You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.20 | পাকিস্তান যুদ্ধ চাহে না তবে আক্রান্ত হলে প্রতিশোধ নিবে- ইয়াহিয়া | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

পাকিস্তান যুদ্ধ চাহে না তবে আক্রান্ত হলে প্রতিশোধ নিবে- ইয়াহিয়া
সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক
তারিখ : ২০ অক্টোবর,১৯৭১
.
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বলেনঃ
পাকিস্তান যুদ্ধ চাহে না, তবে আক্রান্ত হলে প্রতিশোধে নিবে।

প্যারিস,১৯শে অক্টোবর,(রয়টার)।- পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক স্বাক্ষাৎকারে বলিয়াছেনযে,তাহার দেশ ভারতের সাহিত যুদ্ধ করিতে চাহে না,তবে ভারতীয় বাহিনী আক্রমন করিলে উহার প্রতিশোধ গ্রহন করা হইবে।গতকার প্যারিসের” লিমন্ডে ” পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার উক্ত সাক্ষাৎকারের বিবরনী প্রকাশিত হয়।পত্রিকার করাচীস্থ সংবাদদাতার সহিত এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান উপরোক্ত উক্তি করেন।
তিনি পাবসিপোলিসে সোভিয়েট ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগর্নির সহিত সাম্প্রতিক সাক্ষাতকালে ভারত কতৃক পাকিস্তানকে হুমকির কথা উল্লেখ করিয়াছেন বলিয়া জানান।প্রেসিডেন্ট পদগর্নি তাহাকে জানাইয়াছেন যে,সোভিয়েট ইউনিয়ন উপমহাদেশে শান্তি কামনা করে এবং আগষ্ট মাসে সম্পাদিত সোভিয়েত-ভারত চুক্তি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত হইবার নহে।সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতকে আক্রমনাত্বক উৎসাহ প্রদান করিবেনা বলিয়া প্রেসিডেন্ট পদগর্নি জানাইয়াছেন।
ভারত হইতে বাঙালী গেরিলাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকিলে তিনি প্রতিশোধ গ্রহন করিবেন কিনা,জিজ্ঞাসিত হইলে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বলেন: আমি তা করব না,কারন আমি ভারতের সহিত যুদ্ধ চাহি না।আমরা পরম ধৈর্য্য প্রদর্শন করিতেছি।যুদ্ধ বাধিলে উহা শুধু উভয় দেশের জনগনের দু:খ-দুর্দশাই বৃদ্ধি করিবে এবং উহাতে উদ্ধাস্ত সমস্যার সমাধান হইবে না।
তবে পাকিস্তানি নেতা বলেন,এটা সুস্পশ্ট যে,তাহার দেশ উহার উহার অভ্যন্তরীন ব্যাপারে ভারতীয় হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করিবে না।তিনি আরও বলেন যে,উভয় দেশের মধ্যকার বর্তমান সঙ্কটের পরিনাম কি হইবে তা ভারতের মনোভাবের উপরেই নির্ভরশীল। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া আস্থার সহিত বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনাধীন।তিনি অভিযোগ করেন যে,ভারত দুস্কৃতিকারীদের আশ্রয় না দিলেআমাদের এলাকায় বোমা বর্ষণ না করিলে,ধংসাত্বক কার্যকলাপের উৎসাহ না দিলে এবং যোগাযোগ ব্যাবস্থা বিচ্ছিন্ন ও অর্থনীতি পঙ্গু করার জন্য ক্রমাগত অনুপ্রবেশকারী প্রেরন না করিলে এপ্রিল মাস হইতেই স্বাভাবিক অবস্থায় প্রত্যাবর্তন সম্পূর্ণ হইত।সংকট সমাধানের উদ্দেশ্যে কোনরূপ আলোচনায় অংশগ্রহন করিতে অস্বীকৃতি জানাইয়াছেন বলিয়া তিনি অভিযোগ করেন।ভারত যে কখনো পাকিস্তানের অস্তিত্ব মানিয়া নেয় নাই,তাহাই উক্ত মনোভাবের ভিত্তি বলিয়া তিনি উল্ল্যেখ করেন।
শেখ মুজিবর প্রসঙ্গে
বন্ধী শেখ মুজিবুর রহমানের সাহিত কোনরূপ আপোষের সম্ভাবনা আছে কিনা জিজ্ঞাসিত হইলে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলেন,শেখ মুজিবুর রহমানপর বিচার হইতেছে।পাকিস্তানের সেরা আইনজীবী কতৃক তাহার পক্ষ অবলম্বন এবং গোপন বিচার অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমি সম্মতি দিয়েছি।দেশের অখন্ডতা হুমকির সম্মুখীন হইলে সেক্ষেত্রে এ ধরনের গোপনে বিচার অনুষ্টান অস্বাভাবিক নহে।বিচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন হইলে টবং পরিস্থিতি অনুকূলে হইলে তখন আমি উহার সকল বিবরনী করিব,তবে অদূর ভবিষ্যতে নয়।
দেশের অখন্ডতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে তাহার এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে আলোচনা হইয়াছে বলিয়া গুজব শুনা যাইতেছে,তাহা সত্য কিনা জিজ্ঞাসিত হইলে প্রেসিডেন্ট বলেন:বিচার অনুষ্ঠানের ভার প্রদত্ত সামরিক আদালতে তিনি নির্দোষ প্রমানিত না হলে আমি একজন বিদ্রোহীর সহিত পূনর্বার আলোচনা করিব না।
সর্বোপরি তিনি যে,জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করেন নাই,তাহা উপলব্ধি করাইবার বিষয়টি তাঁহার উপর নির্ভর করিতেছে।