You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সংবাদ পত্র তারিখ
ইহাহিয়াচক্রকে মদত দেয়ার জন্য জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দল ও মার্কিন ”বিশেষজ্ঞ” স্বাধীন বাংলা

১ম বর্ষঃ ৪র্থ সংখ্যা

০১ আগষ্ট ১৯৭১

 

ইয়াহিয়া চক্রকে মদত দেয়ার জন্য জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দল ও মার্কিন ”বিশেষজ্ঞ”
(বিশেষ প্রতিনিধি)

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা কি বাংলাদেশকে ভিয়েতনামে রূপান্তরিত করার ষড়যন্ত্র আঁটিয়াছেন? এই অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক প্রশ্নটি আজ সকলের মনকে আলোড়িত করিতেছে। নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গিয়াছে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা “জননিরাপত্তামূলক” কর্মসূচির নামে ঢাকায় পুলিশ বিশেষজ্ঞ পাঠাইবার সিদ্ধান্ত নিয়াছে। জননিরাপত্তার নামে এই বিশেষজ্ঞ ও তার শিকারী কুকুরের দলের কাজ হইবে, মুক্তিযুদ্ধ দমনের কাজে ইহাহিয়ার জল্লাদ বাহিনীকে মদত দেওয়া। এই দায়িত্ব দিয়া যে কুটনীতিকে ঢাকায় পাঠানো হইতেছে, এই ধরনের কাজে তাহার নাকি বিশেষ পারদর্শিতা ও পূর্ব অভিজ্ঞতা রহিয়াছে। খবরে প্রকাশ, ইতিপূর্বে এই ব্যাক্তি ভিয়েতনামে নিযুক্ত ছিল এবং সেখানেই সে হাত পাকায়।পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড একজন কুখ্যাত সিআইএ এজেন্ট। একসময় তিনিও কূটনৈতিক কাজে ভিয়েতনামে ছিলেন। কাজেই পুলিশ বিশেষজ্ঞ হিসাবে রবার্ট জ্যাকসন রাষ্ট্রদুত ফারল্যান্ড এর সহিত যোগদান করিলে একেবারে সোনায় সোহাগা হইবে, তবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের খেলার এইখানেই শেষ নয়, মাত্র শুরু। ভিয়েতনামেও তারা এইভাবে সৈন্যদল পাঠানোর আগে নগো-দিন-দিয়েম চক্রকে মদত দেবার জন্য পুলিশ বিশেষজ্ঞ পাঠাইয়াছিল। বাংলাদেশে ভিয়েতনামের সেই খেলার পুনরাবৃত্তি হইতে চলিয়াছে মাত্র।

বাংলাদেশ সিমান্তে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ বসাইবার যে পরিকল্পনা কার্যকর হইতে যাইতেছে উহার পিছনেও রহিয়াছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের নোংরা হাত।বাংলাদেশে ইহাহিয়ার জল্লাদ বাহিনীর হাতে দশ লক্ষ নারী প্রাণ দিল, মানবাধীকারের পবিত্র সনদ রক্তের বন্যায় ভাসিয়া গেল, জাতিসংঘ টু শব্ধটি পর্যন্ত করিল না।হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে পৈানে এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় গ্রহন করিয়াছে- জাতিসংঘ তাহাদের রিলিফের দায়িত্ব গ্রহন না করিয়া বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে একটি আবেদন জানাইয়া বিবেক পরিষ্কার করিয়াছে, অবশেষে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের “গুড বয়” সদরুদ্দিন আগা খান দাওয়াই আবিষ্কার করিয়াছে, ভারত বাংলাদেশ সিমান্তে জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক বসাইতে রাজি না হওয়ায় এখন বাংলাদেশের এলাকায় পর্যবেক্ষক বসাইবার পায়তারা চলিতেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারও দ্ব্যার্থহীন ভাষায় এই উদ্দ্যোগের বিরোধীতা করিয়াছে।

জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের জানিয়া রাখা দরকার যে, বাংলাদেশ সরকারের বিনা অনুমতিতে বাংলাদেশের এলাকায় পর্যবেক্ষক নিয়োগের কোন অধীকার তাহাদের নাই এবং ইহা দ্বারা জটিলতা বৃদ্ধি ছাড়া সমস্যা সমাধানের কোনই সম্ভাবনা নাই। এই মূহুর্তে জাতিসংঘের যা করনীয় তাহা হইল, বাংলাদেশ হইতে দখলকারী বাহিনী সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করার জন্য ইয়াহিয়া সরকারকে চাপ দেওয়া। উহা না করিয়া জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক বসাইলে বাংলাদেশে স্বাভাবিক অবস্থা বা আস্থা ফিরিয়া আসিবে, করিয়া জাতিসংঘ জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক বসাইলেই বাংলাদেশে স্বাভাবিক অবস্থা বা জনমনে আস্থা ফিরিয়া আসিবে, বাস্তুত্যাগ বন্ধ হইবে এবং ভারতে আশ্রয়-প্রার্থীরা প্রত্যাবর্তন করিবে ইহা আশা করা মূর্খতা ছাড়া কিছুই নয়। দুঃখের বিষয়, জাতিসংঘ জানিয়া শুনিয়া বোকা সাজিতেছে এবং বাংলাদেশের গণমানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্খা ও ইয়াহিয়া বাহিনীর গণহত্যা ও নৃশংস অত্যাচারকে পাশ কাটাইয়া গিয়া বাংলাদেশ প্রশ্নকে পাক- ভারত বিরোধ হিসাবে চিহ্নিত করার প্রয়াস পাইতেছে।

বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষ বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ভিয়েতনামে পরিণত করা কিংবা বাংলাদেশের মুক্তি-সংগ্রামকে পাক- ভারত বিরোধ হিসাবে চিহ্নিত করার ন্যাক্কার জনক ষড়যন্ত্রকে দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করিবেন। একথা সকলের পরিষ্কারভাবে জানিয়া রাখা দরকার যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কিছুতেই পাক- ভারত বিরোধের পর্যায়ে ফেলা চলেনা এবং যেকোন মহলের যেকোন অযুহাতেই ইয়াহিয়া চক্রকে মদত দেওয়া বাংলাদেশের জনগণ বরদাস্ত করিবেনা। এই প্রসঙ্গে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের উদ্দ্যেশ্যে আমরা হুশিয়ারী উচ্চারন করিতে চাই যে, বাংলাদেশের জননিরাপত্তার নামে শিকারী কুকুরের দল পাঠানো হইলে উহাদিগকে কুকুরের মতই বিতাড়িত করা হইবে। বাংলাদেশে দ্বিতীয় ভিয়েতনাম সৃষ্টির ষড়যন্ত্র ভিয়েতনামের মত বাংলার মাটিতেও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কবর রচনা করিব- ইতিহাসের ইহাই আমোঘ বিধান।

————————

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!