শিরোনাম সম্পাদকীয়ঃ (শেখ মুজিবের বিচার প্রসঙ্গে)
সংবাদপত্রঃ রণাঙ্গন ২য় সংখ্যা
তারিখঃ ১৫ জুলাই, ১৯৭১
সম্পাদকীয়
বর্বর ইয়াহিয়ার সাম্প্রতিকতম ষ্টান্ট হল মুজিববের বিচার প্রসঙ্গে। গত চার মাস ধরে বঙ্গবন্ধু এক হিংস্র বর্বর পশুর শিকার। বাংলাদেশের সাধারণ জনগন এক নারকীয় পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছেন, প্রাণ দিয়েছেন দশ লাখ লোক। গত চার মাস ধরে বিশ্বের কাছে এই বর্বরতা এবং দস্যুতার কাহিনী উদঘাটিত হয়েছে, ধীরে ধীরে পাকিস্তান সরকারের নামে দস্যু সরকার বিশ্বে তার বন্ধু হারিয়েছে। ব্রিটেন, কানাডা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, পশ্চিম জার্মানী, জাপান, ফ্রান্স, বন্ধ করেছে সকল প্রকার সাহায্য।
অর্থনীতিক দিক দিয়ে পাকিস্তান এখন পুরোপুরি দেউলিয়া। বাংলাদেশের কলখারখানা পুরোপুরি বন্ধ, প্রধান অর্থকরি ফসল পাচ্ছে না সে। পাকিস্তানের উৎপাদনের সমস্তই তাদের সমকালীন কলোনী বাংলাদেশে রফতানী করত। সেটাও বন্ধ। সুতরাং ইয়াহিয়া সরকারের অর্থনৈতিক অবস্থা দেউলিয়া। তাছাড়া ২১ মার্চের পরে যুদ্ধে প্রথম দিকে যে আবেগ আশ্রিত আন্দোলন বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছিল, আজ আর তা নেই আবেগ আর অস্ত্র হীন আন্দোলন দিয়ে যে এখন দেশ স্বাধীন করা সম্ভব নয়, মুক্তিফৌজ তা তার বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে অচিরেই বুঝতে পেরেছিল। সুতরাং অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা শিখতে হয়েছে তাকে। এভাবেই শক্তিশালী হয়েছে মুক্তিফৌজ। এই শক্তি সম্পর্কে ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তা যেমন তেমনি সমস্ত বিশ্বও সচেতন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশ্বের কারো সঙ্গে আজ পর্যন্ত দেখা করতে দেয়নি। পশ্চিম পাকিস্তানের গণমনে ধুইয়ে উঠছে রক্তস্রোত। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের মনে জ্বলছে রুদ্র বহ্নি শিখা। আর এসবেরই বিরুদ্ধে ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তা এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতে উঠছে। বঙ্গবন্ধুর বিচার করে মুক্তিফৌজের শক্তিকে আবেগ আপ্লুত করে দিয়ে সমস্ত বিশ্বের দৃষ্টিতে বিভ্রান্ত করতে চাইছে সে। আমেরিকান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে গণচীনের বৈঠক প্রস্তাব এবং পাকিস্তানের ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকিও এই ষড়যন্ত্রের অংশ। কিন্ত ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তাকে আমরা সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই মুক্তিফৌজের শক্তিকে বিভ্রান্ত করা সমস্ত বিশ্বের পক্ষেও সম্ভব নয়। ইয়াহিয়ার ঔধত্যের জবাব আমরা বুলেটেই দিব। বিশ্ব জনমতকেও আমরা জানিয়ে দিচ্ছি যদি ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর বিচার করতে চায় তাহলে বাংলা মুক্তিফৌজ এমন জবাব দেবে যাতে বিশ্ব শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে।