You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06 | পুর্ব পাকিস্তানের সংকটে ভারতের ভূমিকা | - সংগ্রামের নোটবুক
         শিরোনাম           সুত্র          তারিখ
১৩৫। পুর্ব পাকিস্তানের সংকটে ভারতের ভূমিকা সরকারি প্রচার পত্রিকা         জুন ১৯৭১

পাকিস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ভারতের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাগুলো প্রতিহত করা সম্ভব হবে- এ বিষয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় যার অন্তর্ভুক্ত ছিলঃ কাশ্মীর বিতর্ক, ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ, ভারতীয় মুসলমানদের পর্যায়ক্রমিক প্রোগ্রাম, অতিরিক্ত বিমান মহড়া নিষেধাজ্ঞা মাধ্যমে পাকিস্থানের দুই অংশকে বিছিন্ন করা, ক্রমাগত খোঁচানো/উস্কানো এবং জ্বালাতন করা, বড়ছোট যে কোন ক্ষেত্রেই; আর এখন নির্বিশেষে সমস্ত আন্তঃরজাতিক আইন ধর্মীয় অনুশাসন ও আচার এবং এর পরিক্রিয়া উপেক্ষা করে পূর্ব পাকিস্থানের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা।

ভারতকে বুঝানো সম্ভব ছিল যে পাকিস্থান এসেছে থাকতে, স্বাধীন সমতা ও নিরপেক্ষ শ্রদ্ধার ভিত্তিতে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে অবস্থান করবে এবং যার মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে?- এটা আশা করা কি খুব বেশি কিছু ছিল?

এক্ষেত্রে ভারতের পক্ষে একমাত্র আশ্বস্ত করার মতন নতুন পদক্ষেপ হতে পারত যদি বিরাজমান সমস্যার দিলে আলপাত করে দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘমেয়াদী বিবাদ নিরসনে অস্ত্রের মাধ্যমে পাকিস্থানকে প্রতিহত এবং ধাপে ধাপে পুনঃশোষণ প্রচেষ্টা না করা। বরং সেই সকল সমস্যাগুলার দিকে নজর দেয়া যেসব সমানভাবে দুইদেশের স্বার্থ রক্ষার্থে স্থায়ীভাবে সমাধান যোগ্য এবং সেই সকল সমস্যা যা প্রক্রিতভাবেই সহ্য করা অযোগ্য; শান্তি ও স্থায়ীতের পথে অন্তরায়। যেখানে ভারতের জন্য মহাবিপদ নিহিত; সাথে সাথে অন্যদের স্থায়ীতের প্রতিও হুমতি সরূপ।

নির্মাণে,

চলচিত্র ও প্রকাশনা বিভাগ, পাকিস্থান সরকার

জুন, ১৯৭১

.

.

         শিরোনাম           সুত্র          তারিখ
১৩৫। পুর্ব পাকিস্তানের সংকটে ভারতের ভূমিকা সরকারি প্রচার পত্রিকা         জুন ১৯৭১

পুর্ব পাকিস্তানের সংকটে ভারতের ভূমিকা

শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের যুদ্ধ করছেঃ ৮ এপ্রিল ১৯৭১ নয়া দিল্লীতে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির পশ্চিম বাংলা শাখার সধারন সম্পাদকের কাছ থেকে এই স্পষ্ট এবং সরাসরি স্বীকারোক্তি আসে । প্রকৃত ঘটনা যখন আড়াল রাখা যেত যে ,ইন্ডিয়া সরাসরি পাকিস্তানের পুর্ব প্রদেশে ১৯৭১ এর মার্চ এপ্রিলে সংঘঠিত সশস্ত্র বিদ্রোহের সাথে জড়িত ছিলো।কয়েক দিনের মধ্যেই বিদ্রোহ খুব দ্রুত শেষ করে দিয়েছিলো করিতকর্মা পাকিস্তান আর্মি ।এবং যখন পুর্ব পাকিস্তানের শহর এবং গ্রামাঞ্চলে ও জীবনযাত্রা দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসছে । এই বিদ্রোহের ধরন , প্রধান উদ্দেশ্য এবং পদ্ধতি নির্নয় করা খুবই সম্ভব ।একটা কারনে এটি স্পষ্ট যে ,যে যুদ্ধের জন্য ইন্ডিয়ার নেতারা এতোটা নির্লজ্জভাবে একে জনগণের কৃতিত্ব বলে প্রচার করছে, তা ছিলো সন্দেহাতীতভাবে ইন্ডিয়ার নিজস্ব । এই বিদ্রোহের পিছনে কেবলমাত্র ইন্ডিয়ার সেনাবাহিনীর অনুপ্রবেশই দায়ী নয় বরং ইন্ডিয়ান সংবাদ মাধ্যম বিশেষ করে সরকার নিয়ন্ত্রিত বেতারগুলো বিদ্রোহের পর থেকে কল্পিত অঞ্চলে কল্পিত যুদ্ধ বাঁধিয়ে যাচ্ছিলো ।অথচ বিদ্রোহিরা তখন হয়তো আত্মসমর্পন করছে অথবা পিছু হটে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যাচ্ছে।

পাকিস্তানকে বিভাজনের জন্য ইন্ডিয়ার পরিকল্পনা কতো গভীর এবং সুদূরপ্রসারী ছিলো ,তা এখন বোঝা যাচ্ছে। ১ এপ্রিল ১৯৭১, “ব্রিটিশ ডেইলি ইয়ররকশায়ার পোষ্ট” জানায়, পাকিস্তানকে ধ্বংস করার ইন্ডিয়ার চেষ্টা পুর্ব পাকিস্তানে শুধু সামরিকভাবেই নয়,আই যে ষড়যন্ত্রের পিছনে অনেক ঐতিহাসিক কারন ও রয়েছে। ১৯৪৭ এ পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই তারা এসব শুরু করেছে । তখন থেকেই পাকিস্তানের সাথে বিরোধ দূর করতে তারা কোন পদক্ষেপ ই নেয়নি ,বরং এই দেশকে খোঁড়া  বানাতে সব্রকম পরিকল্পনা প্রয়োগ করেছে।

লন্ডন “ডেইলি টেলিগ্রাফ” এর সাংবাদিক ডেভিড লোসাক লেখেন যে ,ভারত এর প্রধান প্রতিদন্ধীর বিচ্ছিন্ন হওয়া বা দুর্বল হবার ভিতরেই কেবলমাত্র নিজের ভালো দেখতে পায়।তিনি আর ও বলেন নিরপারাধ জঙ্কগনের জন্য দুশ্চিন্তার পিছনে যে মিথ্যাটা ছিলো,তা হলো এই যুদ্ধটা বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে হচ্ছে বলে প্রচারণা করা ।অন্য একজন অস্থায়ী এশিয়া বিষয়ক ব্রিটিশ মুখপাত্র মশেল এডওয়ার্ডস বিবিসির “word Today” প্রোগ্রামের আলোচনায় ১ এপ্রিল ১৯৭১ এ বলেন যে ,পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং গোষ্ঠীর ভিতর পুর্ব পাকিস্তানে সমস্যা তৈরি কারীদের জন্য সহানুভূতি প্রকাশের প্রতিযোগিতা চলছে এবং তাদেরকে সংগঠিত করে সাহায্য সহযোগিতা করা হচ্ছে ।

রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিবেচনায় পশ্চিম বাংলা পুর্ব পাকিস্তানের সাথে সমন্বয় সাধন করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলো ।বিভাজন করে পশ্চিম বাংলার নেতারা আশা করছিলো পুর্ব পাকিস্তানের উপর নিজেদের কৃতিত্ব আরোপ করে তাদের কলকারখানার কাঁচামাল  সংগ্রহ করতে।

ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্যসমুহ বিশ্লেষণ করে পুর্ব পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান পত্রিকা “দ্যা পাকিস্তান অবজার্ভার” চিহ্নিত করে ইন্ডিয়ার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হলো পাকিস্তানকে দুর্বল দেখা যার পরিণতিতে পাকিস্তান ভেঙ্গে যায়।তারা পুর্ব পাকিস্তানকে দখল করতে অর্থনৈতিকভাবে প্রনোদনা দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছে।বিশ্ব পাট বাজারে ইন্ডিয়া কঠিন সময় পার করছে শুধুমাত্র পুর্ব পাকিস্তানের পাট শিল্পের কারনে ।কলকাতার অনেক পাটকল যেগুলো পুর্ব পাকিস্তানের পাট দিয়েই প্রতিষ্ঠিত  এবং চালিত হতো ,সেগুলো পাকিস্তান সৃষ্টির পর বন্ধ করে দিতে হয়েছিলো কারন তখন আর পুর্ব পাকিস্তানের পাট পাওয়া যেত না ।যেখানে পাকিস্তান সৃষ্টির আগে দূর দুরান্ত থেকে কলকাতা বন্দরে পাট পৌছে যেতো ।পাটিশানের পর পুর্ব পাকিস্তানের নিজস্ব পাটশিল্প গড়ে উঠেছে ।ইন্ডিয়ার দৃষ্টি এখন পুর্ব পাকিস্তানের পাটের উপর ।এইসব অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য,সেইসাথে পরিকল্পনায় যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানের সাথে রাজনৈতিক বিরোধিতা ,সব মিলিয়েই ভারত চায় পাকিস্তানের পুর্ব অংশকে আলাদা করতে ।এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেই যে পুর্ব পাকিস্তানে সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘটানোর জন্য অস্ত্র এবং সৈন্য পাঠাতে শুরু করেছে ।এটা এখন পরিষ্কার যে, বিভিন্ন সময় সর্বতভাবে পুর্ব পাকিস্তানে রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র করে আসছে ।জোর পুর্বক পূর্ব পাকিস্তানকে দখল করার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র এবং অর্থের যোগান দিয়ে একটা গোপন সংগঠন গড়ে তুলতে চেষ্টা করছে।

“আগরতলা ষড়যন্ত্রে মুজিব জড়িত”

১৯৬৭ সালে যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটিত হয় তখন ভারতের এই ষড়যন্ত্রে সরাসরি জড়িত থাকার এবং রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকান্ডের প্রত্যক্ষ প্রমান আলোতে আসে ।এছাড়া  বিভিন্ন প্রত্যক্ষদর্শী এই ষড়যন্ত্রে মুজিবের জড়িত থাকার ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয় ১৯৬৪ সালের প্রথম দিকেই ।এটি হলো সেই সময় যখন ষড়যন্ত্রকারী গ্রুপ করাচীতে “পুর্ব পাকিস্তানকে আলাদা করতে একটি বৈপ্লবিক সংগঠন গড়ে তোলার” জন্য শেখ মুজিবের আহবানে সমবেত হয়েছিলো।

আগরতলা ষড়যন্ত্রের প্রধান পরিকল্পনা ছিলো সেনাবাহিনীর অস্ত্রাদি দখল করে তাদের খোঁড়া করে দেওয়া ।কমান্ডো স্টাইলে এবং হটাত করেই এসব আক্রমণ ঘটছিলো এবং জনবলের অভাবে ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব হচ্ছিলোনা।এইসব বিষয় লক্ষ্য করেই একটি মিটিং আহবান করা হয়েছিলো ,যেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিনিধিদের সাথে ছিলো পাকিস্তানে বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়ানো ভারতীয় প্রতিনিধি যারা অস্ত্র এবং গোলা বারুদ সরবরাহ করতো।এই মিটিং ১৯৬৭ সালের ১২ জুলাই ভারতের আগরতলায় অনুষ্ঠিত হয় ।

১৯৬৭ সালে যখন ষড়যন্ত্রকারীরা আটক হয় আটক কারীদের একজন ফাঁস করে দে যে , পুর্ব পাকিস্তানে একটি সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘটানোর জন্য ভারত অস্ত্র এবং অর্থনৈতিক সাহায্যের ব্যাপারে কথা দিয়েছে।ভারত তাদেরকে বলেছে ভারত সরকার পুর্ব পাকিস্তানের সাথে পশ্চিম পাকিস্তানকে সংযোগকারী নৌ এবং আকাশপথ বন্ধ করে দিবে ।

                     “ব্যাপক অস্ত্রশস্ত্র মজুদ হুমকি স্বরূপ”

এটি ছিলো চার বছর আগের কথা ।কিন্তু ইন্ডিয়া ১৯৭১ এর ফেব্রুয়ারীতেই হুমকি হয়ে দেখা দিলো ।যখন ইন্ডিয়া অধ্যুষিত কাশ্মীরের দুই দুর্বৃত্ত পুর্ব পরিকল্পিতভাবে পাকিস্তানের মাটিতে একটি ভারতীয় এয়ারক্রাফট উড়িয়ে দেয়।

                                                                                                                                                                       ১৯৭১ এর ফেব্রুয়ারীর দিকে ইন্ডিয়া পশ্চিম বাংলা প্রদেশে নির্বাচনী প্রয়োজনে লোকদেখানো অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কথা বলে বড়ো আকারের সেনাবাহিনী জড়ো করছিলো। নির্বাচন শেষ হয়ে যাবার পর, অতিরিক্ত আর্মি ফিরে যাওয়ার পরিবর্তে ভারত থেকে পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশ করছিলো। ১৯৭১ এর মার্চের শেষের দিকে পর্বতারোহী, ছত্রীসেনা, এবং বিমানবাহিনীর সহযোগিতায় সৈন্যরা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে।

যুগপত্‍ভাবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডকে সহযোগিতা করতে ভারতীয় বাহিনী সিভিল ড্রেসআপে পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তের কাছাকাছি বিভিন্ন জায়গায় অবস্হান করতো। যুদ্ধবিমান এবং অন্যান্য আকাশযান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ঘোরাফেলা করছিলো এবং এর ভিতর অন্তত ছয়টা পশ্চিম পাকিস্তান অভিমুখে যুদ্ধ সতর্কাবস্হায় রাখা ছিলো।

পশ্চিম বাংলায় পাঁচ ডিভিশন সেনা জড়ো করে পরিতৃপ্ত হতে না পেরে ইন্ডিয়ান কর্তৃপক্ষ বিএসএফ এর আরও বাড়তি দল নিয়ে আসে যারা ইতিমধ্যেই পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় অবস্হান করছিলো। এভাবে প্রায় পঁচিশ ব্যাটালিয়ন সৈন্য সীমান্তে জড়ো করা হয়েছে। বিদ্রোহী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহযোগিতা করতে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় বিএসএফ অনুপ্রবেশ করে। সীমানা চিহ্ন মুছে দিয়ে জীপ সহ অন্যান্য যানবাহন বেসামরিক রংয়ে পুনরায় রং করে।এরপর অতিরিক্ত সীমান্তরক্ষী বাহিনী যারা দিল্লী থেকে এসেছিলো তাদের সব কোর্স বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে এবং পুলিশের ছুটি বাতিল করেছে।

পূর্ব পাকিস্তানের সাথে যোগাযোগ এবং পরিবহন ব্যবস্হা বাধাগ্রস্ত করতে ইন্ডিয়া তার আকাশপথ থেকে পাকিস্তানের সকল এয়ারক্রাফটের ফ্লাইটসমূহ বাতিল করা আরও দৃঢ়তর করতে সমুদ্র পথেও কর্ষিকা বাড়িয়েছে। ২ এপ্রিল ৭১ এ ইন্ডিয়ার যুদ্ধজাহাজ সমুদ্রে পাকিস্তানের নৌযান গুলোকে হয়রানি করে দীর্ঘসময় ধরে। দ্বারকায় ইন্ডিয়ার নৌঘাঁটি থেকে ৭০ মাইল দূরে তারা আক্রমন চালায়। নৌযানটি ইন্ডিয়ান জাহাজের পশ্চাত্‍ধাবনের কারনে করাচি ফিরে যেতে বাধ্য হয়। তিনদিন পর তারা চিটাগাং অভিমুখে চলতে থাকা ‘সাফিনা ই আরব’ নামক নৌযানকেও হয়রানি করে। পাকিস্তানের বেসামরিক এয়ারক্রাফট গুলোকে জোরপূর্বক দক্ষিণ থেকে দূরে চলাচল করাতে ইন্ডিয়ার উপকূল থেকে ১২৩ মাইল দূরে মাটি থেকে আকাশে ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপকারী একটি দল ফারারিং অনুশীলন শুরু করেছে।

