শিরোনাম | সংবাদ পত্র | তারিখ |
অধিকৃত অঞ্চলে স্বাভাবিক অবস্থার নমুনা | বাংলার বাণী
মুজিবনগরঃ তৃতীয় সংখ্যা |
১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ |
অধিকৃত অঞ্চলে স্বাভাবিক অবস্থার নমুনা
শিক্ষকদের হয়রানি অব্যাহত
স্কুল কলেজে ছাত্রসংখ্যা হাস্যকরভাবে নগন্য
(বিশেষ প্রতিনিধি)
বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকায় হানাদার বাহিনীর চন্ডণীতি অব্যাহত রহিয়াছে। বাঙ্গালী জাতিকে অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিক্ষেপ করিয়া চিরতরে পঙ্গু করিয়া রাখার দূরভিসন্ধি হাসিলের উদ্দেশ্যে হনাদার বাহিনী বাংলাদেশের ছাত্র-শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যে বর্বর নিধনযজ্ঞ পরিচালনা করে, উহার বিভীষিকাময় স্মৃতি বাঙ্গালীর মন মানষ হইতে এখনো মুছিয়া যায়নাই। আজও ছাত্র – শিক্ষক বুদ্ধিজীবীদের বুলেটবিদ্ধ মৃতদেহের আতংকময় দৃশ্য আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন আবাশিক হল ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধ্বসস্তুপ বাংলাদেশের ছাত্র-শিক্ষকদের নিরন্তর চাবুক মারিয়া বলিয়া দিতেছে হানাদার পান্জাবী ডালকুত্তার দল বাংলাদেশের শিক্ষাজীবনকে পঙ্গু করিয়া দিতে, ছাত্র শিক্ষকসহ বুদ্ধিজীবীসহ গোটা জাতিকে নিশ্চিহ্ন করিয়া দিতে, চায় বাংলাকে চিরদিন পদানত করিয়া রাখিতে। তাছড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে ৭ই মার্চের ভাষণে নির্দেশ দিয়াছেন, যতদিন বাংলার মানুষের মুক্তি না আসে, ততদিন স্কুল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। তাই আজ আর বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র শিক্ষকদের ভীড় নাই। শিক্ষাঙ্গণ ছাড়িয়া ছাত্র তরুনেরা সমরাস্ত্র হাতে রণাঙ্গনের প্রান্তে খুজিয়া বেড়াইতেছেন শত্রু বাহিনী। আর শিক্ষকরা পালন করিতেছেন স্বাধীনতা সংগ্রামের সুবিস্তৃত প্রাঙ্গনে আপন আপন দ্বায়িত্ব।
সেই কারনেই অধিকৃত এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়া আসিয়াছে বলিয়া জঙ্গীশাহীর অবিরাম প্রচারনা স্বত্তেও স্কুল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এখনো গড়ের মাঠ। আর ইহাতে ক্ষেপিয়া উঠিয়াছে জল্লাদশাহী। প্রতিহিংসা চরিতার্থের জন্য পাকফৌজ এখন ঝাপাইয়া পড়িয়াছে অধিকৃত এলাকায় এখনো যে অল্পসংখ্যক শিক্ষক শিক্ষাবীদ রহিয়াছে তাহাদের উপর।
তথ্যাভিঞ্জ মহলের খবরে প্রকাশ যে, দখলদার জঙ্গীবাহিনী সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্ততঃ ১৫ জন বিশিষ্ট অধ্যাপককে গ্রেফতার করিয়াছে কিংবা সামরিক কর্তৃপক্ষের নিকট হাজির হইবার নির্দেশ দিয়াছে।
হানাদার বাহিনী যাঁহাদের উপর নির্দেশ জারী করিয়াছে তাঁহাদের মধ্যে রহিয়াছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের রীডার ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক ডঃ আহমদ শরীফ, ইংরাজী বিভাগের রীডার ডঃ এহসানুল হক এবং বিঞ্জান বিভাগের ৪ বিশিষ্ট অধ্যাপক। এই গ্রেফতারের ব্যাপারে অবশ্য পাকিস্তান সরকার নীরব।
শিক্ষা বিভাগের সহিত সংশ্লিষ্ট মহলের সংবাদে প্রকাশ যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে সাত হাজার ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে গড়ে ৪৭/৪৮ জন ছাত্র ক্লাসে আসে। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন হাজারের অধিক ছাত্রের মধ্যে উপস্থিতির সংখ্যা মাত্র ১৬ জন এবং ঢাকা কলেজের প্রায় এক হাজার ছাত্রের মধ্যে ৬০ জন, ল’ কলেজ ও নটরডেম কলেজে কেহই ক্লাসে যোগদান করিতেছেনা। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হাজার ছাত্র ছাতীর মধ্যে উপস্থিতির সংখ্যা মাত্র ১৬ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপস্থিতির সংখ্যাও প্রায় অনুরুপ।
——————–