শিরোনামঃ সম্পাদকীয়
সংবাদপত্রঃ স্বদেশ (১ম বর্ষঃ ৯ম সংখ্যা)
তারিখঃ ১৯ জুলাই, ১৯৭১
সম্পাদকীয়
বর্তমানে আমরা অসম যুদ্ধে লিপ্ত, আমাদের এই সংগ্রাম অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার, অত্যাচার অবিচারের বিরুদ্ধে সুবিচার প্রতিষ্ঠার, অসুন্দরের বিরুদ্ধে সুন্দর সুখী জীবন প্রতিষ্ঠার, পরাধীন হতে স্বাধীন হবার যে স্বাধীনতা পেলে নির্বিচার গণহত্যার পুনরাভিনয় হবে না, শোষণের অবসান হবে, প্রতিষ্ঠিত হবে সুন্দর গণতান্ত্রিক সমাজ যেখানে থাকবে মানবের মানবাধিকার, ধর্ষিতা মা বোনের বুক ফাটানো কান্নার পরিসমাপ্তি হবে সেখানে।
আমাদের শত্রুরা পাশবিক উত্তেজনায় মত্ত; রক্তের লালসায় এদের কামনা আকাশ প্রমাণ। ধর্মের নাম করে এরা গত ২৪ বৎসর যাবৎ আমাদেরকে করেছে প্রাণান্ত শোষণ। এই ধর্মের দোহাই মুখে উচ্চারণ করে এরা ধ্বংস করেছে মসজিদ, মক্তব, গুলি করেছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে, হত্যা করেছে নামাজে দণ্ডায়মান মোক্তাদিকে। গ্রামকে গ্রাম উজার করেছে। পরিত্যক্ত মসজিদগুলো আল্লাহুর আহজারি করছে; এরা মুসলমান রমনীদের উপর করেছে বলাৎকার অন্তহীন পাশবিক অন্যাচার কাণ্ড দেখে মনে হয় এরা হাদীস বর্নিত খানে দজ্জাল। এ কথা অজানা নয় যে এরা শুধুমাত্র নিজেদের বাজার এবং শোষণ পাকা পোক্ত রাখতে আমাদের ধর্মপ্রাণ নির্বোধ মানুষকে ধর্মের দোহাই দিয়ে এতসব অপকর্ম ঢাকতে চেষ্টা করছে।
এদের আছে আধুনিক যুদ্ধের সরঞ্জাম, উন্নত শিক্ষাপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী। আমরা নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ। এই দলে রয়েছে ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, জনতা, উকিল, মোক্তার, ডাক্তার, শিক্ষক বুদ্ধিজীবী পুরো সম্প্রদায়। এরা আমাদের শেষ করে দিতে চায়। তাই বাংলাদেশের যারা চিন্তা করতে শিখেছে, তাদেরকেই নির্বিচারে হত্যা করেছে। এই জন্যেই বেঁচে থাকার দুর্জয় ইচ্ছা নিয়ে আমরা গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলছি।
আমাদের মুক্তিবাহিনীর সৈনিক ও গেরিলারা মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র নিয়ে সংগ্রাম করছে। গণপ্রতিনিধিরা পরিকল্পনা দিচ্ছেন। আমরা কলম ধরে দেশবাসী ও বিশ্ববাসীকে আমাদের সংগ্রাম সম্বন্ধে অবহিত করছি। মোট কথা সকলেই আমরা সংগ্রামে লিপ্ত। যারা একান্তভাবে অক্ষম, কর্মশক্তিহীন, তারাও গণমত অক্ষুণ্ণ রাখার ব্যাপারে নিয়োজিত মনে রাখতে হবে কোন কাজকর্ম না করে শুধুমাত্র ধ্বংসাত্মক কথাবার্তায় লিপ্ত থাকা যে কথা, পাক বাহিনীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগীতা এক কথা। বিবেক কাওকে রেহাই দেবে না।