ভারতীয় বিমান বাহিনীতেও সম্ভাব্য আক্রমনের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। পাশাপাশি পূর্ব পাকিস্তানের পুবদিকে বাড়তি যুদ্ধবিমানের চলাচল বেড়ে গেছে। এছাড়া উত্তর এবং পশ্চিম দিকেও ভারতের বিমান বাহিনী যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। কলকাতার কাছে ব্যারাকপুরে সমুদ্রে রেকি করা কিছু এয়ারক্রাফট বংগোপসাগরে চলাচলকারী পাকিস্তানের জাহাজ গুলোকে রাখছে কড়া নজরদারীর উপর। এছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলে ব্যাপক টহল বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

পূর্ব পাকিস্তানে বিএসএফ এর অণুপ্রবেশঃ ভারতের সেনাবাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় বিএসএফের সদস্যরা পূর্ব পাকিস্তানে অনুপ্রবেশের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের পরিবহন এবং যোগাযোগ ব্যবস্হায় সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে ভারত সরকার, পাকিস্তানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যাচ্ছিলো। তারা অস্ত্র এবং গোলাবারুদ পাঠাতেও শুরু করেছে।

.

.

[পূর্ব পাকিস্তানে

বিএসএফ কর্মীদের অনুপ্রবেশ ]

ভারতীয় সেনাবাহিনীর সক্রিয় সমর্থন পেয়ে বিএসএফ কর্মীবৃন্দ পূর্ব পাকিস্তানে অনুপ্রবেশের তীব্র প্রচেষ্টা শুরু করেন ।তাদের অভিযান সহজতর করতে পূর্ব পাকিস্তানের অগ্রসরমান যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নজর কেড়েছে । তারা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছে চোরাগূপ্তা উপায়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠানো শুরু করেছে ।ঈসাপুর রাইফেল কারখানা চিহ্নিত বিপুল সংখ্যক রাইফেল জব্দ করা হয়েছে ।পাশাপাশি কিরকি কারখানা চিহ্নিত গোলাবারুদের মজুদ ও ধরা হয়েছে । এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে ৭৬ ,৮১ ,৮৩,১০১ ও ১০৪ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ব্যাটালিয়ন পূর্ব পাকিস্তান অভিযানে নিযুক্ত করা হয়েছিল ।পরবর্তী তথ্যের সূত্রমতে আরো ২টি ব্যাটালিয়নকে নিযুক্ত করা হয়েছিল ; ৭৩ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন মখিলগন্জ্ঞ (কোচ বিহার ) এলাকায় , ৭৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন দিনাজপুরের পশ্চিমে এবং ১৮ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন যশোরের পশ্চিম এলাকায় বানগন্জ্ঞে ।সিনিয়র সেনা কমান্ডারদের তত্ত্ববধানে অভিযান পরিচালিত হয় । তাদের মধ্যে একজন ৬১ মাউন্টেন ব্রীজ এর কমান্ডার ছিলেন ও সম্প্রতি তিনি দিমাগিরিতে রাঙামাটির ২৫ মাইল উত্তর পূর্বে স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ।পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকাসমূহে ভারতীয়দের কর্তৃক বেশ কিছু শরণার্থী শিবির প্রতিষ্ঠা ও তাদের অধীনে পূর্ববাংলা থেকে আসা তথাকথিত উদ্বাস্তুদের ত্রাণ প্রদান একটি চতুর পদক্ষেপ । এখানকার বেশকিছু ক্যাম্প অনুপ্রবেশ ঘটানো ,পূর্ব পাকিস্তানে রাষ্ট্রবিরোধীদের অস্ত্র ও মজুদ সরবরাহে ব্যবহৃত হচ্ছে । শরণার্থী শিবির তত্ত্বাবধানের এই ফাঁকে ভারতের বিভিন্ন স্থানে তহবিল সংগ্রহের কাজ চলছে এবং এর পাশাপাশি এসব ক্যাম্পে গেরিলা প্রশিক্ষণ ও প্রদান করা হচ্ছে ।

দালিলিক প্রমাণ ‘ যদি কোন প্রমাণ বা তথ্যচিত্র প্রয়োজন হয় যে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারত হস্তক্ষেপ করছে তবে রাজশাহীতেই তা পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে’ এপিপি সংবাদদাতা রাজশাহীতে যা প্রত্যক্ষ করেছেন তার প্রাথমিক বর্ণনায় বলেন ।বেশকিছু সংবাদপত্রে প্রকাশিত তার কিছু উদ্ধৃতি এখানে তুলে ধরা হলো : ‘সেনাবাহিনী এক গাদা ভারতীয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করেছে ।চেক চিহ্নিত একটি ভারী অস্ত্র স্থানীয় সেনাবাহিনীর কমান্ডার দেখিয়েছিলেন যা যুদ্ধক্ষেত্রের ১টি উল্লেখযোগ্য অস্ত্র ।চেক অস্ত্র ভারতীয় সেনাবাহিনীর দ্বারা ব্যবহৃত হয় যা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিকট কখনোই ছিল না ।এটা নবাবগন্জ্ঞ এলাকার অনুপ্রবেশকারীদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় ‘ আমি সেনাকর্মকর্তার অধিকার করা একটি ডকুমেন্ট দেখেছি যা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সশস্ত্র ভারতীয় উত্থানের চাইতেও গুরুতর কিছুকে ইঙ্গিত করে ।এই নথি আরো প্রমাণ করে যে আওয়ামীলীগের কিছু বিচ্ছিন্ন গ্রুপ ভারতের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে অখন্ড পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ।সীমান্তে একজন ভারতীয়র সাথে ভারী অস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য এই গোপন নথিটি একজন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা কর্তৃক রাষ্ট্রবিরোধী একজন ব্যক্তির ঠিকানায় প্রেরিত হয় ।এটা রাজশাহী শহরের ডা . বাচ্চু কর্তৃক হাতে লিখা হয় যেটি ভারতীয় সীমান্তের ১৩ মাইল দূরত্বে মুর্শিদাবাদ জেলার নবাবগন্জ্ঞে বসবাসকারী কাশেম সাহেবের নিকট প্রেরণ করা হয় । ‘চিঠির বিষয়বস্তু পড়ে একজন ব্যক্তি সামান্য পরিমাণ বুদ্ধিমত্তার সাথে বলতে পারেন যে ভারতের লোক আওয়ামীলীগের অনুকূলে কাজ করছে ‘ যে সংগ্রহটি বর্হিবিশ্বের নিক চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিবে নিতে তা পরিবেশন করা হল.

