শিরোনামঃ ১০৮। ভারতীয় ‘অনুপ্রবেশ’ সম্পর্কে সরকারী মুখপাত্রের বিবরণ
সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ২৯ নভেম্বর, ১৯৭১
.
সরকারী মুখপাত্রের বিবরণ
পূর্ব পাকিস্তান এর অভ্যন্তরে ভারতীয় অনুপ্রবেশ চেষ্টা ব্যার্থ
রাওয়ালপিন্ডি, ২৮শে নভেম্বর, (এপিপি)- আজ এখানে একজন সরকারী মুখপাত্র বলেন যে, কুমিল্লা -নোয়াখালী সেক্টরে পাকিস্তানী সৈন্যদের সাথে বিভিন্ন সংঘর্ষে আরো ৩০ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় এসব ভারতীয় সৈন্য মারা যায়।
কুমিল্লা-নোয়াখালী সেক্টরের গুলবানিয়ায় ভারতীয়রা নতুন করে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় সেখানে তাদের ১০ জন সৈন্য নিহত এবং তাদের দুটি হালকা মেশিনগান ও ৭টি রাইফেল আটক করা হয়েছে। ময়মনসিংহ সেক্টরে আরো ২০ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়েছে।
ভারতের নিয়মিত সৈন্য ও তাদের চরেরা এই সেক্টরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু পাকিস্তানো সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের হাতে তারা প্রচুর ক্ষতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়।
মুখপাত্রটি আরো বলেন যে, ভারতীয়রা দিনাজপুর জেলার পচাগড়ে প্রচন্ড গোলাবর্ষণ করে। কিন্তু পরে তাদের প্রতিহত করা হয়। এই সংঘর্ষের বিস্তারিত বিবরণ এখনও পাওয়া যায় নি। তিনি বলেন, ভারতীয়রা সারা সীমান্তে উত্তেজনা বজায় রাখে এবং ময়মনসিংহ জেলার বরমারী, আকিপাড়া ও কমলপুর, দক্ষিন সিলেট এলাকার কেরামতনগর ও ফুলতলা, কুমিল্লা জেলার ব্রাক্ষনবাড়িয়া এলাকার কায়েমপুর ও যশোরের হিরণ, জীবনন্যার ও বাকশায় গোলাবর্ষণ করে। মুখপাত্রটির মতে ভারতীয় সৈন্যরা গত ২৪ ঘন্টায় পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর উপর আক্রমণ ও প্রচন্ড গোলাবর্ষণ করে। ভারতীয়দের আক্রমনের প্রধান লক্ষ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্ত যশোর। সেখানে দুই কোম্পানি ভারতীয় সৈন্য ট্যাংকের সাহায্যে চৌগাছা এলাকায় বুইন্দার দিকে আরো এগিয়ে যাবার চেষ্টা করে।
পাকিস্তানী সৈন্যরা তাদের প্রচেষ্টা ব্যার্থ করে দেয়। একই সেক্টরে ভারতীয়রা দুই কোম্পানি সৈন্য ও ট্যাংকের সাহায্যে শিমুলিয়া ও নবগ্রামে আক্রমন চালালে আমাদের সৈন্যদের সক্রিয় ও সময়মত কামানের গোলাবর্ষণে ভারতীয়রা পিছু হটতে বাধ্য হয়। মুখপাত্রটি বলেন, দুটি ভারতীয় কোম্পানী কুমিল্লা এলাকার চাদগাজীপুরে অগ্রসর হবার চেষ্টা করলে পাকিস্তানী সৈন্যরা তাদেরকে প্রতিহত করে।
প্রশ্ন: ভারতীয়রা কোন বিমান অবতরণ কেন্দ্রে বা বিমান বন্দরে আক্রমন করেছে কি?
