শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৫৩। সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে লেঃ জেঃ টিক্কা খান | পূর্বদেশ | ১৬ মে, ১৯৭১ |
সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে গভর্নর লেঃ জেনারেল টিক্কা খানঃ
সশস্ত্র প্রতিরোধ নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে
ঢাকা, ১৫ই মে (এপিপি)। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ও প্রাদেশিক সামরিক আইন প্রশাসক লেঃ জেঃ টিক্কা খান বলেন যে, সারা প্রদেশ থেকে সুগঠিত সমস্ত প্রতিরোধ নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। তবে প্রদেশের অভ্যন্তরভাগে কোথাও কোথাও লুট, সন্ত্রাস, কিংবা নিরীহ জনগণকে হয়রানি ধরনের কিছু কিছু বিক্ষিপ্ত দুষ্কর্ম চলছে বলে তিনি জানান।
গভর্ণর এক ঘরোয়া পরিবেশে দুজন বিশেষ সংবাদ দাতার সাথে আলাপ করছিলেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে এসে এক সময় পূর্ব পাকিস্তান সফরের পর বিশেষ সংবাদ দাতা দুজন গতকাল গভর্ণর হাউসে গভর্নরের সাথে দেখা করেন।
গভর্ণর টিক্কা খান সাংবাদিকদের সাথে ৪৫ মিনিটকাল আলোচনার সময় প্রদেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি ভারতীয় —- পূর্ণ প্রশাসনিক কর্তৃত্ব স্থাপন এবং অর্থনৈতিক জীবনধারার পুনর্জীবন বিষয়গুলো বিশেষভাবে জানান।
অনুপ্রবেশকারীরা সুবিধা করতে পারবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন যে, দুষ্কৃতিকারীদের কার্যকলাপ সেনাবাহিনীর লোকেরা বন্ধ করে দিচ্ছেন এবং তাদের নির্মুল করতে বেশীদিন লাগবে না। অনুপ্রবেশকারীদের সম্পর্কে জেনারেল টিক্কা খান বলেন যে, কোন কোন এলাকায় ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীরা ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সে চেষ্টায় তারা সুবিধা করতে পারেনি।
জনশক্তির সদ্ব্যবহারের জন্য স্কীম
গভর্নর টিক্কা খান বলেন যে, প্রাপ্ত প্রশাসনিক জনশক্তির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করার জন্য তিনি একটি স্কীম তৈরী করছেন। এর জন্য জেলা পর্যায়েও পূর্ণভাবে সাহায্য করা সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন যে, প্রশাসন ব্যবস্থা পূর্ণভাবে চালু করার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহীত হয়েছে।
আসন্ন দুর্ভিক্ষের সংবাদ ডাহা মিথ্যা
পূর্ব পাকিস্তানে দুর্ভিক্ষ আসন্ন বলে বিদেশী সংবাদপত্রগুলো যে সংবাদ প্রচার করেছে তা ডাহা মিথ্যা বলে জেঃ টিক্কা খান জোর দিয়ে বলেন। খাদ্যশস্যের ব্যাপারে বলতে পারি এখানে এখনো তার অভাব দেখা দেয়নি। সরকারের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্যশস্য মওজুদ রয়েছে। কোন কোন এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খাদ্যশস্য পরিবহণে কিছু অসুবিধা দেখা দিয়েছে। যেমন, ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীরা ঢাকা ও চট্রগ্রামের মধ্যে কয়েকটি রেলব্রিজ নষ্ট করে দিয়েছে। দ্রুত এগুলোর সংস্কার চলছে বলে তিনি জানান।
অর্থনীতি সম্পর্কে
অর্থনীতি সম্পর্কে গভর্ণর জানান যে, অধিকাংশ কলকারখানা, এমনকি দোকানপাটও পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু হয়েছে। বাকী শিল্প ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলোতে দ্রুত কাজ শুরুর ব্যবস্থা চলছে। যে সকল শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত কাজ শুরু করেনি তাদের বিরুদ্ধে সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের কোন প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার ইচ্ছা আছে কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন যে, সকলকে তাদের স্বীয় স্বীয় কাজ শুরু করার ব্যপারে উৎসাহিত করা হয়েছে।
প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না
যে সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং দোকানপাট এখনো খুলেনি সেগুলো বন্ধ করে দেয়া কিংবা প্রদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের খাতিরে অন্য কাউকে মঞ্জুরি দেওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে গভর্ণর বলেন যে, তিনি সে সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেন না। তাদের কোন অবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না বলে গভর্ণর উল্লেখ করেন।
কৃষি ব্যবস্থায় পূর্ন স্বাভাবিকতা ফিরে আসায় গভর্ণর জেনারেল টিক্কা খান সন্তোষ প্রকাশ করে মন্তব্য করেন ‘এটা পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতির একটি উতসাহজনক লক্ষণ’।
চা শিল্পের কোন ক্ষতি হবে না
এক প্রশ্নের জবাবে গভর্ণর বলেন যে, সিলেট জেলার সকল চা বাগানের শ্রমিকরা ফিরে আসা শুরু করেছে। অতএব চা শিল্পের বিশেষ কোন ক্ষতি হবে না।
এক প্রশ্নকারীকে তিনি জানান যে, গোলযোগপূর্ণ দিনগুলোতে বিভিন্ন ব্যাংক ও সরকারী ট্রেজারী থেকে দুষ্কৃতকারীরা যে বিপুল সংখ্যক টাকা-পয়সা লুট করে নিয়ে গেছে তার মোকাবিলা করার জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালান হচ্ছে। তার মত অনুসারে এই অর্থ দেশের বাইরে চালান হয়ে গেছে বলে তিনি জানান।