জরুরি . . .কাশেম সাহেব. . . অপরপক্ষের একজন প্রতিনিধি অনানুষ্ঠানিকভাবে এখানে এসেছিলেন এবং জানান যে কেউ একজন অথবা অধিনায়ক সাহেব আমাদের সঙ্গে ভারী অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে জরুরী আলোচনার জন্য সাক্ষাত করবেন ।আমি তাকে সময় দিয়েছি যে আপনি এবং আমি আগামীকাল রাত ১২ টায় মহিদপুরে পৌঁছাব ।এটি আমাদের নিকট অনানূষ্ঠানিক অস্ত্র সহায়তা ।তাই দয়া করে রাতের মধ্যেই এখানে পৌঁছাবেন । . . . . . . . . .ডা . বাচ্চু বি দ্র : মন্টু আজকে আবার অপরপক্ষে গিয়েছিল ‘ চিঠিতে উল্লেখিত ঠিকানা জনাব কাসেমের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ।৮ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখ উল্লেখিত ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগ ,নওয়াবগন্জ্ঞ ,রাজশাহী বিভাগ’ সম্বলিত একটি ছাপানো প্যাডে এটি লিখা হয়েছে ।এর বাম পার্শ্বে নওয়াবগন্জ্ঞ আওয়ামীলীগ এর প্রেসিডেন্ট ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ছাপানো আছে ।প্রেসিডেন্ট এর নাম আলহাজ রাইসুদ্দিন আহমেদ ,MNA এবং সম্পাদকের নাম ডা . এ. এম. মিসবাহ উল হক ,MPA. ‘ বেসামরিকদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত যারা সশস্ত্র ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের সাক্ষী তারা হলেন : জনাব আকতার আহমেদ ,একজন রাজনীতিবিদ যিনি উত্তর বাংলাকে পৃথক প্রদেশ করার একজন সমর্থনকারী ;জনাব মারগুব মোর্শেদ ,অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার এবং পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতির ছেলে; বেগম হুসেন আরা রাশিদ ,রাজশাহীর ডেপুটি কমিশনারের স্ত্রী এবং জনাব মুহম্মদ সাইফুল্লাহ ,রেডিও পাকিস্তানের রাজশাহী স্টেশনের আঞ্চলিক পরিচালক ।আমি এদের সকলের সাথেই পৃথকভাবে এবং আরো অনেকের সহিত সাক্ষাত করেছি ‘

কেন্দ্রীয় ভারতীয় উপভাষীয় পুরুষদের বন্দুকবাজ দল ‘জনাব আহাদ আজ বেঁচে থাকতেন না কিন্তু কুটনৈতিক বিচক্ষণতায় তিনি একটি মারাত্মক পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন ।তিনি ও আরো চারজন আওয়ামীলীগ এর কর্মীদের দ্বারা জ্বালাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং তাকে সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তর করা হয়েছিল যাদের ইউনিফর্ম জনাব আক্তারের মতে জোরালো দৃষ্টিতেই ভারতীয় ছিল । তারা টমি বন্দুক বহন এবং ছদ্মবেশরূপী ইস্পাতের হেলমেট পরতেন ।ঐসকল ভারতীয় সেনাপুরুষেরা কেন্দ্রীয় ভারতীয় উপভাষায় কথা বলত যারা নিজেরাই একটি বন্দুকবাজ দল গঠন করেছিল এবং ৫ জন ক্ষতিগ্রস্তদের নিউ মার্কেটের কাছে উন্মুক্ত একটি জায়গায় বসিয়ে রেখেছিল ।’ ‘ তাদের ৫ জনকে মাথা নত করতে বলা হয়েছিল ।আক্তার আহাদ বলেন তিনি জানতেন মৃত্যু দুয়ারে কড়া নাড়ছে কিন্তু কিছু করার ছিল না । হঠাত্ তিনি ভারতীয় টমি বন্দুকের ফায়ার শুনেন এবং বাকি ৪ জনের মতই লুটিয়ে পড়েন ।’ ‘ জনাব আহাদ অবিলম্বে অনুভব করেন তিনি জীবিত কিন্তু মৃত ভান করেন ।তারপর বন্দুকবাজ দলের লোকদের বলতে শোনা গেল ,তাদের সময় ফুরিয়ে এসেছে এবং প্রায় ৭ মিনিট পর তারা ঐ স্থানটি ত্যাগ করল ।যখন তারা চলে গেল তিনি দেখলেন তার সমস্ত চোয়াল এবং উরুতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে ।আমি যখন তার বন্ধুর বাসায় তাকে দেখতে যাই তখন তাকে চোয়াল ও উরুতে ব্যান্ডেজ পরিহিত অবস্থায় চেয়ারে বসে থাকতে দেখি ।তিনি আমাকে বললেন তিনি এখন বিপদমুক্ত কিন্তু কুষ্টিয়ায় তার বোনের জন্য তিনি অত্যন্ত চিন্তিত যার ঠিকানা তার জানা ছিল না

.

মিসেস রশিদ কিছু সংখ্যক মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিলেন । তারা যখন বাড়িতে দুইবার হানা দিয়েছিল জনাব মারঘাব এবং মিসেস রশিদ দেখলেন জলপাই সবুজ রঙের পোশাকধারী (ভারতীয় সেনাদের অফিশিয়াল পোশাক) দুইজন ভারতীয় সেনা তাদের সমর্থন জানাচ্ছে । এই অংশে মিসেস হাসান নির্দোষ মানুষদের হত্যা করতে চাওয়া সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের কাছে আত্মসমর্পণের অস্বীকৃতি জানিয়ে অসাধারন সাহসিকতার পরিচয় দেন ।

“দুর্বৃত্তরা তাকে জানায় যে তারা তার স্বামীকে অপহরন করেছে এবং সে যদি আশ্রিত ১৬ জনকে আলাদা করে দেয় তাহলে তার স্বামীকে ছেড়ে দেয়া হবে”

“কিন্তু তিনি তাদেরকে বললেন ১৬ জনকে হত্যা করার আগে যেন তাকে হত্যা করা হয়”

   ভারত থেকে তিনজন রেডিও ইঞ্জিনিয়ার আনা হয়েছিল

“জনাব সাইফুল্লাহ আমাকে বলেছিলেন, টেলিফোন ট্রান্সমিটার নষ্ট হলে সেনারা ভারত থেকে তিনজন ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে আসে শহরের সম্ভাব্য সব জায়গায় সেটাকে ব্যবহার উপযোগী করে তোলার জন্য । ইঞ্জিনিয়ারেরা সেটার ক্রিস্টালের অনুপস্থিত জনিত খুঁত বের করে যা ট্রাস্নমিটারের একটি অপরিহার্য উপাদান” ।

“ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারেরা কলকাতা থেকে নিজস্ব ক্রিস্টাল নিয়ে আসে কিন্তু তা ফিট হচ্ছিল না । তারা যখন অন্য ধরনের প্রতিস্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছিল ততক্ষণে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী শহর দখল করে ফেলে এবং তাদের ফিরে যেতে বাধ্য করে । জনাব সাইফুল্লাহ বলেছিলেন কোন এক অসতর্ক মুহূর্তে একজন ইঞ্জিনিয়ার নিজের নাম দিয়েছিল- শাক্তি দেভ অব দি এয়ার” ।

‘রাজশাহী পরিদর্শনের সময় তিনজন পাহারাদার ও ওয়ার্ড কর্মকর্তা আমাকে কিছু জায়গা দেখায়, তাদের ভাষ্যমতে যা ভারতীয় শিখ সেনারা নির্দেশনা অনুযায়ী কিছু সময়ের জন্য দখলে রেখেছিল” ।

“এমনকি কয়েকজন জেলা প্রশাসন কর্মকর্তা আমাকে জানায়, ভারতীয় সেনারা সাথে করে কয়েকজন চিকিৎসক নিয়ে এসেছিল যাদের মধ্যে একজন মহিলা চিকিৎসক ও ছিল” ।

“বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জড় করা হিসেব মতে, আমি প্রায় ৪০০০ থেকে ৫০০০ সেনাদের সাথে কাজ করেছি যারা রাজশাহী আসে বিদ্রোহী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাহায্য করার জন্য”।

বিদ্রোহীদের কলকাতার সাথে সংযোগস্থাপন

পূর্ব পাকিস্তানের সংকটের শুরু থেকে ভারতের ভূমিকার মূর্ত প্রমাণ বিভিন্ন ভারতীয় ও বিদেশি গণমাধ্যম ।

