You dont have javascript enabled! Please enable it!

শিরোনামঃ সম্পাদকীয় (এই প্রহসন নতুন নয়)
সংবাদপত্রঃ স্বদেশ (১ম বর্ষঃ ১১শ সংখ্যা)
তারিখঃ ১৬ আগস্ট, ১৯৭১

সম্পাদকীয়

এই প্রহসন নতুন নয়

বঙ্গবন্ধুর বিচারের প্রহসন আরম্ভ হয়েছে। অবশ্য এই জাতীয় ষড়যন্ত্র ও বিচারের নামে প্রহসনের অবতারণা এই নতুন নয়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই ষড়যন্ত্রের উপর ভিত্তি করে। তাই তো পাকিস্তান সংগ্রামে যাদের দান সর্বাপেক্ষা অধিক, প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানে তারা পেয়েছে নির্বিচার জেল,জুলুম, লাঞ্ছনা, বঞ্চনা। ইতিহাসের পাতা থেকে তাদের নাম কৌশলে মুছে দেয়া হয়েছে। বাংলার অগ্নিপুরুষ শেরে বাংলাকে পেতে হয়েছে দেশদ্রোহী আখ্যা; সম্মুখীন হতে হয়েছে বিচার প্রহসনের। মহান নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে পেতে হয়েছে ভারতের লেলিয়ে দেয়া কুকুর খেতাব; আমৃত্যু অশেষ লাঞ্ছনা,নিপীড়ন জেল জুলুম। বাংলার মহান নেতা বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান আজ ইয়াহিয়ার তথাকথিত আদালতে বিচারের নামে প্রহসনের সম্মুখীন। মূলত এই প্রহসন নতুন কিছু নয়। বাঙালীর সামগ্রিক মানবাধিকার সংরক্ষণের জন্য যে কণ্ঠ সর্বদাউচ্চকিত হয়েছে সে কণ্ঠ হয় ইসলাম বা জাতীয় সংহতির শত্রু; ভারতের চর নতুবা দেশদ্রোহী আখ্যায় ভূষিত হয়েছে। জানা কথা বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার লগ্ন থেকে পশ্চিমা প্রভুদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। তাই তো জেল জুলুম হয়রানি তার নিত্যসঙ্গী। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন আমলে তাকে ৬টি মিথ্যা মামলার জের টানতে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল। বিনা বিচারে দীর্ঘ কারাবাসের পর সসম্মানে মুক্তি পেয়ে ১৯৬২ সালে তিনি পুনরায় কারান্তরালে যেতে বাধ্য হলেন। ১৯৬৪ সালেও তিনি আয়ুব খার বিরুদ্ধে বিরোধী দলের সপক্ষে নির্বাচনী অভিযানে নেমে বহু মিথ্যা মামলাজনিত হয়রানীর সম্মুখীন হয়েছিলেন। ১৯৬৬ সালের এপ্রিল মাস হতে আরাম্ভ করে মে মাসের প্রথমার্ধ পর্যন্ত গড়ে দৈনিক তার বিরুদ্ধে একটি করে মামলা আনীত হয়। এই সময় অস্ত্র সংগ্রহ ও গৃহযুদ্ধের প্রস্তুতির অভিযোগও নেতার বিরুদ্ধে আনা হয়। তারপর দীর্ঘ ১১ মাস কারাবাসের পর তার বিরুদ্ধে আনীত হয় কুখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। অভিযোগ আনা হয় যে ভারতের যোগসাজশে ও অর্থানুকূল্যে নেতা বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। আইয়ুব খার আদালতে নয় পূর্বের ন্যায় গণআদালতের রায়ে তিনি মুক্তি পান। দৃশ্যপটের পরিবর্তন ঘটেছে। এবারে মঞ্চে ইয়াহিয়া। এবারেও নেতার বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ। বহু বিচিত্র সেই সব অভিযোগ। একটা জিনিস লক্ষণীয়, আজকে যিনি মদ্যপ, নরখাদক ও ব্যাভিচারীদের আদালতে বিচার প্রহসনের সম্মুখীন তিনি অতীতেও এই জাতীয় ব্যক্তি বিশেষের কাছে দেশদ্রোহিতার আখ্যা পেয়েছিলেন। আকার আকৃতিতে না হউক চরিত্রগত দিক থেকে গোলাম মহম্মদ মীর্জা বা আয়ুব ইয়াহিয়া সমগোত্রীয়। আজ যারা বিচারক, আমাদের দৃষ্টিতে তো বটেই সারা দুনিয়ার সভ্য মানুষের মানদণ্ডে তারাই প্রকৃত অপরাধী। বঙ্গবন্ধু তার বিচারের বৈধতা এই দৃষ্টিকোণ থেকেই চ্যালেঞ্জ করেছেন। বহু ষড়যন্ত্র ও বহু বিচার প্রহসন থেকে বঙ্গবন্ধু অপার করুণাময়ের কৃপায় নিষ্কৃতি পেয়েছেন। অতীতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের ফলে আমরা নেতাকে ফিরিয়ে এনেছি। এবারে অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে অস্ত্রের হুংকারে নেতাকে ছিনিয়ে আনতে হবে। আমাদের চোখের জলকে করতে হবে বারুদ, চিত্তকে করতে হবে সুদৃঢ, বাংলার মাটি থেকে দুবৃত্তদের উৎখাত ও বন্দী করে আমরা ছিনিয়ে আনব পরমপ্রিয় নেতাকে।

একথা সত্য যে নেতার সামান্যতম ক্ষতি সাধিত হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধকে ঠেকিয়ে রাখা দুষ্কর হবে।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!