You dont have javascript enabled! Please enable it!

শিরোনামঃ সেই অতীতে যেন আর ফিরে আনা যাই।
সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ, ১ম বর্ষঃ ১৯শ সংখ্যা।
তারিখঃ ১ নভেম্বর, ১৯৭১।

সম্পাদকীয়ঃ

৭ই মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ আর ২৫ শে মার্চের রাতের আঁধার থেকে ফেলে আসা আজকের ১ লা নভেম্বর। সাড়ে সাত কোটি বাঙালী জাতির অতুলনীয় ত্যাগ, তিতিক্ষা ও সংগ্রামের এক অভূতপূর্ব ইতিহাস। এই ইতিহাস সমগ্র মানবজাতির ইতিহাসের এক নতুনতর সৃষ্টি। এই সৃষ্টি আগামী দিনের পৃথিবীকে দেখাবে নতুন পদ ও মত।

২৪ বছরের শাসন-শোষণের জিঞ্জির ভেঙে বাঙালী জাতি চেয়েছিল সম অধিকারের ভিত্তিতে একত্রে বাস করতে এক পাকিস্তানে কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্ররোচনায় এদেশের শাসক আর শাসকগোষ্ঠীর ভেঙে খান খান করে দিল সেই সদিচ্ছাকে। পদদলিত করে দিল তাদেরই দেওয়া নির্বাচনের রায়কে। বাঙালীর ন্যায্য অধিকার থেকে বাঙ্গালীকে করল বঞ্চিত।

ক্ষমতা হস্তান্তর আর আলোচনার সুযোগ নিয়ে বাঙালী নিধনের যে ষড়যন্ত্র ইয়াহিয়া গোষ্ঠী করে চললো বাঙালী ভাবতে পারে নি তাঁর হিংস্রতা হতে এতো পৈশাচিক ও নগ্নতায় ভরপুর। লক্ষ লক্ষ নিরস্ত্র জনতাকে গুলি করে হত্যা করে আর প্রায় এক কোটি বাঙ্গালীকে গৃহত্যাগে বাধ্য করে নয় পিশাচ ইয়াহিয়া ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা কি আশা করেছিল সেটা প্রকাশ হয়ে পড়েছে সাংবাদিক মিঃ এন্থনী মাসকারেনহাসের লিখিত গ্রন্থ দি রেপ অব বাংলাদেশ নামের পুস্তিকায়।

অপ্রস্তুত বাঙালী জাতি ক্ষণিকের তরে মুষড়ে পড়েছিল এই নারকীয় হত্যালীলা আর হত্যা যজ্ঞের রূপ দেখে কিন্তু দুর্ভাগ্য ইয়াহিয়া খানের তিনি চিনতে পারেননি এই বাঙ্গালী জাতিকে। বাঙালী মচকাবে তবু ভাঙ্গবে না।

অচিরেই শুরু হয়ে গেল পাল্টা আঘাত হানার পালা। হাজার হাজার তরুনেরা যোগ দিতে লাগল মুক্তিফৌজের-শিক্ষা নিতে লাগলো আধুনিকতম গেরিলা যুদ্ধের কায়দা। এক একজন মুক্তিফৌজ এগিয়ে এলো হানাদার দস্যুদের নিধনে। মুক্তিফৌজের আক্রমণ ধারা যতই তীব্র হতে তীব্রতর হতে লাগল পশু ইয়াহিয়ার সামরিক শক্তি ততই অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিল। নিরীহ গ্রামবাসীদের ধন সম্পদ লুট করে বাড়ী ঘরদোর জ্বালিয়ে দিয়ে বাঙালী মা বোনদের মান-ইজ্জত নষ্ট করে তারা প্রতিশোধের তান্ডবলীলায় মেতে উঠলো মেতে উঠলো কিন্তু তবু আজকে কিদেখতে পাচ্ছি। এক একজন মুক্তিযোদ্ধা চার-পাঁচগুন শক্তিশালী হানাদার দস্যুকে খতম করে চলেছে। দুর্জয় সাহস আর মাতৃভূমিকে হানাদার মুক্ত করার বলিষ্ঠ শপথে আমাদের মুক্তিবাহিনী আজ দৃঢ় সংকল্পচিত্ত। দেশ-বিদেশী বন্ধুরা দিচ্ছেন আধুনিকতম সমরাস্ত্র। শত্রুর বুকে শেষ আঘাত হানার জন্য আজ আমরা কৃত সংকল্প।
আমরা জানি অমানিষার অন্ধকার কেটে গিয়ে পূর্বাকাশে নবতর সূর্যোদয় ঘনিয়ে আসছে। বাংলার আকাশে নতুন সূর্য উঠবে এবং সেই আলোকে প্রদীপ্ত হয়ে উঠবে প্রতিটি বাঙালীর মনপ্রাণ, আর সঙ্গে সঙ্গে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বাঙালী কুলবধুদের উপাসনার সুমধুর কন্ঠস্বর বেজে উঠবে বাংলা মায়ের বুকে। আর সেই দৃঢ়প্রত্যয় নিয়েই বলতে চাই-যে অতীতকে আমরা পদদলিত করে স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি, সেই অতীতে যেন আর আমরা ফিরে না যাই।

error: <b>Alert:</b> Due to Copyright Issues the Content is protected !!