You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.22 | নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মুক্তাঞ্চল পরিদর্শন | বাংলাদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

শিরোনামঃ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মুক্তাঞ্চল পরিদর্শন
সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ ১ম বর্ষঃ ২২শ সংখ্যা
তারিখঃ ২২ নভেম্বর, ১৯৭১

নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মুক্তাঞ্চল পরিদর্শন

ঢাকা, ২২শে নভেম্বরঃ- হানাদার মুক্ত এলাকা সফর শেষে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের একদল সদস্য তাদের সফর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে আমাদের বাংলাদেশ প্রতিনিধিকে বলেন যে, গত এক সপ্তাহ যাবৎ আমরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে শত্রু বিতাড়িত এলাকাগুলি সফর করে চলেছি । গ্রামবাসীদের সাথে আমরা ঘরোয়া পরিবেশে আলাপ-আলোচনা করেছি এবং স্থানে স্থানে জনসভাতেও বক্তৃতা দিয়েছি । আমরা সর্বত্রই দেখতে পেয়েছি এত দুঃখ কষ্ট ও অত্যাচার সহ্য করার পরও গ্রামবাসীদের মনোবল একটুও নষ্ট হয়নি বরং এখন গ্রামবাসীরা নিজেরাই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন । মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় দলবদ্ধভাবে হানাদার দস্যুদের বিরুদ্ধে সাক্ষাৎ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে চলেছেন ।
প্রতিনিধিবৃন্দ আরও জানান, পাক দস্যুরা অতর্কিত হামলা দিয়ে গ্রামবাসীদের হত্যা বাড়ীঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিয়েছে । আশ্রয়হীন অবস্থায় আর শীতে তাদের দুরবস্থা অবর্ণনীয় । তবুও তাদের একমাত্র কথা আপনারা মুক্তি ফৌজ নিয়ে শত্রুর উপর প্রবলভাবে ঝাপিয়ে পড়ুন এবং অনতিবিলম্বে সমগ্র দেশকে হানাদার শত্রুমুক্ত করে রাজধানী ঢাকার বুকে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড্ডীন করুন ।
আমরা এটাও লক্ষ্য করেছি গ্রামবাসীরা অধীর আগ্রহে স্বাধীন বাংলা রেডিওর সংবাদ শোনার জন্য রেডিও নিয়ে বসে থাকেন । তারা আমাদের একথাও জানান আমরা ঢাকা বেতার কেন্দ্রের কোন অনুষ্ঠান শুনিনা । প্রত্যেক গ্রামেই দেখলাম যুবক শ্রেণীর সংখ্যা খুবই কম খোজ নিয়ে জানতে পারলাম যুবসম্প্রদায় মুক্তিফৌজে ট্রেনিং নেবার জন্য বিভিন্ন যুবশিবিরে চলে গেছেন। অনেক অভিভাবক সে কথা গর্বভরে আমাদের জানাতে এগিয়ে এলেন । পিছু হটে যাওয়া হানাদার শত্রুদের ব্যাঙ্কারগুলিও আমরা পরিদর্শন করালাম ভিন্ন স্থানে আমাদের জওয়ানদের সাথে মিলে তাদের কর্মপদ্ধতিও লক্ষ্য করলাম । তাদের মুখে চোখে দেখতে পেলাম এক অভূতপূর্ব বীরত্বব্যঞ্জক চিহ্ন, যা থেকে সহজে অনুমান করা যায় শত্রুকে আমরা নির্মুল করেই ছাড়বো প্রতিদিনই তারা শত্রুনিধন করে এগিয়ে যাচ্ছে আর হানাদার বাহিনী পিছু হটে চলছে । বিদায়ের প্রাক্কালে তাদের প্রত্যেকের সাথেই হলো আমাদের গভীর মমতাভরা আলিঙ্গন আর তাদের হাতে তুলে দিলাম আমাদের সাথে নিয়ে যাওয়া তাদেরই সংগ্রামের ইতিহাসের জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি সাপ্তাহিক বাংলাদেশ পত্রিকার কয়েকটি সংখ্যা ।