শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৬৩। কুমিল্লায় সামরিক গভর্ণর | দৈনিক পাকিস্তান | ২৬ জুলাই, ১৯৭১ |
কুমিল্লায় প্রতিনিধিত্বমূলক সমাবেশে গভর্ণর
ভারত কখনও পূর্ব পাকিস্তানীদের বন্ধু হতে পারে না
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ও খ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক লেঃ জেঃ টিক্কা খান গতকাল রোববার পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকা সফরকালে কুমিল্লায় এক প্রতিনিধি সমাবেশে বলেন যে, ভারত গত বুধবার কুমিল্লা শহরের লোকদের উপর নির্বিচারে গোলাবর্ষণ করতে দ্বিধা করেনি সে কখনো পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বন্ধু হতে পারে না।
এপিপির খবরে প্রকাশ উস্কানিবিহীন এই ভারতীয় গোলাগুলিতে নিহতদের জন্য সমবেদনা প্রকাশ করে গভর্ণর বলেন, এই ব্যবস্থা নিরপরাধ জনসাধারণের জীবনের প্রতি ভারতের চরম অবজ্ঞাই প্রদর্শন করেছে।
জেনারেল টিক্কা খান বলেন, আমরা আমাদের জনগণের অর্থনৈতিক ভাগ্যোন্নয়নের জন্য শান্তি চাই। কিন্তু ভারত সীমান্তে উত্তেজনা জিইয়ে রাখছে।
গভর্ণর বলেন, ভারতীয় সৈন্যরা তাদের চরদের সহযোগিতায় মাঝে মাঝে বেসামরিক পোশাকে সীমান্ত এলাকায় অনুপ্রবেশ করে এবং আমাদের অর্থনীতির ধ্বংস সাধনের উদ্দেশ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে। পরিণামে সাধারণ মানুষকেই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তিনি জনসাধারণকে তাদের শত্রুদের সম্পর্কে সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন, পল্লী এলাকার লোকদের গোলযোগ সৃষ্টিকারীদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার উদ্দেশ্যে রাজাকারদের নিয়োগ করা হচ্ছে।
তিনি শান্তি বজায় রাখার এবং দুষ্কৃতকারীদের দমনে শান্তি কমিটির প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বলেন যে শান্তি কমিটিগুলো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নয় এবং তারা পাকিস্তানের সংহতি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার একমাত্র লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে।
জেনারেল টিক্কা খান জনসাধারণকে গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন এগুলো জনসাধারণের স্বার্থের পরিপন্থী। সাম্প্রতিক একটি উদাহরণ দিয়ে গভর্ণর বলেন যে, ঢাকায় শান্তিপূর্ণভাবে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। যারা বিভ্রান্তিকর গুজবের দরুন পরীক্ষা দেয়নি তারা একটি মূল্যবান শিক্ষাবছর হারিয়েছে।
এলাকার খাদ্য মওজুদের পরিমাণে সন্তোষ প্রকাশ করে গভর্ণর বলেন, যোগাযোগের অসুবিধা সত্ত্বেও প্রদেশের সব অংশের অভাবী লোকদের কাছে খাদ্য পৌঁছানো হবে।
সীমান্তের ওপার থেকে গৃহত্যাগী ব্যক্তিদের প্রত্যাবর্তনের উল্লেখ করে গভর্ণর বলেন, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট একাধিকবার আশ্বাস দিয়েছেন যে সব পাকিস্তানীদের গৃহে প্রত্যাবর্তনকে অভিনন্দন জানানো হবে। এর মাঝে ৯০ হাজারেরও বেশি লোক ফিরে এসেছে। অনুমোদিত পথে ভারতীয়রা বাধা দিচ্ছে বলে তাদের অধিকাংশকেই অননুমোদিত পথে আসতে হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গভর্ণর বলেন যে, পাকিস্তান সীমান্ত বরাবর জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক মোতায়নের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে কিন্তু ভারত তা প্রত্যাখান করেছে। কারণ জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে তার সত্যিকার অভিসন্ধি ফাঁস হয়ে পড়বে।
কুমিল্লা থেকে জেঃ টিক্কা ফেনী ও লাকসামের মধ্যবর্তী জায়গায় গুণবতী রেলসেতু দেখতে যান। ইতিপূর্বে অনুপ্রবেশকারী ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা ডিনামাইট দিয়ে সেতুটি উড়িয়ে দেয়। সেতুটি এখন পুনর্নির্মাণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
গভর্ণর ফেনী ও মাইজদি কোর্টও (নোয়াখালী) সফর করেন এবং সেখানে স্থানীয় কর্মকর্তা ও শান্তি কমিটির সদস্যদের সাথে ঘরোয়া পরিবেশে আলাপ করেন এবং শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখা ও জনসাধারণের আস্থা ফিরিয়ে আনায় তাদের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
তিনি স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলা, খাদ্য ও যোগাযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
সফরকালে জর্ডানী রাষ্ট্রদূত সৈয়দ কামাল আল শরীফও গভর্ণরের সাথে ছিলেন। গভর্ণর গতকাল অপরাহ্নে ঢাকা ফিরেন।