এমনকি ২৯ শে মার্চ ১৯৭১ এর প্রথম দিকে একজন ভারতীয় সংবাদ প্রতিনিধি কলকাতা থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নিশ্চিত করে যে, বিদ্রোহীরা ( মুক্তিসেনা নামে পরিচিত) কলকাতার সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে । ‘দি ডেইলি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বোম্বে’ অনুযায়ী সংবাদ প্রতিনিধির উদ্ধৃতি, কুষ্টিয়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার ঘোষণা দেয় কুষ্টিয়া থেকে প্রতিপক্ষ সেনাবাহিনীর দুটি ইউনিট হয় মারা গেছে নয়তো প্রত্যাহার করা হয়েছে । নদিয়া জেলা বর্ডারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কমান্ডার কলকাতার সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করে । সে প্রথমে জনাব অজয় মুখারজীর সাথে কথা বলে যে পরবর্তী সপ্তাহে নতুন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিরোনাম হবে এবং

কমান্ডার ভারতীয়দের কাছে বাংলাদেশের শুভেচ্ছাবার্তা পৌঁছে দেন এবং জনাব মুখার্জীকে চিকিৎসা ত্রাণ পাঠানোর জন্য তাড়া দেন। এর পরের দিনই (৩০শে মার্চ), ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের অর্থমন্ত্রী জনাব বলওয়ান্ত সিং ভারতের নিজস্ব আইন যা যেকোন শরণার্থীদের ব্যাপারে ওকালতি নিষেধ করে,তা সরাসরি উপেক্ষা করে,পাকিস্তানের শরণার্থীদের সাহায্য করেন এবং “বাংলাদেশ” এর অস্থায়ী সরকার এর পরিচিতি দিতে চান। বেশ কিছু ভারতীয় সংসদ যার মধ্যে রয়েছে তামিলনাড়ু,বিহার,আসাম,কেরালা,রাজস্থান,উত্তরপ্রদেশ,গুজরাট এবং ত্রিপুরা বাংলাদেশকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রেক্ষিতে কেরালা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জনাব অছুত্তা মেননও একই রকমের অনুভূতি প্রকাশ করেন। পশ্চিমবঙ্গের উপ-মূখ্যমন্ত্রী ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এর পরিচয় প্রদানের মত চেষ্টাও করেছিলেন।

    ইতোমধ্যে,স্বয়ং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থার উপর ভিত্তি করে একটি সিদ্ধান্ত ভারতীয় সংসদের উভয় হাউজ কর্তৃক পাশ হয়,তা ছিলো পাকিস্তানের প্রতি সরাসরি শত্রুভাবাপন্ন আক্রমণ।এই সিদ্ধান্তটি পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি গাঢ় করুণা এবং ঐক্য প্রকাশ করে এবং তিনি পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন যে তাদের এই সংগ্রামে ভারতীয়দের সাহায্য এবং ভালোবাসা তারা সবসময় পাবে।

   সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বলতে হলে,ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী স্বরান সিং “পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনা পাকিস্তানের ভেতরকার ব্যাপার”;পাকিস্তানের এই বক্তব্য নাকচ করে দেন।এই বক্তব্য তাদের নিজেদের বক্তব্যকেই খন্ডন করে যা তারা পহেলা মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ভাষণে নিয়েছিলো। ২রা মার্চ অল ইন্ডিয়া রেডিওতে প্রেসিডেন্ট এর ভাষণ এর ব্যাপারে ভারতীয় মতামত জানানো হলো,”বৈদেশিক মন্ত্রণালয় এর একজন কর্মকর্তা নয়াদিল্লী তে বলেন যে,ভারত পাকিস্তানের উন্নতিকে তাদের ভেতরকার ঘটনা হিসেবে স্বাগত জানায়।আমাদের কোন ইচ্ছা নেই তাদের ঘরোয়া ব্যাপারে নাক গলানোর।ভারতের এই নিরপেক্ষতার রূপকথা খুব তাড়াতাড়িই বিস্ফোরিত হলো।এবং ভারত তার নিজের রূপে ফিরে এলো। একই দিনে যখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত সংসদে পাশ হয়,তখন রিপোর্ট এ বলা হয়,পশ্চিম বাংলার জনগণ পূর্ব বাংলার প্রতি ঐক্য প্রকাশ করার জন্য একটি পূর্নাঙ্গ প্রতিবাদ করে।কলকাতায় সবচেয়ে বেশী শোনা যাওয়া স্লোগানটি ছিলো,”এপার বাংলা,ওপার বাংলা,দুয়ে মিলে সোনার বাংলা।”

ভারত কর্তৃক বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহ

৪ এপ্রিল ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর মুজিবকে সাহায্য করার জন্য তহবিল গঠন করার আবেদনে সরকার অনুমোদনকৃত কমিটিসমূহ সারা ভারতে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিলো।তারা পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য অর্থ ও অস্ত্রশস্ত্র যোগাড় করতে লাগলো।বিহার রাষ্ট্রের মূখ্যমন্ত্রী করপুরি ঠাকুর ঘোষণা করলেন যে,তার রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই তহবিলে পঁচিশ লক্ষ টাকা সাহায্য হিসেবে দিবে এবং বেশ কিছু সংগঠন তহবিল গঠন করতে শুরু করেছে।৬ এপ্রিল,১৯৭১ “দ্য ইন্ডিয়ান নেশান,বোম্বে” উদ্ধৃত করলো যে,মুখ্যমন্ত্রী ঠাকুর বলেছেন,তার দৃঢ় সংকল্প বাংলাদেশের মুক্তিফৌজগুলোকে যথাসাধ্য শ্রেষ্ঠ অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করা।জনাব ঠাকুর আরো বলেন,”পরিণতি যাই হবে,আমি মেনে নিবো।আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

.

এই তহবিল উঠানো হয়েছিল ” মুক্তিবাহিনী” র জন্য অস্ত্র কেনা এবং পূর্ব পাকিস্তানে  সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী পাঠানোর লক্ষ্যে । ভারতের বেশ কিছু সংখ্যক পত্রিকায়, এমনকি ” দ্য স্টেটসম্যান ” এও প্রকাশিত হয় যে

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে ৫ই এপ্রিল যখন জিজ্ঞাসা করা হয় যে এসকল রসদ  সরবরাহ করার জন্য কোন যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা ; তখন বলা হয় যে ” তিনি এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কোন বক্তব্য দিতে অপারগ ,

যেহেতু এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার । তবে তিনি তহবিল উত্তোলনকে সমর্থন করেন । ” একই দিনে , ত্রিপুরার প্রধান সচিব সংবাদ সম্মেলনে বলেন ” সীমান্তে ১১ টি প্রবেশদ্বার এবং ৯ টি ক্যাম্প খোলা হয়েছে

 পূর্ব পাকিস্তানের শরনার্থিদের অভ্যর্থনার জন্য । “

অনেক ক্ষেত্রেই এসকল ক্যাম্প পূর্ব পাকিস্তানে কর্মীদের অনুপ্রবেশ এবং অস্ত্র পাচারের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতো । এটা ভারতভিত্তিক বেশ কিছু সংখ্যক বিদেশি প্রতিনিধিদের সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে ।

          বিদেশি প্রতিনিধিদের সাক্ষ্য

 পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্রোহীদের কাছে ভারতীয় অস্ত্রের সরবরাহ বেশ কজন বিদেশি সাংবাদিকের প্রতিবেদনে বিশদভাবে উঠে এসেছে । কলম্বিয়া ব্রডকাস্টিং সার্ভিসের প্রতিনিধি আরনেস্ট ওয়েদার অল ৩১শে মার্চ নয়াদিল্লীতে রিপোর্ট করেন

” সকল সংকেত এই যে মুজিব এবং তার বিতাড়িত আওয়ামী লীগ সতর্কতার সাথে সামরিক অভিযান পূর্বেই পরিকল্পনা করে রেখেছিল । এই মুক্তিবাহিনীর প্রথম লক্ষ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানের চট্টগ্রামের একমাত্র গভীর পানির বন্দর ।

একবার এই বন্দর ধ্বংস হয়ে গেলে প্রেসিডেন্ট (ইয়াহিয়া খান) পূর্বপাকিস্তানে তার সৈন্যদের রসদ সরবরাহে মুশকিলে পড়বে । এর পরবর্তি ধাপ ছিল ঢাকা কব্জা করা এবং একে পাকিস্তানি আর্মিদের কর্মকাণ্ডের

