You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.29 | জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাকিস্তানী প্রতিনিধি মাহমুদ আলীর বিবৃতি | জাতিসংঘ দলিলপত্র উদ্ধৃতিঃ বাংলাদেশ ডকুমেন্টস - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাকিস্তানী প্রতিনিধি মাহমুদ আলীর বিবৃতি জাতিসংঘ দলিলপত্র উদ্ধৃতিঃ বাংলাদেশ ডকুমেন্টস ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ সাল

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাকিস্তানী প্রতিনিধি মাহমুদ আলীর বিবৃতি ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
চরম অনীহার সাথে আমি আমি আবার সাধারণ পরিষদে কথা বলার জন্য অনুমতি চেয়েছি। আমি আন্তরিক ভাবে আশা করি যে আমরা তর্কযুদ্ধ শেষ করে কিভাবে শরণার্থীদের ঘরে ফিরিয়ে আনা যায় তার বিভিন্ন ব্যবহারিক দিকের প্রতি মনোযোগ জ্ঞাপন করব।
আমরা আশা করেছিলাম যে ভারতের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে কিভাবে এই সংকট নিরিসন করা যায় তার উপর তার সরকারের মতামত তুলে ধরবেন। কিন্তু তার পরিবর্তে তিনি ভাবলেন যে পরিষদে পাকিস্তানের পতন সম্পর্কে ভাষণ দেয়াটা বেশি উপকারি। আমাদের সবারই সীমাবদ্ধতা রয়েছে, এবং আমার দেশের সাংবিধানিক সমস্যার একটু চিরস্থায়ী সমাধান বের করার চেষ্টার ইতিহাস গোপন কিছু নয়। এমন একটি সরকার ব্যবস্থা স্থাপনই আমাদের সব সময়ের উদ্দেশ্য ছিল যা জনগনের ইচ্ছার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে এবং বিভিন্ন ভৌগলিক , রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়গুলি মিটমাট করবে। আমরা সেই রাস্তা বরাবর এগিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। এটা আমি বলতে পারি যে আমাদের সাফল্যে ভারতেরও লাভের সম্ভাবনা রয়েছে এবং আমাদের ব্যর্থতায় ভারতেরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তান কর্তৃক হিসাবকৃত শরণার্থী সংখ্যার সঠিকতা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। তিনি ভেবেছেন যে এটা খুবই অদ্ভুত যে এক জেলা থেকে দেশ ছেড়েছেন ২ জন আর অন্য জেলা থেকে দেশে ছেড়েছেন ৬০০০ জন। এটা নিশ্চিত যে এধরনের প্রশ্ন উত্থাপন হতে পারে এবং আমার সরকার প্রস্তাব করেছে যে জাতিসংঘের সাধারণ সম্পাদক আমাদের আদালতের একটি স্বাধীন যাচাইয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন। কিন্তু ভারতের প্রতিনিধি তার দেশের অতি সতর্ক উদ্বাস্তু আন্তঃপ্রবাহের নিবন্ধন অনুরূপ যাচাই প্রক্রিয়ায় দিতে সম্মত হন নি।
কেন ভারত সরকার প্রত্যাশা করবে যে সবাই বিনাবাক্যে তাদের তুলে ধরা চিত্র গ্রহণ করবে যা কিনা প্রতিনিয়ত বাস্তব কোন সূত্র ছাড়া ঘুড়িয়ে প্যাঁচিয়ে বলা হচ্ছে? আমি সুপারিস করতে চাই যে যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে শরণার্থীরা ফিরে আসা পর্যন্ত তাদের ভোগান্তি উপশম করার একটি নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে, এটাও নিশ্চিত করা কর্তব্য যে শরণার্থীদের জন্য সরবরাহকৃত সাহায্য যাতে অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত না হয়।
দুটি অযুহাতের উপর ভিত্তি করে ভারত তার সীমান্তে জাতি সংঘের পর্যবেক্ষণ এর প্রতি আপত্তি জানিয়েছে। প্রথমটি হল, কারণ এটি অপ্রয়োজনী যেহেতু এরই মাঝে অনেক মানুষ শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। এটি একটি ন্যায্য যুক্তি। পাকিস্তানের দিকেও আমরা দর্শনার্থী পেয়েছি। উপরন্তু, গত দুই মাস বা এর বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের কোন অংশে কোন সেন্সরশীপ এর অস্তিত্ব নেই। অথবা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সংবাদকর্মীদের চলাচলের উপর কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞাও নেই। তা সত্বেও পাকিস্তান পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি মেনে নিতে দ্বিধাবোধ করে নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, যাদের কাছে ভারত আপিল করেছে, তারা ভারতের কাছ থেকে একই রকমের আত্মবিশ্বাস আশা করে থাকে।
এটি প্রকৃতপক্ষে হতাশাজনক যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা কমিয়ে আনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবিত গুড অফিস কমিটিকে একটি প্রতারণামূলক কৌশল হিসেবে উল্লেখ্য করেছেন। এটা কি সত্য নয় যে জুলাই মাসের ২০ তারিখে জাতি সংঘ মহাসচিব নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের প্রতি ভারত পাকিস্তানের মধ্যকার অধোগামী অবস্থার দিকে আলোকপাত করে একটি গোপন স্মারকলিপি পাঠ করেন? তিনি কি “সীমান্ত সংঘর্ষ, চোরাগোপ্তা হামলা, আরো মিয়মিত হয়ে উঠা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড” এর প্রতি তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেন নি? তিনি কি সতর্ক করে দেন নি যে উপমহাদেশে একটি বড় ধরনের দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়তে পারে?
