শিরোনামঃ ১৩২। পূর্ব পাকিস্তান সংকট সম্পর্কে পাকিস্তান সরকারের বক্তব্য
সূত্রঃ পাকিস্তান সরকারের প্রচার পুস্তিকা
তারিখঃ ৫ মে, ১৯৭১
.
পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান সংকট ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ সালে দশকের পর দশক নিরন্তর সংগ্রামের পর এই উপমহাদেশের মুসলমানদের সামগ্রিক ইচ্ছের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বভৌম পাকিস্তান রাষ্ট্রের পথ চলা শুরু। পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানেরাই পাকিস্তানের জন্য আন্দোলনের সম্মুখভাগে ছিলো কারন হিন্দু সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে তারাই সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত হচ্ছিলো, যারা শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে কলকাতার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কাঁচামালের যোগান দিয়ে আসছে। হিন্দু নেতৃত্ব থেকে নিষ্কৃত হবার এটি ছিলো তাদের দ্বিতীয় প্রচেষ্টা। প্রথমবার ৪২ বছর আগে পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বেই তারা পশ্চিমবংগ থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিলো। বাঙালী মুসলমানদের আতঙ্কজনক দুর্দশা দেখে ইন্ডিয়ার ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালে পূর্ব বাংলায় একটি পৃথক প্রদেশ গঠন করেন। বাঙালী হিন্দু, যারা বেপরোয়া ভাবে সমগ্র বাংলার শিল্পব্যবস্হা কব্জায় নিতে চাচ্ছিল, তাদের তীব্র বিক্ষোভের মুখে ৬ বছর পরেই বংগভঙ্গ রদ হয়ে যায়। ইন্দো পাকিস্তান সমস্যার মূল কারন ছিলো ইন্ডিয়া কখনো পাকিস্তানকে গুরুত্ব দিতে চাইতোনা। এমনকি বল্লবভাই প্যাটেলের মতো তাদের দ্বায়িত্বশীল উচ্চপদস্হ নেতা প্রকাশ্যে ভারতকে পুনরায় একত্রিত করে এর নাম দিতে চায় ‘হিন্দু মাতৃভূমি’। এই ইচ্ছে পূরণ করার জন্যে ইন্ডিয়া পাকিস্তানের জনগনের আনুগত্য ধ্বংসের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সে পাকিস্তানে আসা জলপ্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এবং সে তার অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে চিত্কার করে লাখ লাখ মুসলমান শরনার্থীকে পাকিস্তান পাঠিয়ে দিচ্ছে। ১৯৬৫ সালে আন্তর্জাতিক সীমানায় সে সরাসরি অনধিকার হস্তক্ষেপ করে পশ্চিম পাকিস্তানে অবরোধ আরোপ করে। এখন পূর্ব পাকিস্তানকে ধ্বংস করে সে আবার পাকিস্তানের ঐক্য বিনষ্ট করতে চায়। অন্য একদিন ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ডিফেন্স স্টাডিজ এর পরিচালক মিস্টার সুব্রামানিয়াম ইন্সটিটিউটের এক আন্তজার্তিক বিষয়ক এক অনষ্ঠানে বলেন, “ইন্ডিয়াকে যে বাস্তবতাটা অনুধাবন করতে হবে তা হলো পাকিস্তান ভেঙে যাওয়া আমাদের জন্য লাভজনক, এবং এরচেয়ে ভালো সুযোগ আর কখনোই আসবেনা।” এই সুযোগ গ্রহন করে ইন্ডিয়া পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে শুধু একলাখ সৈন্য জমা করেনি, পূর্ব পাকিস্তানে ধীরে ধীরে অস্ত্র অণুপ্রবেশ করিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো প্রকাশ করে যাচ্ছে, দীর্ঘসময় ধরে পূর্বপাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইন্ডিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র পেয়ে আসছে। এবং তথাকথিত বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীরা কলকাতার একটি সরকারী হোস্টেলে দিনযাপন করছে। এটা পরিষ্কার এবং প্রমানিত হচ্ছে, ইন্ডিয়ার মাটি পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলনের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এটা অগ্রাহ্য করা যাবেনা যে ইন্ডিয়া তার সাথে পূর্ব পাকিস্তানের কিছু প্রতারক এবং সহযোগী পেয়েছে।
.
.
পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ অকৃত্তিম শোক এবং সমবেদনার এই সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানের সকল কিছু স্বাভাবিক করতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দুই দশকের অবহেলা দুই শতাব্দীতে মিটে যাবার নয়।এবং এর জন্য কোন তাৎক্ষণিক সাংবিধানিক অথবা অর্থনৈতিক সমাধানের উপায় নেই।হিন্দু শিল্পপতিদের কারণে এই এলাকা পশ্চাদপদ হয়ে থাকে এবং ব্রিটিশ আমলে পাট উতপাদনের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষনের জন্য।ঢাকার প্রেসও এমনকি পাকা করার অনুমতি দেয়া হয় নি।বিভক্তির সময় থেকে পুর্ব পাকিস্তান একবারে শুরু থেকে শুরু করল।আজ পাকিস্তান হাজার হাজার শিল্প ইউনিট থেকে শুরু করে বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাটকল,বৃহত্তম সার কারখানা এবং তার প্রথম স্টিল প্ল্যান্টে বিস্তার ঘটিয়েছে।এই ব্যাপারগুলো কোন প্রসন্নতার কারণে উল্লেখ করা হচ্ছে না,বরং বুঝানো হচ্ছে যে পূর্ব পাকিস্তান কে কোন পর্যায় থেকে শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে এক কাতারে দাঁড়াতে হয়েছে,ইতোমধ্যে স্বাধীনতার স্বাদে আস্বাদিত হওয়া হওয়া স্বত্তেও সত্যটা হল,পাকিস্তান বহু বছর ধরে রাজ্যের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রীদের দ্বারা পূর্ব পাকিস্তান থেকে শাসিত হয়েছে।
এছাড়াও পূর্ব পাকিস্তানে সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যা হল জনসংখ্যা সমস্যা প্রতি বর্গমিটারে ১৪০০জন,বিশ্বের সর্বোচ্চ ঘনবসতিমূলক এলাকা।আরও একটি বড় সমস্যা হল ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার প্রকোপ,যা মানুষ এখনও আয়ত্বে আনতে পারে নি।
এখানেও ভারতের একগুঁয়েমির কারণে পাকিস্তানের কাজকে কঠিন করেছে।তারা উজানে গঙ্গার উপরে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে,নিম্ন তিরবর্তী এলাকার উপর পাকিস্তানের অধিকারের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘণ করে।পূর্ব পাকিস্তানের মঙ্গল কামনায় ভারতের দায়বদ্ধতার কতটুকু হৃদ্যতার পরিচয় দিয়েছে তা এই একটি কাজেই পরিষ্কার হয়ে যায়।এই বাঁধের কারণে পূর্ব পাকিস্তানের হাজার হাজার একর জমি ঝুঁকির মুখে পড়বে আর অনাহারে পরবে লাখ লাখ মানুষ।
এইসব তথ্য পূর্ব পাকিস্তানের অসন্তোষ ঘোলাটে করবার জন্য বলা হচ্ছে না বরং, আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বের হয়ে কিভাবে অর্থনৈতিক অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিপূর্নভাবে আন্দোলনের সৃষ্টি করেন,যেহেতু বিষয়টা রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ধারার ছয়টি বিষয়ের সাথে জড়িত এবং ভোটসংগ্রহের একটি উপায়।
মুলত দাবী করা হয়,ছয়টি দফা দাবী আসলে পূর্ব পাকিস্তানের উপর স্বায়ত্বস্বাশনের মূলনকশা ব্যাতিত কিছুই নয়।উপরন্তু ভোটের প্রচারাভিযান,যা কিনা এক বছর ধরে চলছিল এর মাঝে আওয়ামীলীগ নেতৃত্ব এটা প্রমাণ করতে স্বমর্থ হয় যে, তাদের ছয়-দফা দাবী “ঈশ্বরের বাক্য” নয় এবং তারা আপোষের জন্য তৈরি এবং সমালোচকদের মতে পাকিস্তানের অবকাঠামোর বাইরে কিছু করা হলে ছয়-দফা দাবী ক্ষতিকর হতে পারে।এই ব্যাপারটিই আওয়ামী লীগ কে নির্বাচনে এগিয়ে রাখল, এবং সেই অনুসারে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আপোষের জন্য বিবৃতি জারি করল,উভয়ই প্রস্তুত ছিল লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের আন্ডারে সংবিধান গঠন করতে এবং সরকার প্রতিষ্ঠা করতে।
এটাকে বলা যেতে পারে লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক এর উল্লেখ করা যেতে পারে যার অধীনে আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো পরিচ্ছন্ন ও দ্ব্যার্থহীনভাবে নির্বাচনে অংশ নেয় যেখানে একতা,সংহতি এবং পাকিস্তানের অখন্ডতা যে কোণ সাংবিধানিক ব্যাবস্থার উপর করা যেতে পারে।
.
তবে,যত দ্রুত শেখ মুজিবুর রহমান স্বায়ত্বশাসনের পক্ষে নির্বাচকমণ্ডলীর রায় সুরক্ষিত করেন,তেমনি ছয়টি বিষয়ের এমনভাবে সম্প্রসারণ এবং ব্যাখ্যা করেন যেন নির্বাচকমণ্ডলীর এই বিষয়ে কোন চুক্তি করেন নাই,এবং এমন অনড় একটি অবস্থার সৃষ্টি করেন যেখানে আপোষের জন্য আর কোন সুযোগ নেই।তার ভঙ্গী ছিল এমন যে,’হয় গ্রহণ করুন অথবা বর্জন করুন’।একের পর এক রাজনৈতিক নেতা এমনকি পশ্চিম পাকিস্তানের বড় বড় রাজনৈতিক দলের নেতারা ঢাকায় আসছিলেন তার সাথে এই ব্যাপার নিয়ে সমঝোতা করবার জন্য।পাকিস্তানের রাস্ট্রপতি বেশ কয়েকবার সাক্ষাত করতে আসেন কিন্তু কোন লাভ হয় নি।জনগণ সমর্থিত প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের এইসকল বিষয়ে কোন প্রকার আগ্রহ প্রকাশ করেন নাই যা কিনা দেশের সাধারণ জনগণ উৎসুকভাবে আশা করছিল।তিনি পশ্চিম পাকিস্তান সফরও প্রত্যাখ্যান করেন।জাতীয় পরিষদের সাময়িক স্থগিতকরণ ঘোষণা করেন এবং আইনসম্মতভাবে সংবিধান তৈরির জন্য অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে আলোচনার ব্যবস্থার সিধান্ত গ্রহণ করেন।
কি অনুসৃত হচ্ছিল সবার জানা ছিল।সকল ধরনের অপরাধ বেড়ে চরম আকার ধারণ করে।জনগণ রাস্তায় নেমে আসে,আগ্নিসংযোগ,হত্যা,লুন্ঠন হতে থাকে।পুর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে যায়,ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় এবং সরকারি চাকুরিজিবিরা অফিসে অনুপস্থিত হতে থাকেন।যারা স্বেচ্ছায় এই সহযোগিতা করতে পারছিল না তাদেরকে নাৎসি সেনাবাহিনীর অস্ত্রের মুখে এইসব করতে বাধ্য করা হয়।এরকম সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে সাধারণ জীবন যাপন স্থবির হয়ে যায়।আইনগত ভাবে গঠিত সরকারি চলমান প্রশাসনের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের সদর দপ্তর থেকে ট্যাক্স এবং অর্থ স্তানান্তরকরণের উপর ফরমান জারি করা হয় যেন কেউ কেন্দ্রীয় কোষাগার থেকে প্রাদেষিক একাউন্টে প্রেরনের জন্য সরকারি ব্যাংকের বদলে বেসরকারি ব্যাংক ব্যাবহার করে।১লা মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ বেসামরিক প্রশাসন পুরো পঙ্গু হয়ে পড়ে।হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, লুন্ঠনের খবরের প্রতিবেদন আসতে থাকে প্রদেশ জুড়ে -ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট শহ অন্যান্য শহরে ফ্যাসিস্ট হিস্টরিয়ার ঢেঊ উঠে।সেনাবাহিনী যদিও মানসিকভাবে বিচলিত হয়ে ওঠে এবং জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে ফেলার খবরে উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং কায়েদ-এ-আযমের ছবি পদদলিত করা হয় এইরকম সময়ে শীর্ষস্থানীয়ভাবে কঠোর আদেশে সম্পুর্নভাবে কোন বিশৃঙ্খলা না করবার জন্য বলা হয়,যেন রাজনৈতিক নেতারা আলোচনার মাধ্যমে আপোষে আসতে পারেন।
