্ষক মোতায়েন করা হলে ভারতের আসল উদ্দেশ্য প্রকাশ হয়ে পড়বে। উদ্বাস্তুরা যাতে বাড়ী ফিরতে না পারে সে জন্য সীমান্তে গোলযোগ সৃষ্টি করাই হলো ভারতের পুনঃ পুনঃ গোলাবর্ষনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। এ সত্ত্বেও এ পর্যন্ত এক লক্ষ দশ হাজার লোক দেশে ফিরে এসেছে।
.
সরকারী কর্মচারীদের প্রতি নির্দেশঃ
জেলার সরকারী কর্মচারীদের প্রতি একটি পৃথক সমাবেশে গভর্ণর বক্তৃতা দেন। গভর্ণর সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা জানার উদ্দেশ্যে তাদের কাছে যাওয়া এবং যতটুকু সম্ভব দ্রুতগতিতে এবং নিষ্ঠার সাথে কাজ করে সেসব অসুবিধা দূর করার জন্য সরকারী কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন যে, কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠাই হলো অফিসারদের দায়িত্ব পালন মূল্যায়নের মাপকাঠি।
.
দিনাজপুরে গভর্ণরঃ
পরে গভর্ণর বিমানযোগে দিনাজপুর যান। তিনি সেখানে শান্তি কমটির সদস্যবৃন্দের ও স্থানীয় অফিসারদের সাথে বৈঠকে মিলিত হন। গত মার্চে গভর্ণরের দায়িত্ব গ্রহণের পর এটাই হলো দিনাজপুরে লেফটেন্যান্ট টিক্কা খানের প্রথম সফর। সেনাবাহিনী এই জেলাটি উদ্ধারের আগে দুষ্কৃতকারীদের হাতে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে গভর্ণর তাদের জানান তার সমবেদনা।
তিনি ক্ষত আরোগ্য করার এবং পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি হাসিলের উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ কঠোর পরিশ্রম করার জন্য জনগণকে উপদেশ দেন।
শান্তি কমটির প্রেসিডেন্ট গভর্ণরকে জানান যে, সামরিক ও বেসামরিক কর্তৃপক্ষের আন্তরিক প্রচেষ্ঠার সুফল পাওয়া গেছে। জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হয়েছে এবং জনগপণের আস্থাও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
গভর্ণর শান্তি কমিটির সদস্যদের সাথে তাদের কতিপয় স্থানীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন এবং সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য তারা যে সুপারিশ করেছেন সহানুভূতির সাথে তা বিবেচনা করেন।
গতকার বুধবার সকালে দিনাজপুরে সংঘটিত বাস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্দেশ্যে গভর্ণর দুঃখ ও সমবেদনা প্রকাশ করেন। একটি বাস বিরোল সীমান্ত থেকে ফিরে আসা একদন পাকিস্তানীকে দিনাজপুরে অভ্যর্থণা শিবিরে নিয়ে আসছিল। ভারতীয় এজেন্টদের পুতে রাখা রাস্তার মাইনের আঘাতে বাসটি উড়ে গেছে। গভর্ণর আহত বাস যাত্রীদের দেখার জন্য বেসামরিক হাসপাতালে যান। গভর্ণর গতকাল বিকালে ঢাকায় ফিরে এসেছেন।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!