এটা আলোচ্যসূচীতে ছিল যে পাকিস্তান উপমহাদেশে শান্তির জন্য হুমকি এবং বৃহত্তর যুদ্ধে এড়াতে নিরাপত্তা পরিষদকে সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছে। এবং এখনও, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুড অফিস প্রস্তাবকে প্রতারণামূলক কৌশল হিসেবে অবহিত করা সমুচিত মনে করেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে তার দেশ এই বিষয়ে পাকিস্তানের সমকক্ষ হতে চায় না। এখন, এটি কি ইঙ্গিত দেয়? হয় এই কথাটি অর্থহীন অথবা অথবা এই ধারণার উপর ভিত্তি করে যে ভারত এই প্রতিষ্ঠানের সদস্য দেশ হিসেবে পাকিস্তানের চাইতে বেশি মর্যাদা উপভোগ করে থাকে। এটি একটি অসমর্থনযোগ্য যুক্তি। এমনকি এত বড় সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একটি শক্তির প্রতিনিধি গতকাল এই প্রতিষ্ঠানকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে এই প্রতিষ্ঠানের সকল সদস্য দেশ সম-মর্যাদা উপভোগ করে।
আমি আমার ভারতীয় সহকর্মীদের মিথ্যা অহংকার পাশে সরিয়ে রাখতে বলব এবং বাস্তবতার পৃথিবীতে ফিরে আসার জন্য বলব। নিশ্চয়ই, ভারতের অভ্যন্তরে জাতি সংঘের পর্যবেক্ষক নিয়োগ গ্রহণ করার জন্য কেউ ভারতের চাইতে কম ভাববে না।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একই ভাবে তার সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে বসে শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পদক্ষেপ ঠিক করার জন্য আলোচনা করার প্রস্তাবে রুক্ষ ছিলেন। আমি পুরোপুরি নিশ্চিত যে তিনি বা তার সরকার কেউই পাকিস্তানের প্রস্তাব বুঝতে ভুল করেন নি। আমরা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য ভারতকে অনুরোদ করি নি। আমরা পাকিস্তানের এই বা ওই লোক অথবা ওই দল যার সাথেই দরাদরি করি না কেন তা একান্তই পাকিস্তানের এখতিয়ার। একমাত্র ব্যাপার যা ভারতকে ভাবাচ্ছে তা হল ভারতের মাটিতে বিশাল সংখ্যক পাকিস্তানী নাগরিকের উপস্থিতি এবং কিভাবে তাদেরকে ফেরত পাঠানো যায়। এটা এই সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার জন্য যে, আমার সরকারের মতে, উভয় দেশের প্রতিনিধিরা নিজেদের মাধ্যমে অথবা কোন নিরিপেক্ষ পৃষ্ঠপোষকের অধিনে আলোচনায় বসবে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে পাকিস্তান তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যাকে একটি ভারত-পাকিস্তান সমস্যায় রূপ দিতে চাচ্ছে। পরিস্থিতি এই পর্যায়ে এসেছে শুধুমাত্র ভারতের মাটিতে পাকিস্তানী শরণার্থীদের উপস্থিতির জন্য এবং সাহায্য এবং সহযোগিতার জন্য যা ভারত পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রদাণ করছে।
আমি অন্যদিন বলেছিলাম যে এই ধরনের সাহায্যের ভিতর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্র সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণ প্রদাণ করা এবং ভারতের নিজস্ব বাহিনীর পাকিস্তান সীমানার অভ্যন্তরে বিভিন্ন অভিযানে অংশগ্রহণ করা। এই আগস্টের অধিবেশন এটি অবশ্যই উল্লেখ করবে যে ভারত এই অভিযোগ নিরবতার মাধ্যমে এড়িয়ে গিয়েছে। আসলে, তিনি বলেছেন যে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যকার সীমানা কার্যকর ভাবে বন্ধ করা সম্ভব নয়, এবং, আমি এটিকে ভারতের পার্লামেন্টে ভারত সরকার কর্তৃক বর্ণিত “মুক্তিবাহিনী”-কে সকল ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করার অঙ্গিকার এর পুনর্ব্যক্ত হিসেবে ধরে