You dont have javascript enabled! Please enable it!

শিরোনামঃ ১৩৪। পূর্ব পাকিস্তানের সংকটে ভারতের ভূমিকা
সূত্রঃ সরকারী প্রচার পত্রিকা
তারিখঃ জুন ১৯৭১
.
পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান সংকটের পেছনে ভারতের ভূমিকা
একটি আইনী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
-কেমাল এ ফারুকি

(পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইনস্টিটিউট করাচী-তে ১৯৭১ সালের ৭ই মে শুক্রবার নিম্ন লিখিত বক্তব্যটি পাঠ করা হয়।)

[ * কেমাল এ ফারুকি সাউদার্ণ ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ণ ক্যালেফর্নিয়া থেকে সমাজবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন, এরপর মিডেল টেম্পল লন্ডন থেকে আইনের ওপর পড়াশোনা করেন। এছাড়াও তিনি আমেরিকারন ইউনিভার্সিটি অফ বৈরুত (লেবানন) থেকে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়াদির ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি করাচী বারের একজন কর্তব্যরত আইনজীবী, ইসলাম বিষয়ক গবেষণা সংস্থার আইনী উপদেষ্টা এবং করাচী এম. ল. কলেজের অধ্যাপক। আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ইংল্যান্ডে আলজেরিয়ার সংগঠিত কমিটির প্রথম সভাপতি ছিলেন তিনি। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সাময়িকীতে ইসলামিক বিভিন্ন বিষয়াদির ওপর প্রবন্ধ লিখেছেন। তার লেখা বই গুলোর ভেতরে রয়েছে- “Islamic Constitution” (1952); “Ijma and the Gate of Ijtihad” (1954); “Islamic Jurisprudence” (1962) and “The Evolution of Islamic Constitutional Theory and Practice” (1971)। ]

১.গুরুত্বপূর্ণ পটভূমি
আন্তর্জাতিক আইন এবং ভারত পাকিস্তান প্রবাহমাণ সম্পর্কের আলোকে বলা যায় পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংকটের পেছনে ভারতের মনোভাব ও কর্মকাণ্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
কিন্তু এই দুটি দিক বিবেচনায় নেয়ার আগে পূর্বের ঘটনা গুলোও বিবেচনায় আনা জরুরী। আমি এখানে বিস্তারিত বিবরণে যাবো না তবে পাঠকদের এ বিষয়টি মনে রাখা প্রয়োজন যে পাকিস্তানের অস্বাভাবিক ভৌগলিক অবস্থান এটাই নির্দেশ করে যে পাকিস্তান পৃথিবীর বিরলতম একটি রাষ্ট্র যেটি শুধু গণতন্ত্রের মাধ্যমেই অস্তিত্ব পায়নি বরং গণতন্ত্রের মাধ্যমে এর সীমানাও নির্ধারিত হয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে, ভৌগলিক গ্রহণযোগ্যতার উপর সন্দেহ পোষণ করাতে চাইলে, জনগণ বাস্তবে যা চায় এবং পায়, সেগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে, জনগণের ইচ্ছাকে (যা গণতন্ত্রের একটি অন্যতম চিহ্ন) দ্বিতীয় স্থানে রাখতে হবে, অথবা পূর্বের অন্ধবিশ্বাসকেই একটি রাষ্ট্রের গঠনে গুরুত্ব দিতে হবে।
এই সত্যকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে স্বাধীনতার প্রথম দুই দশকে পাকিস্তানকে সংবিধান তৈরির কাজে লাগামহীন অসুবিধার সম্মুখিন হতে হয়েছে, যেই আদর্শে এটি প্রতিষ্ঠিত তাকে আইনী ও ব্যবহারিক অভিব্যাক্তি প্রদান কে কেন্দ্র করে এসব সমস্যার সৃষ্টি এবং পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছাতেও সমস্যা দেখা যায়।

এসব আসলে এত বড় ধরনের সমস্যা ছিল যে গত ২০ বছরে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য কোন মুল্যেই কিছু ব্যক্তিস্বার্থের জন্য এর আসল প্রকৃতি আড়াল করা উচিত হবে না।

এই সরকার ১৯৬৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ঘোষণা করে যে তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেসামরিক ও গনতান্ত্রিক সরকার এর প্রচল করার জন্য সংবিধান তৈরীর এই জটিল প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে, পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে যা কখনোই ঘটেনি।

প্রাথমিক কার্যাবলী সমাধা করার পর ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মত সারা দেশ ব্যাপী প্রত্যক্ষ ভাবে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ভোটাধিকার প্রয়োগের মধ্যে দিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যার স্বচ্ছতা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়।

কিন্তু এটি যে একটি দুর্ভাগ্যের বিষয় যেটা আগে ধারনা করা যায়নি, এই নির্বাচনটি দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটায় যেগুলোর শক্তি দুইটি অংশের যে কোন একটিতে সীমাবদ্ধ।

অচিরেই বোঝা যায় যে সংবিধান তৈরির কাজটি সহজ হবে না। পরন্তু, সমস্ত রাজনৈতিক দল গুলো ভোটের আগে পাকিস্তানের মতাদর্শ এবং অখণ্ডতা যেন সংরক্ষিত রাখার জন্যে নিজেদের নিয়োজিত করেছে । এবং এর ওপর ভিত্তি করে তারা দেশের মানুষের ভোট পেয়েছিলেন। যদিও কিছু মানুষ হয়তো রাষ্ট্রের বিকেন্দ্রিকরনের পক্ষে সমর্থন জুগিয়েছিল।
আঞ্চলিক দলগুলোর মেরুকরণের ফলে দুইটি শাখার বিস্তৃতি হয়।

হয় সংবিধান তৈরির সাথে জড়িত ব্যাক্তিরা, এই বিতর্ক হয়তো সম্পূর্ন ভিন্ন ও বিপরীত মতাদর্শকে একত্রিত করতে পারবে এমন কোন নিশ্চয়তা ছাড়াই দ্রুত গঠিত হবে, অথবা সরকারের সাহায্যে প্রাথমিক মীমাংসা করতে হবে, তাহলে যখন জাতীয় সমাবেশ হবে তা যেন হয় হুমকির মুখে থাকা সবচেয়ে সবেদনশীল বিষয়টিতে ঐক্যমত নিয়ে।

চাপ প্রয়োগ কৌশল

দ্বিতীয় পদক্ষেপটি সঠিক ফলাফলের দিকে নিয়ে যেতে পারে যদি মাঠ পর্যায়ে দলের নিয়ম শৃঙ্খলা সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রন করা যায়।
কিন্ত কার্যত ১৯৭১-এর মার্চে, বিশেষ করে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের চরমপন্থিদের কর্ম-প্রক্রিয়া সাধারনের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে, যা তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন হঠকারী মুকাবিলা করতে অনিচ্ছুক ছিল। এতে যে কোমল বোঝাপোড়াটা হচ্ছিল তা ভন্ডুল হতে পারে সেই তোয়াক্কা না করেই।

দু-পক্ষেরই ভুল ত্রুটি থাকতে পারে তবে এটি একেবারেই অসম্ভাব্য এবং ব্যাখ্যাতীত যে, আপোষহীন মতবাদ নিয়ে এই ছোট উগ্রবাদী দলের উত্থান ঘটে ও রাষ্ট্রের প্রতি বিশ্বস্ততার ভান কে এবং প্রতিষ্ঠাতার প্রতি তার সম্মান কে তারা ছুড়ে ফেলে, সেই সাথে ইচ্ছা করেই তারা নিজেদের পথ থেকে সরে আসে শুধুমাত্র পুর্বাঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের আবেগ কে আঘাত করার জন্য ও উস্কানি দেয়ার জন্য, যারা বিশ বছর আগে পাকিস্তানের জন্য ভোট দিয়েছিলো।
এ দেশ বিরোধী দলটিকে ছোট বলা হলেও একটা বিষয় পরিস্কার করা দরকার যে এদের ছোট বলা হয় পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর ভিত্তি করে এবং দেশের অন্যান্য সমস্ত মানুষের বিবেচনায় এ দেশ বিরোধী দলটি বেশ বড়ই ছিলো।

একত্রীকরণের প্রস্তাবনা

নিঃসন্দেহে এটার পেছনের কারণ সেই পুরনো সত্য যে- পূর্ব বাংলার প্রায় ১৫ ভাগ মানুষ হিন্দু যা প্রায় ১ কোটিরও বেশি। তারা কখনোই ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান গঠনের আন্দোলনে শরীক হয়নি। আমি মনে করি এটাই যুক্তিযুক্ত যে এই হিন্দুদের উল্লেখযোগ্য অংশই ভাঙ্গনের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানায়। এর কারণ হতে পারে ভারতের হিন্দুদের সাথে পুনর্মিলন অথবা পূর্ব এবং পশ্চিম বঙ্গকে মিলিয়ে একটি আলাদা প্রজাতন্ত্র তৈরির ষড়যন্ত্র যেখানে হিন্দুরাই প্রভাবশালী হবে।

এটা স্পষ্ট যে এই কাজ গুলো সফল করা হচ্ছিল বিভিন্ন কর্মসূচির দ্বারা। মার্চের উত্তাল সময়ের পর থেকেই তাদের আগ্রহের বিষয় ছিল বাঙ্গালীদের অবাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া এবং এই শত্রুতাকে এখন কোন ভাবেই মীমাংসা করা সম্ভব নয়।

মার্চের ২৩ তারিখ প্রজাতন্ত্র দিবস। যে দিনটি হবার কথা ছিল পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের দিন। অথচ বিচ্ছিনতাবাদী আন্দোলনকারীরা সঙ্খ্যালঘুদের প্রভাবে এ দিনটিকে ঠিক উল্টোভাবে ব্যবহার করে। এটি শুধু আন্দোলনের কঠোর ভাষা প্রয়োগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না বরং আন্দোলনকারীরা এমন সব কাজ করেছিলো যে জনগণের জীবন, সম্মান এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি হুমকির মুখে পড়ে।

১৯৭১ সালে মার্চের এই আকস্মাত পরিবর্তনে শুধু পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসন এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষেরাই অবাক হয়নি অবাক হয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের সেই মানুষেরাও যারা এই বিশ্বাসে নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন যে তাদের মনোনীত প্রার্থীরা যে কোন মূল্য পাকিস্তানের আদর্শ এবং অখণ্ডটাকে বজায় রাখবেন।

সবাই বিস্ময়ে হতবাক হল যখন আন্দোলনকারীরা পাকিস্তানের জাতীয় পতাকাকে অসম্মান করা শুরু করলো। দেশ বিরোধীরা তাদের বক্তব্যে নিজেদের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে গোপন রেখে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করতো। যারা কখনো কল্পনাও করতে পারেনি যে দেশ বিরোধীরা এইসব সাধারন মানুষদের বিকেন্দ্রীকরণের স্বপ্নকে ব্যাবহার করে নিয়ে যাচ্ছে সেই শত্রুদের কাছে যাদের বিরুদ্ধেই ১৯৪৭ সালে এইসব মানুষেরা স্বাধীনতা এনেছিলেন।

এসব ছিল মূলত পকিস্তানের অভ্যন্তরের বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপের ফলাফল। এ ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা আসলে কি হতে পারত সেটা জানার জন্য আমাদের জানতে হবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিধি-নিষেধ সম্পর্কেঃ আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, জাতিসংঘ অনুসারে, বিভিন্ন দেশের আঞ্চলিক সম্পর্ক ও অঙ্গিকার অনুসারে।

২. আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে

কোন রাষ্ট্র এবং তার আশেপাশের রাষ্ট্রের ওপরে সেই রাষ্ট্রের এখতিয়ার সম্পর্কে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে স্পষ্ট বাধ্যবাধকতা রয়েছে । ১৯২৭ সালের লোটাস কেইস এর ক্ষেত্রে “স্থায়ী আন্তর্জাতিক আদালত” আমাদের জানায়- “একটি রাষ্ট্র তার শক্তি কোন মতেই ওপর কোন রাষ্ট্রের সীমানায় প্রয়োগ করতে পারে না।” এবং এটি আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে কোন রাষ্ট্রের ক্ষমতা প্রয়োগের ওপর প্রথম এবং প্রধান বাধা।