মূল ঘাটি হিসেবে ব্যবহার করাকে প্রতিহত করা । এটা বিশ্বাস করা হয় যে মুজিব বাইরের উৎস থেকে একটা লম্বা সময় ধরে রসদ সরবরাহ পেয়ে আসছিল এবং এগুলা ইয়াহিয়ার কাছ আক্রমণ আসার আগ পর্যন্ত

গোপন ছিল । নয়াদিল্লীর অনেক পশ্চিমা কূটনীতিক এটা ধারণা করতেন এই অস্ত্রগুলা কেবল মাত্র ভারত থেকেই আসা সম্ভব ।

 এটা ছিল সেইসব সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান আর্মির নেওয়া পদক্ষেপ , এবং সেসব তথাকথিত ” নিরপরাধ নিরস্ত্র নাগরিক ” দের বিরুদ্ধে নয় যা ভারতীয় প্রেস ও রেডিও বহির্বিশ্বকে বিশ্বাস করাতে

চাইছিল । 

১৯৭১ সালের ৩রা এপ্রিলে ডোনাল্ড সিম্যান , ডেইলি এক্সপ্রেস লন্ডনের সংবাদদাতা কলকাতা থেকে রিপোর্ট করেন যে “গোপনে প্রচুর অস্ত্রের সরবরাহ চলছে ” । দ্য টাইমস এবং গার্ডিয়ানও একইরকম প্রকাশ করে।

পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলায় দায়িত্বরত লন্ডন টাইমস এর প্রতিনিধি পিটার হাজেলহার্স্ট , প্রচ্ছদপৃষ্ঠায় প্রকাশ করেন যে বোমা ও গুলি ” সীমান্ত জুড়ে ঢেলে ” দেওয়া হয়েছে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিমবঙ্গের

গেরিলাদের যার নিদর্শন পাওয়া যায় ” পূর্ব বাংলার কাছে বেনাপোল সীমান্তচৌকিতে ” । যশোরের কাছে ভারতীয় সীমান্ত থেকে পাঠানো এক বিবরণে, গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রতিনিধি মারটিন উলাকট ব্যক্ত করেন

যে তিনি একজন পশ্চিমবঙ্গের উকিল এবং একজন ব্যবসায়ীর সাথে দেখা করেছেন যারা ” পেট্রল , ডায়নামাইট বোমা আর বন্দুকের ফরমাশ নিয়েছেন ” ।

রেডিও অস্ট্রেলিয়াও পূর্ব পাকিস্তানের অস্ত্রের সরবরাহের কথা উল্লেখ করে । তাদের নয়াদিল্লীর প্রতিনিধির উদ্ধৃতি দিয়ে ১৭ই এপ্রিল রেডিওটি জানায় যে ” ভারতীয় অঞ্চলের কিছু এলাকায় পশ্চিমা প্রতিনিধিরা

বিভিন্ন রকম সরবরাহ দেখেছেন যাতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছিল , যা পূর্ব পাকিস্তানে নেওয়া হচ্ছিল । ” পশ্চিম পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর হাতে ধৃত দুই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের দিকে ইঙ্গিত করে ,

যারা স্বীকার করেছিল যে তারা পূর্ব পাকিস্তানে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ; রেডিওটি নিশ্চিত করে যে ” এই পরিস্থিতিতে এটা অনিবার্য যে ভারতীয় সৈন্যরা হয়তো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পরেছে । “

ফরাসী বার্তা সংস্থা এএফপি , ১৮ই এপ্রিল ভারত- পাকিস্তান সীমান্ত হতে পাঠানো প্রতিবেদনে জানায় যে একটি ফরাসী টিভি দল বাস্তবেই ভারতীয় অস্ত্রের ছবি তুলেছে যা ” মেহেরপুরের কাছে পূর্ববাংলা

মুক্তিবাহিনীর নতুন সদরদপ্তরে  এসে পৌঁছেছে । এছাড়াও এই টিভি দলের সদস্যরা গোপনে ভারতীয় সৈন্যদের ক্যাম্প হতে ১০০ গজ দুরেই অবস্থানরত বাঙালি সৈন্যদের ছবিও তুলেছে। “

যখন এটা পরিষ্কার হয়ে গেলো যে পূর্ব পাকিস্তানে সকল ছোটখাটো বিদ্রোহ দমন করা হয়েছে ; ভারতীয় সেনাবাহিনী তখন বিদ্রোহীদের এক ”  পাল্টা আক্রমণ ” এর জন্য প্রস্তুত করে তুলতে লাগলো ।

এটা এএফপির প্রতিনিধি ব্রায়ান মের প্রতিবেদনে উঠে আসে , যিনি ২১ মে পাঠানো এক বার্তায় বলেন ” মুক্তিবাহিনীর সৈনিকেরা বাটাইতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ বোঝাই করছিল ভারতীয় কর্মকর্তাদের

তত্ত্বাবধানে ” , যারা আমাকে কাছে যেতে বাঁধা দেয় , কিন্তু আমি অন্ততপক্ষে এক ডজন মেশিন গান লাইন ধরে রাখা অবস্থায় দেখেছি।  হতোদ্যম বিদ্রোহীরা যারা ভারতীয় মাটিতে আশ্রয় নিয়েছিল

তারা এই সামরিক অস্ত্রবহর অত্যন্ত আনন্দের সাথে পরীক্ষা করছিলো । ভারতীয় কর্মকর্তারা কোন তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল কিন্তু এটা পরিষ্কার যে ভারতীয় সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের একটা পাল্টা আঘাত

হানার জন্য সকল রকম সহায়তাই করছিলো ।

এক সপ্তাহ পরে, ২৭শে এপ্রিল ব্রিটিশ দৈনিক স্কটসম্যান একজন এসোসিয়েটেড প্রেস প্রতিনিধির উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলে যে সীমান্ত পরিদর্শনকালে তিনি ” একটি ট্রাকের সম্মুখিন হন যেটাতে

অন্ততপক্ষে ৫০০০০ রাইফেল, সাথে হালকা ও ভারি মেশিনগান ছিল ।” সেই প্রতিনিধি আরও জানান যে ট্রাকের সাথে যাওয়া একজন ভারতীয় চর তাকে বলেন যে এগুলো রাইফেল, গ্রেনেড ও গোলাবারুদের

একটি গোপন চালানের অংশবিশেষ যা ভারতের পক্ষ থেকে পূর্বপাকিস্তানের বিদ্রোহীদের সহায়তার জন্য পাঠানো হচ্ছে , এবং একজন ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর বিদ্রোহীদের ভারত থেকে পাঠানো এসব অস্ত্র

চালানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন । একই সময়ে , এএফপি নয়াদিল্লী থেকে পাঠানো এক বার্তায় এটা নিশ্চিত করে যে ” ১০০০০ সাবেক- কর্মকর্তা কর্মচারি পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধের জন্য একত্র হচ্ছে । “

     

          কলকাতায় বাংলাদেশ সরকার

ভারতে দায়িত্বরত বিদেশী প্রতিনিধিরাও পূর্ব পাকিস্তানের কোথাও তথাকথিত বাংলাদেশ প্রাদেশিক সরকার গঠন সম্পর্কে চালানো ভারতীয় প্রচারণায় একটি মিথ্যা বলে। কলকাতা থেকে পাঠানো এক

বার্তায় ,যা লন্ডনের দ্য গার্ডিয়ানে ১৪ই এপ্রিল ১৯৭১ সালে ছাপা হয় , এর প্রতিনিধি মার্টিন উলকট ” নিছক কল্পনা ” বলে বিবৃত করেন। ভারতীয় বার্তাসংস্থা জানায় যে এই প্রাদেশিক সরকারের সকল

