You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.22 | স্বদেশদ্রোহিতার নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আমাদের শান্তি কমিটির (?) বন্ধুরা | বাংলাদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

শিরোনাম সম্পাদকীয়ঃ শান্তি কমিটি?
সংবাদপত্র বাংলাদেশ ১ম বর্ষঃ ২২শ সংখ্যা
তারিখঃ ২২ নভেম্বর, ১৯৭১

শান্তি কমিটি ?
বঙ্গবন্ধু প্রায়ই বলতেন বাংলার সজীব মাটিতে সোনার যেমন ফসল ফলে, তেমনি উর্বরতার সুযোগে আগাছাও গজিয়ে উঠে। বাংলার মাটি সিরাজ, মোহন লালকে জন্ম দিয়েছে, আবার মীরজাফর, ঊর্মিচাদ জগৎশেঠকেও জন্ম দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর এ কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্য। শান্তি কমিটি নামে বাংলার বুকে যা গড়ে উঠেছে তা কি মীরজাফর আর ঊর্মিচাদের প্রেতাত্মার বৃথা আস্ফালন নয় ?

বাঙ্গালী হয়ে বাঙ্গালীর ক্ষতি, পাক হানাদার দুস্যদের তাবেদারী করে স্বদেশদ্রোহিতার নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আমাদের শান্তি কমিটির (?) বন্ধুরা। ২৫শে মার্চের হোলিখেলায় গ্রামবাংলায় এমনিতেই মৃত্যুর হিমশিতলতায় ঢলে পড়েছিল।

সামরিক চক্রের নিধনযজ্ঞের পর আবার নতুন করে অশান্তির আগুন জ্বালায় এই শান্তি কমিটির অশান্তি ওয়ালারা। এদের আচরনে ও কার্যকলাপে লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালী দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। বহু পরিবারকে এরা সর্বহারা করে ছেড়েছে, হানাদার দুস্যদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে,মা বোনদের সতীত্ব নষ্ট করার সুযোগ করে দিয়েছে আর নিজেরা সুযোগ সুবিধামত দলবলসহ বাড়ী বাড়ী হানা দিয়ে সর্বস্ব লুট করে নিয়েছে। এরাই আবার পাক জল্লাদদের সাহায্যের জন্য পাড়ায় পাড়ায় গ্রামে গ্রামে রাজাকার বাহিনী সৃষ্টি করতে সাহায্য করেছে।

সেদিনের ছবি আমাদের মন থেকে এখনও মুছে যায়নি। আমরা দেখেছি কত অগনিত পরিবার একান্ত নিরুপায় হয়ে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। আমরা আরও দেখেছি পাক দুস্যদের সাথে সহযোগিতা করে এরা কত শত ব্যাক্তিকে নিজেদের পারিবারিক বা আর্থিক কলহের শিকারে পরিণত করে ছেড়েছে। লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষ পুত্র, কন্যা, মা, বাপ, ভাই বোনকে ফেলে রেখে প্রাণের ভয়ে রিক্তহস্তে ভারতের মাটির দিকে ছুটে চলে গেছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রমাগত সাফল্যে হাওয়া বিপরীত বইতে শুরু করেছে, এদের কার্যকলাপও স্তিমিত হয়ে আসছে। সুর অনেকের পাল্টাতে শুরু করছে। এখন অনেকেই ভবিষ্যৎ চিন্তা করে হানাদার কবলিত দেশে এবং মুক্তাঞ্চলে নিজ নিজ পথে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে দূত পাঠিয়ে যোগাযোগ করবার চেষ্টায় আছেন। আবার অনেকে নাকি এখন মুক্তিবাহিনীর সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে অসম্ভব আগ্রহের ভাবও দেখাচ্ছেন।

ইতিহাস বলে, যুগে যুগে সুবিধাবাদীরা এবং দেশদ্রোহী লম্পটেরা এমন করেই তাদের অস্তিত্বকে বজায় রাখতে চেষ্টা হয়। তাই এবার আমরা জাতির অতি ঘৃণিত এই শত্রুদের দিকে সজাগ ও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখার জন্য আমাদের একান্ত প্রিয়, সংগ্রামী চেতনায় উদ্ধুদ্ধ, বাঙ্গালী জাতীয়বোধে অনুপ্রাণিত বাংলার ঐতিহ্যবাহী, ত্যাগ তিতিক্ষার মূর্ত প্রতীক আমাদের যুবসমাজের প্রতি আবেদন জানাই। আমরা জানি শান্তি কমিটির দালাদের নিকট আত্মীয়স্বজনদের অনেকেই এবারের মুক্তিসংগ্রামে আমাদের সাথে অংশগ্রহণ করেছেন। তাই প্রতি পদে মুক্তি সংগ্রামীর মানসিক দুর্বলতা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক কিন্ত বহু ত্যাগ, বহু প্রাণ ও বহু রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা প্রায় আমাদের হাতে কব্জায় নিয়ে এসেছি তা যেন বিন্দুমাত্র দুর্বলতার সুযোগে ফসকে না যায়।

শান্তি কমিটির অশান্তি সৃষ্টিকারীরা যেন আমাদের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে আত্মত্যাগী মুক্তিযোদ্ধাদের কিছু মাত্র দুর্বল বা বিপথগামী করতে না পেরে, সেটাই হবে আজকের দিনে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি একান্ত আবেদন।