নিচ্ছি। আমি এমন কোন সীমানা সম্পর্কে অবহিত নই যা উঁচু কাঁটাতারের বেড়া দ্বারা বন্ধ করা হয়। সীমান্তকে শান্তিপূর্ণ রাখা হয় সংশ্লিষ্ট সরকারের নীতিমালা এবং কর্মপুন্থা দিয়ে। আমি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করব আমাদের দুই দেশের মধ্যকার শান্তি এবং স্থিতিশীলতাকে উন্নীত করার সবচেয়ে ভালো উপায় এর উপর আন্তর্জাতিক আচরণ এর সাধারণ নিয়ম এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে ভারত এবং পাকিস্তান এর মধ্যকার সীমান্তকে উত্তপ্ত করার বক্তব্য এর প্রভাব তুলে ধরার জন্য।
আমি এখানে বিতর্কিত বিষয়গুলো হিসাব করতে আসি নি। ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তের পূর্বাংশের ঘটনাসমূহের কারণে উপমহাদেশে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জাতি সংঘের মহাসচিব শান্তির জন্য হুমকিসমূহের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যদি না এই পরিস্থিতি খুব তাড়াতাড়ি প্রতিবিহিত করা হয়। আমার সরকার ভারতের সাথে সমযোতায় যাওয়ার ইচ্ছার প্রমাণ দিয়েছে, আমাকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ পুনরাবৃত্তি করতে না দিয়ে, শুধুমাত্র ঐসকল সমস্যা নিয়ে কথা বলতে বলুন যা নিয়ে ভারতের জনগণে চিন্তিত এবং এটি তাদের প্রতি একটি বোজাস্বরূপ যেমনঃ শরণার্থী সমস্যা।
গতকাল সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন এই পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য সতর্কতা এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষতা নিয়ে অগ্রসর হওয়ার জন্য। আমরা এই আবেদনকে স্বাগত জানাই এবং আশা করি ভারত সরকার এটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবে। গতকাল আমি অনেক বন্ধু রাষ্ট্রের কাছ থেকে এই সমস্যার সমাধানে একটি সুন্দর রাজনৈতিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারের স্বদোপোদেশ শুনেছি। যদি তারা আমাকে এই বক্তৃতামঞ্চ থেকে তাদেরকে উত্তর দেয়ার অনুমতি দেন তাহলে আমি বলব ওটাই হল সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য যার দিকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট অগ্রসর হচ্ছেন যা তিনি সমস্ত বাঁধা বিপত্তি সত্বেও অর্জন করতে বদ্ধপরিকর।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই প্রেসিডেন্ট ইয়া হিয়া খানের এই পর্যন্ত নেয়া পদক্ষেপসমূহ বর্ণনা করেছেন যেমন- সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান, জনগনের মৌলিক অধিকারের দাবি প্রহনযোগ্যতা প্রদান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসা। এই কর্মপন্থাকে বাধাগ্রস্থ হয়েছে কিন্তু শেষ হয়ে যায় নি, এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হল একটি মুক্ত ও গণতান্ত্রিক এবং ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান যা অন্য সকল দেশের সাথে শান্তি এবং বন্ধুত্বের ভিতর দিয়ে বসবাস করতে চায়। উপমহাদেশে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা জোরদার করা হবে এবং শরণার্থীদের দুর্ভোগ আরো তাড়াতাড়ি শেষ হবে যদি যেরকমটা ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গত সপ্তাহের বলেছেন তারা এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় যেখানে পাকিস্তানের ভেঙ্গে যাওয়া ছাড়া আর কোন দ্বিতীয় উপায় থাকবে না এর পরিবর্তে ভারত সরকার এই উদ্দেশ্যের সাথে নিজেদের একীভূত করতে পারে।