উত্তর: গত ২২শে নভেম্বর যশোরে প্রথম আক্রমন শুরু হবার পর ভারতীয় প্রচেষ্টা প্রতিহত করা হচ্ছে। কিন্তু সংঘর্ষের সাধারন ধরন একই রুপ ছিল। সীমান্ত সংঘর্ষের তীব্রতাও একই রূপ। সীমান্ত এলাকা থেকে এই সংঘর্ষ অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে নি। ভারতীয়দের পূর্ব পাকিস্তানের গভীর অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ অথবা তাদেরকে নতুন কোন এলাকা দখল করতে দেয়া হয় নি। যশোর সেক্টরের চৌগাছা এখনো ভারতীয়দের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।
দৈনিক ১২ লাখ টাকার গোলাবর্ষণ
প্রশ্ন: ভারতীয় গোলার তীব্রতাটা কি?
উত্তর: ভারত পাকিস্তানী এলাকায় প্রতিদিন ৬ হাজারেরও বেশি গোলাবর্ষণ করছে। আর প্রতিদিন বর্ষিত এই গোলার দাম হচ্ছে প্রায় ১২ লাখ টাকা।
প্রশ্ন: দুই সপ্তাহের আগের তুলনায় বর্তমান সংঘর্ষের মাত্রা কি?
উত্তর: গোলাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। পাকিস্তানের উপর ভারতীদের নিয়মিত আক্রমনের আগে তারা পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিদিন ১ থেকে ৪ হাজার পর্যন্ত গোলাবর্ষণ করত।
প্রশ্ন: পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে রাষ্ট্রবিরোধী ব্যক্তি ও চরদের তরপরতার অবস্থাটা কি?
উত্তর: বিদ্রোহীদের কিছুটা তরপরতা’ রয়েছে, বিক্ষিপ্ত দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং এতে বেসামরিক নাগরিকদের কষ্ট হচ্ছে। তবে এটা কোন ভাবেই বলা যায় না যে সেখানে একটি বিদ্রোহ ঘটেছে। তিনি বলেন, মুক্তিবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের সমর্থন পাচ্ছে না।
পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস, ইস্ট বেংগল রেজিমেন্ট, পুলিশ ও আনসার বাহিনোর দলত্যাগীদের নিয়েই মুক্তিবাহিনী গঠিত। তারা ভারত সরকার ও নিয়মিত ভারতীয় সৈন্যদের সক্রিয় সমর্থনে কোন কোন সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। তারা একাকী কোন জায়গাতেই আক্রমন চালাতে পারে নি।
প্রশ্ন: মুক্তিবাহিনীর সং্খ্যা কত?
উত্তর: পূর্ব পাকিস্তান থেকে বিভিন্ন বাহিনীর দলত্যাগীদের নিয়েই এই বাহিনী গঠিত। ভারতে গেরিলাদের ট্রেনিং দেবার জন্যে ৪৮টি শিবির প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের কতজনকে ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে বা কতদিন পরপর ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে তা অনুমান করা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: পূর্ব পাকিস্তানের কাছে কোন বিদ্রোহী আত্মসমর্পণ করেছে?
উত্তর: হ্যা। কয়েকজন বিদ্রোহী আত্মসমর্পণ করেছে এবং আরো করছে।
প্রশ্ন: ভারত দাবী করছে, পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তুরা সীমান্ত পার হয়ে এখনো চলে যাচ্ছে একথা ঠিক?
উত্তর: না। এ দাবী সম্পূর্ণ মিথ্যা। কেউ ভারতে যাচ্ছে না।
প্রশ্ন: ভারতীয় বেতার দাবী করেছে যে, পূর্ব পাকিস্তানের যশোর এবং পশ্চিম পাকিস্তানের শিয়ালকোট থেকে বেসামরিক নাগরিকদের অপসারন করা হয়েছে এটা কি সত্য?
উত্তর: এসব এলাকা থেকে লোকজন অপসারণ করা হয় নি। বেসামরিক লোকদের এলাকা ছেড়ে চলে যাবার জন্যে সরকারী আদেশ দেয়া হয় নি। তবে কোন লোক ব্যাক্তিগতভাবে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে পারে।