সদস্য বাংলাদেশেই কোথাও আছেন ‘ এবং এটা নিশ্চিত করে যে তাদের সকলেই কলকাতায় আছেন যেখানে তাদেরকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে রাখা হয়েছে । সেই প্রতিনিধি আরও বলেন যে ভারতীয়রা

ইহাদেরকে ” মঞ্চ পরিচালনায় ” সহায়তা করেছে যেটাকে তিনি বলেন ” চেয়ার ও অন্যান্য আসবাবপত্র সরবরাহ করে গত শুক্রবারে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া এবং ভারতীয় সেনাদের

বেসামরিক পোষাকে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদার করা ” ।

১৯৭১ সালের  ১৫ই এপ্রিল লন্ডনের দ্য টাইমস এক প্রতিবেদনে বলে ” গঠন হওয়ার পর থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ গত তিন সপ্তাহে যেটুকু দিন পেরিয়েছে তা সীমিত । বিদ্রোহী সরকারের যার

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ মনোনীত হয়েছেন, অনুমিতভাবে এর সদরদপ্তর কুষ্টিয়া জেলার চুয়াডাঙ্গায় অবস্থিত যা ভারত সীমান্তের কাছে । যদিও এমন কোন প্রমাণ নেই যে

, নবগঠিত সরকারের কোন সদস্য আসলেই চুয়াদাঙ্গায় আছেন কিনা । ” এর পরের দিন, ১৬ই এপ্রিল নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন নিশ্চিত করে যে ” পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্রোহ

প্রায় শেষের দিকে এবং এর প্রাদেশিক সরকারের নেতারা এখন ভারতে অবস্থানরত । “

.

.

দুইদিন পরে , ১৮ এপ্রিল ১৯৭১, নিউ ইয়র্ক টাইমস ভারতীয় শহর বৈদ্যনাথতলা থেকে প্রানবধ একটি প্রেস যুক্ত করে যা বলে ‘ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা অনুষ্ঠানে ভারতীয় অর্ধ সীমান্ত থেকে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছে, এবং ২০ এপ্রিল ফরাসি দৈনিক লি মণ্ডে প্যারিস সাক্ষ্য দেয় যে “ ভারতীয় সীমান্ত থেকে এক মাইল দূরে একটি আম গাছের নিচে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার ঘোষণা করে, কিন্তু যদিও সরকার ছিল কোলকাতায় গঠিত, এই বিদেশী সংবাদপত্রের কল্যাণে কাজ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের অস্তিত্বে জোর দেয়া।

                বিদ্রোহীদের জন্য নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ শিবির

ভারতও পূর্ব পাকিস্তানের কষ্ট তৈরির জন্য নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণের খেলা চালিয়ে যায়। এটা দ্য টাইমস, লন্ডন, যারা নিয়োগ কেন্দ্র পরিদর্শন করে তাদের দ্বারা রিপোর্ট করা হয়েছিল ১৯৭১ ের ১৮ জুন। তিনি বলেন, যে কর্মরত কর্মকর্তা তথকথিত “বাংলাদেশ” সেনাবাহিনীর সকল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে “বাংলাদেশের কোথাও” অবস্থিত থাকার চার্জ দাবি করে, কিন্ত যখন সংবাদদাতারা পূর্ব পাকিস্তানের ক্যাম্পের ভেতরকার সঠিক অবস্থান জানতে চায় তখন তিনি সোজাসাপটা বলে দিয়েছিলেন “ এটি একটি সামরিক গোপনীয়তা” সংবাদদাতা আরও বলেন” বোধয় ভারতীয় পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ১০০ সাইট ছিল” সংবাদদাতা জানিয়েছে যে একটি প্রতিজ্ঞা পর্যন্ত নিয়োগ অফিস স্থাপন করা হয়েছে, যা “ যা ব্যহত নিবন্ধনের জন্য একটি অফিস থেকে অনুমিত ছিল” তিনি বলেন “যাদের নিয়োগের জন্য নিয়ে আসা হয় তাদের একবার মুক্তিবাহিনীর ফৌজ এ যোগদান করলে তা ছেড়ে না দেয়ার জন্য সতর্ক করা হয়। যদি তারা চেষ্টা করে তাহলে তাএর গুলি করা হবে“

এর আগে, গার্ডিয়ান, লন্ডন, তার সংবাদদাতা থেকে একটি নিশ্চিত তথ্য নিয়ে এসেছিল যে ভারতীয়রা প্রকাশ্যে “পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র বিদ্রোহীদের গ্রুপ, যোদ্ধা এবং যারা সাম্প্রতিক কালে অনিয়মিতভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে” তাদের আশ্রয় দিচ্ছিল। সংবাদদাতা জানান, “তিনি একটি সীমান্ত ক্রসিং পয়েন্ত দেখেন” ভারতীয় সশস্ত্র শিবির তাঁবু খাটিয়ে সেখানে অবস্থান করে। 

১৪ই মে, নাইজেরিয়ান ট্রিবিউন বলে “ ভারত ছয় রাইফেল স্পত স্থাপন করে” পূর্ব পাকিস্তান-ভারতীয় সীমান্তে ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে মুহুরমুহ গোলাবারুদ নিক্ষেপ করা হয়। তারপর মাউন্ত পাকিস্তানের একটি প্রচার প্রচারণার দৃষ্টিভঙ্গি আন্তর্জাতিক ব্যঘাতের শুরু করে। “

                      ভারত সশস্ত্র সংঘাতের জন্য তোলা

২০ মে, দ্য টাইমস, লন্ডন, সংবাদদাতা জনাব পিটার হেজেলহার্টস থেকে প্রকাশিত, পাকিস্তান সীমান্তের বিরুদ্ধে ভারতের সারগর্ভ পদক্ষেপ। “ ১৫ মাইল কলকাতার উত্তর সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ মাইল দূরে ব্যরাকপুরে অধিকাংশ সৈন্য নিহত হয়” এছাড়াও নির্দেশাবলী রয়ছে যে পূর্বাঞ্চলীয় পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে  ভারতীয় সেনাবাহিনী সৈন্য আগরতলায়  একটি বৃহৎ বিচ্যুতি সংস্থিত হয়েছে।

.

.

চারদিন পর ২৪ মে ‘দ্য টাইমস্’ প্রতিনিধি কলকাতা থেকে এক তড়িৎ বার্তায় নিশ্চিত করে য, গতকাল সকালে এয়ারপোর্টের পূর্ব পার্শ্বে এয়ারক্রাফট বিধ্বংসী যানের নড়াচড়া লক্ষ্য করা যায়। গোলন্দাজ বাহিনী সারিবদ্ধ হয়ে দ্রুত তাদের রাডার পশ্চিমমুখী করে স্থাপন করছিলো। এটা নির্দেশ করে যে ইন্ডিয়ান সরকার নিজেদের একটি সীমিত সীমান্ত সংঘর্ষের চেয়ে বড়ো কিছুর জন্য নিজিদের তৈরি করছে। প্রতিনিধি আরও জানান উত্তর ভারত থেকে অন্তত তিনটি রেজিমেন্ট, পাঞ্জাব, রাজপুত এবং মারাঠার পদাতিক সৈন্যবাহিনী যশোর ফ্রন্টের সম্মুখভাগে রয়েছে। বর্ডার থেকে ৫০ গজ দূরে জীপের উপর ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্র তাক করা হয়েছে। ভারত এবং পূর্ব বাংলাকে সংযুক্ত করা অব্যবহৃত রেললাইনে ট্রেঞ্চ করে র্দু নির্মাণ করতে দেখা গেছে শিখ এবং রাজপুতদের।

পাকিস্তানের সীমানা লঙ্ঘন

পূর্ব পাকিস্তানে সশস্ত্র ধ্বংসাত্মক কৌশলে ব্যর্থ হয়ে ইন্ডিয়া এখন একটি সামরিক সমাধান স্থাপনের চেষ্টা করছে। ১৯৭১ এর মে মাসের প্রথম দিকে বিদেশী প্রতিনিধি ভারতের পাঁচ কিলোমিটার ব্যাপী সীমান্ত লঙ্ঘনের ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছিলো। এতে মনে হচ্ছিলো দুই সীমান্তে সংঘর্ষ অনিবার্য। দ্য লন্ডন টাইমস ২ মে ১৯৭১ সালে রিপোর্ট করে যে, ইন্ডিয়া গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় পাকিস্তানের সীমানা লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটে ১৯ জুন ১৯৭১, যখন ইন্ডিয়ান বাহিনী সিলেট জেলা দিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে।