এরই সাথে সম্পর্কিত আরেকটি আইন অনুসারে “প্রত্যেক রাষ্ট্রকে তার ভূখণ্ডের ক্ষতিকর ব্যবহার রোধ করতে হবে।” এখানে আরেকটি মামলার কথা বলা যায়; ১৯৪৯ সালে কর্ফু চ্যানেল কেইস-এ আদালত এই স্বীকৃতি প্রদান করে যে- “প্রত্যেক রাষ্ট্র কখনোই তার জ্ঞাতসারে তার ভূ-খণ্ডতে অন্যান্য রাষ্ট্রের অধিকার পরিপন্থী কাজ করতে পারবে না।”

সুতরাং এই কথা প্রতিষ্ঠিত যে প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের একটি আইনগত দায়িত্ব হচ্ছে তার ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে উসকানি মূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করা এবং এ-ধরণের অপরাধকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গন্য করা।

তারপর- তদন্ত কমিশন (জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত) গ্রীসের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সংগঠিত গৃহযুদ্ধ প্রসঙ্গে আমাদের জানায় যে “গ্রীসের বর্তমান সংকটের পেছনে তার উত্তরাঞ্চলের তিন প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভূমিকা রাখছে। কারণ রাষ্ট্রগুলো তাদের ভূ-খণ্ডের ভেতরের গেরিলা কার্যক্রম বন্ধের কোন ব্যাবস্থা নেয়নি বরং গ্রীক গেরিলাদের সরাসরি সমর্থন জুগিয়েছে।”
.
গণবিরোধ

“আরও কিছু চুক্তির ক্ষেত্রেও এই বাধ্যবাধকতা কার্যকর করা হয়েছে, যার মধ্যে কিছু দীর্ঘস্থায়ী চুক্তিও রয়েছে, যেমন গৃহযুদ্ধ চলাকালীন সময় সংশ্লিষ্ট রাজ্যসমূহের দায়িত্ব ও অধিকার বিষয়ক হাভানা সনদ-১৯২৮, যা কিনা স্বাক্ষরকারী রাজ্যগুলোকে তাদের ভূখণ্ডে বসবাসকারী যেকোন নাগরিক অথবা বহিরাগতদের গৃহযুদ্ধ শুরু করার অথবা উসকে দেয়ার উদ্দেশ্যে কোনো কার্যে অংশ নেয়া, সীমান্ত অতিক্রম করে কোনো উপাদান সংগ্রহ অথবা তাদের সীমানায় থেকে কার্যাবলী পরিচালনা করা হতে বিরত রাখার জন্য যেকোনো উপায় অবলম্বন করার বাধ্যবাধকতা দিয়েছিল ।”

১৯৩৬ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া বিভিন্ন কনভেনশনের আলোচনার বিষয় ছিল যেকোনো ভূখণ্ডের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণে ঐ ভূখণ্ডের জনগণকে উৎসাহিত করণে সম্প্রচার মাধ্যম ব্যবহার সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা।

একই ধরণের ভাবধারা ব্যক্ত করা হয়েছে জাতিসংঘের ১৯৪৫ সালের সনদের ধারা ২(৭) এ, যেখানে বলা হয়েছে যে, “বর্তমান সনদের কোনো কিছুই জাতিসংঘকে কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতে হস্তক্ষেপ করার অনুমতি দেয় না।”

এটা স্পষ্ট যে, যে ধরণের হস্তক্ষেপকে প্রতিরোধের কথা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত সে ধরণের হস্তক্ষেপের কঠোর এবং কার্যকর নিন্দা করা।

এ ক্ষেত্রে ব্রিটিশদেরকে উদ্ধৃত করা উত্তম। ১৯৫৬ সালে সুয়েজ খাল সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের নেতিবাচক হস্তক্ষেপের দুই বছর পর জুলাই, ১৯৫৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যের গৃহযুদ্ধে বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে আলোচনায় হাউস অব কমন্সে বৃটিশ পররাষ্ট্রসচিব কর্তৃক হস্তক্ষেপের ধরণের ব্যাখ্যা ছিল নিম্নরূপঃ
“এই পরোক্ষ আগ্রাসনের সাথে জড়িত সমস্যাগুলো হাউসকে মোকাবেলা করতে হবে…”
“কী ঘটে যখন একটি বিদেশি সরকার সংকল্প নেয় অপর একটি দেশের ভেতরের ভিন্নমতাবলম্বী অংশকে ব্যবহার করে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ঐ দেশের সরকারকে হটানোর। এ ক্ষেত্রে কৌশল হচ্ছে অস্ত্র ও বিস্ফোরক চোরাচালান, গুপ্তচর বিয়োগ, ব্যাপক অপপ্রচার, অভ্যুত্থানের প্ররোচনা, এবং পরিশেষে, সাংবিধানিক নেতাদের বিরুদ্ধে প্রাণনাশী চক্রান্ত। এটিই কৌশল, এবং এটিই সমস্যা।“
“আমাদেরকে স্বীকার করতে হবে যে এখনও পর্যন্ত এর কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। আমি বিশ্বাস করি যে এর একটি সমাধান যতদিন না পাওয়া যাচ্ছে, ততদিন একের পর এক ক্ষুদ্র স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা হুমকির মুখে পড়তে থাকবে এবং পরিশেষে তারা ধ্বংস হতে থাকবে।“
“…পরোক্ষ আগ্রাসন সংক্রান্ত সাধারণ নীতিগত অবস্থান থেকে আমি বিশ্বাস করি, যখন কোনো রাষ্ট্র নিজেকে বিপদগ্রস্ত মনে করে তখন তার অধিকার আছে অন্য রাষ্ট্রের কাছে সাহায্য চাওয়ার। আমি বিশ্বাস করি যে, একটি রাষ্ট্রের অধিকার আছে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সাহায্য চাওয়ার, তা প্রত্যক্ষ হোক, অথবা পরোক্ষ। আমি এটাও বিশ্বাস করি যে, অপর রাষ্ট্রটির অধিকার আছে এ ধরণের সাহায্যের আবেদনে সাড়া দেবার, এবং এ ধরণের সাড়া প্রদান সনদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
“আমি বিশ্বাস করি যে, এটি সুপ্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আইনসমূহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যদি না রাষ্ট্রগুলো এ ধরণের আবেদনে সাড়া দিতে প্রস্তুত থাকে, আমাদেরকে এ ধরণের আগ্রাসনের মুখে একের পর এক রাষ্ট্রের পতন দেখতে হবে এবং আত্মশাসন প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন সরকারের অধীনে যে সকল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, যা কিনা নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সম্পূর্ণ সাবভৌম একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র জন্ম দিয়েছে, সে সকল পদক্ষেপই ব্যর্থ প্রমাণিত হবে।