নিজের ছয় দাবী নিয়ে অসন্তোষ থাকা শেখ মুজিবুর রহমান এতে আরও ৪টি বিষয় যোগ করেন যেখানে সামরিক আইন এবং অবিলম্বে প্রেসিডেন্সিয়াল ঘোষনার মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।এই অবস্থায় তিনি মূল স্রোতের বিপরীতে যেখানে জাতীয় পরিষদের মাধ্যম ব্যাতিত ক্ষমতা হস্তান্তর সম্ভবপর না সেখানে ঘোষনা দেন যে,যেই পর্যন্ত তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা না হবে সেই পর্যন্ত তিনি জাতীয় পরিষদে যাবেন না সংখ্যাগরিষ্ঠ সার্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্কতার ভিত্তিতে এবং একজন এক ভোটের মাধ্যমে নিরঙ্কুশ ভাবে জয়লাভ করা সত্ত্বেও।
এটা বুঝাই যাচ্ছে যে,অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে জোর প্রদান করেন যেন জাতীয় পরিষদের ব্যাপারটিত অন্তর্বর্তিকালিন সংবিধান তৈরি করে রাষ্ট্রপতির কাছে উত্থাপন করে সম্মতি পাসের আধ্যম ব্যাপারটির বাস্তবায়ন ঘটে।তারা দাবী করেছিলেন যে এই ঘোষণা যে কোন প্রকার আইনি অনুমোদন ব্যাতিত হতে হবে।বিষয়টা মার্শাল ল’ কিংবা জনগণের ইচ্ছের উপর ভিত্তি করে করা হবে না,এতে শূন্যস্থান তৈরি হবে এবং বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে।
প্রেসিডেন্ট আরও একবার ঢাকায় আসেন এবং ১০দিনের বৈঠকের পর সমঝোতার প্রচেস্টায় আপোষে আসেন গণতন্ত্র প্রক্রিয়া সংরক্ষণ,ক্ষমতা হস্তান্তর সহজীকরন।আলোচনার সময় শেখ মুজিবুর রহমান চুক্তির মাধ্যমে দুর্বল রাস্ট্রের উপর থেকে সবল রাষ্ট্রের ক্ষমতায়ন সরিয়ে স্বায়ত্বশাসনের ব্যাপারে জোর প্রদান করেন।এর অর্থ দাঁড়ায় প্রস্তাবিত ঘোষণার পর মার্শাল আইন নির্বাপন এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের পর, পাকিস্তানের পাঁচটি প্রদেশের এই ভাসমান অবস্থার নিরসন হবে এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব কার্যত বিলীন হবে।
শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমাবধি এই দাবী করেন যে জাতীয় পরিষদের জন্য দুইটি কমিটি বসাতে।যার একটি পূর্ব পাকিস্তানের সদস্য এবং অন্যটি পশ্চিম পাকিস্তানের সদস্য নিয়ে গঠিত।পরবর্তিতে তিনি এী দাবীর সংস্কার করে একে দুটি নিয়ম অনুযায়ী দুটি নতুন সংবিধান গঠনের কথাও বলেন।
উদ্দেশ্য ছিল পরিষ্কার;আওয়ামী লীগের চরমপন্থি নেতারা বুঝতে পারেন যে রাস্ট্রপতি কিংবা অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা “সাংবিধানিক বিভক্তি” কখনই একমত হবে না,এবং তাই এই চরমপন্থিরা কোন ধরণের তথ্য কিংবা অনুমোদন ছাড়া এমনকি কোন পদমর্যাদা কিংবা সৈন্যবাহিনী ছাড়া গোপনীয়ভাবে ষড়যন্ত্র হোক অথবা জোর উপায়ে নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে অনেকদিন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন,এই গোপন প্রস্তুতি মুলত আগরতলা মামলায় ফাস হলেও ততদিনে এটি পুরোপুরি ভাবে শুরু হয়ে যায়।ভলান্টিয়ার রা প্রতি জেলায় সংগ্রাম পরিষদের অধীনে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল।অস্ত্র এবং গোলাবারুদ ভারত থেকে পাচার করা হয় এবং পুরো প্রদেশ জুড়ে জায়গায় জায়গায় মজুদ করা হয়,এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলেও।২৫ হতে ২৬শে মার্চ মাত্র ৩ঘন্টার ব্যবধানে সুচিন্তিত এবং সুগঠিত ভাবে জগন্নাথ হলের থেকে কামানের বর্ষনের মাধ্যমে পুরো পরিস্থিতি বানচাল করে দিয়ে পুরো শহরের চেহারা পালটে দেয় পশ্চিম পাকিস্তানিরা।
যদিও আওয়ামী লীগের প্ররোচণা ব্যার্থ হয় কিন্তু এটা ছিল অন্বেষিত নাৎসি-কৌশলের আক্রমণ।সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম এবং অকথ্য ন্রশংসতা।আওয়ামী লীগের ফ্যসিবাদি হত্যাকান্ডের প্রকৃত কারণ এখন সুস্পষ্ট।
সকল প্রমাণাদি এই সাক্ষ্যই দিচ্ছিল যে,২৬শে মার্চের স্বল্প কয়েক ঘন্টা সশস্ত্র বিদ্রোহের শুন্য ঘন্টা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং “স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের” আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী ছিল।এর প্রধান কারন ছিল ঢাকা এবং চট্টগ্রাম দখল করা যেখানে সেনাবাহিনীর আকাশ এবং সমুদ্র বাহিনি পশ্চিম পাকিস্তানের অনুকুলে।সেই সময় সেনাবিহিনি গঠিত হয় ১৮ব্যাটালিয়ন নিয়ে বিভক্ত ছিল যেখানে পশ্চিম পাকিস্তানের ছিল ১২ ব্যাটালিয়ন যারা ধীরে ধীরে ক্যান্টনমেন্টের ভেতর সহ ভারতের বর্ডারে ছড়িয়ে পড়ে।আর তাদের বিরুদ্ধে ছিল ভারত থেকে অনুপ্রবেশকারী এবং পুর্ব পাকিস্তান থেকে পলাতক রা,ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং অন্যান্য সহকারি যোদ্ধারা ভারী মর্টার শেল,আধুনিক অস্ত্র,এবং ভারত সীমান্ত থেকে নির্দিধায় সরবরাহ করা হচ্ছিল।
আওয়ামী লীগের পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সরে আসার পাঁয়তারা তখনও বিদ্যমান।আর ইতিমধ্যে শান্তিপূর্নভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের সব পন্থাই বিফল হয়েছিল;প্রেসিডেন্ট তাই আর্মড ফোর্সকে তার কর্তব্য পালন করতে এবং সম্পুর্নভাবে সরকারের কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দেন।
সেই ডাক আসতেও বেশি দেরি হয় নি।এবং আওয়ামী লীগের কর্মকান্ডের শুন্য ঘন্টা অল্প কিছু সময় আগে আর্মড ফোর্স স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মার্চের ২৫-২৬শে’র মধ্যরাতে পালটা আঘাতের একটি সিরিজের উদ্যেগ নেয় দেশকে বাঁচাবার জন্য।
ভবিষ্যতে কী হবে? ২৬শে মার্চে জাতির উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতির আহব্বানের ইঙ্গিত ছিল পরিস্কার:
‘আমি তোমাদের কথা দিচ্ছি, আমার মূল লক্ষ্য একই থাকবে অর্থাৎ জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের। যত তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি অনুকুলে আসবে আমি এই বিষয়ের দিকে নতুন পদক্ষেপ নিব।
ফিল্মস বিভাগের দ্বারা পরিচারিত
প্রকাশনা,পাকিস্তান সরকার
করাচি।