You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংবাদপত্রঃ বিপ্লবী বাংলাদেশ ১ম বর্ষঃ ১২শ সংখ্যা
তারিখঃ ৭ নভেম্বর, ১৯৭১

বিশ্বের চোখে বাংলাদেশ

(বিশেষ প্রতিনিধি)
পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা উন্মাদ হয়ে উঠেছে। বাংলার মানুষের স্বাধিকারের দাবী সমস্ত অত্যাচারেও একবিন্দু টলেনি বরং দিন দিন জোরদার হয়ে উঠেছে। এদিকে বিশ্বের সমস্ত দেশ একযোগে পশ্চিমের নেতাদের বিকৃত মস্তিষ্কের চিকিৎসা করতে পরামর্শ দিচ্ছে। পাগলকে পাগল বললে সে আরও ক্ষেপে যায়। সেই রকম ক্ষেপে অক্টোবর মাসে পাঞ্জাবী খানসেনারা তিনবার ভারত আক্রমণের চেষ্টা করে। এর মধ্যে একবার আগরতলায় তারা কিছু কামান প্লেনসহ বোমা ও গোলা বর্ষণ করে। আর দুবার শিয়ালকোটের কাছে ট্যাংক বাহীনিসহ তারা ভারতের মাটিতে ঢুকে পড়ে। পাকিস্তানের আশা ছিল ভারত এরপর যুদ্ধ ঘোষণা করবে। কিন্তু ভারত তিনবারই আক্রমণ প্রতিরোধ করে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরে এই কূপ্রচেষ্টা। পাকিস্তান হয়তো ভেবেছিল ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী তাঁর বেলজিয়াম-ইংল্যান্ড-অস্ট্রিয়া ও আমেরিকা সফর স্থগিত রাখবেন। সে আশাও পূর্ণ হয়নি। শ্রীমতী গান্ধী যাবার পূর্বে জাতির উদ্ধেশ্যে ভাষণে বলেন যে ভারত যে কোন আক্রমণের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত কিন্তু যুদ্ধ ভারত চায় না। যে ক’টি দেশে তিনি গেছেন একই কথা তিনি জানিয়েছেন এবং ইংল্যান্ডের জনমত তাঁকে স্বাগত জানিয়েছে নিপুন ভাবে। ইংল্যান্ড সরকার পাকিস্তানের জঙ্গীশাহীর ওপর শীঘ্রই চাপ দেবেন আরো নমনীয় হবার জন্য। ইতিমধ্যে ভারতের প্রতিটি মানুষ আশা রাখে মুক্তিবাহিনীর ওপর। মুক্তিবাহিনী একাই শত্রুর মোকাবিলা করে বাংলাকে মুক্ত করবে।

পাকিস্তানী জঙ্গীশাহী উন্মাদ হয়ে উঠেছে। তার দ্বীতিয় প্রমাণ দেখা গেল সোভিয়েত এয়ার মার্শালকে পাক আকাশে চলার অনুমতি বা দেবার মধ্যে। যদিবা সোভিয়েত এয়ার মার্শালের মনে পাকিস্তানের দুরভিসন্ধি সম্বন্ধে কোন সন্দেহ থেকেও থাকে, তাদের এই ব্যাবহারে সেটুকু সম্পূর্ণ কেটে যাবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আজ বড় দুর্দিন। চীনকে রাষ্ট্রসংঘে নেওয়ায় আজ বাংলাদেশের নেতারাও উল্লসিত। ভারত ও অন্যান্য দেশে তো বহু বৎসর এই দাবী জানিয়েছে যে মহাচীনের রাষ্ট্রসংঘে বসার অধিকার আছে। মার্কিন প্রস্তাবঃ ‘দুই চীনেই রাষ্ট্রসংঘে থাক,’-ভোটে টেকেনি। আমেরিকা সব দেশকেই সাহায্য বন্ধ করে দিচ্ছে। তারা পাকিস্তানের অখন্ডতা চায় বলে দাবী করেছে। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী আমেরিকা যাচ্ছেন স্পষ্টকন্ঠে জানাতে- ধ্বংসস্তূপ পাকিস্তানকে ছেড়ে আমেরিকা বরং চলে আসুক বাংলাদেশ ও ভারতের মিত্রতার আহ্বানে। কারণ ইতিহাসের বাণী অমোঘ। ভিয়েতনামের মুক্তির মতো, চীনের রাষ্ট্রসঙ্ঘে প্রবেশের মত ধ্রুব আগামী দিন বাংলাদেশের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা।

পাকিস্তানের নেতাদের মস্তিস্ক বিকৃতির এক দুঃখজনক উদাহরণ দেখা গেছে দিল্লীতে ২রা নভেম্বর। পাক দুতাবাস থেকে ১১জন বাঙালী অফিসার বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে বেরিয়ে আসার সময় এই উন্মাদ জঙ্গীশাহীর চররা তাদের প্রচণ্ড প্রহার করে। শ্রী হুসেন আলী, জঙ্গীশাহীর সংবাদ সংগ্রহের ফার্ষ্ট সেক্রেটারীকে মেরে অজ্ঞান করে ফেলা হয়। এই খবর বেরনও অবধি তাঁর স্ত্রী পুত্র কন্যা তাঁর পরীর দূতাবাস থেকে বার করে আনতে পারেনি। বাংলাদেশ দূতাবাদ (দিল্লী) থেকে তাঁর অধ্যক্ষ আমজাদুল চৌধুরী পাক দূতাবাদের শ্রী মাসুদ হাইদারকে সময় দিয়েছেন শ্রী আলী ও তাঁর পরিবারকে সসম্মানে ছেড়ে দিতে।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!