এই একই বিতর্কের প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেনঃ
“আমার মনে হয়, একটি বৈধ সরকারের অধিকার আছে বিপদের সময়ে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রসমূহের কাছে সাহায্য চাওয়ার। সাহায্য আসুক বা না আসুক, অবশ্যই এটি বিবেচনা করে দেখার বিষয়, কিন্তু আমি মনে করি না, এমন একটি জাতি যা বহিঃশক্তির আগ্রাসন মোকাবেলা করছে, যার সাথে বাইরের শক্তিসমর্থিত অভ্যন্তরীণ গোলযোগও রয়েছে, তাদের জন্য সাহায্য চাওয়া আইনত অনুচিত কিছু। আমি মনে করি এটি সাধারণভাবে স্বীকৃত।”

হস্তক্ষেপ

১৯৫০ এর দশক এবং ৬০ এর দশকের শুরুর দিকের সময়টাকে বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপের সময় হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে, কারণ সে সময়ে পূর্ব প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আইন ও আচরণ সংক্রান্ত নিয়মাবলি থাকা সত্ত্বেও এ ধরণের হস্তক্ষেপের অসংখ্য প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়, বিশেষত, আফ্রিকায়, এক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন বিষয়সমূহে অপর রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে।

এনক্রুমা (Nkrumah) এর শাসনাধীন ঘানা বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে আর্থিক সহায়তা, প্রশিক্ষণ, অভিযানের ঘাঁটি প্রদান, ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় ক্যামেরুন, নাইজার, আপার ভোল্টা, আইভরি কোস্ট, নাইজেরিয়া, কঙ্গো এবং টোগো এর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এর পরিবর্তে টোগো প্রতিশোধ হিসেবে ঘানার বিরুদ্ধে একই প্রচেষ্টা চালিয়েছে; তানজানিয়া চেষ্টা করেছিল মালাউয়ি এর বিরুদ্ধে; মালি সেনেগালের বিরুদ্ধে; বুরুন্ডি রুয়ান্ডার বিরুদ্ধে; জাম্বিয়া, তানজানিয়া, আইভরি কোস্ট এবং গ্যাবন, নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে চেষ্টা চালিয়েছিল বায়াফ্রা বিদ্রোহের সময়; এবং সম্বে (Tshombe) এর শাসনামলে কমপক্ষে নয়টি আফ্রিকান রাষ্ট্র কঙ্গোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টা চালায়। তবে আফ্রিকার ক্ষেত্রে এ ধরণের বিরোধের কারণ ছিল প্রধানত এই যে তাদের আন্তঃরাষ্ট্রীয় সীমানাগুলো ছিল খেয়ালখুশি মত নির্ধারিত এবং প্রকৃতপক্ষে সম্পূর্নই কৃত্রিম।

অধিবাসীদের ধর্মীয়, জাতিগত ও সাংস্কৃতিক সম্বন্ধের সাথে এই সীমানা নির্ধারণের কোনো সম্পর্ক নেই এবং বিভিন্ন ইয়োরোপীয় শহরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর দ্বারা তাদের ঔপনিবেশিক দখলের নির্ধারণী সীমানার সাথেও এদের মিল নেই। তবে যাই হোক, এই সীমানার কৃত্রিমতা সত্ত্বেও, স্বাধীনতার পর থেকে আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলো ক্রমবর্ধমান হারে বৈরী মনোভাব দেখিয়েছে হস্তক্ষেপের বিষয়ে, এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় সীমানার অখণ্ডতার প্রতি হুমকির বিষয়ে

ইমানুয়েল ওয়ালারস্টেইন যেমন স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন তাঁর গ্রন্থ ‘আফ্রিকাঃ স্বাধীনতার রাজনীতি’তে, “সকল আফ্রিকান রাষ্ট্রের আছে তার নিজস্ব কাতাঙ্গা…।বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যুক্তি একবার মেনে নিলে তার পরিণতি অরাজকতা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।”

অবশ্যই, এ ক্ষেত্রে আফ্রিকা একা নয়। এশিয়াতেও একটি বড় অংশে রয়েছে মিশ্র সমাজ, এমনকি ইউরোপেও উদাহরণ রয়েছে এমন রাষ্ট্রের যেখানে অধিবাসীদের ধর্ম, ভাষা, জাতীয়তা এবং সংস্কৃতি সম্বন্ধযুক্ত নয়।

বলকান ও পশ্চিম ইউরোপের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে এ রকম উদাহরণ; নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ছাড়াও আছে ব্যাংকুয়েস, কাতালান এবং ওয়ালুন। প্রকৃতপক্ষে, বয়েন যুদ্ধের দু’শ আশি বছর পরও ধর্ম, বর্ণ, জাতীয়তা এবং ভাষা সংক্রান্ত দ্বন্দে অ্যাংলো-আইরিশ প্রশ্ন এখনও প্রাণবন্ত যা কিনা পাকিস্তান অঞ্চলে প্রকাশিত কিছু সম্পাদকীয় সংবাদকে অর্থহীন, হাস্যকর এমনকি অসৎ প্রমাণ করে।

এই সকল সমস্যা- এসকল সম্ভাব্য কাতাঙ্গা ও বিয়াফ্রা- শান্তির প্রতি হুমকিস্বরূপ হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে এক ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ, এবং তার সাথে ক্রমশ সরব উদ্যোগের জন্ম দিয়েছে। ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বরে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একটিমাত্র ভিন্নমতের ভোট বাদে সর্বসম্মতিক্রমে, রেজল্যুশনে গৃহীত হয় ‘রাষ্ট্রসমূহের অভ্যন্তরীণ বিষয়সমূহে হস্তক্ষেপের অগ্রহণযোগ্যতা এবং তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র’।