লাঠিটিলা অঞ্চলে একটি পাকিস্তানী টহলবাহিনী টহলরত অবস্থায় ভারতীয় সৈন্যদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হয় সবুজ ইউনিফর্মে। যুগপৎভাবে পাকিস্তানী টহলবাহিনীকে লক্ষ্য করে ইন্ডিয়ান সৈন্যরা মর্টার নিক্ষেপ করে।

একই দিনে, (১৯ জুন) যশোর জেলার মানিকপুর অঞ্চলে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী অনধিকার প্রবেশ করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। যখন পাকিস্তানী  বাহিনী পাল্টা গুলি বর্ষন করে ইন্ডিয়ানরা সীমান্ত থেকে দ্রুত সরে যায়।

ইন্ডিয়ানরা বিনা উস্কানিতে সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় অগ্নি সংযৈাগ করে যাচ্ছিলো। ১৯ জুন খুলনায় বাইকারি সীমান্ত ফাঁড়িতে তিন ইঞ্চি মর্টার শেল নিক্ষেপ করে। একইভাবে সিলেটের কাতলামারি এবং জয়পুর ফাঁড়িতে হালকা মেশিন গান এবং অস্ত্র নিয়ে আক্রমন চালায় এর আগে ১৮ জুনে যশোরের বেনাপোলে পাকিস্তান ফাঁড়িতে ভারী মর্টার শেল নিক্ষেপ করে।

পাকিস্তান বৃহৎ শক্তিধর দেশগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করছিলো পূর্ব পাকিস্তানে ভারতের ক্রমবর্ধমান মিলিটারী সংশ্লিষ্টতা এই উপমহাদেশে শান্তির জন্য এক বিরাট হুমকি হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহ গুলোকে পূর্ব পাকিস্তানে ইন্ডিয়ান আর্মির কার্যক্রম এটাই প্রমান করে। প্রায় প্রতিদিনই ভারতীয়রা সীমান্তে গুলিবর্ষণ করছে এবং ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তান অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতির ব্যাপ্তি বাড়াচ্ছে। কংগ্রেস এখন খোলামেলাভাবে “বাংলাদেশের” পক্ষে ভারতীয় বাহিনীকে ব্যবহারের পক্ষে কথা বলছ্ ে

পাকিস্তান, অবশ্যই ইন্ডিয়ায় প্রতিবাদ লিপি পাঠিয়েছে। ২১ এবং ২২ জুন ১৯৭১ যে ঘটনাগুলো লিপিবদ্ধ করা হয় ঃ

১। ১৬ জুন ইন্ডিয়ার সশস্ত্র বাহিনী ৩ ইঞ্চি মর্টার শেল নিক্ষেপ করে। পাকিস্তানের (ছঞ ৭৬৪২) অঞ্চলে, যশোরের বেনাপোলে কোনরকম উস্কানি ছাড়াই।

২। ১৭ জুন ময়মনসিংহের ফুডিমারীতে (জঋ ৬৮৯৮) ইন্ডিয়ান বিএসএফ অবেধ অনুপ্রবেশ করে এবং দুজন গ্রামবাসীকে হত্যঅ করে।

৩। ১৭ জুন ময়মনসিংহের ইঙচ কামালপুরে (ছঊ ৮৫১২) বিনা উস্কানীতে ০৫৩০ থেকে ০৬০০ এবং আবারো ১১৪০ থেকে ১২০০ টা পর্যন্ত মর্টার নিক্ষেপ এবং গোলাবর্ষন করা হয়। এই ঘটনায় দুইজন মারা যায়।

৪। ১৭ জুন, যশোরের বেনাপোলে পাকিস্তানী টহলবাহিনীর উপর গুলিবর্ষন করা হয়।

৫। ময়মনসিংহৈর কামালপুরে ১৭ এবং ১৮ জুনের মধ্যবর্তী রাতে বিনা উস্কানিতে ভারী মর্টার শেল নিক্ষিপ্ত হয়।

৬। ১৮ জুন কুমিল্লায় ইন্ডিয়ান বাহিনীর নিক্ষিপ্ত মর্টারের আঘাতে চার জন আহত হয়।

৭। ১৮ জুনে কুমিল্লার সালদানদী অঞ্চলে (জগ ২৮১৮) যশোরের বেনাপোল এবং মসলিয়া অঞ্চল (ছঞ ৮৬৬৫) এবং সিলেটের চাতালপুর অঞ্চলে (জঐ ১৭০৩) ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনী গুলি এবং মর্টার শেল নিক্ষেপ করে কোন উস্কানি ছাড়াই।

.

ভারতের মূল উদ্দেশ্য

ভারতের মূল উদ্দেশ্য কি? ২রা এপ্রিল,১৯৭১ এ একটি ভারতীয় পত্রিকা ” ফ্রি প্রেস জার্নাল ” এর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় , ” আমাদের (ভারতের) অত্যন্ত সচেতনতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ যা পাকিস্তানকে দুর্বল করতে সহয়তা করবে। এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ পূর্ব বঙ্গ কাশ্মীরে ভারতীয় সার্বভৌমত্বের স্থায়ী স্বীকৃতি দানে সম্মত হবে। ” দুই দিন আগে, ৩০ শে মার্চ ১৯৭১ এ, বম্বে ডেইলি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পূর্ব পাকিস্তানে ভারতের সশস্ত্র হস্তক্ষেপের সমর্থন জানিয়ে  প্রকাশ করে , ” এটা সত্যিকার অর্থেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত এবং পদক্ষেপ নেবার সঠিক সময় এখনই।” এবং ৭ই এপ্রিল, ১৯৭১ এ ভারতীয় সামরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শ্রী সুব্রামনিয়াম পূর্ব পাকিস্তানের ভারত সমর্থিত সশস্ত্র বিদ্রোহের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ” ভারতের উপলব্ধি করা উচিৎ পাকিস্তানের এই ভাঙ্গন আমাদের স্বার্থের পক্ষে এবং আমাদের এমন একটা সুযোগ এসেছে যা আর কখনোই আসবে না। “

সম্প্রতি ১৫ই জুন,১৯৭১ এ ইন্ডিয়ান ডেইলি মাদারল্যান্ড এ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারতীয় ভাষ্যকার সুব্রামনিয়াম স্বামী উল্লেখ করেন, ” পাকিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা আমাদের ভাবনার বিষয় না। এটা পাকিস্তানের ব্যাপার। আমাদের এখন দুটি প্রশ্ন নিয়ে ভাবা উচিৎ। পাকিস্তানের এই ভাঙ্গন কি আমাদের দীর্ঘস্থায়ী জাতীয় স্বার্থের পক্ষে? যদি তাই হয়, তবে আমরা কি এই ব্যাপারে কিছু করতে পারি? ” এবং ভাষ্যকার আরও উল্লেখ করেন, ” পাকিস্তানের এই বিভাজন শুধু আমাদের বাহ্যিক নিরাপত্তার স্বার্থের সাথেই জড়িত নয়, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার সাথেও জড়িত। ভারতের উচিৎ আন্তর্জাতিকভাবে মহাশক্তি হিসেবে উত্থান ঘটানো এবং জাতীয়ভাবে আমাদের জনগণকে এই কাজে নিয়োজিত করতে হবে। এই কারণে পাকিস্তানের বিভাজন এক প্রয়োজনীয় পূর্ব শর্ত।”

পাকিস্তান প্রকাশনী কতৃক উত্থিত

পি. ও. বক্স – ১৮৩। করাচী । জুন, ১৯৭১