এর পাঠ বর্ণনা করছে, “সশস্ত্র হস্তক্ষেপ এবং অন্যান্য প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অনধিকারচর্চা রাষ্ট্রসমূহের সার্বভৌমত্ব এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে ‘বিশ্ব শান্তির প্রতি ক্রমবর্ধমান হুমকি’ রূপে হুমকি দিচ্ছে”।

এতে অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস, আরব লীগ এবং আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার সনদসমূহের ‘হস্তক্ষেপ না করার’ ঘোষণার মূলনীতি, এবং সেই সাথে বান্দুং এ অনুষ্ঠিত এশিয়ান-আফ্রিকান কনফারেন্স, বেলগ্রেড ও কায়রোতে অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মেলনের সিদ্ধান্তকেও পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

১৯৬৫ সালে তৎকালীন জাতিসংঘ ঘোষণার প্রথম দফা অনুযায়ীঃ
“কোনো রাষ্ট্রের অধিকার নেই, যেকোনো কারণে হোক, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অপর কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বা বৈদেশিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার। ফলশ্রুতিতে, কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, অথবা এর রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতিতে সশস্ত্র হস্তক্ষেপ এবং অন্যান্য সকল প্রকার অনধিকারচর্চা অথবা হুমকি প্রচেষ্টা নিন্দনীয়।

ঘোষণার দ্বিতীয় দফা অনুযায়ীঃ
“কোনো রাষ্ট্র অপর কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক, সন্ত্রাসী বা সশস্ত্র কোনো কর্মকাণ্ড সংগঠিত করবে না, তাতে সহায়তা, উসকানি প্রদান করবে না, অর্থায়ন করবে না, উৎসাহ যোগাবে না অথবা এমন কোনো কর্মকাণ্ড সহ্য করবে না, অথবা অপর কোনো রাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করবে না।

পরিশেষে, চতুর্থ দফাটি হচ্ছেঃ
“জাতিসমূহের পরস্পর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য এই বাধ্যবাধকতাগুলো কঠোরভাবে পালন করা একটি অপরিহার্য শর্ত, যেহেতু, যেকোনো প্রকার হস্তক্ষেপের চর্চা শুধু জাতিসংঘ সনদের চেতনা এবং বক্তব্যকেই লঙ্ঘন করে না, বরং তা এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যা বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়।”

এটি স্মরণ করিয়ে দেয়া যায় যে, ভারত এই কমিটির সদস্য ছিল যা কি না এই ঘোষণাপত্রটি প্রস্তুত করেছে।
.
(৩)সংকট কালে ভারতের ভুমিকা
রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক আইন ও মানের সামাজিক আচরনের সুষ্পষ্ট বিধি অনুযায়ী পুর্ব পাকিস্তানের সংকট নিয়ে পাকিস্তানের ব্যাপারে ভারতের ভুমিকা ব্যাখ্যা করা উচিত। যদি কেউ ভারতের ভুমিকার আপত্তিকর ইস্যু গুলোকে এক পাশে রেখে বিতর্কিত নয় এমন বিষয় গুলোকে আলাদা করলে বিষয়টি ক্লিয়ার হবে। বিতর্কিত বিষয়গুলো ছিলো, ১৩ ই মার্চ, ২০ শে মার্চ, ২৪ শে মার্চ এবং ২৭ শে মার্চে ভারত সরকারের সাথে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক দায়ের কৃত প্রতিবাদ লিপিতে পাকিস্তানের আভ্যন্তরীন বিষয়ে ভারতের জোরপূর্বক এবং অন্যায় হস্তক্ষেপ। ৩০ শে মার্চের আরেকটি প্রতিবাদ লিপিতে আগের প্রতিবাদ লিপির সারমর্ম পুনর্ব্যাক্ত করা হয় এবং বিপজ্জনক নজির প্রতিষ্ঠিত হয়।
এটা অনস্বীকার্য সত্য যে ২৯শে মার্চে দেওয়া ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মিসেস গান্ধীর বক্তব্যে, ভারতীয় পার্লামেন্ট একটি সমাধান প্রস্তাবের সম্মতি হয় যে তারা বেনামে সমর্থন দিবে পূর্ব পাকিস্তানের এই “স্বাধীনতা সংগ্রাম” এ, এবং দাবী করে যে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে যাবার আগেই ভারত সময় মত সিদ্ধান্ত নিবে (এবং ক্ষেত্রবিশেষে তার কর্মের ও ) এই ব্যাপারে। পরের দিন বিহার ও আসামের রাজ্য পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব দেয় যে ভারত সরকার যেন ” গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ” এর প্রাদেশিক সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একই মনোভাব তামিলনাড়ু ও মধ্য প্রদেশের প্রধানমন্ত্রীগণও প্রকাশ করেন। বলতে গেলে পরের দিনই ,৩১শে মার্চ ভারতীয় সংসদের উভয় কক্ষেই সর্বসম্মতভাবে পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি তাদের ” পূর্ণহৃদয় সমর্থন” ব্যক্ত করে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্তকে এভাবে ব্যক্ত করেন “ভারত ও তার আশেপাশের উপমহাদেশের মানুষের সাথে তার শতাব্দী পুরাতন ইতিহাস,সংস্কৃতি ও রীতিনীতির যে সম্পর্ক,ভারতীয় আইন সভা কিছুতেই , ভারতীয় সীমান্তের এতো কাছে কি হচ্ছে সে ব্যাপারে নিঃস্পৃহ থাকতে পারে না।
পুনরায় ৪র্থ এপ্রিল , সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সাথে এক বৈঠকে বলার সময় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী দাবী করেন ” এটা ঠিক নয় এবং সম্ভবও নয় ” যে ভারত চুপ বসে থাকবে ।
“গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ” এর প্রাদেশিক সরকারের জন্য এটা অস্তিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ, বিশ্ব সংবাদসংস্থার রিপোর্ট অনুসারে, মার্চ এর শেষের দিকে ভারত সীমান্ত হতে আধ মেইল দূরে একটি আমবাগানে, ভারতীয় সামরিক কর্মচারীগণ গার্ড অফ ওনার প্রদান করে।
এছাড়াও এটি সাধারণ অভিমত যে এই তথাকথিত সরকার (পাকিস্তানি মাটিতে এর প্রতীকী ঘোষণার পরপরেই ) কলকাতায় বিনা ভাড়ায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষের ভাড়াটিয়া হিসেবে রাষ্ট্রীয় অতিথিশালায় থাকা শুরু করে যেখানে একজন ভারতীয় সরকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় তাদের সহায়তার জন্য এবং সেই সাথে কোন সন্দেহ নেই যে তাদের উপর নজরদারী করতেও।
১৯ শে এপ্রিল প্রকাশিত ফরাসি পত্রিকা কমব্যাট এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে এই ” সরকার ” এর প্রধানমন্ত্রী তার শাসনব্যবস্থাকে মৃদুভাবে বলতেন ” দ্রুত প্রসারণশীল ” । যদিও, ২৩ শে এপ্রিল লন্ডন টাইমস এই বিষয়টাকে সরাসরি এভাবে প্রকাশ করে যে এই দেশের প্রধান হচ্ছে ” রাষ্ট্রবিহীন রাষ্ট্রপতি ” ।
আমরা যখন ভারতের হস্তক্ষেপের বিষয়ে পাকিস্তানের দাবীসমূহকে মূল্যায়ন করতে যাই ,প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে , সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারীদের মাধ্যমে, সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে ,বিচ্ছিন্নতাবাদিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় প্রদানের মাধ্যমে ,বিদ্রোহীদের অস্ত্রসস্ত্র প্রদানের মাধ্যমে এবং পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধে উস্কানি প্রদানের মাধ্যমে, কোন প্রকার ভারতীয় সম্পৃক্ততা নাকচ করার প্রশ্নই উঠে না , যেখানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিভিন্ন কথায়, ভারতীয় সংসদ এবং ভারতীয় আঞ্চলিক পরিষদে এবং শাসক কংগ্রেস দলের বিভিন্ন দাবীতে এটা উঠে এসেছে ।
.
ভারতীয় কতৃর্পক্ষ নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে বিচ্ছন্নতাবাদী গোষ্টীগুলোকে সরাসরি ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছে যা আভ্যন্তরীন কোন্দলকে তরান্বিত করছে। ভারতীয়রা যদি এ সিদ্ধান্ত থেকে কখনও পিছু হটে তার মানে হবে এই যে তারা অবশেষে বুঝতে পেরেছে যে তারা, সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সাপোর্ট পাওয়া সত্ত্বেও, এই বিচ্ছন্নতাবাদী গোষ্টীগুলোর শক্তিকে অতিরিক্ত প্রাধান্য দিয়ে ফেলেছিল।
.
আন্তর্জাতিক আইনের অবমাননা আগেও হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে, কিন্তু তুলনামূল ভাবে আরও বেশী বিমূর্ত ভাবে। কিন্তু যদি ইন্ডিয়ার সেন্ট্রাল গভার্মেন্ট বাহ্যিক ভাবে আরও গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিক আচরণ বিধি অনুসরণের চেষ্টা করতে বিলম্ব করে, তবে এমন সন্দেহই ইন্ডিয়ার আঞ্চলিক কর্তৃত্বকে বাধাগ্রস্থ করতে পারবে না।
২৪শে এপ্রিল , দ্যা ইকোনমিস্ট অফ লন্ডন পশ্চিম বঙ্গের ডেপুটি চীফ মিনিস্টার, মিঃ বিজয় সিং নাহেরের ঘোষণার উপর প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়েছিল, ‘ আমরা পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছি, যদিও কেন্দ্রীয় সরকার তা এখনও দেয়নি।
একজন শুধু আশা করতে পারে যে এটা রাজ্য সমূহের স্বীকৃতি দান শুরু করার কোন উদ্ভট টুইস্ট প্রচেষ্টার উদাহরণ না। যেমন টেক্সাস শুধু ফারমোসার স্বীকৃতিতে জোর দিচ্ছিল যখন যুক্তরাষ্ট্রের বাকি অংশ স্বীকৃতি দেয় গণপ্রজাতন্ত্রী চীনকে। অথবা ইউক্রেন বিবেচনা করেছিল বার্লিন প্রেক্ষাপটের নীতিমালা এবং জার্মানরা প্রশ্ন তোলে যখন সমগ্র সোভিয়েত ইউনিয়ন অন্য নীতি বিবেচনা করে। কিংবা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ইউনিয়ন প্রদেশ আত্মস্থ করেছিল বাকি সমগ্র গণপ্রজাতন্ত্রী চীন হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক নীতিমালা।
.
প্রধান/ লক্ষণীয় পয়েন্ট
পূর্ব পাকিস্তান সংকটের ব্যাপারে ইন্ডিয়ার ভূমিকার লক্ষণীয় বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, কারণ ইন্ডিয়া অফিশিয়ালি এবং আনফিসিয়ালি, প্রকাস্বে এবং গোপনে, কেন্দ্রীয় এবং আঞ্চলিক লেভেলে, দুটি দেশের মাঝে শান্তিপূর্ন সম্পর্কের সকল নিয়ম নিতির প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে চলেছে ঠিক সেই স্টেজে যাকিনা পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষ দেয় যে একবার এমন পর্যায়ের হস্তক্ষেপ শুরু করলে তা পরে ফ্রাংকেন্সটাইন হয়ে দেখা দেয় এবং এ কারণেই তা উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বস্তুত আন্তর্জাতিক মামলা, চার্টার এবং ঘোষণার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত প্রতিটি নিয়ম নিতি গত কয়েক বাসে ইন্ডিয়া অমান্য করেছে।
এটা বলা যায় যে যদিও ইন্ডিয়ার কার্যক্রম হস্টাইল কর্মের ক্যাটাগরিতে পড়ে ‘অনেকটা যুদ্ধের মত’ তথাপি এটা সম্ভব হয়েছে পাকিস্তানের সংযমের কারণে।
.
আন্তর্জাতিক আইন সমূহের গুরুত্বপুর্ন বাঁধাসমূহ
ঠিক একই কারণে ভারতের হস্তক্ষেপের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতা আন্তর্জাতিক আইন আদেশ ও শান্তির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। বিশ্বের নিন্দা ও নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বের ভারতের এমন আচরণ কেবলই অন্যান্য রাষ্ট্রকে তাদের প্রতিবেশীর প্রতি বিরোধপূর্ণ আচরণকে উৎসাহিত করে তুলতে পারে; যখন তাদের প্রতিবেশীরা সম্পৃক্ত থাকে তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে কিংবা প্রাদেশিক দাবী বিষয়ে একে অপরকে সন্তুষ্ট করতে।
এটা বরাবরই প্রকাশ করে যে অনেক রাষ্ট্ররই নিজস্ব কাটাঙ্গা (Katangas একটি নাম) সমস্যা রয়েছে কিন্তু সকল রাষ্ট্রই এধরণের পরোক্ষ আগ্রাসন প্রকাশ করবে না যা কিনা ভারতের এই ক্ষিপ্র এবং অসংযত হস্তক্ষেপকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য পাকিস্তান করেছিল।
.
ঠিক এক বছর আগেও, বায়াফ্রা একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত ছিলো, যারা ওই সময় তাদের নিয়ন্ত্রনের মধ্যে ছিলো এবং একটি সুদীর্ঘ কালব্যাপী পরিষ্কার ভাবে চিহ্নিত একটি রাজ্যসীমা ছিলো। এমনকি, ১৯৩৬ সালের ২৬শে জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত হিটলার ও মুসোলিনী আন্তর্জাতিক আইনের সমর্থক ছিলেন না যতক্ষন স্পেনের এক তৃতীয়াংশ জাতীয়তা বাদের নিয়ন্ত্রনে ঢুকে পড়ে।
সামগ্রিক বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য এসব কিছুই যথেষ্ট দুঃখজনক কিন্তু ভারত নিজেই তার নিজের জন্য বড় বিদ্রুপ, সেই সাথে বহুভাষা পূর্ন এবং বহু ধর্মী। এই ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আইন ভাঙ্গার ভালো প্রমান হিসাবে ভারত হতে পারে সবচেয়ে বড় ভুক্ত ভুগী।
প্রদত্ত এইসব এবং যেটি পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষমতাবান কাটাংগাকে ক্ষিপ্রতার সাথে নিয়ন্ত্রন করা হয়েছিল। এবং প্রশ্ন উঠে কেন ভারতীয় নেতৃত্বের উচিত এ বিষয়ে তীব্র বেগে অগ্রসর হওয়া। বাতাসে হুশিয়ারি প্রদান এবং আন্তর্জাতিক আইন এ কর্ম উপেক্ষা করার পরিনতি এবং আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এবং সেই সাথে অবশ্যই আভ্যন্তরীন ভারতীয় স্থিতীশীল অবস্থার জন্য।

৪। ভারতীয় কর্মকান্ডের উপর রাজনৈতিক প্রভাব
সাম্প্রতিক পাকিস্তান সংকটে ভারতের ভুমিকা রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে এসেছে।
পাকিস্তান এবং ভারত বিভেদের অন্যতম প্রধান কারন হিসেবে পাকিস্তান কথনে ১৯৪৭ সাল থেকে বারংবার যে বিষয়টি কেন্দ্রীকরন করা হচ্ছিল তা হচ্ছে, ১৯৪৭ সালের উপমহাদেশের বিভক্তির পর থেকে ভারত কখনোই পূনর্মিলিত হতে চায়নি।
ভারতের এর জবাবে বলেছিলো (যা দূর্ভাগ্যবশত পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের সবচাইতে দুর্বল শ্রোতাদের কাছ থেকেই পাওয়া গিয়েছিলো) ভারত সব শেষে মেনে নিয়েছে পাকিস্তানের বাস্তবতা এবং যার বিরোধে পাকিস্তানের অভিযোগ কঠিন নিপীড়নের আরেকটি উপাদান।
কিন্তু বিগত কয়েক মাসের ঘটনায় দেখা যায় পাকিস্তানের অভিযোগ আরেক বার সত্য হয় এবং পাকিস্তান প্রসঙ্গে ভারতের উদ্দেশ্য আরো স্পষ্ট ভাবে প্রকাশিত হয়। উল্লেখ্য এ ছাড়াও ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির এ অনুমিত বন্ধন যা উপমহাদেশের মানুষকে একত্রে বেধে BIND (বেধে রাখা শব্দ টি মার্ক করুন) রেখেছিলো, যা ৩১ শে মার্চ ভারতের সাংসদীয় বিশ্লেষনের অন্তর্ভুক্ত, দিল্লীর ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ ওয়ার্ল্ড এফেয়ার্সের ঘোষনার আগেই ঠিক একই সমইয়ে মিঃ সুভ্রামানিয়ান, উল্লেখিত পাকিস্তানের আভ্যন্তরীন সমস্যায় ভারতের মনোভাব সম্পর্কে স্পষ্ট ভাবে তার বক্তব্যে বর্ণনা করেন। যিনি ছিলেন ইন্ডিয়ান ইন্সটিউটের প্রতিরক্ষা শিক্ষার পরিচালক। এটি এমন একটা প্রতিষ্ঠান যার উদ্দেশ্য হচ্ছে দীর্ঘ সময়ের জন্য ভারতীয় সামরিক কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেয়া।
মিঃ সুভ্রামানিয়ান বলেন, “ভারতকে যে সত্যটা উপলব্ধি করতে হবে তা হচ্ছে পাকিস্তানের ভাঙনে আমাদের স্বার্থ আছে এবং আমাদের আছে এমন একটা সুযোগ যা আর কখনো আসবে না।
যে কাউকেই সঠিক এবং নিরপেক্ষভাবে অবহিত করা হচ্ছে যে, শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত কাশ্মির দ্বন্দ নিয়ে ইন্দো পাকিস্তান সম্পর্কের এই গল্পের জট খুলতে গেলে পাকিস্তানের প্রতি ভারতীয় নীতির এই উপাদান গুলি কে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে।
.
পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের সাম্প্রতিক সংকটে ভারতের আচরণ নাটকীয় এবং পাকিস্তান ধ্বংস করে বৃহত্তম অখন্ড হিন্দুভারত প্রতিষ্ঠার অনিরাময়যোগ্য বদ্ধমূল সংস্কারের চূড়ান্ত প্রমাণ বহন করে। এ লক্ষ্যে প্রথম ধাপ হলো পূর্ব পাকিস্তানে একটি পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠায় উত্সাহ এবং সহযোগিতা করা যারা ভারতের সুবিধানুযায়ী কাজ করে যাবে।
প্রচুর পরিমানে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা মিস্টার সুব্রামানিয়ামের মতো লোকের কাছ থেকে ১৯৭১ এর প্রথম সপ্তাহ গুলোতে এসেছে। এখন পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে। মার্চেয় প্রথমদিকে পাকিস্তান সরকারের কাছে প্রচুর সংখ্যক প্রতিবাদী স্মারকলিপি এসেছে, শুধুমাত্র প্রচারণা নির্ভর এবং ধ্বংসকে উত্সাহিত করার মনোভাব থেকে।

ভারতীয় হিসেবনিকেশ

আইনগত কর্তৃপক্ষের পতন এবং রাজপথে সৃষ্ট হুজুগে বিশৃংখলা ভারতের নেতারা দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করছিলো এবং পরিকল্পিত ভাবে যোগাযোগ ব্যাবস্হায় বাধা সৃষ্টি করে সরকারের স্বাভাবিক কাজকর্ম বজায় রাখা অসম্ভব করে তুলেছিলো। বাঙালী এবং অবাঙালীদের মধ্যে বিরোধ তৈরির মাধ্যমে পাকিস্তানের পূর্ব অংশের নাগরিকদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এই অরাজকতায় মৌনসম্মতি আদায় করে নিচ্ছিলো।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ধরে নিয়েছিলো সাফল্য তাদের আয়ত্তাধীন এবং শেষ মিনিটের সিদ্ধান্তে পাকিস্তান আর্মি স্বাভাবিকতা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হতে বাধ্য ছিলো। যার ফলে ভারতের প্রচেষ্টা আরো চড়ারূপ পায় মার্চের শেষের দিকে এবং এপ্রিলেও। ভারতের রেডিও এবং সংবাদপত্র গুলো বিচ্ছিন্নতাবাদী মিলিটারী শক্তির বিজয়ের কথা লাগাতার প্রচার করে প্রতারণা করে যাচ্ছিলো যে পাকিস্তানী বাহিনীতে ভয়াবহতা এবং বিশৃখলা ছড়িয়ে পড়েছে।

এখানে এটি একটি গভীর পরিতাপের বিষয় যে বিদেশী সংবাদপত্রগুলো ভারতের দৃঢ়ভাবে প্রচারিত কথাগুলোই বাইবেলের মতো সত্য বলে গ্রহন করছিলো।
এরমধ্যে পাকিস্তানের মনোযোগ ছিলো স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনায়, যাতে প্রদেশের অর্থনৈতিক অবস্হা আত্মঘাতী বাধা না হয়ে ওঠে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এবং মধ্যস্ততাকারীরা যাতে ব্যর্থহয়ে পশ্চাদপসরণ করে এবং পোড়ামাটি নীতি অনুসরণ করতে না পারে সেই লক্ষে কাজ করে তাদের নিঃসঙ্গ করে দেয়া।
এপ্রিলের ভিতর ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে এটি পরিষ্কার হয়ে যাবে যে পাকিস্তান ভেঙে দেয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। কারন তাদের সংবাদমাধ্যম এবং রেডিও নতুন পথে হাঁটছে। তাদের ভাষায় ‘পশ্চিম পাকিস্তানের সাম্রাজ্যবাদী, দখলদার শক্তি’ এসবের জায়গা নিয়েছে শরনার্থীদের দুর্ভোগ এবং দুর্ভিক্ষের করুন বর্ননা।
যদিও এখানে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে গত কয়েকমাসে পূর্ব পাকিস্তানে মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে।
যে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তা হলো, এটা কি করে হলো এবং এজন্য কে দায়ী, এবং এখানে ক্ষীণ সন্দেহ আছে যে এটা পূর্ব পাকিস্তানে বিপ্লবের পরিকল্পনা, উত্সাহ্ এবং তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়ার সরাসরি ভারতের প্রচেষ্টার ফলাফল। খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি গুদাম থেকে দরকারী জায়গায় পৌঁছে দিতে বাধার সৃষ্টি করে যাচ্ছিলো।
.
.
সংরক্ষিত এই খাদ্য আনাহারের ভয়ে ছুটতে থাকা মানুষের জন্য পর্যাপ্ত হতে পারত।কিন্তু আতংক সৃষ্টিকারী বিমান ছিল ভারতীয় বেতারের কৃতিত্ব যখন পাকিস্থানি বেতার মহড়ার খবর প্রকাশ করা খুব সামান্যভাবেই সক্ষম হয়েছিল চতুরপাশে ঘটতে থাকা ঘটনা সম্পর্কে জনসাধারণকে আশ্বস্ত করতে। এর মাধ্যমেই পূর্ব পাকিস্থানের মুসলমান এবং হিন্দুরা বুঝতে সক্ষম হয়েছিল যে দেশের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে এবং কর্তৃপক্ষ এ বেপারে কোন প্রচেষ্টটাই চালাছে না।

একজন বহিরাগত নিরপেক্ষ প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, সত্যিকার অর্থে উদ্বাস্তুদের দায়দায়িত্ব নিরূপণ করা ছিল অনেকটাই অসম্ভব, কিন্তু মাঝেমাঝে তথ্যের সত্যতা পরিবর্তিত হতে পারে সম্ভাব্য দলের উদ্দেশ্য অধ্যয়ন এবং অতীতের আচরণের কারনে।

পরিষ্কারভাবেই পাকিস্থানি কর্তৃপক্ষের সম্ভাব্য সবকিছুই অর্জন করা দরকার ছিল পূর্ব পাকিস্থানে স্বাভাবিক, শান্তিপূর্ণ জীবনমাত্রা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য। অন্যদিকে ভারতের বিগত কয়েক মাসের কার্যক্রমে আবারও বোঝা যায় পূর্ব পাকিস্থানের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের ভাঙ্গনই তার দীর্ঘমেয়াদি উদ্দেশ্য সাথে মানানসই।

পঞ্চমঃ ভারতের পদক্ষেপ- দক্ষিণ এশিয়ার স্থায়িত্তের প্রতি হুমকি

অবশ্যই ইহা পুরোই ছিল ভারতের দীর্ঘমেয়াদী মুল উদ্দেশ্য যা দক্ষিণ এশিয় অঞ্চলের পুনঃগঠনের জন্য হুমকি সরূপ (সম্ভবত তারও বেশি কিছু)।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!